15 mins read
নারীনীতি ২০১১: সরকার পিছু হটেছে
এ’
এসব হুমকির প্রতিক্রিয়া সুখকর হয়নি দীর্ঘদিন ধরে সম্পত্তিতে সমঅধিকারের দাবী জানিয়ে আসা নারী আন্দোলনের জন্য এবং সাধারণভাবে নারীদের জন্য। নারীনীতি ঘোষণার পরপরই আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম হানিফ বলেন, “সরকার মুসলিম সম্পত্তি বন্টন আইনে কোন পরিবর্তন আনেনি। ইসলাম যেভাবে নারী-পুরুষের সম্পত্তির উত্তরাধিকার দিয়েছে, সরকার শুধু তা নিশ্চিত করতে সম্পত্তিতে নারীর অধিকারের কথা বলেছে।”(সমকাল, ৯ মার্চ ২০১১)। এর পরই প্রথমে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী কোরআনবিরোধী কোন আইন করা হবে না মর্মে আশ্বস্ত করেছেন। সবশেষে, গত ২০ এপ্রিল, প্রধানমন্ত্রী আওয়ামীপন্থী মাদ্রাসা শিক্ষকদের সমাবেশে আবারো এই মর্মে আশ্বস্ত করেন, শুধু যে কোরাণ ও সুন্নাবিরোধী কোন আইন প্রণয়ন করা হবে না তাই নয়, বরং তারা নারীনীতির মধ্যে ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক যেসব আইন আছে ইতিমধ্যে তা তুলে নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই পুনরাবৃত্ত আশ্বস্তিবার্তা সত্ত্বেও ইসলামিক আইন বাস্তবায়ন কমিটির ব্যানারে ফজলুল হক আমিনীর পার্টি মে মাসের ৬, ৭, ১১, ১২, ১৬ এবং ২২ তারিখ বিভাগীয় শহরগুলোতে এবং ২৭ মে ঢাকায় নারী ও শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। জামাতে ইসলামও ৭ মে দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচী দিয়েছে নারীনীতির কিছু ধারা বাতিলের দাবীতে।
যে ধারাটি নিয়ে এতো হৈ চৈ, বিক্ষোভ-সমাবেশ, ধর্মীয় গোষ্ঠীর কাছে সরকারের নতজানু অবস্থান, কী আছে সেই ধারায়?
বিতর্কিত সেই ধারাটি
সরকার পরিস্কার পিছু হটেছে
৯ মার্চ, নারীনীতি ঘোষণার পরদিন, প্রায় সবক’টি জাতীয় দৈনিকে ভুল তথ্যে ভরা যে শিরোনামটি ফলাও করে ছাপনো হয় তা হলো সম্পত্তির উত্তরাধিকারে নারী-পুরুষের সমানাধিকার দিয়ে নারী উন্নয়ন নীতিমালা ২০১১ ঘোষিত। এই শিরোনামগুলো এতোই যুতসইভাবে, এতো গুরুত্ব দিয়ে ছাপানো হয় যে খবরটির সত্যতা নিয়ে প্রায় কারোরই কোন সন্দেহ থাকে না। বিশেষ করে বর্তমান মহাজোট সরকারের প্রধান শরীক দল আওয়ামীলীগ তাদের ২০০৮-এর নির্বাচনী ইশতেহারে ১৯৯৭ সালের নারীনীতিকে পূর্ণ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছিলো বলে এই খবরে তেমন সন্দেহের অবকাশও ছিলো না। সম্পত্তির সমঅধিকার প্রশ্নে ১৯৯৭ সালের নারীনীতিতে কী বলা হয়েছিলো? আসলেই কি ২০১১ সালের নারীনীতিতে দেয়া হয়েছে উত্তরাধিকার-সম্পত্তিতে নারী-পুরুষের সমঅধিকার? বাকী দুটো নীতিতেই বা এই ধারাটি কেমন ছিলো? এসব প্রশ্নের ফয়সালা হওয়া জরুরী। তাই এক নজরে দেখে নেয়া যাক চারটি নারীনীতিতে সম্পত্তিতে সমঅধিকারের প্রশ্নটি কীভাবে আবর্তিত, বিবর্তিত এবং পুনরাবৃত্ত হয়ে বর্তমান অবয়ব নিয়েছে।
চারটি নারীনীতিতে উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নারী-পুরুষের সমানাধিকার প্রসঙ্গ
১৯৯৭ সালে যেখানে উত্তরাধিকার এবং ভূমির উপর নারীর সমান সুযোগ এবং নিয়ন্ত্রণের অধিকার দেয়া এবং সেই লক্ষ্যে নতুন আইন প্রণয়ন করার কথা বলা হয়েছে, ২০০৪-এর নারীনীতিতে উত্তরাধিকার এবং ভূমির উপর নারীর অধিকারের বিষয়টি লোপাট করা হয়েছে, ২০০৮-এর নারীনীতিতেও উত্তরাধিকারের বিষয়টি তুলে দিয়ে ‘বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অর্জিত স্থাবর/অস্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে নারীর সমান সুযোগ এবং নিংন্ত্রণের অধিকার দেয়া এবং সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নতুন আইন প্রণয়ন করা’র কথা বলা হয়েছে। এবং এবারের নারীনীতিতে ‘উপার্জন, উত্তরাধিকার, ঋণ, ভূমি ও বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অর্জিত সম্পদের ক্ষেত্রে নারীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রদান করা’র কথা বলার মধ্য দিয়ে তুলে নেয়া হয়েছে উত্তরাধিকারে সমান অধিকারের প্রসঙ্গটি এবং বাদ দেয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় নতুন আইন করার বিষয়টি। ঠিকই আছে, উত্তরাধিকারে সমান অধিকার দেবার বিষয়টি বিবেচনায় থাকলেই কেবল নতুন আইন প্রনয়ণের প্রয়োজন হত। সেই বিষয়টিই যখন বিলোপ করা হয়েছে তখন নতুন আইনের তো কোন প্রয়োজন নেই। প্রধানমন্ত্রী সত্যভাষণ করেছেন মাদ্রাসা শিক্ষকদের সমাবেশে গত ২০এপ্রিল, “আমরা কোরান নিরীক্ষণ করে, বিশেষ করে সুরা আন-নিসা, কোরানের সাথে সাংঘর্ষিক নীতিগুলো বাদ দিয়েছি।” এভাবে ১৯৯৭ সালের নারীনীতি থেকে সম্পত্তির সমঅধিকার প্রশ্নে আওয়ামী লীগ পরিস্কার পশ্চাদপসারণ করেছে, পিছু হটেছে ২০০৮ সালের নির্বাচনী ওয়াদা থেকেও।
নারীনীতি ২০১১ অনুযায়ী, প্রচলিত নীতি এবং ধর্মীয় বিধানে নারী যে সম্পত্তির অধিকারী সেই সম্পদে কেবল নারী পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের অধিকার পাবার কথা বলা হয়েছে, যা সম্পত্তিতে সমঅধিকারের সাথে কোনভাবেই সম্পর্কিত নয়। যেহেতু ধরে নেয়া যায় যে এই নীতি বাংলাদেশের সকল নারীর জন্যই ঘোষণা করা হয়েছে, সেক্ষেত্রে এই নীতির সমস্যা হলো, মুসলিম নারীরা তাদের পুরুষের তুলনায় অর্ধেক প্রাপ্যতার বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন না, আর হিন্দু-বৌদ্ধ এবং কোন কোন আদিবাসী জনগোষ্ঠী যারা মূলত হিন্দু পারিবারিক আইন দ্বারা পরিচালিত তাদের নারীরা বের হতে পারবেন না উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে কোন ধরণের অধিকার না থাকার বিধান থেকে। যে নারীর উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে কোন অধিকারই নেই, তিনি কোন সম্পদের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের অধিকারী হলেন এবারের এই নীতি অনুযায়ী?
এখন প্রশ্ন, কেনো এতো হৈ চৈ তাহলে?
পক্ষ দুটি নয়, তিনটি
আমরা এই নীতি বিষয়ে তিনটি অভিমত দেখতে পাচ্ছি। প্রথমত, সরকার বলছে এই নীতিটি নারীর অধিকারকে অগ্রগামী করার এক বিশেষ যুগান্তকারী পদক্ষেপ, তবে কোরাণের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। দ্বিতীয়ত, ধর্মীয় গোষ্ঠী এই নীতিকে প্রত্যাখ্যান করছে কোরান-বিরোধী দাবি করে এবং সে’লক্ষ্যে আন্দোলন-সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছে। শোরগোলটা মূলত সেদিক থেকেই শোনা যাচ্ছে। রয়েছে তৃতীয় আরেকটি শক্তি, নারী-প্রশ্নে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনকারী নারী-পুরুষের মিলিত শক্তি এবং কিছু বাম সংগঠনের নারী নেতারা। সম্পত্তির সমান অধিকারের বিষয়ে সরকারের পিছু হটে আসা, বিবাহ, বিবাহ-বিচ্ছেদ এবং সন্তানের অভিভাবকত্ব বিষয়ে অতীতের সকল নারীনীতির মতই এই নারীনীতিতেও নারী সমাজের দাবীকে পাশ কাটিয়ে যাওয়াকে সমালোচনা করে এই তৃতীয় শক্তি ‘সমঅধিকার আমাদের ন্যূনতম দাবি’ নামের মোর্চা গঠন করে নারীনীতি ২০১১-কে প্রত্যাখান করছে এবং নতুন নারীনীতি তৈরীর দাবি করেছে। গত ৬ মে ঢাকার রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে তারা আগামী ২৪ মে ঢাকায় একটি কনভেনশন করার ঘোষণা দিয়েছে এবং উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নারীর সমঅধিকার, বিয়ে, সন্তানের অভিভাবকত্ত্বসহ পারিবারিক আইনের অধীনে যেসব আইন নারীকে বঞ্চিত রেখেছে সেসব বিষয়ে সংশোধনের দাবিতে একমত সকল নারী-পুরুষকে সেই কনভেনশনে যোগদানের আহ্বান জানিয়েছে।
হৈ চৈ আসলে সম্পত্তিতে সমঅধিকার প্রশ্নে
নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের প্রসঙ্গে
উত্তরাধিকার, সম্পদ ও ভূমির উপর নারীর অধিকারের প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে বিএনপি-জামাত জোটের নারীনীতি ২০০৪ ঘোষিত হলে সংগত কারণেই ধর্মীয় গোষ্ঠী মাঠে সরব হয়নি। বাকী তিনটি নারীনীতির যে কোন ইস্যুতেই যেমন সিডও সনদ বাস্তবায়ন, বিদ্যমান বৈষম্যমূলক আইন বিলোপ, পিতামাতা উভয়ের পরিচয়ে সন্তানের পরিচয়, বাল্যবিয়ে- মেয়েশিশু ধর্ষণ-পতিতাবৃত্তির বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ, রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ, নারীশিক্ষা, ফতোয়া প্রসঙ্গে ধমীয় গোষ্ঠীর বক্তব্য একই। আর তা হলো, নারী-পুরুষের অধিকার ও মর্যাদার তারতম্য স্বাভাবিক; নারী-পুরুষের কার কী অধিকার তা কোরআন-সুন্নাতেই বলে দেয়া আছে। জাতীয় জীবনে নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়, নারীকে দেয়া হবে ‘ন্যায্য অধিকার’। নারী-পুরুষের তারতম্য, আইনগত ফারাক বিলোপের প্রস্তাব কোরান-সুন্না বিরোধী, এসব দূর করা মানুষের কাজ নয়, আল্লাহতালার মহাআজ্ঞাপ্রসূত এবং নারীর জন্য কল্যাণকর। এসব বিষয়ে এ’হেন সুস্পষ্ট অবস্থান ধর্মীয় গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে আমরা বরাবরই দেখি, তবে তাদের মরিয়া হয়ে উঠতে দেখা যায় যখনই প্রসঙ্গটি নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গে হয়। এটা তারা কোন অবস্থাতেই মেনে নিতে পারে না। ২০০৮ এবং ২০১১ সালের নারীনীতিতে উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নারীর সমঅধিকারের বিষয়টি উল্লেখ না করা হলেও তারা মাঠ গরম করেছেন। তাদের এই অবস্থান তাদের ঘোষিত রাজনৈতিক দর্শনের সাথে, নারী প্রসঙ্গে তাদের নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। যা কিছু নারীর জীবন যাপনের অগ্রগামিতার সাথে সম্পর্কিত, তার বিরুদ্ধেই তাদের সুস্পষ্ট অবস্থান।
তবে আপাতদৃষ্টে মনে হয় সম্পত্তিতে সমানাধিকারের বিরোধিতাকারী বুঝি কেবল এই ধর্মীয় গোষ্ঠী। কিন্তু একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে আমাদের পুরুষতান্ত্রিক রাজনীতির আপাদমস্তক সম্পত্তিতে সমানাধিকারের বিরোধী। আমরা ধর্মীয় দলগুলোকে কেবল দৃশ্যপটে দেখতে পাই বলে তাদের কাঁধে বন্দুক রেখে অন্যরা নিস্তার পেয়ে যান। এই ধর্মীয় গোষ্ঠী রাস্তায় না থাকলে কি অবস্থার বিশেষ হেরফের হতো? নারীসমাজের দীর্ঘদিনের দাবির মুখে ১৯৯৭ সালের নীতিমালায় সম্পত্তিতে নারীর অধিকার এবং উত্তরাধিকারের বিষয়টি অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছিলো। তখনকার আওয়ামী লীগ সরকারের হাতে যথেষ্ট সময় থাকা সত্ত্বেও (১৯৯৭ থেকে ২০০১) এবং এখনকার মতো ধর্মীয় গোষ্ঠীর দৃশ্যমান কোন আস্ফালন না থাকা সত্ত্বেও নীতিমালা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কোন আইন প্রনয়ণ বা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বিএনপি এবং জামাত জোটের ২০০৪ সালের নীতিমালায় উত্তরাধিকার সম্পত্তি ও ভূমিতে অধিকারের পুরো বিষয়টিই লোপাট করে দেয়া হয় ফলে ধর্মীয় গোষ্ঠী মাঠে নামেনি। তাই বলে কেনো প্রগতিশীল ধারাগুলো লোপাট করা হলো সে’মর্মে অওয়ামীলীগ বা অন্য কোন সংগঠনই কোন প্রশ্ন তোলেনি। ২০০৮ সালের নারীনীতিতে ৯.১৩ ধারায় উত্তরাধিকার এবং ভূমির উপর অধিকারের বিষয়টি বাদ দিয়ে কেবল বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অর্জিত স্থাবর/অস্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে নারীর সমান সুযোগ ও নিয়ন্ত্রণের কথা বলায় ধর্মীয় দলগুলোর বিক্ষোভের মুখে প্রথমে ধর্মীয় আলেমদের সমন্বয়ে নীতিটি নীরিক্ষণের কমিটি গঠিত হয়, তারা কাগজে-কলমে তাদের বিধান দেন এবং রাস্তায় সক্রিয় থাকেন। ক্রমশ এটি বাস্তবায়নের বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। এবার চতুর্থবারের মতো যে নীতিটি ঘোষণা করা হয়েছে সেখানে উত্তরাধিকারে সমানাধিকার প্রস্তাব থেকে সরে আসার পরও স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বলছেন ধর্মীয় আইনের পরিপন্থী কোন আইন করা হবে না। প্রধান বিরোধীদল বিএনপি’র কোন অফিসিয়াল অবস্থান আমরা এ’পর্যন্ত পাইনি। পাইনি জাতীয় পার্টি বা বাম সংগঠনগুলোর অফিসিয়াল অবস্থান। পরিস্কার নয় সরকারের অবস্থানও। শুধু ধর্মীয় দলগুলোর ক্ষেত্রে আমরা তাদের অবস্থানটি পরিস্কার দেখতে পাই মাঠে। কিন্তু যে দলগুলো ধর্মীয় দল নয় সরাসরি তাদের কোন বক্তব্য না পাবার কারণে তাদের অবস্থানটি এ’পর্যন্ত বোঝা সম্ভব হয়নি। কারণ কোন রাজনৈতিক দলকে নারী প্রসঙ্গে এই গোষ্ঠীর মুখোমুখি দাঁড়াতে আমরা দেখি না। ফলে আস্ফালনকারী ধর্মীয় গোষ্ঠীর মুখোমুখি জেগে থাকতে দেখি শুধু সম্পত্তিতে সমঅধিকারের প্রশ্নে এক নীরবতার রাজনীতিকে। প্রখ্যাত সমাজতাত্ত্বিক স্টুয়ার্ট হল-এর রেপ্রিজেন্টেশন তত্ত্ব আমাদের জানায়, খালি চোখে যা আমরা দেখি, সেটি যেমন অর্থ তৈরী করে, তার সমান বা বেশী অর্থ বহন করতে পারে যা দেখা যায় না সেই অনুপস্থিতির রাজনীতি। তা’হলে কি ধরে নেবো কোন রাজনৈতিক দলই আসলে সম্পত্তিতে সমঅধিকারের বিষয়টি ফয়সালা করতে চায় না? চারটি নারীনীতির প্রত্যেকটিতেই অনেক ধারাই রয়েছে যা ধর্মীয়নীতির সাথে আক্ষরিকভাবে মিলিয়ে দেখতে চাইলে পার্থক্যমূলকই নয় শুধু, সাংঘর্ষিকও বটে। কিন্তু ধর্মীয় গোষ্ঠী সব সময় সবচেয়ে সোচ্চার যে ধারার বিরুদ্ধে সেটি হলো উত্তরাধিকারে নারীর সমঅধিকারের প্রশ্নটিতে। এভাবে নারীনীতি ঘোষণাকারী সরকার, নীরব রাজনৈতিক দল এবং উন্মত্ততা সৃষ্টিকারী ধর্মীয় গোষ্ঠী মিলে ক্রমশই শক্তিশালী করে তুলছে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের মূল উৎসের প্রতি নেতিবাচক এক রাজনীতিকে। সত্যিই তো, নারীকে সম্পত্তিতে সমঅধিকার কেনো পুরুষতন্ত্র দিতে চাইবে যদি ধর্মের নামে বা আইনের নামে বা যে কোন কিছুর নামে হাজার বছর ধরে চলে আসা বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা দিয়ে সম্পদের উপর অধিকার নিরঙ্কুশ করা যায়?
‘ধর্মবিরোধী আইন’ বনাম ‘ধর্মবিরোধী আইন প্রনয়ণ করা হবে না’ ডিসকোর্স
যারা এই আইনকে ধর্মবিরোধী আখ্যা দিচ্ছেন বা যারা বলছেন ধর্মবিরোধী কোন আইন তারা করেননি বা ভবিষ্যতেও করছেন না, বিনীতভাবে তাদের উদ্দেশ্যে বলার সময় এসেছে, কথিত ধর্মীয় বিধানের অনেক কিছুই কিন্তু পরিবর্তিত হয়েছে যুগের দাবিতে। নারী রাষ্ট্র প্রশাসকের বিধান ধর্মে স্বীকৃত না হলেও গত দুইযুগ ধরে জনগণের ভোটে নির্বাচিত আমদের প্রধানমন্ত্রীরা নারী। নারী নেতৃত্বাধীন দলের সাথে জোট বেধে ক্ষমতায় যাচ্ছে ধর্মীয় দলগুলো। নারী রাষ্ট্র প্রশাসকের অধীনে মন্ত্রী হচ্ছেন প্রধান ধর্ম-ভিত্তিক রাজনৈতিক দলের নেতারা। ব্রিটিশ-ভারতে ১৯৩৭ সালে প্রণীত ‘মুসলিম ব্যক্তিগত (শরিয়ত প্রয়োগ) আইন দ্বারা মুসলিমদের বিবাহ, তালাক, দেনমোহর, উত্তরাধিকার ক্ষেত্রে ধর্মীয় আইনের প্রয়োগের কথা বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী কোন নাবালক তার দাদা বা নানার সম্পত্তি পাবে না যদি তার দাদা/নানার পূর্বেই তার বাবা/মা মারা যায়। কিন্তু ১৯৬১ সালে প্রণীত মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ৪ নং ধারা অনুযায়ী নাবালক সন্তান তার দাদা/নানার সম্পত্তির ততটুকু পাবে যতটুকু তার বাবা/মা পেত। ধর্মীয় বিধি অনুযায়ী একজন মুসলিম পুরুষ সর্বোচ্চ চারজন নারীকে বিয়ে করতে পারলেও ১৯৬১ সালের আইনের ৬নং ধারা অনুযায়ী সালিশ পরিষদের সম্মতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করলে জেল-জরিমানার বিধান রয়েছে। ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী মৌখিকভাবে তালাক দেবার সুযোগ থাকলেও এই আইনের ৮ নং ধারায় স্বামীর মত স্ত্রীকেও তালাক দেবার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। মুসলিম রীতি অনুযায়ী হিল্লা বিয়েকে বাতিল না করলেও এই আইনের ৭(৬) নং ধারায় কমপক্ষে তিনবার অনুরুপ পরিস্থিতি সৃষ্টি না হলে হিল্লা বিয়েকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রেশনের কোন বিধান মুসলিম শরিয়া আইনে না থাকলেও ‘মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রেশন) আইন ১৯৭৪’ অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, বিধি লংঘনে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। স্বামী দীর্ঘদিন নিখোঁজ থাকলে ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী নারী স্বামীকে তালাক দিয়ে পুনরায় বিয়ে করতে না পারলেও ১৯৩৯ সালের ‘মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইন’-এর ২নং ধারা অনুযায়ী কোন ব্যক্তি চার বছর নিখোঁজ থাকলে স্ত্রী স্বামীকে আদালতের মাধ্যমে তালাক দিতে পারে।
জমিজমা সংক্রান্ত দানের ক্ষেত্রেও ধর্মীয় মতে রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক না হলেও ২০০৪ সালে বিএনপি-জামাত জোট সরকার রেজিস্ট্রেশন আইনে সংশোধনী এনে সম্পত্তিদানের রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করেছে। মৃতব্যক্তির উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সম্পত্তি বন্টননামা রেজিস্ট্রেশনের বিধান ধর্মে ছিলো না কিন্তু বিগত জোট সরকারের আমলে রেজিস্ট্রেশনই শুধু বাধ্যতামূলক করা হয়নি, দাতা ও গ্রহীতার ছবি সংযুক্ত করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে যেখানে ছবি তোলা ধর্মীয় দৃষ্টিতে হারাম। মুসলিম আইনের অগ্র ক্রয়াধিকার বা শুফা আইনেরও পরিবর্তন করা হয়েছে ১৯৫০ সালের ‘স্টেট এ্যাকুইজিশন ও টেনান্সি এ্যাক্টে’এর মাধ্যমে। এছাড়া ফৌজদারী আইনের বিভিন্ন ধারায় এমন সব বিধান আমরা মেনে চলি যার সাথে ধর্মীয় আইনের দূরতম কোন সম্পর্ক নেই। চুরি করলে হাত কেটে দেয়া বা একজন পুরুষ সাক্ষীর সমকক্ষ হিসাবে দুজন নারীর সাক্ষ্য নেয়া হয়না আমাদের ফৌজদারি আইনে। এভাবে অসংখ্য উদাহরণ দিয়ে দেখানো যাবে যে ধর্মীয় আইনের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ এমনকি সাংঘর্ষিক অনেক আইন প্রচলিত আছে বা নতুন করে প্রনয়ণ করা হয়েছে। এমনকি আইনের পরিবর্তনের ফলে আজ ধর্ম পালন করতে হলেও ধর্মের বিধান লংঘন করতে হচ্ছে। যেমন, ছবি তোলাকে হারাম ও কুফরি ফতোয়া দিচ্ছেন যে ওলামা-মাশায়েখরা তারাই হজ্ব করতে যাবার সময় পাসপোর্ট আইনের বিধান মেনে হজ্ব করতে যাচ্ছেন। এসব কাজ ‘ধর্মবিরোধী’ হলেও এই ধর্মীয় গোষ্ঠী এসব প্রশ্নে, কিংবা সুদ খাওয়া হারাম প্রশ্নে জান কোরবার করতে মাঠে নামেন না। যত দোষ, যত বজ্রনির্ঘোষ নারীর সম্পত্তিতে অধিকারের প্রশ্ন এলেই। যেখানে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে দুই দশকেরও বেশী সময় ধরে শ্লোগান দেয়া হচ্ছে, ‘ছেলে হোক মেয়ে হোক দুটি সন্তানই যথেষ্ট’, এমনকি ইদানিং একটি সন্তানের ব্যাপারেও জনগনকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে এবং জাতীয় পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের অংশ হিসাবে শুক্রবার মসজিদে মসজিদে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে জনমত গড়ে তোলার জন্য ইমামদের সবেতনে নিয়োগ করা হয়েছে দীর্ঘকাল থেকে, সেখানে সম্পত্তির উত্তরাধিকারে ছেলে ও মেয়ে সন্তানের মধ্যে বৈষম্য বিলোপ না করার কী কারণ থাকতে পারে? মুসলিমপ্রধান দেশ তুরস্ক, সেনেগাল, তিউনিশিয়াসহ কয়েকটি দেশে সম্পত্তির উত্তরাধিকারে নারী-পুরুষের সম-অধিকার রয়েছে।
আরেকটি বিষয়ে না বললেই নয়। আমাদের দেশে যখন এসব আইন পরিবর্তন বা প্রনয়ণের প্রসঙ্গ ওঠে তখন কেবল মুসলিম জনগোষ্ঠীকেই মাথায় রাখা হয় যা একটি গণতান্ত্রিক দেশের ক্ষেত্রে কাম্য নয়। যদিও খৃস্টান উত্তরাধিকার আইনে সম্পত্তিতে নারী-পুরুষের অধিকার প্রায় সমান, হিন্দু উত্তরাধিকার আইনে নারীর অবস্থান সবচেয়ে শোচনীয়। এখানে নারীর নিজস্ব অর্জিত সম্পত্তি বা উপহার সামগ্রী ছাড়া অর্থাৎ স্ত্রীধন ব্যতীত আর কোন সম্পত্তির পূর্ণ স্বত্ত্ব পায় না। অথচ হিন্দুপ্রধান দেশ ভারতে এবং হিন্দু রাষ্ট্র নেপালে এখন ধর্মীয় আইন সংস্কারের মাধ্যমে সম্পত্তিতে নারী-পুরুষের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এবং বাংলাদেশ এখনো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ
যে উদ্দেশ্যে আওয়ামীলীগ ১৯৯৭-এর নারীনীতি থেকে পশ্চাদপসারণ করেছে, সেই লাভের গুড় আওয়ামী লীগ ঘরে তুলতে পারবে সে ভরসা কম। আমিনীর দল বা যারা ফতোয়াকে অবৈধ ঘোষণার হাই কোর্টের রায়কে দশ বছর ধরে সুপ্রিম কোর্টে ঝুলিয়ে রেখেছে, সেইসব শক্তি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে ভোট দিয়ে এমন ভাবনায় খুব বিচক্ষণতার পরিচয় মেলে না। তার হাতে নাতে প্রমাণ হলো, প্রধানমন্ত্রীর আশ্বস্তি সত্ত্বেও এই ধর্মীয় গোষ্ঠীর অন্দোলন- বিক্ষোভ-মহাসমাবেশের ডাক।
বাংলাদেশ কোন ধর্মীয় রাষ্ট্র নয় বলেই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের আইনের মূল ভিত্তি এখনো গণতান্ত্রিক নীতিমালার উপরেই প্রতিষ্ঠিত। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কাজে লাগে এমন নিরানব্বই ভাগ আইন-ই ধর্মনিরপেক্ষ এবং সার্বজনীন। আমাদের সংবিধানের ১০, ১৯ (১, ২), ২৭, ২৮ (১,২,৩,৪), ২৯(১,২,৩-ক) ধারায় নারী-পুরুষের সবক্ষেত্রে সমাধিকারের বিষয়ে রাষ্ট্র অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। দেওয়ানী ও ফৌজদারী আইনের ক্ষেত্রে যেমন ধর্মীয় কোন পার্থক্য নেই তেমনি বিবাহ, বিবাহ বিচ্ছেদ, সন্তানের অভিভাবকত্বসহ পারিবারিক আইনগুলোকেও দেওয়ানী আইন ও আদালতের আওতায় এনে ইউনিফর্ম সিভিল কোড প্রবর্তন করে পারিবারিক আইনের পার্থক্য দূর করা সম্ভব। সরকার যদি নারীপ্রশ্নে সত্যিই আন্তরিক হয় তবে সিডও সনদ, সংবিধান ও নারী সমাজের দীর্ঘদিনের আকাংখার প্রতি সৎ থেকে সম্পত্তির উত্তরাধিকারের প্রশ্নে ১৯৯৭ সালের নারীনীতিকেই আইনে পরিণত করতে উদ্যোগী হবেন, যেটি তাদের নির্বাচনী ওয়াদাও ছিলো। আর আমরা যারা নারীর সম্পত্তির প্রশ্নে সত্যিই আন্তরিক বলে দাবী করি তাদেরও উচিত দৃশ্যমান হওয়া। অদৃশ্যমানতার রাজনীতি আসলে সৎসুবিধাবাদ, যার সম্পর্কে লেনিন বার বার হুঁশিয়ার করেছেন। ১৯৯৭ থেকে ২০১১, মোট ১৪ বছর সময় কেটেছে, মানুষকে প্রস্তুত করেনি আমাদের রাজনীতি আর তাই যে নীতির কথা বলা হয়েছিলো ১৪ বছর আগে, সেখান থেকে বার বার পিছু হটতে হয়েছে সরকারকে। এগিয়ে যাবার কালে এগিয়েই যেতে হয়। গুটিকয়েক ধর্মীয় মৌলবাদী সংগঠনের দাবীর দোহাই দিয়ে (যেহেতু তাদের ঘাড়েই বন্দুক রাখা হয়) সরকারগুলো বারবার পিছু হটে আসবে না কি মানুষের অধিকারের প্রশ্নে সংবিধানকেই সমুন্নত রাখবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবার উৎকৃষ্ট সময় এই বয়ে যায়। নারীর সমানাধিকারের প্রসঙ্গ মানুষের সমানাধিকার প্রশ্নেরই নিরাভরণ রুপ।
এমন গুরুত্ত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হলে সরকারকে জনগণের কাছে যেতে হয় যা আমাদের কোন সরকারই যায়নি। সরকার জনগণের সচেতনতা তৈরির জন্য গণমাধ্যমকে ব্যবহার করতে পারে এবং বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে ব্যাপকহারে গণর্যালী ও সভা-সমাবেশের আয়োজন করতে পারে। এসব জনসংযোগ ও প্রচারের আওতায় সাধারণ মানুষকে নিয়ে আসার পাশাপশি রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক সংগঠনগুলোকে অন্তর্ভূক্ত করা যেতে পারে। জনপ্রিয় এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের নারী এবং কন্যাশিশুর পক্ষে আওয়াজ তোলার ব্যাপারে, নতুন রীতি প্রতিষ্ঠা করার কাজে লাগানো যেতে পারে। স্কুল শিক্ষক এবং স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের স্থানীয় জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার কাজে শিক্ষিত করে তোলা সম্ভব। জনপ্রিয় লোকমাধ্যম যেমন যাত্রা, পুতুল নাচ, কবিগানের মাধ্যমে এসব বার্তা ছড়িয়ে দেয়া যেতে পারে প্রত্যন্ত গ্রামে, ওয়াজে ওয়াজে নারীনীতির বিরুদ্ধে বিষোদগারের পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে। তবে এ’সবই করতে হবে রাজনৈতিক অঙ্গীকারের বৃহত্তর ফ্রেমওয়ার্কে। আওয়ামীলীগের ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি নীতি’ নারী আন্দোলনের জন্য তো বটেই আওয়ামী লীগকেও বাধাগ্রস্তই করবে। দাতা দেশগুলোর চাপে নারী উন্নয়ন নীতি প্রনয়ণ এবং দেশে ভোটব্যাংক ঠিক রাখার জন্য ধর্মীয় শক্তির কাছে নতজানু হবার এই অপচেষ্টা শেষ পর্যন্ত নারী-বিরোধী শক্তিকেই মজবুত করবে সন্দেহ নেই। মাছ ধরতে গেলে পানি না ছোঁয়ার নীতি বর্জন করতেই হবে। আজ সম্পত্তিতে নারীর সমঅধিকারের বিরুদ্ধে যারা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে কাল যে তারা নারী-নেতৃত্ব হারাম এবং পরশু মেয়েদের জনপরিসরে নিষিদ্ধ করার প্রবলতর বাসনা নিয়ে লড়াই শুরু করবে না সে নিশ্চয়তা কে দেবে?
এটি একটি রাজনৈতিক লড়াই, এবং বারে বারে সম্পত্তিতে সমঅধিকারের কাল্পনিক ঘোষণাকে ঘিরে মিথ্যা হৈচৈয়ের কুণ্ডলিতে পরার বিলাসিতা করার সময় সত্যিই আর নেই। বরং নারীর সমঅধিকার দাবিতে আন্দোলনরত সচেতন নারী-পুরুষের সাথে ন্যূনতম সমমনা সকল রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির দৃঢ় নেটওয়ার্ক গড়ে উঠুক। উত্তরাধিকারে নারীর সমঅধিকারসহ বিয়ে, বিয়ে বিচ্ছেদ এবং সন্তানের অভিভাবকত্বসহ পারিবারিক আইনের যেসব ধারায় নারীকে বঞ্চনা করা হয়েছে সেসব আইন বাতিল করে নতুন নীতিমালা ও নতুন আইন প্রনয়ণের লক্ষ্যে সেই মানবিক নেটওয়ার্ক কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলুক সেটিই প্রত্যাশা। মানুষ সমান। জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ, বর্ণ নির্বিশেষে। মানুষের সমতার পৃথিবী প্রতিষ্ঠাই হলো সকল শুভ উদ্যোগের প্রথম প্রেরণা। ইতিহাস বারে বারে মানবিকতার পক্ষেই তার পরিবর্তনগুলো ঘটানোর সাক্ষ্য দিয়ে চলেছে।
Your Opinion