bdnews24 - KG | Kaberi Gayen https://kaberigayen.com Thu, 17 Mar 2022 07:11:18 +0000 en-US hourly 1 https://wordpress.org/?v=6.5.3 https://kaberigayen.com/wp-content/uploads/2021/12/favicon_favicon-light.svg bdnews24 - KG | Kaberi Gayen https://kaberigayen.com 32 32 তিনি ‘টক-শো’তে! https://kaberigayen.com/%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%a8%e0%a6%bf-%e0%a6%9f%e0%a6%95-%e0%a6%b6%e0%a7%8b%e0%a6%a4%e0%a7%87/ https://kaberigayen.com/%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%a8%e0%a6%bf-%e0%a6%9f%e0%a6%95-%e0%a6%b6%e0%a7%8b%e0%a6%a4%e0%a7%87/#respond Thu, 17 Mar 2022 07:11:18 +0000 https://kaberigayen.com/?p=8067 প্রত্যেক সমাজেই কিছু কিছু বিষয় থাকে, যেগুলো বিতর্কিত করতে নেই। মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার, নিরাপদে ঘরে ফেরার অধিকার, ন্যায়বিচার পাবার অধিকার– এসব নিয়ে বিতর্ক চলে না। এসব নিয়ে রাজনীতি করা অমানবিক। নারায়ণগঞ্জে ত্বকী হত্যার বিচার না হওয়া, কবি ও আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাত মৃতদেহ শীতলক্ষ্যায় ভেসে ওঠা অথচ এসব হত্যাকাণ্ডের সুরাহা না হওয়া– এগুলো হল বিচারহীন, জবাবদিহিতাহীন রাষ্ট্রের চূড়ান্ত প্রকাশ।

The post তিনি ‘টক-শো’তে! first appeared on KG | Kaberi Gayen.

]]>

বাংলাদেশ সব সম্ভবের দেশ। অপাপবিদ্ধ মেধাবী স্বাপ্নিক কিশোর ত্বকী হত্যার সময় থেকে কিংবা তারও আগে থেকে বারে বারেই নানা অভিযোগের আঙুল উঠছে যার বা যার প্রভাব-বলয়ের দিকে এবং সবশেষে শীতলক্ষ্যায় ভেসে ওঠা সাত মৃতদেহ নিয়ে যখন জীবন ও জনপদ তোলপাড় এবং আঙুল উঠছে একই ব্যক্তির প্রভাব-বলয়ের সংশ্লিষ্টতার দিকে, ফলে যার অন্ততপক্ষে জিজ্ঞাসাবাদে থাকবার কথা, তাকেই প্রায় সবগুলো টেলিভিশন চ্যানেলের ‘টক-শো’তে দেখা গেল।

রীতিমতো প্রতিযোগিতা নানা চ্যানেলের। এক চ্যানেলে শেষ হলে অন্য চ্যানেলে। ফেসবুকে বন্ধু তালিকায় থাকার জন্য দেখতে পাই সে সব ‘টক-শো’র উপস্থাপকরা আগাম বিজ্ঞাপন দিয়েছেন তাদের স্ট্যাটাসে একদিন কিংবা একবেলা আগে থেকেই যে, সেই প্রভাবশালী ব্যক্তি কখন থাকবেন ‘টক-শো’তে। টেলিভিশন চ্যানেলগুলো তার সাক্ষাৎকার উপস্থাপন করেছে যথাসম্ভব আকর্ষণীয় মোড়কে, অথচ যে উত্তেজনা থাকবার কথা, সেই উত্তেজনা তৈরির মতো কোনো ধার ছিল না সঞ্চালকদের পক্ষ থেকে। বরং প্রায়শই একক বক্তার নিজেকে সাফ-সুতরো প্রমাণের স্পেস হিসেবে ব্যবহারের আলামত দেখা গেছে এসব ‘টক-শো’তে।

দুর্মুখেরা অনেক কিছুই বলছেন। আমি সে সব গুজব হিসেবেই দেখি। সত্য-মিথ্যা-গুজব একাকার হয়ে গেছে যে সময়ে, সেই সময়ে আরও একটি গুজবের যোগ হিসেবেই এই রটনা দেখে স্বস্তি পেতে চাই, ভরসা রাখতে চাই গণমাধ্যমে।

তবে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর ‘টক-শো’তে নারায়ণগঞ্জের অনেক দুঃখের হোতা হিসেবে যার বা যার প্রভাব-বলয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর বরাবরের, সেই শামীম ওসমানকেই ‘নায়ক’ হিসেবে উপস্থাপনের সচেতন বা অ-সচেতন চেষ্টার প্রক্রিয়াটি চোখ এড়ায় না। আমার এ লেখায় তাই অনুযোগটি গণমাধ্যমের প্রতি।

‘নায়ক’ হিসেবে উপস্থাপনের কথা বলছি এ কারণেই যে, এসব ‘টক-শো’তে কখনও-বা তিনি একক অতিথি, আর কখনও অন্য এক বা দুই বক্তার সঙ্গে উপস্থিত হয়েছেন। তিনি যখন একক বক্তা, তখন দীর্ঘ সময় ধরে তিনি নিজেকে দায়মুক্ত ঘোষণা দিয়েছেন, কীভাবে তিনি সব ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে এবং ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ ধরে রাখার একক চ্যাম্পিয়ন হিসেবে কাজ করেছেন তার দীর্ঘ বর্ণনা দিয়েছেন। ভাবছিলাম, কেন এসব বর্ণনার আদৌ প্রয়োজন হল ‘টক-শো’তে এসে!

যাই হোক, তার এসব বক্তব্য খণ্ডানোর মতো যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ-প্রস্তুতির স্পষ্ট অভাব ছিল উপস্থাপকদের। না কি অনীহা?

আর যখন অন্য বক্তাদের সঙ্গে উপস্থিত হয়েছেন তখনও তিনি প্রয়োজনে উপস্থাপকদের ধমক দিয়ে নিজের কথা বলে গেছেন। অন্য বক্তারা খুব কমই মনোযোগ পেয়েছেন। তাই এসব আয়োজন হয়ে উঠেছে ‘ওয়ান ম্যান-শো’।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ৭ মে, ২০১৪ একাত্তর টেলিভিশনে প্রচারিত ‘একাত্তর সংযোগ’-এর এপিসোডটির কথা। নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম চেয়ারম্যান খুব কমই সুযোগ পেয়েছেন নিজের কথা বলার। অথচ সঞ্চালককে নানাভাবে চাপের মুখে রেখেছেন তিনি। একবার হুমকি দিলেন যে বিরতির পরে কোনো একটি প্রসঙ্গে তাকে বলতে দেওয়া না হলে তিনি উঠে চলে যাবেন।

এখানেই শেষ নয়, তিনি সকল দায় চাপাতে চেষ্টা করলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর উপরে। ন্যাক্কারজনকভাবে তিনি মেয়র আইভীর একটি ছবি দেখালেন যেখানে তাঁর পাশে দাঁড়ানো বেশ কয়েকজনের ভেতর থেকে এক ব্যক্তির সঙ্গে মেয়রকে জড়িয়ে কিছু অরুচিকর ইঙ্গিতও করলেন।

মেয়র আইভীর অনুপস্থিতিতেই তিনি এই সুযোগটি নিলেন। একজন নির্বাচিত জনপ্রিয় মেয়রের বিরুদ্ধে এহেন কদর্য ইঙ্গিতকে প্রশ্ন করলেন না সঞ্চালক। তিনি তুখোড় বক্তা। তার কথার তোড়ে অন্য কেউ কথা বলার সাহসই পাননি।

এই অনুষ্ঠানেই তিনি একটি রক্তমাখা শার্ট তারই কোনো ডেরা থেকে উদ্ধারের প্রসঙ্গটি নিজে থেকেই তুলে খুবই তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বললেন, ‘‘সেই রক্ত মুরগির, নাকি রং নাকি কেচাপ, কে জানে।’’

দুর্ভাগ্যের বিষয়, এ হেন অমানবিক বক্তব্যের বিরুদ্ধেও সঞ্চালক কিছুই বললেন না।

আরেক চ্যানেলের দুর্ধর্ষ উপস্থাপক, যিনি গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্রকে যেভাবে ধোলাই করেছিলেন গত মাসে কিছু হাওয়াই অভিযোগের ভিত্তিতে, সেই তুলনায় এককভাবে তার সঙ্গে কথা বলার সময় বাক্যের শুরুতে-মধ্যে-শেষে যেভাবে ‘ভাই, ভাই’ করলেন এবং যে সৌজন্য দেখিয়ে তাকে ছেড়ে দিলেন, তখন মনে হল ভয়ই কেবল শক্তিশালী এই সময়ে, কিংবা আপোস। না কি অন্য কিছু?

তিনি চ্যালেঞ্জ করেছেন তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণিত নয়। কোনো সঞ্চালক যখন সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার দৃঢ়তা দেখাতে না পারেন, তখন চ্যালেঞ্জকারীর বক্তব্যই সত্য প্রমাণিত হয়। তিনি দায়মুক্ত হয়ে যান, তার শক্তি আরও বাড়ে। পুনরায় বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েন তাঁরা, যাঁরা অভিযোগ করছেন; জিম্মি হয়ে যান ফের অসহায় মানুষেরা। তার আরও বেড়ে যাওয়া ক্ষমতার সামনে এরপর হয়তো কেউ অভিযোগ করতেও ভয় পাবেন।

এটিই শক্তিমানের মিথ তৈরির প্রক্রিয়া। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, যদি তার সংশ্লিষ্টতা প্রসঙ্গে কোনো তথ্য-উপাত্ত সাংবাদিকদের হাতে নাই-ই থাকে, তবে এই ‘টক-শো’র আয়োজন কেন? তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই সেটি প্রমাণের জন্য? আর কিছু না হোক, কোনো এলাকার সংসদ সদস্য থাকাকালে তার এলাকার আইন-শৃংখলা রক্ষা এবং জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধানের দায় কেন তার উপরে বর্তাবে না, এই প্রশ্নও সঠিকভাবে উত্থাপিত হল না। অথচ তিনি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে ঠিকই ব্যবহার করতে পারলেন, চ্যালেঞ্জ জানালেন।

তার বিরুদ্ধে দেশবাসীর যে তীব্র ক্ষোভ, সেই ক্ষোভ খানিকটা হলেও প্রশমিত হবার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হল এসব চ্যানেল। প্রশ্ন হল, কেন এমন হতে পারল?

প্রথমত, আমরা ধরে নিতে পারি, চ্যানেলগুলো সচেতনভাবে এই কাজ করেনি। আরেকটি ‘হট আইটেম’ হিসেবেই তারা এসব ‘টক-শো’র আয়োজন করেছে। সে ক্ষেত্রে হয়তো তাদের উদ্দেশ্য ছিল টিআরপি’র কাটতি। সবচেয়ে নির্দোষভাবে প্রচার করলেও এসব ‘টক-শো’র মাধ্যমে আসলে নারায়ণগঞ্জে সংঘটিত সন্ত্রাস গৌণ হয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি বা তার প্রভাব-বলয়ের নিজের পক্ষে সাফাই গাইবার উদ্দেশ্যটি সাধন করে দিয়েছে এসব মিডিয়া।

সন্ত্রাস এবং মিডিয়ার মধ্যে এই সখ্যের ভুরি ভুরি উদাহরণ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমরা দেখেছি. সারা পৃথিবীতেই, বড় বড় ম্যাগাজিনে। এই প্রক্রিয়াটি তাদের গৌরবান্বিত করারই প্রক্রিয়া আসলে, সন্ত্রাসের দায়ে অভিযুক্তকে ‘নায়ক’ করার প্রক্রিয়া।

গণমাধ্যম সবসময় খুব নির্দোষভাবে এই কাজটি করে, এমন নয়। মনে পড়ে যায় নব্বইয়ের দশকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে গোলাম ফারুক অভিকে যেভাবে ‘নায়ক’ বানানো হয়েছিল। তার কথা বলা, ইংরেজি জ্ঞান, দাঁড়ানোর স্টাইল, তার ভালো ছাত্রত্ব বিষয়ক প্রচারণার নিচে চাপা পড়ে যেত ক্যাম্পাসে সংঘটিত সন্ত্রাসের ভয়াবহতা, অনেক ছাত্রের লাশের ভার।

দ্বিতীয়ত, থাকতে পারে অন্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে মিডিয়ার পারষ্পরিক নির্ভরতার সম্পর্ক (symbiotic relationship) আজ আর কোনো নতুন আলোচনার বিষয় নয়। যেসব কারণে অনেক অভিযোগ সত্ত্বেও, এসব ক্ষমতাসীনদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না রাজনৈতিক হিসেব-নিকেশ থেকে, দল থেকে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না, সেই একই কারণে তাদের ইমেজ সহনীয় করার দায়িত্ব নিতে হয় পৃষ্ঠপোষকতাদানকারী রাজনৈতিক শক্তির।

মিডিয়া ব্যবহার করেই সেই কাজটি সম্পন্ন করা হয়। কখনও এই কাজটি করা হয় মিডিয়ার সঙ্গে বোঝাপড়ার মাধ্যমেই, কখনও-বা চাপ প্রয়োগ করে। রাজনৈতিক বিবেচনায় রেজিস্ট্রেশন পাওয়া অনেক টেলিভিশন চ্যানেলই রাজনৈতিক বোঝাপড়ার মাধ্যমেই এমন কাজ করে থাকতে পারে, এমন সংশয় উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

দুঃখের বিষয়, কারণ যাই-ই হোক, নারায়ণগঞ্জে গুম-খুন-অপহরণ-হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ যার বা যার প্রভাব-বলয়ের বিরুদ্ধে বার বার করা হচ্ছে, তাকে জবাবদিহিতার আওতায় না এনে, তার ইমেজ সহনীয় করার এই কৌশল ফল দিতেও শুরু করেছে। এক ফ্লেক্সির দোকানে শুনছিলাম গতকাল, এক ক্রেতার উচ্চকণ্ঠ– ‘‘খালি তারে দোষ দিয়া কী লাভ? মেয়র কার পাশে দাঁড়ানো দেহেন নাই? সব মাছে গু খায়, দোষ খালি বোয়াল মাছের।’’

কাউন্টার ডিসকোর্স তৈরি হয়ে যাচ্ছে, যার মাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যক্তি বা তার প্রভাব-বলয়ের দোষ-স্খালন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে জনপরিসরে। এই প্রক্রিয়া সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের জন্য বিএনপিকে দায়ী করার প্রক্রিয়ারই ধারাবাহিকতা।

জার্মান তাত্ত্বিক হেবারমাস যে জনপরিসর (public sphere)-এর কথা বলেছেন, আজকের দিনে পত্রিকার সম্পাদকীয় পাতা, মন্তব্য কলাম আর টেলিভিশন ‘টক-শো’গুলো সেই জনপরিসরের কাজ করছে। জনগণের মতামত প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে সমাজের চাহিদা সম্পর্কে রাষ্ট্রকে সজাগ রাখছে। কিন্তু সেই দায়িত্ব ভুলে রাষ্ট্রের বা সরকারের হয়ে জনগণের সম্মতি আদায় করে নেওয়ার আলথুজার কথিত ‘ইডিওলজিক্যাল স্টেট অ্যাপারেটাস’ হিসেবে কাজ করা দেশের জন্য মারাত্মক হয়ে ওঠে কখনও কখনও।

প্রত্যেক সমাজেই কিছু কিছু বিষয় থাকে, যেগুলো বিতর্কিত করতে নেই। মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার, নিরাপদে ঘরে ফেরার অধিকার, ন্যায়বিচার পাবার অধিকার– এসব নিয়ে বিতর্ক চলে না। এসব নিয়ে রাজনীতি করা অমানবিক। নারায়ণগঞ্জে ত্বকী হত্যার বিচার না হওয়া, কবি ও আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাত মৃতদেহ শীতলক্ষ্যায় ভেসে ওঠা অথচ এসব হত্যাকাণ্ডের সুরাহা না হওয়া– এগুলো হল বিচারহীন, জবাবদিহিতাহীন রাষ্ট্রের চূড়ান্ত প্রকাশ।

এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যাদের বা যাদের প্রভাব-বলয়ের নাম উঠে আসে বারবার তাদের বিচারের আওতায় না আনা, বরং তাদের অপরাধ স্খালন করার যে কোনো উদ্যোগ মারাত্মক।

আজ যে নূর হোসেনের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অভিযোগ, সেই নূর হোসেন ‘নির্দোষ, এমন কাজ সে করতে পারে না’ বলে তিনি ঘটনার খানিক পরেই বক্তব্য দিয়েছেন। কতটা কাছের হলে এমন দায়িত্ব নিয়ে তিনি মন্তব্য করেছেন?

যে র‌্যাবের দিকে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আজ কিংবা পুলিশের ‘ইজ্জতের রশি’ দিয়ে বাধা মৃতদেহ যখন শীতলক্ষ্যায় ভেসে ওঠে, তখনও, সে তো তারই সংসদীয় এলাকায়! ভৌগোলিক এবং ক্ষমতা-দুই অর্থেই। ধরে নিচ্ছি তিনি এসব কোনো ঘটনার সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট নন। কিন্তু তার সংসদীয় এলাকায় এমন ঘটনা বার বার ঘটার পরও কেনো তিনি সেসব ঘটনার দায়-দায়িত্ব এড়াতে চাইছেন?

যে ব্যক্তিকে এ সংক্রান্ত খবরের মধ্যে জিজ্ঞাসা করাই হতে পারে গণমাধ্যমের কাজ, তাকে ‘টক-শো’তে কেন এত গুরুত্ব দিয়ে নিয়ে আসা? এলাকার জনপ্রতিনিধি হিসেবে তার ক্ষমতাবান রাজনৈতিক অবস্থান নিঃসন্দেহে কিছু জবাবদিহিতা দাবি করে।

সেই জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য যথাযথ আইনি জিজ্ঞাসাবাদের অধীনে আনার জন্য জনমত তৈরির পরিবর্তে তাকে ‘টক-শো’তে নিজেকে গ্রহণযোগ্য করে তোলার সুযোগ করে দেবার এই ভয়ংকর প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে গণমাধ্যম সতর্ক হবে এবং দায়িত্বশীল আচরণ করবে, সেই প্রত্যাশা এখনও ধরে রাখছি।

The post তিনি ‘টক-শো’তে! first appeared on KG | Kaberi Gayen.

]]>
https://kaberigayen.com/%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%a8%e0%a6%bf-%e0%a6%9f%e0%a6%95-%e0%a6%b6%e0%a7%8b%e0%a6%a4%e0%a7%87/feed/ 0
সাগর-রুনি-মেঘ প্রতিবেদন: মামুলি হলুদ ছাড়িয়ে কালো সাংবাদিকতায় https://kaberigayen.com/%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%97%e0%a6%b0-%e0%a6%b0%e0%a7%81%e0%a6%a8%e0%a6%bf-%e0%a6%ae%e0%a7%87%e0%a6%98-%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%ac%e0%a7%87%e0%a6%a6%e0%a6%a8-%e0%a6%ae/ https://kaberigayen.com/%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%97%e0%a6%b0-%e0%a6%b0%e0%a7%81%e0%a6%a8%e0%a6%bf-%e0%a6%ae%e0%a7%87%e0%a6%98-%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%ac%e0%a7%87%e0%a6%a6%e0%a6%a8-%e0%a6%ae/#respond Thu, 17 Mar 2022 06:08:15 +0000 https://kaberigayen.com/?p=8064 কোন ঘটনার অপ্রধান দ্বন্দ্বকে প্রধান দ্বন্দ্বে পরিণত করার যে রাজনীতি সেই বিন্দুতে এসে এসব প্রতিবেদন আসলে কালো সাংবাদিকতার অন্তর্গত হয়ে যায়। কালো সাংবাদিকতার অন্তর্গত হয়ে যায় মেঘ-কে নিজেদের রিপোর্ট জমকালো করার উপায় এবং উপকরণ হিসাবে ব্যবহার করাটা, তার শারীরিক-মানসিক নিরাপত্তার কথা একবারও চিন্তা না করাটা।

The post সাগর-রুনি-মেঘ প্রতিবেদন: মামুলি হলুদ ছাড়িয়ে কালো সাংবাদিকতায় first appeared on KG | Kaberi Gayen.

]]>

সাংবাদিকতার শিক্ষার্থী মাত্রেই জানেন, অন্তত বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতার শিক্ষার্থীদের জানতেই হয় সিলেবাসের সুবাদে, প্রচারণা-প্রপাগান্ডা-গুজবের সাথে সংবাদের পার্থক্য। শ্লাঘা বোধ করি যে বেশিরভাগ গণমাধ্যমেই সাংবাদিকতার বর্তমান এবং সাবেক শিক্ষার্থীরা রয়েছেন। বিশ্বাস করি যারা সাংবাদিকতার ক্লাশে পড়েন নি কিন্তু সাংবাদিকতা করেন তারা জানেন এই পার্থক্য। সাংবাদিকতার ক্লাশ করতে করতেই, কিংবা সাংবাদিকতা করতে করতেই তারা জেনে যান হলুদ সাংবাদিকতা সম্পর্কেও। জেনে যান কেনো হলুদ সাংবাদিকতা আদৌ সাংবাদিকতা নয়। কিন্তু এসব শ্লাঘা আর বিশ্বাসকে তছনছ করে মামুলি হলুদ সাংবাদিকতাকে ছাড়িয়ে কালো সাংবাদিকতার মহড়া দেখালেন আমাদের প্রায় সব জাতীয় দৈনিক এবং সম্প্রচার মাধ্যমের( দুই একটি ব্যতিক্রম বাদে) তারকা সাংবাদিকরা, তাদেরই দুই সহকর্মীর মৃত্যু-সংবাদ উপস্থাপন করতে গিয়ে।

খবর হিসাবে পুরনো হয়ে তথ্যে পরিণত হয়েছে যে, গত শনিবার নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন বাংলাদেশের দুই সম্প্রচার মাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিক দম্পতি মেহেরুন রুনি এবং সাগর সরওয়ার। নিজ গৃহে। স্বভাবতই দেশজুড়ে এই খুনের সাথে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত বিচারের দাবীতে ব্যাপক বিক্ষোভ, মানব-বন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং অব্যাহত রয়েছে। এসব প্রতিবাদ এবং দাবীর সবচেয়ে সোচ্চার কন্ঠ খুবই ন্যায্য কারণে নিহত সাংবাদিক দম্পতির সতীর্থরা, গণমাধ্যমের সাথে জড়িতরা। তাদের দাবির সাথে একাত্মবোধ করেছেন সারা দেশের পেশাজীবি, সাধারণ মানুষ। এই তীব্র আলোড়নের ভেতরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২৪ ঘন্টার মধ্যে খুনীদের খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ৪৮ ঘন্টার মধ্যে এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করার প্রতিশ্রুতি দেন।

দুঃখের বিষয় সেই ৪৮ ঘন্টা পার হয়ে ১০০ ঘন্টা ছাড়িয়েছে, দোষী ব্যক্তিদের দেশবাসীর সামনে এখনো সোপর্দ করতে ব্যর্থ হয়েছে আমাদের আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। অথচ গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি বিভিন্ন সংবাদপত্র এবং ইলেকট্রনিক মাধ্যমে তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের আগেই সংবাদ শিরোনামে নিহত সাংবাদিক মেহেরুন রুনির কথিত ‘পরকীয়া’ সম্পর্ককে দায়ী করে সংবাদ ছাপাতে এবং প্রচার করতে শুরু করেছে। যেমন, ‘হত্যা রহস্যের কেন্দ্রে রুনি’ (দৈনিক সমকাল, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০১২), ‘হত্যার কারণ কি রুনি’ (দৈনিক জনকণ্ঠ, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০১২), ‘খুনি নাগালে, তবুও অপেক্ষা!’(দৈনিক কালের কণ্ঠ, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০১২)।

কোন কোন সংবাদপত্র আবার এই ঘটনার সাথে জড়িত মর্মে ইঙ্গিত দিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির নামের আদ্যাক্ষর প্রকাশ করে পুরো ঘটনাকে স্রেফ একটি গুজবের আবহে ঠেলে দিয়েছেন। (উদাহরণ, ভোরের কাগজ, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০১২)।

অন্যদিকে, একেবারে শুরুর দিন থেকেই গণমাধ্যমের সংবাদসূত্র হিসাবে প্রধান লক্ষ্যশেল হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে সাগর-রুনি দম্পতির পাঁচ বছরের ছেলে মাহিন সরওয়ার মেঘকে। প্রায় প্রতিটি সংবাদমাধ্যমেই ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক কীভাবে, কত কষ্ট করে মেঘ-এর সাথে দেখা করেছেন এবং তাকে কী কী প্রশ্ন করেছেন, সে কী উত্তর দিয়েছে। প্রতিটি ইলেকট্রনিক চ্যানেলে তুমুল প্রতিযোগিতা দেখা গেছে কে কতবেশী মেঘকে প্রশ্ন করতে পেরেছে।

মেঘ-এর এলোমেলো, অগোছালো উত্তরের বিপরীতে সাংবাদিকদের উৎসাহব্যঞ্জক অবিরত নির্দেশনামূলক প্রশ্ন, তুমি কী দেখলে? রক্ত? ওরা ক’জন ছিলো? ওদের হাতে কি ছুরি দেখেছো? ছুরি কি রক্তমাখা ছিলো? মেঘ-এর দ্বিধান্বিত চাহনি, অস্পষ্ট সাজুয্যহীন উত্তর, বিমর্ষ মুখ কিছুই তাদের উৎসাহ কমাতে পারেনি। অথচ গণমাধ্যমের না জানার কথা নয় যে একজন প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে রেকর্ড না করলে মেঘ-এর এই ভাষ্য আদালতে গ্রহণ করা হবে না। অন্তত সাংবাদিকদের এই অ্যাডভেঞ্চারমূলকভাবে গৃহীত ভাষ্য আদালতে গ্রহণ করা হবে না।

এই মর্মান্তিক ঘটনাকে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের এহেন অবস্থান থেকে দু’টি স্পষ্ট প্রবণতা চিহ্নিত করা যায়।

প্রথমত, যে কোন অপরাধমূলক ঘটনাকেই নারীর তথাকথিত ‘অবৈধ’ সম্পর্কের মোড়কে উপস্থাপনের সবচেয়ে সস্তা প্রবণতা। এমনকি সেই নারী যদি নিজেও নিহত হন। কিংবা তার চোখও যদি উপড়ে ফেলা হয় যেমনটা দেখেছি রুমানা মঞ্জুরের ক্ষেত্রে, তবুও তার রেহাই নেই। নারী তার নিজের মৃত্যুর জন্য বা নিজের চোখ উপড়ে নেবার জন্যও নিজেই দায়ি। দুর্ভাগ্যের বিষয়, এর আগে নারীর দুর্ভাগ্যের জন্য নারীর ‘পরকীয়া’ জাতীয় রসালো খবরের যোগানদাতা হতো কিছু সুড়সুড়ি দেয়া ট্যাবলয়েড। এবার ট্যাবলয়েডের সাথে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে থাকতে চায়নি মূলধারার নামি সংবাদপত্রও। তাই প্রধান শিরোনাম করে এসব সুড়সুড়ি গাইলেন তারাও।

দ্বিতীয়ত, চোখের পানি নামানো সাংবাদিকতার (tear jerker journalism) প্রতিযোগিতায় নামা। সাধারণত দুর্বল, ভগ্ন অস্তিত্বের প্রতি মূলত করুণা তৈরি করে নিজের বাণিজ্য হাসিল করাই এসব সাংবাদিকতার উদ্দেশ্য, যার বলি হলো শিশু মেঘ। আমি নিশ্চিত, যদি মেঘ শিশু না হয়ে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ হতো, তাকে দিয়ে এতোবার এতোভাবে নির্দেশমূলক প্রশ্ন করে ক্যামেরার সামনে দাঁড় করানো যেত না। মেঘ পাঁচ বছরের একজন শিশু, তাই সে অসহায়। সে একারণেও অসহায় যে সে সদ্য মা-বাবাহারা, যে মা-বাবা হয়তো তার চোখের সামনেই মারা গেছেন, অন্তত তাদের রক্তাক্ত মৃতদেহ সে দেখেছে। সে আরো অসহায় কারণ এসব ক্যামেরার সামনে দাঁড় করানো ঠেকাতে পারার মত হিতৈষী তার কেউ ছিলো না। এবং সে সবচেয়ে অসহায় কারণ তার মা-বাবার সহকর্মীরাই তার অসহায়ত্বকে নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ব্যবহার করেছে তার মানসিক-শারীরিক নিরাপত্তার কথা না ভেবেই।

নিজেদের কৃতকর্মের সাফাই গাইতে গিয়ে যখন একটি সম্প্রচার মাধ্যমের কর্তাব্যক্তিদের একজন বলেন যে আমাদের দেশের আবেগের ধরণ ভিন্ন, তারা শিশুটির কুশল জানতে চায় বলেই তাকে ক্যামেরার সামনে প্রশ্ন করা হয়েছে কিংবা যখন একটি চ্যানেল থেকে বলা হয় সে-ই হচ্ছে একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র তাই তাকে ক্যামেরার সামনে আনা হয়েছে, তখন এই সমস্ত মাধ্যমের সাংবাদিকতার মান এবং নৈতিকতাকে প্রশ্ন না করে উপায় থাকে না।

দুটি প্রবণতাই মারাত্মক। এ যেন হলুদ সাংবাদিকতাকে ছাড়িয়ে কালো সাংবাদিকতায় পা রাখা। হলুদ সাংবাদিকতায় সত্যের সাথে মিথ্যার প্রলেপ এবং অতিরঞ্জন থাকে। কিন্তু এবার যা হলো তা হচ্ছে খুনের ভয়াবহতাকে প্রতিস্থাপন করার চেষ্টা করা হলো ভিত্তিহীন, মনগড়া, কাল্পনিক গল্প ফেঁদে। তদন্তকারী কর্মকর্তাদের তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের আগেই সংবাদমাধ্যমগুলো গুজব ছড়িয়ে দিলো কোন তথ্যসূত্র উল্লেখ না করেই। সাংবাদিকতার সাথে ‘গুজবাদিকতা’র (গুজব+সাংবাদিকতা) পার্থক্য এখানেই। যদি এমন হতো যে সংবাদমাধ্যমগুলো নিজস্ব অনুসন্ধানী রিপোর্টের ভিত্তিতে এ জাতীয় সিদ্ধান্তে আসতো, সেটি সাদরেই গৃহীত হতো। কিন্তু এগুলো অনুসন্ধানী রিপোর্ট ছিলো না, কারণ কোন তথ্যসূত্রের উল্লেখ পর্যন্ত নেই। ফলে যা প্রকাশিত হচ্ছে তা নেহাত গুজব। এ জাতীয় গুজবের চর্চা তখনই করা হয়, যখন প্রকৃত ঘটনার প্রকাশকে বাধাগ্রস্ত করে তোলার প্রয়োজন হয়।

সন্দেহ করা অমূলক নয় যে তদন্ত প্রক্রিয়াকে ব্যহত করে প্রকৃত ঘটনাকে ভিন্নখাতে ঠেলে দেবার জন্যই এসব গুজবের আমদানি ও প্রচার। মেহেরুন রুনির তথাকথিত ‘পরকীয়া’-র রসালো গল্পের নীচে ঢাকা পড়ে গেছে খুনীর প্রতি ক্রোধ। কোন নারীর ‘চরিত্রহীনতা’ প্রমাণ হচ্ছে পুরুষতন্ত্রের সেই সোনার কাঠি যা দিয়ে তার বিরুদ্ধে সংঘটিত সকল অন্যায়ের বৈধতা দেয় আমাদের সমাজ। ফলে তার হত্যাকারীর অপরাধ গৌণ হয়ে তার ‘অনাচার’-ই মূল ডিসকোর্স হয়ে ওঠে।

প্রশ্ন হচ্ছে, যদি ধরেও নেয়া যায় তর্কের খাতিরে যে রুনির বিয়ে বহির্ভূত কোন সম্পর্ক ছিলো, তা’হলেই বা কীভাবে খুনীর পরিচয়ের চেয়ে তার ব্যক্তিগত সম্পর্কের দিকেই ফোকাস করা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে এই কেসের ক্ষেত্রে? দুঃখজনক হলো, আমরা এখন পর্যন্ত খুনিদের সম্পর্কে কোন তথ্য জানতে পারিনি, অথচ সবাই রুনির নামে বানানো কাহিনী জেনে গেছি। এই ঘটনায় নিহত হয়েছেন দু’জন। অথচ রুনি এবং সাগর দুজনের মৃত্যুর জন্যই এসব গুজবের বিস্তার ঘটিয়ে দায়ী করা হচ্ছে খুনীকে নয়, বরং রুনিকে।

কোন ঘটনার অপ্রধান দ্বন্দ্বকে প্রধান দ্বন্দ্বে পরিণত করার যে রাজনীতি সেই বিন্দুতে এসে এসব প্রতিবেদন আসলে কালো সাংবাদিকতার অন্তর্গত হয়ে যায়। কালো সাংবাদিকতার অন্তর্গত হয়ে যায় মেঘ-কে নিজেদের রিপোর্ট জমকালো করার উপায় এবং উপকরণ হিসাবে ব্যবহার করাটা, তার শারীরিক-মানসিক নিরাপত্তার কথা একবারও চিন্তা না করাটা।

সংবাদ-মাধ্যমের কাছ থেকে এই দায়িত্বহীন আচরণ দুঃখজনক এবং অনভিপ্রেত। সংবাদ-মাধ্যমের এই কালো সাংবাদিকতাকে তীব্র নিন্দা জানাই। তীব্র নিন্দা জানাই পাঁচ বছরের শিশু মেঘকে দফায় দফায় তথ্য সংগ্রহের নামে যে নির্লজ্জ নিপীড়ন করা হচ্ছে, সেই দায়িত্বহীন নির্মম আচরণের। অনুগ্রহ করে রুনির চরিত্র হননকারী গুজব বন্ধ করুন। শিশু মেঘকে তার মত করে বাঁচতে দিন। প্রকৃত খুনীরা যেনো কোনভাবেই রেহাই না পায়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির দ্রুত বাস্তবায়ন দেখতে চাই।

আর চাই শিক্ষিত গণমাধ্যম, যে পরবর্তী মৃত্যুগুলোকে রোধ করতে ভূমিকা রাখবে। কিন্তু জানা কথা, গণমাধ্যমগুলো যেহেতু ব্যবসানির্ভর তাই মাঝে-মাঝেই এই কালো সাংবাদিকতা মাথা-চাড়া দিয়ে উঠবে যদি না মানুষের সংঘবদ্ধ প্রতিরোধ তৈরি করা যায়। মানুষের সেই সংঘবদ্ধ শক্তির জাগরণের কাছেই আমার যত প্রত্যাশা।

The post সাগর-রুনি-মেঘ প্রতিবেদন: মামুলি হলুদ ছাড়িয়ে কালো সাংবাদিকতায় first appeared on KG | Kaberi Gayen.

]]>
https://kaberigayen.com/%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%97%e0%a6%b0-%e0%a6%b0%e0%a7%81%e0%a6%a8%e0%a6%bf-%e0%a6%ae%e0%a7%87%e0%a6%98-%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%ac%e0%a7%87%e0%a6%a6%e0%a6%a8-%e0%a6%ae/feed/ 0
‘তোমার পতাকা যারে দাও…’ https://kaberigayen.com/%e0%a6%a4%e0%a7%8b%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%aa%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%95%e0%a6%be-%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%87-%e0%a6%a6%e0%a6%be%e0%a6%93/ https://kaberigayen.com/%e0%a6%a4%e0%a7%8b%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%aa%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%95%e0%a6%be-%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%87-%e0%a6%a6%e0%a6%be%e0%a6%93/#respond Tue, 15 Mar 2022 09:27:27 +0000 https://kaberigayen.com/?p=8054 প্রার্থনারত মানুষকেই আমরা সবচেয়ে শান্তিপ্রিয় ধরে নেই, তিনি যে ধর্মেরই হোন; উপাসনা শেষে উঠে আসা মানুষ কখনো সহিংস হতে পারেন না। সেই শান্তিপ্রিয় উপাসনাকারী মানুষদের ইমেজকেই ব্যবহার করা হলো এদেশের মূল প্রতীকগুলোকে আঘাত করার জন্য। করলেন তারা যারা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে এসেছেন বরাবর। ১৯৭১ সালেও মসজিদের ইমাম রক্ষা পাননি এই শক্তির কাছে। অথচ একটু ঘুরে দাঁড়ালেই এদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষেরা জাতীয় পতাকার বিপরীতে তাঁদের দাঁড় করিয়ে দেবার এই রাজনৈতিক কূটচালের ব্যাপারে সচেতন হয়ে উঠবেন বলে আমার বিশ্বাস। ফের এমন কোন উদ্যোগ তারা নিজেরাই প্রতিহত করবেন। ইসলামসহ সব ধর্মের শান্তিপূর্ণ রুপটি এই বাংলা থেকেই বিশ্ববাসী সবচেয়ে পরিপূর্ণভাবে অনুভব করা সম্ভব বলে মনে করি, কারণ সব ধর্মের সহমর্মিতার নির্যাস সংহত হয়েছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়।

The post ‘তোমার পতাকা যারে দাও…’ first appeared on KG | Kaberi Gayen.

]]>

যু’দ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার বিচারের রায়ে সংক্ষুব্ধ তরুণ প্রজন্ম শাহবাগে আন্দোলন করে যাচ্ছেন আজ এক মাস কুড়ি দিন হলো । তাদের দাবি প্রমাণিত যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড দিতে হবে। খানিক আগেই শাহবাগের মঞ্চ মশাল মিছিল করেছে ২৫ মার্চ কালো রাতের স্মরণে। মোম জ্বালিয়েছে তারা শহীদ মিনারে, জগন্নাথ হলে- আলোর স্মরণে আঁধার কাটার শপথে। গত পঞ্চাশ দিনের আন্দোলনে লাখো মানুষের সমাবেশ শাহবাগ পার হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে, দেশ ছাড়িয়ে সারা পৃথিবীতে, যেখানেই আছেন বাংলাদেশের মানুষ, বাংলাভাষী মানুষ। গণজাগরণের এমন নজির পৃথিবীতে বিরল। দিন-রাত নারী-পুরুষের ঐক্যবদ্ধ সমাবেশ যে এতো সুশৃঙ্খল, এতো প্রাণময়, এতো আশা জাগানিয়া হতে পারে, চোখের সামনে এই উদাহরণটি তৈরী না হলে জানা হতো না। এই সমাবেশ থেকে কখনোই একটি ঢিল ছোঁড়ার অভিযোগ ওঠেনি, লাখো নারী-পুরুষের সমাবেশে একটি ইভটিজিং-এর অঘটন ঘটেনি। বিশ্ব গণমাধ্যম শুরুতে এই জাগরণকে উপেক্ষা করলেও একেবারে নিশ্চুপ থাকতে পারেনি শেষ পর্যন্ত। গার্ডিয়ান, নিউ ইয়র্ক টাইমস, এমনকি আল জাজিরা পর্যন্ত এই অভূতপূর্ব জাগরণের পক্ষেই রিপোর্ট করেছে।

প্রজন্ম চত্ত্বরের তরুণরা আন্দোলন করে যাচ্ছেন অহিংস পথে। তারা দেখিয়েছেন বিপুল জনসমূদ্রের তিন মিনিট নীরবতায় কেমন প্রতিবাদী মহাকাল তৈরি করা যায়, লাখো-কোটি মানুষের একটি একটি মোমের শিখা কীভাবে সমর্থন-সহমর্মিতার আকাশ-গঙ্গা তৈরি করতে পারে দেশ জুড়ে, বেলুনে বেঁধে প্রিয়তম স্বজনের উদ্দেশ্যে উড়িয়ে দেয়া চিঠিগুলো কীভাবে হয়ে উঠতে পারে ৪২ বছর বুকে চেপে রাখা গভীর বেদনা প্রকাশের উপায়। দেখিয়েছেন তারা একটির পর একটি মহাসমাবেশ থেকে কীভাবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কর্মসূচী দেয়া যায়। যখন তারা হারিয়েছেন সহযোদ্ধা রাজীব কিংবা শ্লোগানরত অবস্থায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া শান্তকে, তখনো তারা সহিংস হয়ে ওঠেননি মূহুর্তের জন্য। শোককে শক্তিতে পরিণত করেছেন বিপুলতর উপস্থিতির মধ্য দিয়ে। এমনকি জাতীয় পতাকা পুড়িয়েছে যারা, ভেঙ্গেছে শহীদ মিনার, আগুন ধরিয়েছে জনতার মঞ্চে, এই তরুণ প্রজন্ম তাদের বিরুদ্ধে সহিংসতার পরিবর্তে রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে করেছেন পতাকার সমাবেশ। ২১ ফেব্রুয়ারি বধ্যভূমির কাছেই চা-এর স্টলে দাঁড়িয়ে শুনছিলাম একেবারেই খেটে খাওয়া এক মানুষের ইতিহাস বর্ণনা। তিনি বলছিলেন, ‘ভয়ের কিছু নাই। পাকিস্তানি সেনারাই পারে নাই ৭১ সালে…।’ এমন সব মানুষের সামষ্টিক যুদ্ধ-স্মৃতিই তরুণ প্রজন্মের শক্তি। সারা দেশটিই হয়ে উঠেছে যুদ্ধ-স্মৃতি বিনিময়ের জন-পরিসর, হেবারমাসের ভাষায় ‘পাবলিক স্ফিয়ার’। এই শক্তিতেই, সুশৃঙ্খল অথচ প্রত্যয়ী মিছিলকেই জামাতের ডাকা হরতালগুলো প্রতিহত করার মাধ্যম হিসাবে বেছে নিয়েছেন তরুণ প্রজন্ম । দাবি আদায়ের এমন শান্তিপূর্ণ গণজাগরণ দেশের ভবিষ্যত সম্পর্কে আশাবাদি করে। কারণ এই দেশের মুক্তিযুদ্ধ সংঘঠিত হয়েছিলো ‘একটি ফুলকে বাঁচানো’র জন্য।

কোন ঘটনাকে বোঝার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত উপায় হলো বিপরীত ঘটনার সাপেক্ষে তাকে বিচার করা। সারাদেশে লাখো মানুষের সমাবেশ থেকে শ্লোগান, কবিতা, গান, নাটক, লেখায় যে প্রতিবাদ, তার বিপরীত শক্তিকে দেখলাম অতর্কিত ঝাঁপিয়ে পড়তে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম-ভিত্তি যদি হয় ভাষা আন্দোলন, তার প্রতীক শহীদ মিনারকে আঘাত করা হলো সিলেটে। ১৯৫২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান সরকারের পুলিশ ও সেনাবাহিনী প্রথম শহীদ মিনার ভেঙ্গেছিলো। এরপর দেশের বিভিন্ন জায়গায় শহীদ মিনার ভাঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনী ও তার সহযোগীরা ১৯৭১ সালে। ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইটের সময় সম্পূর্ণভাবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ভেঙ্গে ফেলা হয়। আর সিলেটে জঙ্গি মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাংচুর করা হলো গত ২২ ফেব্রুয়ারি। শহীদ মিনারের প্রতি কাদের ক্ষোভ, ইতিহাসের এই রেকর্ড সে’বিষয়ে সাক্ষ্য দেয়। আমাদের পরম্পরা চিনে নিতে অসুবিধা হয় না। আমাদের পতাকার প্রতিই বা ক্ষোভ কাদের? স্বাধীন বাংলাদেশে বিশ্বাস আছে, এমন কোন মানুষ বাংলাদেশের পতাকা ছিঁড়তে পারে, বিশ্বাস করি না। ইসলামি ব্যাংকের রংপুর শাখায় ঘর পরিস্কার করা ঝাড়ুর মাথায় জাতীয় পতাকা বেধে রাখার ছবিও এসেছে। তা’হলে তারা কারা? নিশ্চয়ই বাংলাদেশ রাষ্ট্রে যাদের অনুগত্য নেই, তারাই। দেখলাম বায়তুল মোকাররম মসজিদের ভেতর রাখা জায়নামাজে আগুন দেয়া হয়েছে। কাদের ইতিহাস একই সাথে শহীদ মিনার, জাতীয় পতাকা এবং মসজিদের ভেতর আক্রমণ চালানোর?

প্রার্থনারত মানুষকেই আমরা সবচেয়ে শান্তিপ্রিয় ধরে নেই, তিনি যে ধর্মেরই হোন; উপাসনা শেষে উঠে আসা মানুষ কখনো সহিংস হতে পারেন না। সেই শান্তিপ্রিয় উপাসনাকারী মানুষদের ইমেজকেই ব্যবহার করা হলো এদেশের মূল প্রতীকগুলোকে আঘাত করার জন্য। করলেন তারা যারা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে এসেছেন বরাবর। ১৯৭১ সালেও মসজিদের ইমাম রক্ষা পাননি এই শক্তির কাছে। অথচ একটু ঘুরে দাঁড়ালেই এদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষেরা জাতীয় পতাকার বিপরীতে তাঁদের দাঁড় করিয়ে দেবার এই রাজনৈতিক কূটচালের ব্যাপারে সচেতন হয়ে উঠবেন বলে আমার বিশ্বাস। ফের এমন কোন উদ্যোগ তারা নিজেরাই প্রতিহত করবেন। ইসলামসহ সব ধর্মের শান্তিপূর্ণ রুপটি এই বাংলা থেকেই বিশ্ববাসী সবচেয়ে পরিপূর্ণভাবে অনুভব করা সম্ভব বলে মনে করি, কারণ সব ধর্মের সহমর্মিতার নির্যাস সংহত হয়েছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়।

এরপর এই অপশক্তি গত একমাস ধরে ক্রমাগত আঘাত করে যাচ্ছে হিন্দুদের মন্দির, জনবসতি আর ব্যবসা-বাণিজ্যের উপর। সরকার হিন্দুদের উপর নেমে আসা এই নির্যাতনকে সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে আর সেই অভয়ারণ্যে ক্রমাগত হ্রাস পাওয়া হিন্দু ধর্মীয় উপাসনালয়ের উপর আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে। শুরু হয়েছিলো বাঁশখালি, সাতকানিয়া, বেগমগঞ্জে। গত একমাসে সারা দেশে এমন কোন এলাকা নেই, যার কোন না কোন মন্দির বা বিগ্রহ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়েছে। বেদনা বোধ করি যখন দেখি, দফায় দফায় এই ধ্বংস-লীলা চালিয়েছে যারা, তাদের এক বড় অংশ ছিলো ১২ থেকে ১৫ বছরের শিশু-কিশোর। রামুর বৌদ্ধবিহারগুলোতে যারা আক্রমণ চালিয়েছিলো গত বছর অক্টোবরে, কিংবা তার আগে সাতক্ষীরায়, তাদের মধ্যেও ১৪ থেকে ২২ বছরের কিশোর-তরুণদের আধিক্যই ছিলো বেশি। এইসব শিশু-কিশোরদের ভবিষ্যত কী?

Shahbag Protest, Dipu Malakar, 2013

এই আন্দোলনকে ধ্বংস করার জন্য নানা প্রচারণা চালানো হচ্ছে শুরু থেকেই। রাজীব ব্লগার ছিলেন, কিন্তু তিনি এই আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় কেউ ছিলেন না। তিনি আস্তিক কি নাস্তিক সেই বিষয়েও কোন কথা তার জীবদ্দশায় ওঠেনি। তাকে হত্যার দুই ঘন্টার মাথায় তার নামে ‘নূরানী চাপা সমগ্র’র লিংক প্রকাশ করে পাকিস্তানের একটি ওয়েবসাইট। সেখানে রাজীবের খুনের খবরের পাশাপাশি ‘নূরানী চাপা সমগ্র’র লেখক হিসাবেও উল্লেখ করা হয়। অনলাইন নিয়ে কাজ করেন এমন প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, এই বিতর্কিত লেখাগুলো রাজীবের নয়। আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ প্রতিষ্ঠান কোয়ান্টকাস্টের (quantcast.com) দেয়া তথ্যেও এমনই প্রমাণ মেলে। যে পোস্টটিকে দাবি করা হচ্ছে ২০১২ সালে লেখা, ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজীব হত্যাকান্ডের আগে কেউ সাইটটিতে ঢুকেছেন, এমন কোন প্রমাণ নেই কোয়ান্টকাস্টে অথচ লিংকটি ছড়িয়ে দেয়ার ফলে একদিনে মোট ভিজিটর সংখ্যা দাঁড়ায় ৬০ হাজারের বেশী। অনলাইন ট্রাফিক ও পর্যবেক্ষণ সাইট alexa.com- এর মতেও ১৫ ফেব্রুয়ারির আগে এই সাইটটিতে ভিজিট করার তথ্য নেই। আমারব্লগ.কম-এর অন্যতম অ্যাডমিন প্রকৌশলী সুশান্ত দাশগুপ্ত অ্যালেক্সা ও কোয়ান্টকাস্টের তথ্য তুলে ধরার পাশাপাশি জানান, “ব্লগটি এক বছর আগের দেখানো হলেও ওয়েব আর্কাইভে এর কোন হদিস নেই।” (বিডিনিউজ২৪ডটকম)। সবচেয়ে বড় কথা, যাকে হত্যা করা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে আর কী অভিযোগ থাকা সম্ভব?

ধর্মানুভূতিতে আঘাতের বিপক্ষে দেশে আইন রয়েছে, সে’পথে না গিয়ে আন্দোলনকারীদের ঢালাওভাবে অভিযুক্ত করার এই উস্কানিমূলক রাজনীতি না বোঝার কারণ নেই। আরেকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। ধর্মানুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে নিষিদ্ধ হয়েছে সালমান রুশদীর স্যাটানিক ভার্সেস, তসলিমা নাসরীনের লজ্জা, ইউটিউব-ই বন্ধ করা হয়েছে ইনোসেন্স অব মুসলিম-এর জন্য। ব্যক্তিগত ব্লগের যে লেখাকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে ধর্মানুভূতিতে আঘাতকারী হিসাবে, সেই লেখাকে চিরতরে নিষিদ্ধের দাবি না তুলে কেনো একটি জাতীয় দৈনিকের পাতায় ছাপানো হয়েছে সবার পড়ার জন্য? ধর্মের দোহাই দিয়ে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির ইতিহাসটি ভাষা আন্দোলনের সময় থেকেই জারি আছে এই ভূখন্ডে। আজ যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সারা দেশ ঐক্যবদ্ধ হয়ে উঠছে, তখন ট্রাম কার্ডটি যে ধর্মের নামেই ফেলা হবে, সেটিই স্বাভাবিক। সেই পঙ্কিল রাজনীতিকে যে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এতো খোলাখুলিভাবে সমর্থন করবেন, সেটি অভাবিত ছিলো। আবার সরকারও যে ক্রমাগত এইসব অপপ্রচারের শক্তির কাছে নতি-স্বীকার করবে, সেটি শুরুর দিকে তাদের সমর্থন এবং উচ্ছ্বাস দেখে বোঝা যায়নি। বিশেষত, কমিটি গঠন করে ব্লগ ঘেঁটে ব্লগারদের কে কে ‘ধর্মীয় অনুভূতি’তে আঘাত করেছে বের করার যে উদ্যোগ সরকার গ্রহণ করেছে সেটির উদ্দেশ্য খুব পরিস্কার নয়। ভোটের রাজনীতি ভিন্ন এর আর কী উদ্দেশ্য থাকতে পারে? এ পর্যন্ত সরকারকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রশ্নে আন্তরিকই মনে হয়েছে। ফলে এইসব দাবির কাছে আত্মসমর্পণ করে ব্লগার-অ্যাক্টিভিস্টদের জাতির সামনে নাস্তিক প্রমাণ করার দায়িত্বটি সরকার কেনো নিলেন বোঝা যাচ্ছে না। এই অস্পষ্টতা গোটা আন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, কিন্তু যুদ্ধাপরাধের বিচারকে যেনো বাধাগ্রস্ত না করতে পারে, সেটিই এই আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত সবার পাহারাদারির জায়গা।

প্রজন্ম চত্ত্বরের তরুণদের অর্জন অনেক। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিকে দেশের দাবিতে পরিণত করা, সেই দাবির পাটাতনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা, যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত দলটির রাজনীতি করার বৈধতার বিষয়টিকে জন-পরিসরের অভিতর্কে নিয়ে আসা এসব তাৎক্ষণিক অর্জনের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ফিরিয়ে আনার মধ্য দিয়ে একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র নির্মাণের প্রতিজ্ঞা ছড়িয়ে দেয়া সারা দেশে এবং এদেশে ভবিষ্যতের যে-কোন কর্মকাণ্ডের ন্যূনতম যাত্রাবিন্দু হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এমন আকাঙখাও জাতিকে দেখাতে পেরেছে এই আন্দোলন। তবে জাগরণের প্রথম উচ্ছাসশেষে আন্দোলনটি এখন কঠিন রাজনৈতিক বাস্তবতার মুখোমুখি। আন্দোলনরত তরুণদের জীবনাচরণসহ নানা ধরণের অপ্রধান বিষয়গুলোকে প্রধান করে তুলে আন্দোলনটিকে মূল দাবি থেকে সরিয়ে দেবার চেষ্টা যা শুরু হয়েছে, তা জারি থাকবে। সেইক্ষেত্রে, শুনতে খারাপ লাগলেও, ভোটের রাজনীতির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে, শাহবাগ আন্দোলনের মূল স্পিরিটের সাথে সরকারি দলের সমর্থন কোন মাত্রায় জারি থাকবে, নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না সাম্প্রতিক কিছু পদক্ষেপ দেখে। এসব অপচেষ্টার মুখে আন্দোলনের মূল দাবিকে সমুন্নত রাখা এবং বেগবান করাই সামনের দিনের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ। যারা পতাকা ছেঁড়ে, শহীদ মিনার ভাঙ্গে, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম অঙ্গীকার জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্নকে বারে বারেই রক্তাক্ত করে – তাদের হাত থেকে জাতীয় পতাকা সমুন্নত রাখার ঐতিহাসিক দায়িত্ব আজ প্রজন্মের তরুণদের হাতে। শাহবাগের ঐতিহাসিক জাগরণের পরে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে গড়ে তোলার দায়িত্ব অনিবার্যভাবে তাদের হাতেই ন্যস্ত হয়েছে, কারণ যারা স্বপ্ন দেখায় সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের দায়িত্বও তাদের উপরেই ন্যস্ত হয়। একইসাথে রাজনৈতিক দলবিহীন মুক্তিযুদ্ধের রাজনীতি নিয়ে এগিয়ে যাওয়া এই শাহবাগ চত্ত্বরের প্রতিজ্ঞাকে, আন্দোলনকে এই দেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তি কীভাবে তাদের রাজনীতিতে সৃজনশীলভাবে প্রয়োগ করতে পারে, তার উপরেই বাংলাদেশের ভবিষ্যত চেহারাটি নির্ভর করছে।
তোমার পতাকা যারে দাও, তারে বহিবারে দাও শকতি।

The post ‘তোমার পতাকা যারে দাও…’ first appeared on KG | Kaberi Gayen.

]]>
https://kaberigayen.com/%e0%a6%a4%e0%a7%8b%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%aa%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%95%e0%a6%be-%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%87-%e0%a6%a6%e0%a6%be%e0%a6%93/feed/ 0
কিছু কালোসিধে কথা বলতে চাই https://kaberigayen.com/%e0%a6%95%e0%a6%bf%e0%a6%9b%e0%a7%81-%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%b2%e0%a7%8b%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%a7%e0%a7%87-%e0%a6%95%e0%a6%a5%e0%a6%be-%e0%a6%ac%e0%a6%b2%e0%a6%a4%e0%a7%87-%e0%a6%9a%e0%a6%be/ https://kaberigayen.com/%e0%a6%95%e0%a6%bf%e0%a6%9b%e0%a7%81-%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%b2%e0%a7%8b%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%a7%e0%a7%87-%e0%a6%95%e0%a6%a5%e0%a6%be-%e0%a6%ac%e0%a6%b2%e0%a6%a4%e0%a7%87-%e0%a6%9a%e0%a6%be/#respond Tue, 15 Mar 2022 08:30:15 +0000 https://kaberigayen.com/?p=8043 তা’হলে প্রশ্নটা হলো, যদি রুমানার সত্যিই অন্য কোন পুরুষের সাথে নতুন করে সম্পর্ক গড়ে উঠতো, তা’হলেও সাইদ এই অত্যাচারের অধিকারী কি না বা রুমানার উপর চালানো এই ভয়াবহ অত্যাচারের প্রতিবাদে আমরা দাঁড়াবো কি না। প্রথম প্রশ্নের উত্তর হলো, না। সাইদ বড়জোর বিয়ে-বিচ্ছেদের নোটিশ দেবার অধিকারী। দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর হলো, অবশ্যই। একজন নির্যতিত মানুষের পাশে সমর্থন নিয়ে দাঁড়ানোর জন্য তার চারিত্রিক সনদ হাতে রাখার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু সামাজিক অনুভব কাঠামোতে এই সত্যটিকে নিয়ে আসার জন্য সচেতন মেয়েদের যেমন এগিয়ে আসতে হবে তেমনি সচেতন রাজনৈতিক প্রতিরোধের প্রয়োজন রয়েছে।

The post কিছু কালোসিধে কথা বলতে চাই first appeared on KG | Kaberi Gayen.

]]>

ভে’বেছিলাম লিখবো না, কারণ লিখে খুব কিছু হয় যে সবসময় এমন দাবি করা যাচ্ছে না, এবং শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ফাহমিদা বা গণযোগাযোগ বিভাগের মেধাবী ছাত্রী সুতপা’র মৃত্যুকে কেন্দ্র করে লেখালেখি থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে এ’সব লেখালেখি করে নিজে খানিকটা সান্ত্বনা পাওয়া যায় যে ছিলাম আমিও প্রতিবাদে, এর বাইরে খুব যে কাজ হয় তেমন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তবুও আজ লিখছি বা বলা ভালো যে না লিখে পারছি না এই অন্তর্গত তাড়না থেকে যে সত্যিই যখন আজ রুমানা দেশে ফিরেছেন তার ডান চোখের আলো ফিরে পাবার শেষ আশ্বাসটুকু ছাড়াই তখন ওই যে আমিও ছিলাম প্রতিবাদে কেবল সেই গোঁয়ার সান্ত্বনাটুকুর জন্যই হয়তো এই লেখা। ভেতরে কোথায় যেন একটা শুভবোধ কাজ করছিলো যে অন্তত এক চোখের আলো তার ফিরে আসবে। সেই শুভবোধের, আশার ক্ষীণ আলোটিও যখন শেষ হয়ে গেলো, তখন আমি সত্যিই কিছু কালোসিধে কথা বলতে চাই।

যে অন্ধত্ব এবং আপোষ কেড়ে নিয়েছে চোখের আলো
কথা খুব সহজ। রুমানা মঞ্জুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। কানাডার বৃটিশ কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি গবেষণারত। তার শিক্ষার্থীদের বয়ানে জানা যায় (বিভিন্ন ব্লগে, ফেসবুকে মন্তব্য থেকে) তিনি একজন জোরালো শিক্ষক। তার পারিবারিক অবস্থানও অত্যন্ত জোরালো, বাবা অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা। স্বামী সুদর্শন এবং বুয়েট থেকে পড়াশুনা করা। সহকর্মীরা দাবি করেছেন তার অমায়িক আচরণের কথা। কানাডা থেকে তার প্রতিবেশীরা একত্রিত হয়ে একটি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেছেন তার স্বামী’র শাস্তি দাবি করে এবং সেখানে তারা উল্লেখ করেছেন রুমানাকে তাদের আড্ডায়-আসরে খুব বেশি পাওয়া যেত না কারণ তিনি ক্যাম্পাস থেকে ফিরে প্রতিদিন ফোন করতেন তার মেয়ে এবং স্বামীর সাথে কথা বলার জন্য। এভাবে শিক্ষিত স্বাবলম্বী শক্তিশালী অবস্থানের সংসারমুখী রুমানা মঞ্জুর সমাজের প্রতিষ্ঠিত ভালো মেয়ের এবং আদর্শ স্ত্রী’র সব তরিকা পূরণ করেছেন। কিন্তু তবুও তাকে স্বামীর হাতে নির্যাতিত বলে নির্যাতিত, একেবারে দু’টো চোখই খুইয়ে বসতে হয়েছে। তার নাক কামড়ে ছিঁড়ে নিয়েছে সেই স্বামী, যাকে তিনি একদিন ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন। প্রায় সব পত্রিকায় আরো যে খবরটি এসেছে তা হলো তিনি গত দশ বছর ধরেই কম-বেশি নির্যাতন সহ্য করে এসেছেন। এমনকি এবার আসার পরও না কি তার বেকার স্বামী, যিনি তার বাবার বাড়িতেই থাকেন, তাকে তিন দিন একটি ঘরে আটকে রেখেছেন। সবশেষে বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাতকারে (২০ জুন, ২০১১) রুমানা মঞ্জুরের বাবা বলেছেন মেয়ের জীবন এবং তার পরিবারের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে তারা শংকিত।

সংবাদ সম্মেলনে রুমানা। মুস্তাফিজ মামুন, ২০১১।
স্বাভাবিকভাবেই দেশবাসীর সহানুভূতি রুমানার সাথে। আমি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকর্মী হিসাবে ঘটনার শুরু থেকেই বেদনা এবং ক্ষুব্ধতার কোন তল পাচ্ছি না। একই অবস্থা প্রায় সবার। সবাই এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাইছেন। আমিও চাই, এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি তাকে দেয়া হোক যেনো ভবিষ্যতে কেউ এমন করার আগে সম্ভাব্য শাস্তির ভয়াবহতা মনে করে হলেও উদ্যত হাত নামিয়ে ফেলে। এ’কথা সত্য এ’জাতীয় ঘটনা বাংলাদেশের অনেক ঘরেই ঘটে কিন্তু এই ঘটনাটি এতো আলোড়ন তুলেছে এ’কারণেই যে প্রায় অবিশ্বাস্য রকমের নিখুঁত অবস্থানের একজন নারীও কতখানি অসহায় হয়ে উঠতে পারেন মুহূর্তে এবং তারচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ এমন একজন নারী কীভাবে দশবছর ধরে এই নির্যাতনকারীর সাথে ঘর করেছেন প্রশ্ন উঠছে সে বিষয়েও। এই ‘কীভাবে’র উত্তরটি খুঁজতে যাবার আগে আরো একটি প্রয়োজনীয় তথ্য উল্লেখ করে রাখতে চাই। রুমানা নির্যাতিত হবার সাতদিন পরে ঘটনাটি গণমাধ্যমে আসতে পেরেছে বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অফিসিয়ালি অবগত হয়েছে। জানা যায়, পরিবার থেকেই বিষয়টি চেপে রাখার একটি ব্যাপার ছিলো।

ঘটনার অন্যদিকে, খবরটি গণমাধ্যমে আসার অনেক পরে আসামী গ্রেফতার হয়েছেন, সব মিলিয়ে তিনি প্রায় দশদিনের মত সময় পেয়েছেন নিজেকে গুছিয়ে নেবার। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেবার আগ পর্যন্ত পুলিশ তাকে ধরতে পারেনি অথচ প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেবার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশ গ্রেফতার করতে পেরেছে। কারণ সম্ভবত নির্যাতক হাসান সাইদ জনৈক মন্ত্রীর ভাই। তার এই সামাজিক পরিচিতিটি গুরুত্ত্বপূর্ণ এ’কারণে যে এই অবস্থানের কারণে তিনি পালিয়ে থাকতে পেরেছেন অথচ গণমাধ্যমে তার বেকারত্ব থেকে শুরু করে নানা ধরনের অসহায় অবস্থানের বিষয়টি তুলে ধরে তার আচরণের প্রতি একধরনের সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টাও করেছেন। দ্বিতীয়ত, গ্রেফতার হবার পর সাইদ হাসান প্রথমেই চেষ্টা করেছেন নিকৃষ্টতম পদ্ধতি দিয়ে শুরু করতে আর তা হলো রুমানার সাথে এক ইরানী তরুণের ‘অবৈধ’ প্রেমের গল্প ফাঁদা, যা আমাদের সামাজিক বাস্তবতায় প্রায় অব্যর্থ মহৌষধের কাজ করে। ফলে রাতারাতি আরেকটি পক্ষ দাঁড়িয়ে গেলো যারা সাইদের অসহায় দৃষ্টিশক্তিহীন কর্মক্ষেত্রে অসফল এবং প্রতারিত স্বামীর ইমেজের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে উঠলেন। যদিও পরে তিনি স্বীকার করেছেন এটি বানানো, তার স্ত্রীর এমন কোন সম্পর্ক নেই। মোটামুটি এই কাঠামোর ভেতর থেকে, পারিবারিক সহিংসতার এই ঘটনা থেকে কয়েকটি প্রবণতা বের করে আনতে চাই। এই প্রবণতাগুলো বের করে আনতে যে চলকগুলো ব্যবহার করা হবে তা হলো, নির্যাতক, নির্যাতিত, সমাজ এবং রাজনীতি।

নির্যাতক সাইদ এবং পুরুষতন্ত্র
শুরু করছি সাইদের ঘটনা থেকে। প্রথমত, সাইদ বুয়েটের পড়ালেখা শেষ না করা, বার বার ব্যবসায় ব্যর্থ, প্রায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, অসফল এবং হতাশ এক পুরুষ, যে নিজের অক্ষমতার জ্বালা মেটাতে চেয়েছে, তার বক্তব্য অনুযায়ী, রুমানাকে খুন করে। এই একটিমাত্র ক্ষেত্রে সে সাফল্যের পরিচয় দিতে পেরেছে। প্রাণে মেরে ফেলতে না পারলেও কামড়ে রুমানার নাক তুলে নিয়ে এবং চোখ উপড়ে ফেলে সে একবার তার ‘পুরুষত্বের’ জানান দিতে পেরেছে। অর্থাৎ একজন সব অর্থে অসফল পুরুষ, সব অর্থে একজন সফল নারীকে (সাইদকে জীবনসঙ্গী নির্বাচনের মত অসফল কাজটি করা ছাড়া) নিজের কব্জায় রাখার জন্য মেরে ফেলতে চেয়েছে। এই চাওয়ার বৈধতা হলো তার স্বামীত্ব। স্বামীত্ব হলো সেই প্রভুত্ব যা দিয়ে স্ত্রীকে মেরে ফেলার চিন্তা পর্যন্ত করা চলে এবং সেই চিন্তা ও কাজের পক্ষে সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করা সম্ভব।

এই ভয়াবহ অপরাধটি সংঘটিত করে সাইদ কিন্তু অনুতপ্ত হননি বরং দ্বিতীয় অপরাধটি করার প্রস্তুতি নিয়েছেন। তার স্ত্রী’র চরিত্রে কালি দিতে চেয়েছেন কল্পিত প্রেমিকের গল্প ফেঁদে। অর্থাৎ শারীরীকভাবে প্রায় খুন হয়ে যাওয়া মেয়েটিকে তিনি তখন সামাজিকভাবে খুন করতে চেয়েছেন। নিজের অপরাধকে লঘু করার জন্য স্ত্রীকে খুন করতে এবং তার চরিত্র কলঙ্কিত করতে তিনি এতটুকু বিচলিতবোধ করেননি। এখানেও তার স্বামীত্ব তার অহম-কে তৃপ্ত করতে ব্যবহৃত হয়েছে। এই কাজটি তিনি করতে পেরেছেন কারণ প্রতারিত স্বামীত্বের ইমেজ তৈরি করতে পারলে স্ত্রী’র বিরুদ্ধে যে-কোন অন্যায়কে আমাদের সমাজ এখনো বৈধতা দেয়, আইন না দিলেও। যেমন ’পতিতা’ প্রমাণ করতে পারলে যে কোন ধর্ষণ বা খুনের মামলা থেকে সামাজিকভাবে মুক্তি পাওয়া যায় । ইয়াসমীন হত্যা বা জেলের কাস্টডিতে থাকার সময় পুলিশের দ্বারা প্রথমে ধর্ষিত ও পরে খুন হয়ে যাওয়া সীমার ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি কীভাবে তাদের পতিতা বানানোর চেষ্টা করা হয়েছিলো। যেনো একজন পতিতাকে খুন করা জায়েজ। সাইদ সেই চেষ্টা এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন। (মানবজমিন, ২১ জুন ২০১১)।

নির্যাতিত রুমানা এবং তার পরিবার
রুমানার দুই চোখের আলো নিভে গেছে। ক্ষতবিক্ষত নাক এবং মুখমন্ডল নিয়ে তিনি ধুকছেন হাসপাতালে। রুমানার প্রতি সহানুভূতি ও শুভকামনার সাথে সাথে একটি প্রশ্ন জোরালো হয়ে উঠছে, কেনো তিনি এতো দিন ধরে এই নির্যাতন সহ্য করেছেন? তার পর্যায়ের এক নারীর তো এমন সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার কথা না। ধর্ম এবং আইন-দুই-ই বৈধতা দিয়েছে অসহনীয় বিবাহিত সম্পর্ক ছিঁড়ে ফেলার। যেহেতু এই প্রশ্ন করার অবস্থায় রুমানা নেই তাই ধারণা করে নিতে হচ্ছে, হয়তো সম্পর্কটি টিকিয়ে রাখার ভালোমানুষী চেষ্টা যা ভালাবাসা থেকেই উৎসারিত বা সন্তানের মুখ চেয়ে থেকে যাওয়া বা সামাজিক দৃশ্য-অদৃশ্য চাপের কাছে নতি-স্বীকার। হয়তো সবগুলোই সত্য। শেষ অনুমিতিটিই প্রবল হয়ে ওঠে যখন দেখা যায় নির্যাতনের সাতদিন পর্যস্ত এই ঘটনাটি অন্তত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার্স লাউঞ্জের মূখ্য আলোচনার বিষয় হলেও অফিসিয়ালি সেটা পরিবার থেকে জানানো হয়নি। না বিশ্ববিদ্যালয়কে, না গণমাধ্যমকে। আমরা এখনো জানিনা, সাইদের পক্ষ থেকে কী ধরণের চাপ ছিলো কিন্তু যদি ধরেও নেই সাইদের পক্ষ থেকে প্রবল কোন চাপ ছিলো কিন্তু তাই বলে হত্যাচেষ্টার পুলিশকেস করা হবে না সাতদিন পর্যন্ত, এ কেমন কথা? তা’হলে কি পরিবার তখন পর্যন্ত ঘটনাটি চেপেই রাখতে চাইছিলো? নির্যাতিত রুমানা এবং তার পরিবারও পুরুষতান্ত্রিক নিপীড়ন-কাঠামোকে টিকিয়ে রাখছেন।

সামাজিক অনুভব কাঠামো
আপাতঃদৃষ্টিতে রুমানাকে এইমতো সম্পর্কের রেশ এতো দীর্ঘদিন বয়ে নেবার জন্য দায়ী করাই যায় কিন্তু একটু খোঁজ নিলে হয়তো দেখা যাবে তার সন্তানের নিরাপত্তা এবং পিতৃপরিবারের সম্মানের কথা ভেবে তিনি সরে যেতে পারেন নি। পরিবারও তাকে উৎসাহিত করতে পারেনি সামাজিক লোকলজ্জার ভয়ে। সুতপার ক্ষেত্রেও দেখেছিলাম তার মৃত্যুর পর তার ভাইবোনেরা বলেছেন সুতপাকে তার স্বামী প্রায়্ই মারধোর করত। তখনও আমার প্রশ্ন ছিলো যে আদরের বোনকে হারিয়ে তারা পাগল-প্রায়, সেই বোনের দিনের পর দিন নির্যাতনের কাহিনী শুনেও তারা কেন বোনকে ওই বিয়ে থেকে সরিয়ে আনেন নি। সুতপার ক্ষেত্রে পরিবারকেই দায়ী করতে হয় কারণ সুতপা তখনও ছাত্রী, অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জন করেন নি। রুমানার ক্ষেত্রে তো তা নয়, কিস্তু সত্য হলো রুমানা সরে আসতে পারেন নি। আমরা যে সামাজিক অনুভব কাঠামোর মধ্যে বসবাস করি সেখানে দৃশ্য-অদৃশ্য এতো চাপ থাকে যা অতিক্রম করার জন্য তথাকথিত ‘ভালো মেয়ে’ বা ‘ভালো স্ত্রী’র ইমেজটিকে পরিত্যাগ করার মত মানসিক দৃঢ়তা না থাকলে এই নিপীড়নের সাথেই বসবাস করতে হয়। আমাদের রুপকথা থেকে শুরু করে কাব্যে, সাহিত্যে, পুঁথি-পাঁচালিতে, প্রবাদে, পুরাণে, ধর্মে, ইতিহাসে, উপন্যাসে, গানে, নাটকে, চলচ্চিত্রে ভালো নারীত্বের যে ‘গুণী অথচ দুর্বল’ এবং পুরুষের প্রতি নির্ভরশীল, যা পিতা পুরুষ থেকে স্বামী পুরুষে হস্তান্তরের প্রক্রিয়ামাত্র, তকমাটা এঁটে দেয়া হয়েছে রুমানারা হয়ে উঠেছেন সেই ভালো নারীত্বের প্রতিনিধিত্বকারী অসহায় শিকার। আর তাই তিনি যখন আক্রান্ত তখনও দেখি একদল পত্রিকা চায় তাকে পৃথিবীতে অসম্ভবপ্রায় নিষ্কলুষ চরিত্রের (যেমন তিনি মৃদুভাষী, পাঁচবেলা নামাজ পড়েন, মাথায় কাপড় দিয়ে কানাডার প্রতিবেশীদের সাথে দেখা করেন, কানাডার প্রতিবেশীরা তাকে চেনেন তার মিষ্টি ব্যবহার এবং ভালো রান্নার জন্য ইত্যাদি) করে উপস্থাপন করতে, আরেকদল পত্রিকা চায় তার কথিত প্রেমের কাহিনী চাউর করে সাইদের অপরাধের ভার লাঘব করতে। দুই ক্ষেত্রেই রুমানার প্রতি কতটা সহানুভূতি থাকবে তা নির্ধারণ করার চেষ্টা করা হয় তথাকথিত ভালোমেয়ের সার্টিফিকেট সাপেক্ষে। এবং সাইদ নাক থেতলে, চোখ তুলে না নেয়া পর্যন্ত রুমানার এই বিয়ে-সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার বৈধতা তৈরি হয় না।

তা’হলে প্রশ্নটা হলো, যদি রুমানার সত্যিই অন্য কোন পুরুষের সাথে নতুন করে সম্পর্ক গড়ে উঠতো, তা’হলেও সাইদ এই অত্যাচারের অধিকারী কি না বা রুমানার উপর চালানো এই ভয়াবহ অত্যাচারের প্রতিবাদে আমরা দাঁড়াবো কি না। প্রথম প্রশ্নের উত্তর হলো, না। সাইদ বড়জোর বিয়ে-বিচ্ছেদের নোটিশ দেবার অধিকারী। দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর হলো, অবশ্যই। একজন নির্যতিত মানুষের পাশে সমর্থন নিয়ে দাঁড়ানোর জন্য তার চারিত্রিক সনদ হাতে রাখার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু সামাজিক অনুভব কাঠামোতে এই সত্যটিকে নিয়ে আসার জন্য সচেতন মেয়েদের যেমন এগিয়ে আসতে হবে তেমনি সচেতন রাজনৈতিক প্রতিরোধের প্রয়োজন রয়েছে।

কেন এটিও রাজনৈতিক লড়াই
কেন কোন মেয়ে নির্যাতিত হয়েও বিবাহিত সম্পর্কে টিকে থাকতে চায় বা মেয়েকে নির্যাতিত জেনেও তার পরিবার সেই সংসারটি টিকিয়ে রাখতেই মদদ দেয়? এই লৈঙ্গিক সংস্কৃতিটি বুঝতে হবে রাজনৈতিক অর্থশাস্ত্রীয় সম্পর্কের সাপেক্ষে। স্বামীর বাড়ি থেকে বের হয়ে আসা মানে তার আর নিজের কোন জায়গা না থাকা। নারী বঞ্চিত তার উত্তরাধিকার সম্পত্তি থেকে। মেয়েটির পরিবারে ফিরে আসা মানে ভাইয়ের সম্পত্তিতে অংশভাগ নেয়া। বাবার বা ভাইয়ের পরিবার মেয়ে-জামাই-নাতি এলে তাকে মুরগী জবাই করে খাওয়াতে আগ্রহী কিন্তু মেয়েকে সেই সম্পত্তির অংশভাগ দিতে আগ্রহী নয় পিতা বা ভাই নামের পুরুষতন্ত্র। আগ্রহী নয় তার এবং তার সন্তানের দেখভাল করার দায়িত্ব নিতে। অথচ মেয়েকে গুনী হিসাবে তৈরি করলেও তাকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলেনি পরিবার এবং সমাজ। বিয়ের সময় খুব বড় শিক্ষিত পরিবারেও বলতে শুনেছি, ‘আমার মেয়ে শুধু কলেজে যায় আর বাসায় আসে। আমরাই সাথে করে নিয়ে যাই আবার নিয়ে আসি। ও পথ-ঘাটও চেনে না।’ কাজেই স্বামীর সংসার থেকে ফিরে আসা মানে স্নেহময় পিতা কিংবা ভাইয়ের উপর নির্ভরশীলতা। বিয়ে দেবার মধ্য দিয়ে পিতৃপরিবার এই দায় থেকে এক ধরনের মুক্তি নিয়ে নেয়, ফলে নতুন করে সেই দায় নিতে রাজী থাকে না। দ্বিতীয়ত, সন্তানের অভিভাবকত্ব। বাংলাদেশে বিয়ে, বিয়েবিচ্ছেদ, সন্তানের অভিভাবকত্ব এবং সম্পদে অধিকারের মত বিষয়গুলো চলে পারিবারিক আইনের কাঠামোতে। নারীর অধিকার কেবল সন্তানের জন্মদান এবং লালন-পালনে, নারী তার সন্তানের বৈধ অভিভাবক নয়, অভিভাবক সন্তানের পিতা । সেদিক থেকেও নারী অসুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। সন্তানের মুখ চেয়েও তাই নারীকে নিপীড়ক স্বামীর সংসার করে যেতে হয়। কাজেই রাষ্ট্র যতদিন এই বৈষম্যমূলক আইনগুলো পরিবর্তন না করবে বা রাষ্ট্রকে বাধ্য না করানো যাবে, যা আসলে ব্যাপক রাজনৈতিক সংস্কার, ততোদিন পর্যন্ত ধর্মের নামে, সমাজের নামে, লোকলজ্জার নামে নারীর বিরুদ্ধে এই সহিংসতা থেকে মুক্তি আশা করা দুঃসাধ্য। একটি নিরাপদ রাষ্ট্র যেখানে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই নিরাপদ, যেখানে লিমনও নিরাপদ, নারী সাংসদ কবরীও নিরাপদ, সেই রাষ্ট্রে তো সন্তানের নিরাপত্তার জন্য রুমানাদের কারো উপর নির্ভর করতে হবে না। পুরুষের উপর নারীর এই নির্ভরশীলতার অন্তর্গত রাজনীতি থেকে রাষ্ট্রকে মুক্ত করতে হলে যে পাল্টা রাজনীতি প্রয়োজন, সেই রাজনীতিতে সামিল হওয়া চাই।

যে ‘ভালো মেয়ে’র সনদ কিনতে হয় নিজের সত্ত্বাকে বিসর্জন দিয়ে, নিজের অঙ্গহানি নয়তো জীবন দিয়ে, মেয়েদের সময় এসেছে পুরুষতন্ত্রের চাপিয়ে দেয়া এসব ভালো মেয়ের ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে মানুষ হিসাবে নিজের দাবি নিয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবার। যে কোন দামে বিয়ে টিকিয়ে রাখার বিপরীতে নারীর বিয়ে-নিরপেক্ষ মানবিক অবস্থানটি প্রতিষ্ঠার কোন বিকল্প নেই। অন্তত নিজের চোখদু’টি তো রক্ষা করতে পারা চাই, নয়তো কীসের জীবন? তবে সমাজের প্রচলিত অনুভব কাঠামো এবং রাজনীতির বিপরীতে দাঁড়ানো খুব সুখের হবে না, হয়নি কখনো তবু মানুষের চলার বেগেই পায়ের তলায় রাস্তা জাগে। আবেদন-নিবেদনের উন্নয়ন মডেল থেকে বের হয়ে জীবনের দায়িত্ব নেবার রাজনীতিটি বুঝে নেবার এইটাই মাহেন্দ্রক্ষণ। যে সামষ্টিক অন্ধত্ব এবং আপোষ রুমানার চোখের আলো কেড়ে নিয়েছে, তার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর কোন বিকল্প নেই।

Rumana Monzur Now by Avrinder Dhillon, 2020

The post কিছু কালোসিধে কথা বলতে চাই first appeared on KG | Kaberi Gayen.

]]>
https://kaberigayen.com/%e0%a6%95%e0%a6%bf%e0%a6%9b%e0%a7%81-%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%b2%e0%a7%8b%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%a7%e0%a7%87-%e0%a6%95%e0%a6%a5%e0%a6%be-%e0%a6%ac%e0%a6%b2%e0%a6%a4%e0%a7%87-%e0%a6%9a%e0%a6%be/feed/ 0
নারীনীতি ২০১১: সরকার পিছু হটেছে https://kaberigayen.com/%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%80%e0%a6%a8%e0%a7%80%e0%a6%a4%e0%a6%bf-%e0%a7%a8%e0%a7%a6%e0%a7%a7%e0%a7%a7-%e0%a6%b8%e0%a6%b0%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%aa%e0%a6%bf%e0%a6%9b%e0%a7%81/ https://kaberigayen.com/%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%80%e0%a6%a8%e0%a7%80%e0%a6%a4%e0%a6%bf-%e0%a7%a8%e0%a7%a6%e0%a7%a7%e0%a7%a7-%e0%a6%b8%e0%a6%b0%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%aa%e0%a6%bf%e0%a6%9b%e0%a7%81/#respond Tue, 15 Mar 2022 08:02:07 +0000 https://kaberigayen.com/?p=8031 পাশ্চাত্যের নারীবাদীরা গণমাধ্যমে নারীর অপ-রূপায়ন প্রসঙ্গে প্রচুর লিখেছেন। এসব লেখালেখির মাধ্যমে একধরণের সচেতনতা অবশ্যই তৈরি হচ্ছে, বিশেষ করে একাডেমিক এবং অ্যাক্টিভিস্টদের মধ্যে। এমনকি এসব লেখালেখির মাধ্যমে নানা ধরণের কোর্স চালু হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে, কিন্তু এসব লেখালেখি বাস্তব অবস্থার খুব পরিবর্তন আনতে পেরেছে সমাজে, নিদেনপক্ষে গণমাধ্যমগুলোতেও, এমনটা বলা মুশকিল। গণমাধ্যমে এবং সমাজে এই পরিবর্তনহীনতার কারণ বোঝা যায়। সম্পদ এবং গণমাধ্যমে নারীর অংশগ্রহণ এখনো খুবই সীমিত। গণমাধ্যমে নারীর বাণিজ্যিক অপরূপায়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ খুবই ইস্যু-ভিত্তিক, মোটেই কোন পূর্বাপর সমন্বিত পরিকল্পিত কোন কাঠামো নেই এসব প্রতিবাদের। এসব প্রতিবাদও আবার মূলধারার গণমাধ্যমে বা জনপরিসরে জায়গা পায় না।

The post নারীনীতি ২০১১: সরকার পিছু হটেছে first appeared on KG | Kaberi Gayen.

]]>

এ’বছর ৮ মার্চ সরকার ‘জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১’ ঘোষণা করেছে। নতুন নীতিমালার খসড়া মন্ত্রীসভা অনুমোদন করেছে। অতীতে ঘোষিত অন্য তিনটি নারীনীতির মতোই এটি ঘোষণা পর্যায়েই রয়েছে, এখনো আইন হিসেবে পাশ হয়নি। নারীনীতি ঘোষণার দিন থেকেই ধর্মভিত্তিক দলগুলো সম্পত্তির উত্তরাধিকারে নারী-পুরুষের সমান অধিকার দেয়া হয়েছে এমন দাবী করে নারীনীতি ২০১১ প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে। জামায়াতে ইসলামসহ অন্য ধর্মভিত্তিক দলগুলো ইতিমধ্যে এ নীতিকে কোরানবিরোধী আখ্যা দিয়ে এমনকি সরকার পতনের হুমকি দিয়েছে। ৮ মার্চ ২০১১ তারিখের বিকালে, নারীনীতি ঘোষণার দিনই, রাজধানীর মুক্তাঙ্গনে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটি আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে কমিটির আমির ও ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের চেয়ারম্যান মুফতি আমিনী ৪ এপ্রিল হরতালের ডাক দেন। সে হরতাল বুকে কোরান বেধে মিছিলকারী ও পুলিশের মধ্যকার সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। সরকারবিরোধী ধর্মভিত্তিক দলগুলোর পাশাপাশি সরকার সমর্থক ধর্মভিত্তিক দলগুলোও এই নারীনীতির বিরোধিতা করেছে। মহাজোটের শরিক দাবিদার মিসবাহুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্ত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোটও এই নীতির বিরোধী।


এসব হুমকির প্রতিক্রিয়া সুখকর হয়নি দীর্ঘদিন ধরে সম্পত্তিতে সমঅধিকারের দাবী জানিয়ে আসা নারী আন্দোলনের জন্য এবং সাধারণভাবে নারীদের জন্য। নারীনীতি ঘোষণার পরপরই আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম হানিফ বলেন, “সরকার মুসলিম সম্পত্তি বন্টন আইনে কোন পরিবর্তন আনেনি। ইসলাম যেভাবে নারী-পুরুষের সম্পত্তির উত্তরাধিকার দিয়েছে, সরকার শুধু তা নিশ্চিত করতে সম্পত্তিতে নারীর অধিকারের কথা বলেছে।”(সমকাল, ৯ মার্চ ২০১১)। এর পরই প্রথমে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী কোরআনবিরোধী কোন আইন করা হবে না মর্মে আশ্বস্ত করেছেন। সবশেষে, গত ২০ এপ্রিল, প্রধানমন্ত্রী আওয়ামীপন্থী মাদ্রাসা শিক্ষকদের সমাবেশে আবারো এই মর্মে আশ্বস্ত করেন, শুধু যে কোরাণ ও সুন্নাবিরোধী কোন আইন প্রণয়ন করা হবে না তাই নয়, বরং তারা নারীনীতির মধ্যে ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক যেসব আইন আছে ইতিমধ্যে তা তুলে নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই পুনরাবৃত্ত আশ্বস্তিবার্তা সত্ত্বেও ইসলামিক আইন বাস্তবায়ন কমিটির ব্যানারে ফজলুল হক আমিনীর পার্টি মে মাসের ৬, ৭, ১১, ১২, ১৬ এবং ২২ তারিখ বিভাগীয় শহরগুলোতে এবং ২৭ মে ঢাকায় নারী ও শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। জামাতে ইসলামও ৭ মে দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচী দিয়েছে নারীনীতির কিছু ধারা বাতিলের দাবীতে।

যে ধারাটি নিয়ে এতো হৈ চৈ, বিক্ষোভ-সমাবেশ, ধর্মীয় গোষ্ঠীর কাছে সরকারের নতজানু অবস্থান, কী আছে সেই ধারায়?

বিতর্কিত সেই ধারাটি
সরকার পরিস্কার পিছু হটেছে
৯ মার্চ, নারীনীতি ঘোষণার পরদিন, প্রায় সবক’টি জাতীয় দৈনিকে ভুল তথ্যে ভরা যে শিরোনামটি ফলাও করে ছাপনো হয় তা হলো সম্পত্তির উত্তরাধিকারে নারী-পুরুষের সমানাধিকার দিয়ে নারী উন্নয়ন নীতিমালা ২০১১ ঘোষিত। এই শিরোনামগুলো এতোই যুতসইভাবে, এতো গুরুত্ব দিয়ে ছাপানো হয় যে খবরটির সত্যতা নিয়ে প্রায় কারোরই কোন সন্দেহ থাকে না। বিশেষ করে বর্তমান মহাজোট সরকারের প্রধান শরীক দল আওয়ামীলীগ তাদের ২০০৮-এর নির্বাচনী ইশতেহারে ১৯৯৭ সালের নারীনীতিকে পূর্ণ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছিলো বলে এই খবরে তেমন সন্দেহের অবকাশও ছিলো না। সম্পত্তির সমঅধিকার প্রশ্নে ১৯৯৭ সালের নারীনীতিতে কী বলা হয়েছিলো? আসলেই কি ২০১১ সালের নারীনীতিতে দেয়া হয়েছে উত্তরাধিকার-সম্পত্তিতে নারী-পুরুষের সমঅধিকার? বাকী দুটো নীতিতেই বা এই ধারাটি কেমন ছিলো? এসব প্রশ্নের ফয়সালা হওয়া জরুরী। তাই এক নজরে দেখে নেয়া যাক চারটি নারীনীতিতে সম্পত্তিতে সমঅধিকারের প্রশ্নটি কীভাবে আবর্তিত, বিবর্তিত এবং পুনরাবৃত্ত হয়ে বর্তমান অবয়ব নিয়েছে।

চারটি নারীনীতিতে উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নারী-পুরুষের সমানাধিকার প্রসঙ্গ

চারটি নারীনীতিতে উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নারী-পুরুষের সমানাধিকার প্রসঙ্গ
১৯৯৭ সালে যেখানে উত্তরাধিকার এবং ভূমির উপর নারীর সমান সুযোগ এবং নিয়ন্ত্রণের অধিকার দেয়া এবং সেই লক্ষ্যে নতুন আইন প্রণয়ন করার কথা বলা হয়েছে, ২০০৪-এর নারীনীতিতে উত্তরাধিকার এবং ভূমির উপর নারীর অধিকারের বিষয়টি লোপাট করা হয়েছে, ২০০৮-এর নারীনীতিতেও উত্তরাধিকারের বিষয়টি তুলে দিয়ে ‘বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অর্জিত স্থাবর/অস্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে নারীর সমান সুযোগ এবং নিংন্ত্রণের অধিকার দেয়া এবং সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নতুন আইন প্রণয়ন করা’র কথা বলা হয়েছে। এবং এবারের নারীনীতিতে ‘উপার্জন, উত্তরাধিকার, ঋণ, ভূমি ও বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অর্জিত সম্পদের ক্ষেত্রে নারীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রদান করা’র কথা বলার মধ্য দিয়ে তুলে নেয়া হয়েছে উত্তরাধিকারে সমান অধিকারের প্রসঙ্গটি এবং বাদ দেয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় নতুন আইন করার বিষয়টি। ঠিকই আছে, উত্তরাধিকারে সমান অধিকার দেবার বিষয়টি বিবেচনায় থাকলেই কেবল নতুন আইন প্রনয়ণের প্রয়োজন হত। সেই বিষয়টিই যখন বিলোপ করা হয়েছে তখন নতুন আইনের তো কোন প্রয়োজন নেই। প্রধানমন্ত্রী সত্যভাষণ করেছেন মাদ্রাসা শিক্ষকদের সমাবেশে গত ২০এপ্রিল, “আমরা কোরান নিরীক্ষণ করে, বিশেষ করে সুরা আন-নিসা, কোরানের সাথে সাংঘর্ষিক নীতিগুলো বাদ দিয়েছি।” এভাবে ১৯৯৭ সালের নারীনীতি থেকে সম্পত্তির সমঅধিকার প্রশ্নে আওয়ামী লীগ পরিস্কার পশ্চাদপসারণ করেছে, পিছু হটেছে ২০০৮ সালের নির্বাচনী ওয়াদা থেকেও।

নারীনীতি ২০১১ অনুযায়ী, প্রচলিত নীতি এবং ধর্মীয় বিধানে নারী যে সম্পত্তির অধিকারী সেই সম্পদে কেবল নারী পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের অধিকার পাবার কথা বলা হয়েছে, যা সম্পত্তিতে সমঅধিকারের সাথে কোনভাবেই সম্পর্কিত নয়। যেহেতু ধরে নেয়া যায় যে এই নীতি বাংলাদেশের সকল নারীর জন্যই ঘোষণা করা হয়েছে, সেক্ষেত্রে এই নীতির সমস্যা হলো, মুসলিম নারীরা তাদের পুরুষের তুলনায় অর্ধেক প্রাপ্যতার বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন না, আর হিন্দু-বৌদ্ধ এবং কোন কোন আদিবাসী জনগোষ্ঠী যারা মূলত হিন্দু পারিবারিক আইন দ্বারা পরিচালিত তাদের নারীরা বের হতে পারবেন না উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে কোন ধরণের অধিকার না থাকার বিধান থেকে। যে নারীর উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে কোন অধিকারই নেই, তিনি কোন সম্পদের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের অধিকারী হলেন এবারের এই নীতি অনুযায়ী?

এখন প্রশ্ন, কেনো এতো হৈ চৈ তাহলে?

 

পক্ষ দুটি নয়, তিনটি
আমরা এই নীতি বিষয়ে তিনটি অভিমত দেখতে পাচ্ছি। প্রথমত, সরকার বলছে এই নীতিটি নারীর অধিকারকে অগ্রগামী করার এক বিশেষ যুগান্তকারী পদক্ষেপ, তবে কোরাণের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। দ্বিতীয়ত, ধর্মীয় গোষ্ঠী এই নীতিকে প্রত্যাখ্যান করছে কোরান-বিরোধী দাবি করে এবং সে’লক্ষ্যে আন্দোলন-সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছে। শোরগোলটা মূলত সেদিক থেকেই শোনা যাচ্ছে। রয়েছে তৃতীয় আরেকটি শক্তি, নারী-প্রশ্নে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনকারী নারী-পুরুষের মিলিত শক্তি এবং কিছু বাম সংগঠনের নারী নেতারা। সম্পত্তির সমান অধিকারের বিষয়ে সরকারের পিছু হটে আসা, বিবাহ, বিবাহ-বিচ্ছেদ এবং সন্তানের অভিভাবকত্ব বিষয়ে অতীতের সকল নারীনীতির মতই এই নারীনীতিতেও নারী সমাজের দাবীকে পাশ কাটিয়ে যাওয়াকে সমালোচনা করে এই তৃতীয় শক্তি ‘সমঅধিকার আমাদের ন্যূনতম দাবি’ নামের মোর্চা গঠন করে নারীনীতি ২০১১-কে প্রত্যাখান করছে এবং নতুন নারীনীতি তৈরীর দাবি করেছে। গত ৬ মে ঢাকার রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে তারা আগামী ২৪ মে ঢাকায় একটি কনভেনশন করার ঘোষণা দিয়েছে এবং উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নারীর সমঅধিকার, বিয়ে, সন্তানের অভিভাবকত্ত্বসহ পারিবারিক আইনের অধীনে যেসব আইন নারীকে বঞ্চিত রেখেছে সেসব বিষয়ে সংশোধনের দাবিতে একমত সকল নারী-পুরুষকে সেই কনভেনশনে যোগদানের আহ্বান জানিয়েছে।

 

হৈ চৈ আসলে সম্পত্তিতে সমঅধিকার প্রশ্নে
নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের প্রসঙ্গে

উত্তরাধিকার, সম্পদ ও ভূমির উপর নারীর অধিকারের প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে বিএনপি-জামাত জোটের নারীনীতি ২০০৪ ঘোষিত হলে সংগত কারণেই ধর্মীয় গোষ্ঠী মাঠে সরব হয়নি। বাকী তিনটি নারীনীতির যে কোন ইস্যুতেই যেমন সিডও সনদ বাস্তবায়ন, বিদ্যমান বৈষম্যমূলক আইন বিলোপ, পিতামাতা উভয়ের পরিচয়ে সন্তানের পরিচয়, বাল্যবিয়ে- মেয়েশিশু ধর্ষণ-পতিতাবৃত্তির বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ, রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ, নারীশিক্ষা, ফতোয়া প্রসঙ্গে ধমীয় গোষ্ঠীর বক্তব্য একই। আর তা হলো, নারী-পুরুষের অধিকার ও মর্যাদার তারতম্য স্বাভাবিক; নারী-পুরুষের কার কী অধিকার তা কোরআন-সুন্নাতেই বলে দেয়া আছে। জাতীয় জীবনে নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়, নারীকে দেয়া হবে ‘ন্যায্য অধিকার’। নারী-পুরুষের তারতম্য, আইনগত ফারাক বিলোপের প্রস্তাব কোরান-সুন্না বিরোধী, এসব দূর করা মানুষের কাজ নয়, আল্লাহতালার মহাআজ্ঞাপ্রসূত এবং নারীর জন্য কল্যাণকর। এসব বিষয়ে এ’হেন সুস্পষ্ট অবস্থান ধর্মীয় গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে আমরা বরাবরই দেখি, তবে তাদের মরিয়া হয়ে উঠতে দেখা যায় যখনই প্রসঙ্গটি নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গে হয়। এটা তারা কোন অবস্থাতেই মেনে নিতে পারে না। ২০০৮ এবং ২০১১ সালের নারীনীতিতে উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নারীর সমঅধিকারের বিষয়টি উল্লেখ না করা হলেও তারা মাঠ গরম করেছেন। তাদের এই অবস্থান তাদের ঘোষিত রাজনৈতিক দর্শনের সাথে, নারী প্রসঙ্গে তাদের নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। যা কিছু নারীর জীবন যাপনের অগ্রগামিতার সাথে সম্পর্কিত, তার বিরুদ্ধেই তাদের সুস্পষ্ট অবস্থান।

তবে আপাতদৃষ্টে মনে হয় সম্পত্তিতে সমানাধিকারের বিরোধিতাকারী বুঝি কেবল এই ধর্মীয় গোষ্ঠী। কিন্তু একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে আমাদের পুরুষতান্ত্রিক রাজনীতির আপাদমস্তক সম্পত্তিতে সমানাধিকারের বিরোধী। আমরা ধর্মীয় দলগুলোকে কেবল দৃশ্যপটে দেখতে পাই বলে তাদের কাঁধে বন্দুক রেখে অন্যরা নিস্তার পেয়ে যান। এই ধর্মীয় গোষ্ঠী রাস্তায় না থাকলে কি অবস্থার বিশেষ হেরফের হতো? নারীসমাজের দীর্ঘদিনের দাবির মুখে ১৯৯৭ সালের নীতিমালায় সম্পত্তিতে নারীর অধিকার এবং উত্তরাধিকারের বিষয়টি অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছিলো। তখনকার আওয়ামী লীগ সরকারের হাতে যথেষ্ট সময় থাকা সত্ত্বেও (১৯৯৭ থেকে ২০০১) এবং এখনকার মতো ধর্মীয় গোষ্ঠীর দৃশ্যমান কোন আস্ফালন না থাকা সত্ত্বেও নীতিমালা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কোন আইন প্রনয়ণ বা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বিএনপি এবং জামাত জোটের ২০০৪ সালের নীতিমালায় উত্তরাধিকার সম্পত্তি ও ভূমিতে অধিকারের পুরো বিষয়টিই লোপাট করে দেয়া হয় ফলে ধর্মীয় গোষ্ঠী মাঠে নামেনি। তাই বলে কেনো প্রগতিশীল ধারাগুলো লোপাট করা হলো সে’মর্মে অওয়ামীলীগ বা অন্য কোন সংগঠনই কোন প্রশ্ন তোলেনি। ২০০৮ সালের নারীনীতিতে ৯.১৩ ধারায় উত্তরাধিকার এবং ভূমির উপর অধিকারের বিষয়টি বাদ দিয়ে কেবল বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অর্জিত স্থাবর/অস্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে নারীর সমান সুযোগ ও নিয়ন্ত্রণের কথা বলায় ধর্মীয় দলগুলোর বিক্ষোভের মুখে প্রথমে ধর্মীয় আলেমদের সমন্বয়ে নীতিটি নীরিক্ষণের কমিটি গঠিত হয়, তারা কাগজে-কলমে তাদের বিধান দেন এবং রাস্তায় সক্রিয় থাকেন। ক্রমশ এটি বাস্তবায়নের বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। এবার চতুর্থবারের মতো যে নীতিটি ঘোষণা করা হয়েছে সেখানে উত্তরাধিকারে সমানাধিকার প্রস্তাব থেকে সরে আসার পরও স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বলছেন ধর্মীয় আইনের পরিপন্থী কোন আইন করা হবে না। প্রধান বিরোধীদল বিএনপি’র কোন অফিসিয়াল অবস্থান আমরা এ’পর্যন্ত পাইনি। পাইনি জাতীয় পার্টি বা বাম সংগঠনগুলোর অফিসিয়াল অবস্থান। পরিস্কার নয় সরকারের অবস্থানও। শুধু ধর্মীয় দলগুলোর ক্ষেত্রে আমরা তাদের অবস্থানটি পরিস্কার দেখতে পাই মাঠে। কিন্তু যে দলগুলো ধর্মীয় দল নয় সরাসরি তাদের কোন বক্তব্য না পাবার কারণে তাদের অবস্থানটি এ’পর্যন্ত বোঝা সম্ভব হয়নি। কারণ কোন রাজনৈতিক দলকে নারী প্রসঙ্গে এই গোষ্ঠীর মুখোমুখি দাঁড়াতে আমরা দেখি না। ফলে আস্ফালনকারী ধর্মীয় গোষ্ঠীর মুখোমুখি জেগে থাকতে দেখি শুধু সম্পত্তিতে সমঅধিকারের প্রশ্নে এক নীরবতার রাজনীতিকে। প্রখ্যাত সমাজতাত্ত্বিক স্টুয়ার্ট হল-এর রেপ্রিজেন্টেশন তত্ত্ব আমাদের জানায়, খালি চোখে যা আমরা দেখি, সেটি যেমন অর্থ তৈরী করে, তার সমান বা বেশী অর্থ বহন করতে পারে যা দেখা যায় না সেই অনুপস্থিতির রাজনীতি। তা’হলে কি ধরে নেবো কোন রাজনৈতিক দলই আসলে সম্পত্তিতে সমঅধিকারের বিষয়টি ফয়সালা করতে চায় না? চারটি নারীনীতির প্রত্যেকটিতেই অনেক ধারাই রয়েছে যা ধর্মীয়নীতির সাথে আক্ষরিকভাবে মিলিয়ে দেখতে চাইলে পার্থক্যমূলকই নয় শুধু, সাংঘর্ষিকও বটে। কিন্তু ধর্মীয় গোষ্ঠী সব সময় সবচেয়ে সোচ্চার যে ধারার বিরুদ্ধে সেটি হলো উত্তরাধিকারে নারীর সমঅধিকারের প্রশ্নটিতে। এভাবে নারীনীতি ঘোষণাকারী সরকার, নীরব রাজনৈতিক দল এবং উন্মত্ততা সৃষ্টিকারী ধর্মীয় গোষ্ঠী মিলে ক্রমশই শক্তিশালী করে তুলছে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের মূল উৎসের প্রতি নেতিবাচক এক রাজনীতিকে। সত্যিই তো, নারীকে সম্পত্তিতে সমঅধিকার কেনো পুরুষতন্ত্র দিতে চাইবে যদি ধর্মের নামে বা আইনের নামে বা যে কোন কিছুর নামে হাজার বছর ধরে চলে আসা বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা দিয়ে সম্পদের উপর অধিকার নিরঙ্কুশ করা যায়?

 

‘ধর্মবিরোধী আইন’ বনাম ‘ধর্মবিরোধী আইন প্রনয়ণ করা হবে না’ ডিসকোর্স
যারা এই আইনকে ধর্মবিরোধী আখ্যা দিচ্ছেন বা যারা বলছেন ধর্মবিরোধী কোন আইন তারা করেননি বা ভবিষ্যতেও করছেন না, বিনীতভাবে তাদের উদ্দেশ্যে বলার সময় এসেছে, কথিত ধর্মীয় বিধানের অনেক কিছুই কিন্তু পরিবর্তিত হয়েছে যুগের দাবিতে। নারী রাষ্ট্র প্রশাসকের বিধান ধর্মে স্বীকৃত না হলেও গত দুইযুগ ধরে জনগণের ভোটে নির্বাচিত আমদের প্রধানমন্ত্রীরা নারী। নারী নেতৃত্বাধীন দলের সাথে জোট বেধে ক্ষমতায় যাচ্ছে ধর্মীয় দলগুলো। নারী রাষ্ট্র প্রশাসকের অধীনে মন্ত্রী হচ্ছেন প্রধান ধর্ম-ভিত্তিক রাজনৈতিক দলের নেতারা। ব্রিটিশ-ভারতে ১৯৩৭ সালে প্রণীত ‘মুসলিম ব্যক্তিগত (শরিয়ত প্রয়োগ) আইন দ্বারা মুসলিমদের বিবাহ, তালাক, দেনমোহর, উত্তরাধিকার ক্ষেত্রে ধর্মীয় আইনের প্রয়োগের কথা বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী কোন নাবালক তার দাদা বা নানার সম্পত্তি পাবে না যদি তার দাদা/নানার পূর্বেই তার বাবা/মা মারা যায়। কিন্তু ১৯৬১ সালে প্রণীত মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ৪ নং ধারা অনুযায়ী নাবালক সন্তান তার দাদা/নানার সম্পত্তির ততটুকু পাবে যতটুকু তার বাবা/মা পেত। ধর্মীয় বিধি অনুযায়ী একজন মুসলিম পুরুষ সর্বোচ্চ চারজন নারীকে বিয়ে করতে পারলেও ১৯৬১ সালের আইনের ৬নং ধারা অনুযায়ী সালিশ পরিষদের সম্মতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করলে জেল-জরিমানার বিধান রয়েছে। ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী মৌখিকভাবে তালাক দেবার সুযোগ থাকলেও এই আইনের ৮ নং ধারায় স্বামীর মত স্ত্রীকেও তালাক দেবার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। মুসলিম রীতি অনুযায়ী হিল্লা বিয়েকে বাতিল না করলেও এই আইনের ৭(৬) নং ধারায় কমপক্ষে তিনবার অনুরুপ পরিস্থিতি সৃষ্টি না হলে হিল্লা বিয়েকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রেশনের কোন বিধান মুসলিম শরিয়া আইনে না থাকলেও ‘মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রেশন) আইন ১৯৭৪’ অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, বিধি লংঘনে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। স্বামী দীর্ঘদিন নিখোঁজ থাকলে ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী নারী স্বামীকে তালাক দিয়ে পুনরায় বিয়ে করতে না পারলেও ১৯৩৯ সালের ‘মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইন’-এর ২নং ধারা অনুযায়ী কোন ব্যক্তি চার বছর নিখোঁজ থাকলে স্ত্রী স্বামীকে আদালতের মাধ্যমে তালাক দিতে পারে।

জমিজমা সংক্রান্ত দানের ক্ষেত্রেও ধর্মীয় মতে রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক না হলেও ২০০৪ সালে বিএনপি-জামাত জোট সরকার রেজিস্ট্রেশন আইনে সংশোধনী এনে সম্পত্তিদানের রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করেছে। মৃতব্যক্তির উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সম্পত্তি বন্টননামা রেজিস্ট্রেশনের বিধান ধর্মে ছিলো না কিন্তু বিগত জোট সরকারের আমলে রেজিস্ট্রেশনই শুধু বাধ্যতামূলক করা হয়নি, দাতা ও গ্রহীতার ছবি সংযুক্ত করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে যেখানে ছবি তোলা ধর্মীয় দৃষ্টিতে হারাম। মুসলিম আইনের অগ্র ক্রয়াধিকার বা শুফা আইনেরও পরিবর্তন করা হয়েছে ১৯৫০ সালের ‘স্টেট এ্যাকুইজিশন ও টেনান্সি এ্যাক্টে’এর মাধ্যমে। এছাড়া ফৌজদারী আইনের বিভিন্ন ধারায় এমন সব বিধান আমরা মেনে চলি যার সাথে ধর্মীয় আইনের দূরতম কোন সম্পর্ক নেই। চুরি করলে হাত কেটে দেয়া বা একজন পুরুষ সাক্ষীর সমকক্ষ হিসাবে দুজন নারীর সাক্ষ্য নেয়া হয়না আমাদের ফৌজদারি আইনে। এভাবে অসংখ্য উদাহরণ দিয়ে দেখানো যাবে যে ধর্মীয় আইনের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ এমনকি সাংঘর্ষিক অনেক আইন প্রচলিত আছে বা নতুন করে প্রনয়ণ করা হয়েছে। এমনকি আইনের পরিবর্তনের ফলে আজ ধর্ম পালন করতে হলেও ধর্মের বিধান লংঘন করতে হচ্ছে। যেমন, ছবি তোলাকে হারাম ও কুফরি ফতোয়া দিচ্ছেন যে ওলামা-মাশায়েখরা তারাই হজ্ব করতে যাবার সময় পাসপোর্ট আইনের বিধান মেনে হজ্ব করতে যাচ্ছেন। এসব কাজ ‘ধর্মবিরোধী’ হলেও এই ধর্মীয় গোষ্ঠী এসব প্রশ্নে, কিংবা সুদ খাওয়া হারাম প্রশ্নে জান কোরবার করতে মাঠে নামেন না। যত দোষ, যত বজ্রনির্ঘোষ নারীর সম্পত্তিতে অধিকারের প্রশ্ন এলেই। যেখানে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে দুই দশকেরও বেশী সময় ধরে শ্লোগান দেয়া হচ্ছে, ‘ছেলে হোক মেয়ে হোক দুটি সন্তানই যথেষ্ট’, এমনকি ইদানিং একটি সন্তানের ব্যাপারেও জনগনকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে এবং জাতীয় পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের অংশ হিসাবে শুক্রবার মসজিদে মসজিদে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে জনমত গড়ে তোলার জন্য ইমামদের সবেতনে নিয়োগ করা হয়েছে দীর্ঘকাল থেকে, সেখানে সম্পত্তির উত্তরাধিকারে ছেলে ও মেয়ে সন্তানের মধ্যে বৈষম্য বিলোপ না করার কী কারণ থাকতে পারে? মুসলিমপ্রধান দেশ তুরস্ক, সেনেগাল, তিউনিশিয়াসহ কয়েকটি দেশে সম্পত্তির উত্তরাধিকারে নারী-পুরুষের সম-অধিকার রয়েছে।

আরেকটি বিষয়ে না বললেই নয়। আমাদের দেশে যখন এসব আইন পরিবর্তন বা প্রনয়ণের প্রসঙ্গ ওঠে তখন কেবল মুসলিম জনগোষ্ঠীকেই মাথায় রাখা হয় যা একটি গণতান্ত্রিক দেশের ক্ষেত্রে কাম্য নয়। যদিও খৃস্টান উত্তরাধিকার আইনে সম্পত্তিতে নারী-পুরুষের অধিকার প্রায় সমান, হিন্দু উত্তরাধিকার আইনে নারীর অবস্থান সবচেয়ে শোচনীয়। এখানে নারীর নিজস্ব অর্জিত সম্পত্তি বা উপহার সামগ্রী ছাড়া অর্থাৎ স্ত্রীধন ব্যতীত আর কোন সম্পত্তির পূর্ণ স্বত্ত্ব পায় না। অথচ হিন্দুপ্রধান দেশ ভারতে এবং হিন্দু রাষ্ট্র নেপালে এখন ধর্মীয় আইন সংস্কারের মাধ্যমে সম্পত্তিতে নারী-পুরুষের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

 

এবং বাংলাদেশ এখনো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ
যে উদ্দেশ্যে আওয়ামীলীগ ১৯৯৭-এর নারীনীতি থেকে পশ্চাদপসারণ করেছে, সেই লাভের গুড় আওয়ামী লীগ ঘরে তুলতে পারবে সে ভরসা কম। আমিনীর দল বা যারা ফতোয়াকে অবৈধ ঘোষণার হাই কোর্টের রায়কে দশ বছর ধরে সুপ্রিম কোর্টে ঝুলিয়ে রেখেছে, সেইসব শক্তি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে ভোট দিয়ে এমন ভাবনায় খুব বিচক্ষণতার পরিচয় মেলে না। তার হাতে নাতে প্রমাণ হলো, প্রধানমন্ত্রীর আশ্বস্তি সত্ত্বেও এই ধর্মীয় গোষ্ঠীর অন্দোলন- বিক্ষোভ-মহাসমাবেশের ডাক।

বাংলাদেশ কোন ধর্মীয় রাষ্ট্র নয় বলেই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের আইনের মূল ভিত্তি এখনো গণতান্ত্রিক নীতিমালার উপরেই প্রতিষ্ঠিত। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কাজে লাগে এমন নিরানব্বই ভাগ আইন-ই ধর্মনিরপেক্ষ এবং সার্বজনীন। আমাদের সংবিধানের ১০, ১৯ (১, ২), ২৭, ২৮ (১,২,৩,৪), ২৯(১,২,৩-ক) ধারায় নারী-পুরুষের সবক্ষেত্রে সমাধিকারের বিষয়ে রাষ্ট্র অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। দেওয়ানী ও ফৌজদারী আইনের ক্ষেত্রে যেমন ধর্মীয় কোন পার্থক্য নেই তেমনি বিবাহ, বিবাহ বিচ্ছেদ, সন্তানের অভিভাবকত্বসহ পারিবারিক আইনগুলোকেও দেওয়ানী আইন ও আদালতের আওতায় এনে ইউনিফর্ম সিভিল কোড প্রবর্তন করে পারিবারিক আইনের পার্থক্য দূর করা সম্ভব। সরকার যদি নারীপ্রশ্নে সত্যিই আন্তরিক হয় তবে সিডও সনদ, সংবিধান ও নারী সমাজের দীর্ঘদিনের আকাংখার প্রতি সৎ থেকে সম্পত্তির উত্তরাধিকারের প্রশ্নে ১৯৯৭ সালের নারীনীতিকেই আইনে পরিণত করতে উদ্যোগী হবেন, যেটি তাদের নির্বাচনী ওয়াদাও ছিলো। আর আমরা যারা নারীর সম্পত্তির প্রশ্নে সত্যিই আন্তরিক বলে দাবী করি তাদেরও উচিত দৃশ্যমান হওয়া। অদৃশ্যমানতার রাজনীতি আসলে সৎসুবিধাবাদ, যার সম্পর্কে লেনিন বার বার হুঁশিয়ার করেছেন। ১৯৯৭ থেকে ২০১১, মোট ১৪ বছর সময় কেটেছে, মানুষকে প্রস্তুত করেনি আমাদের রাজনীতি আর তাই যে নীতির কথা বলা হয়েছিলো ১৪ বছর আগে, সেখান থেকে বার বার পিছু হটতে হয়েছে সরকারকে। এগিয়ে যাবার কালে এগিয়েই যেতে হয়। গুটিকয়েক ধর্মীয় মৌলবাদী সংগঠনের দাবীর দোহাই দিয়ে (যেহেতু তাদের ঘাড়েই বন্দুক রাখা হয়) সরকারগুলো বারবার পিছু হটে আসবে না কি মানুষের অধিকারের প্রশ্নে সংবিধানকেই সমুন্নত রাখবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবার উৎকৃষ্ট সময় এই বয়ে যায়। নারীর সমানাধিকারের প্রসঙ্গ মানুষের সমানাধিকার প্রশ্নেরই নিরাভরণ রুপ।

এমন গুরুত্ত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হলে সরকারকে জনগণের কাছে যেতে হয় যা আমাদের কোন সরকারই যায়নি। সরকার জনগণের সচেতনতা তৈরির জন্য গণমাধ্যমকে ব্যবহার করতে পারে এবং বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে ব্যাপকহারে গণর‌্যালী ও সভা-সমাবেশের আয়োজন করতে পারে। এসব জনসংযোগ ও প্রচারের আওতায় সাধারণ মানুষকে নিয়ে আসার পাশাপশি রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক সংগঠনগুলোকে অন্তর্ভূক্ত করা যেতে পারে। জনপ্রিয় এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের নারী এবং কন্যাশিশুর পক্ষে আওয়াজ তোলার ব্যাপারে, নতুন রীতি প্রতিষ্ঠা করার কাজে লাগানো যেতে পারে। স্কুল শিক্ষক এবং স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের স্থানীয় জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার কাজে শিক্ষিত করে তোলা সম্ভব। জনপ্রিয় লোকমাধ্যম যেমন যাত্রা, পুতুল নাচ, কবিগানের মাধ্যমে এসব বার্তা ছড়িয়ে দেয়া যেতে পারে প্রত্যন্ত গ্রামে, ওয়াজে ওয়াজে নারীনীতির বিরুদ্ধে বিষোদগারের পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে। তবে এ’সবই করতে হবে রাজনৈতিক অঙ্গীকারের বৃহত্তর ফ্রেমওয়ার্কে। আওয়ামীলীগের ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি নীতি’ নারী আন্দোলনের জন্য তো বটেই আওয়ামী লীগকেও বাধাগ্রস্তই করবে। দাতা দেশগুলোর চাপে নারী উন্নয়ন নীতি প্রনয়ণ এবং দেশে ভোটব্যাংক ঠিক রাখার জন্য ধর্মীয় শক্তির কাছে নতজানু হবার এই অপচেষ্টা শেষ পর্যন্ত নারী-বিরোধী শক্তিকেই মজবুত করবে সন্দেহ নেই। মাছ ধরতে গেলে পানি না ছোঁয়ার নীতি বর্জন করতেই হবে। আজ সম্পত্তিতে নারীর সমঅধিকারের বিরুদ্ধে যারা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে কাল যে তারা নারী-নেতৃত্ব হারাম এবং পরশু মেয়েদের জনপরিসরে নিষিদ্ধ করার প্রবলতর বাসনা নিয়ে লড়াই শুরু করবে না সে নিশ্চয়তা কে দেবে?

এটি একটি রাজনৈতিক লড়াই, এবং বারে বারে সম্পত্তিতে সমঅধিকারের কাল্পনিক ঘোষণাকে ঘিরে মিথ্যা হৈচৈয়ের কুণ্ডলিতে পরার বিলাসিতা করার সময় সত্যিই আর নেই। বরং নারীর সমঅধিকার দাবিতে আন্দোলনরত সচেতন নারী-পুরুষের সাথে ন্যূনতম সমমনা সকল রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির দৃঢ় নেটওয়ার্ক গড়ে উঠুক। উত্তরাধিকারে নারীর সমঅধিকারসহ বিয়ে, বিয়ে বিচ্ছেদ এবং সন্তানের অভিভাবকত্বসহ পারিবারিক আইনের যেসব ধারায় নারীকে বঞ্চনা করা হয়েছে সেসব আইন বাতিল করে নতুন নীতিমালা ও নতুন আইন প্রনয়ণের লক্ষ্যে সেই মানবিক নেটওয়ার্ক কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলুক সেটিই প্রত্যাশা। মানুষ সমান। জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ, বর্ণ নির্বিশেষে। মানুষের সমতার পৃথিবী প্রতিষ্ঠাই হলো সকল শুভ উদ্যোগের প্রথম প্রেরণা। ইতিহাস বারে বারে মানবিকতার পক্ষেই তার পরিবর্তনগুলো ঘটানোর সাক্ষ্য দিয়ে চলেছে।

The post নারীনীতি ২০১১: সরকার পিছু হটেছে first appeared on KG | Kaberi Gayen.

]]>
https://kaberigayen.com/%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%80%e0%a6%a8%e0%a7%80%e0%a6%a4%e0%a6%bf-%e0%a7%a8%e0%a7%a6%e0%a7%a7%e0%a7%a7-%e0%a6%b8%e0%a6%b0%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%aa%e0%a6%bf%e0%a6%9b%e0%a7%81/feed/ 0
এবং বাজার মৌলবাদের বেনোজলে নারী https://kaberigayen.com/%e0%a6%8f%e0%a6%ac%e0%a6%82-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%ae%e0%a7%8c%e0%a6%b2%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%ac%e0%a7%87%e0%a6%a8%e0%a7%8b%e0%a6%9c/ https://kaberigayen.com/%e0%a6%8f%e0%a6%ac%e0%a6%82-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%ae%e0%a7%8c%e0%a6%b2%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%ac%e0%a7%87%e0%a6%a8%e0%a7%8b%e0%a6%9c/#respond Tue, 15 Mar 2022 04:33:22 +0000 https://kaberigayen.com/?p=8024 পাশ্চাত্যের নারীবাদীরা গণমাধ্যমে নারীর অপ-রূপায়ন প্রসঙ্গে প্রচুর লিখেছেন। এসব লেখালেখির মাধ্যমে একধরণের সচেতনতা অবশ্যই তৈরি হচ্ছে, বিশেষ করে একাডেমিক এবং অ্যাক্টিভিস্টদের মধ্যে। এমনকি এসব লেখালেখির মাধ্যমে নানা ধরণের কোর্স চালু হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে, কিন্তু এসব লেখালেখি বাস্তব অবস্থার খুব পরিবর্তন আনতে পেরেছে সমাজে, নিদেনপক্ষে গণমাধ্যমগুলোতেও, এমনটা বলা মুশকিল। গণমাধ্যমে এবং সমাজে এই পরিবর্তনহীনতার কারণ বোঝা যায়। সম্পদ এবং গণমাধ্যমে নারীর অংশগ্রহণ এখনো খুবই সীমিত। গণমাধ্যমে নারীর বাণিজ্যিক অপরূপায়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ খুবই ইস্যু-ভিত্তিক, মোটেই কোন পূর্বাপর সমন্বিত পরিকল্পিত কোন কাঠামো নেই এসব প্রতিবাদের। এসব প্রতিবাদও আবার মূলধারার গণমাধ্যমে বা জনপরিসরে জায়গা পায় না।

The post এবং বাজার মৌলবাদের বেনোজলে নারী first appeared on KG | Kaberi Gayen.

]]>

মৌলবাদ বলতেই আমরা সাধারণভাবে ধর্মীয় মৌলবাদকে ধরে নেই। অথচ ধর্ম ছাড়াও আরো তিন ধরণের মৌলবাদের কথা বলেন জেনসেন (২০০৬)। তাঁর মতে, চার ধরণের মৌলবাদ রয়েছে পৃথিবীতে, যা যেকোন ধরণের গণতান্ত্রিক আবহকে নস্যাৎ করে দিতে পারে- ধর্মীয়, জাতীয়তাবাদী, অর্থনৈতিক এবং প্রাযুক্তিক। কর্পোরেট পুঁজিবাদ বা নয়া উদারনৈতিক অর্থনীতিকে জেনসেন-এর মত তাত্ত্বিকরা ‘অর্থনৈতিক বা বাজার মৌলবাদ’ নামে আখ্যায়িত করছেন। ধর্মীয় মৌলবাদ যদিবা জনপরিসরে যথেষ্টই আলোচিত, যেমন ৯/১১ বা তালিবান রাজত্বে নারীর অবস্থান, কিন্তু কর্পোরেট পুঁজির দৌরাত্মের বিষয়টি একাডেমিক এবং বামপন্থীদের মধ্যেই খানিকটা আলোচিত হতে দেখা যায়, জনপরিসরে ততটা নয়। তবে এই আলোচনায় ঢোকার আগে মৌলবাদ বিষয়ে আমাদের বোঝাপড়াটা একটু ঝালিয়ে নেয়া দরকার।

‘মৌলবাদ’ জগতকে দেখার এক বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গী

‘মৌলবাদ’ প্রত্যয়টিকে প্রথম ব্যবহৃত হতে দেখা যায় ১৯ শতকে খৃস্টান ধর্মের প্রটেস্টান্টদের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক আন্দোলনকে বর্ণনা করার ক্ষেত্রে। এসব আন্দোলন বাইবেলের মূল পাঠ কী হবে, সে বিষয়ে আক্ষরিক কিংবা ‘মূলগত’ (fundamental) ব্যাখ্যা দেবার ব্যাপারে সোচ্চার ছিলো। আজকের দিনে মৌলবাদের সংজ্ঞা অনেক বিস্তৃত অবয়ব পেয়েছে। বর্তমানে এ প্রত্যয়টি পৃথিবীর বিভিন্ন্ দেশে সেইসব আন্দোলন-সংগ্রামকে বোঝায় যারা ঐতিহ্যের নামে কিছু মূলগত আচরণে ফিরে যেতে চায়- হতে পারে সেটি ধর্মীয়, জাতীয়তাবাদী অথবা নৃতাত্ত্বিক। রাজনৈতিকভাবে প্রণোদিত এসব আদর্শের মৌলবাদি অবস্থানটি হলো রাজনীতির উপরে স্বর্গীয় বিধিব্যবস্থা, সর্বশক্তিমানের উপর পূর্ণ আস্থা, কিংবা নৈতিক বিধিবিধান বা দর্শন চাপিয়ে দিতে চাওয়া যাকে প্রশ্ন করা যাবে না। সেদিক থেকে রিড (২০০২) মনে করেন, মৌলবাদ মোটেই ঐতিহ্যে ফেরা নয়, বরং এক কল্পিত গৌরবময় অতীতকে ঘিরে ঐতিহ্যের একটি উত্তরাধুনিক, রক্ষণশীল পুনঃব্যাখ্যায় ফেরা। এবং আমরা যখন মৌলবাদ সম্পর্কে কথা বলি, তখন এই সত্যকে ভুলে যাওয়া ঠিক হবে না যে মৌলবাদি রাজনৈতিক অচরণের মূলটি খুঁজে পাওয়া যাবে ‘সঠিক বিশ্বাস’ (orthodoxy) এবং ‘সঠিক আচরণ’ (orthopraxis)-কে ধারণ করার অতিরিক্ত দাবীর মধ্যে। আর এখানেই জেনসেন-এর মতো তাত্ত্বিকরা মৌলবাদকে কেবল ধর্মের বাড়াবাড়ি হিসাবে না দেখে যে কোন বুদ্ধিবৃত্তিক/রাজনৈতিক/ধর্মতাত্ত্বিক অবস্থান হিসাবে দেখেন যা যুক্তির চেয়ে যে কোন বিশ্বাস-কাঠামোকেই নিরঙ্কুশ মনে করে।

শুধু তাই নয়, ভয়ংকর হলো এই মৌলবাদ অন্য যে-কোন বিকল্প চিণ্হ পদ্ধতিকেই খারিজ করে দেয়। এভাবেই মৌলবাদ কেবল ধর্মের সাথে সম্পর্কিত নয় বরং জগতকে দেখার ক্ষেত্রে একটি বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গী। মৌলবাদের এই সংজ্ঞা অনুযায়ী বুশের আস্ফালন, “তোমরা হয় আমাদের সাথে আছ, অথবা সন্ত্রাস মোকাবেলায় আমাদের বিপক্ষে আছ’ এবং ‘হয় দারুল হার্ব অথবা দারুল ইসলাম’-এর মধ্যে খুব কমই পার্থক্য রয়েছে।

কর্পোরেট বাজারকে কেন ‘মৌলবাদ’ বলছি? জেনসেন (২০০৬)-এর মতে, এখানে ধরে নেয়া হয় যে বাজারের সর্বোচ্চ ব্যবহার সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতাকে উন্মুক্ত করবে এবং ফলাফল হবে আরো ভালো পণ্য, আরো বেশি বিক্রি, আরো বেশি মুনাফা এবং এজন্য সবকিছুই বৈধ। এই প্রতিযোগিতার প্রভাব কার উপর কেমন পড়লো কিচ্ছু যায় আসে না। বর্তমানের তথাকথিত ‘মুক্ত বাণিজ্য’র আদর্শ এই নয়া-উদারনীতিকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে চায়। এই বাজার মৌলবাদে এটি প্রায় একটি বিশ্বাস হিসাবে ছড়িয়ে দেয়া হয় যে বাজারের অদৃশ্য হাত সবসময়ই ভালো ফলাফল বয়ে আনবে, কিছু যায় আসে না এর প্রভাব সাধারণ মানুষের জীবনে কেমন হবে।

অন্য কথায়, অর্থনৈতিক মৌলবাদে সিস্টেম কীভাবে কাজ করে সেটি উপেক্ষা করে কেবলই বাজার বিস্তারের বন্দনা এমন একটি জগতে নিয়ে যায় যে জনগণ নিজেদের বাস্তব বঞ্চনার অভিজ্ঞতাকে পর্যন্ত উপেক্ষা করতে শিখে ফেলে। বাজারের সকল প্রতিক্রিয়াকে অমোঘ হিসাবে মেনে নেয়। এভাবে ধনী-গরীবের ব্যবধান প্রশ্নাতীতভাবে বাড়তে থাকে, পৃথিবীজুড়ে এবং দেশে-দেশে, দেশের মধ্যে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীর এক চতুর্থাংশ মানুষ দিনে এক ডলারের কম আয়ে বাস করে এবং দিনে দুই ডলারের কম আয় করে প্রায় অর্ধেক মানুষ।

ভেনাস অফ উইলেনডর্ফ, গুগল আর্টস অ্যান্ড কালচার

বাজার মৌলবাদ কার্যত পুরুষতান্ত্রিক

পেইটম্যান (১৯৮৮) তাঁর দ্য সেক্সুয়াল কন্ট্রাক্ট -এ যুক্তি দিয়েছিলেন যে পুঁজিবাদ কার্যত পুরূষতন্ত্রের একটি রূপ। নারীবাদীদের অনেকেই বলেছেন পুঁজিবাদ এবং পিতৃতন্ত্র সম্পূর্ণ একদেহ না হলেও দুই-এর সম্পর্ক নিবিড়। হার্টম্যান (১৯৮১: ২১-২২) যুক্তি দিয়ে দেখান যে পুঁজি এবং পিতৃতন্ত্রের যৌথতায় নারীর অধঃস্থনতার আধুনিক কাঠামো তৈরি হয়েছে। পেইটম্যান (১৯৮৮:১৩১)-এর মতে, পুঁজিবাদী চাকরীচুক্তি বিয়েচুক্তিতে নারীর অধঃস্থনতাকে ধরে নিয়েই আগায়। তাঁর নিজের ভাষায়, “বিয়ে-চুক্তি চাকরীচুক্তির মতো কোন বিষয় নয়; বরং চাকরী-চুক্তি বিয়েচুক্তি সম্পর্কে পূর্বানুমান করে নেয়। আর এভাবেই ‘শ্রমিক’ শব্দটির নির্মিতিতে ধরেই নেয়া হয় যে সে একজন পুরুষ, যার একজন স্ত্রী রয়েছেন যার দৈনন্দিন দেখভালের জন্য ব্যবস্থা তাকে করতে হয়। এভাবেই পুঁজিবাদ পুরুষতন্ত্রে খর্বিত হয়ে যায়।” তার যুক্তির পক্ষে উদাহরণ হিসাবে হার্টম্যান ১৯০৭ সালের হারভেস্ট জাজমেন্টের উলে­খ করেন। সেই বিচারে, অস্ট্রেলিয়ার ইন্ডাস্ট্রিয়াল আরবিট্রেশন কোর্টে বিচারপতি হিগিনস শ্রমিকের ন্যূনতম বৈধ মজুরী ঘোষণা করেছিলেন এবং ন্যূনতম বাঁচার মজুরী হিসাবে বিধান দিয়েছেন একজন আদক্ষ শ্রমিকের নিজেকে চালানো, তার স্ত্রী এবং তিনজন শিশুসন্তানকে গ্রহণযোগ্য সাচ্ছন্দ্যে চালানোর সমপরিমাণ অর্থ।

সেই একই বিচারক ১৯১৮ সালে একজন নারী শ্রমিকের বেতন তার স্বামীর বেতনের ৫৪% নির্ধারণ করেছিলেন এবং বলেছিলেন এর চেয়ে যেনো কম না হয়। প্রবার্ট (১৯৮৯: ৯৮)-এর মতে, শ্রমিক ইউনিয়নগুলো বারবার কাজগুলোকে ‘পুরুষের কাজ’ বলে নামকরণে আবেদন জানিয়েছে। আমেরিকার উদাহরণ টেনে হার্টম্যান দেখান আমাদের, ‘পারিবারিক বেতন’-এর ধারণার মধ্যে পুরুষতন্ত্র এবং পুঁজিবাদের দ্বৈত অংশীদারিত্ব নিশ্চিত হয়েছে।

পেইটমানের (১৯৮৮:১৩৯) মতে, “শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাস কোন সন্দেহের অবকাশ রাখে না যে, পারিবারিক বেতনকাঠামোর উপর জোরারোপ ছিলো একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল যার মাধ্যমে পুরুষ নারীকে নানা ধরণের সবেতন কাজের এলাকা থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পেরেছে এবং একই সাথে স্বামীকে ঘরে প্রভুর ভূমিকায় রাখাও নিশ্চিত করতে পেরেছে।” এটি করা প্রয়োজন হয়েছিলো কারণ পূঁজিবাদী চাকরীচুক্তিকে বিয়েচুক্তির উপর একটা সরাসরি হুমকি হিসাবে পুরুষতন্ত্র বিবেচনা করছিলো, বিশেষ করে বিরোধের জায়গাটি ছিলো নারীর শ্রমের উপর কার অধিকার নিরস্কুশ হবে? গ্রামীণ এবং শহুরে উভয় গার্হস্থ্যেই এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠেছিলো, কারণ এই ‘গার্হস্থ্য স্ত্রী-শ্রম’-এর উপর কর্তৃত্ব ছিলো পুরুষের। এই ‘গার্হস্থ্য স্ত্রী-শ্রম’ জ্যাকসনের (১৯৯২: ১৫৪-১৫৫) মতে, বিনিময় এবং ঘরের প্রয়োজন মেটানো উভয় ধরণের উৎপাদনেই নিয়োজিত থেকেছে।

যাহোক, নারীশ্রমের উপর অধিকার প্রশ্নে পুরুষ এবং পূঁজিবাদীর মধ্যে সম্ভাব্য স্বার্থের দ্বন্ধটি অনেকটাই মিটিয়ে ফেলা সম্ভব হয়, ওয়ালবির (১৯৯০) মতে, যখন পুরুষতন্ত্র প্রাইভেট থেকে পাবলিক কাঠামোতে পরিবর্তিত হয় এবং শস্তা, লিঙ্গবিভাজিত, অ-কাঠামোবদ্ধ নারীশ্রমকে শোষণ করা সম্ভব হয়। ওয়ালবির ভাষায় (১৯৯০: ১৮৫), “পুঁজিবাদ এবং পিতৃতন্ত্রের মধ্যে দ্বন্ধের মূল জায়গাটি ছিলো কে নারীর শ্রমকে শোষণ করবে। একদিকে, পুঁজিবাদের প্রয়োজন শস্তা নারীশ্রম। অন্যদিকে, পুরুষতন্ত্রের প্রয়োজন গার্হস্থ্য নারীশ্রম। ফলে একটি বিকল্প পিতৃতান্ত্রিক কৌশল আবিস্কৃত হলো – নারীকে সবেতন চাকরীতে নেয়া হলো ঠিকই কিন্তু অল্প বেতনে।”

যখন আমরা ব্যক্তিগত শ্রম থেকে পাবলিক শ্রমে পরিবর্তিত হই তখন, ফোলব্রে এবং হার্টম্যান (১৯৮৯: ৯৩)-এর মতে, “নারী আর গার্হস্থ্য পরিসরে আবদ্ধ নয়, বরং তার সামনে থাকে পুরো সমাজ যেখানে সে ঘুরে বেড়ায় এবং বঞ্চনার শিকার হয়। এই আপোষ বিশেষ করে আধুনিক পুঁজিবাদের জন্য বিশেষ প্রয়োজন কেননা আধুনিক পূঁজিবাদের প্রয়োজন নমনীয় (flexible) শ্রমশক্তি। লিঙ্গ-বিভাজন, নারীর স্বল্পমজুরী, এবং অ-বাজারী কাজের প্রতি অমর্যাদা– এসবই হলো পুরুষতন্ত্র এবং পূঁজিবাদের মধ্যকার পরিপূরকতার উৎস।”

এমনকি জনসনের মতো সমালোচক যিনি কী না পেইটম্যানের দাবীকে নস্যাৎ করে দিয়েছেন, তিনি (১৯৯৬) পর্যন্ত স্বীকার করেছেন যে বর্তমানে আমরা খুবই একটি লিঙ্গীয় বৈষম্যপূর্ণ পুঁজিবাদী সমাজে বাস করছি, এর মূল কারণ এই যে, বিভিন্ন শ্রেণী থেকে আগত পুরুষ একটি বিষয়কে নিশ্চিত করতে এককাট্টা আর তা হলো এই যে চলে আসা পুরুষতান্ত্রিক কাঠামো বজায় থাকুক এবং পুঁজিবাদের সাথে মিলেমিশে চলুক। তিনি এটিও মেনে নেন যে চলে আসা সম্পত্তি সম্পর্কের কারণে বেশীরভাগ পুঁজিপতিই পুরুষ এবং এই সম্পর্ক-কাঠামো নারীকে সম্পত্তির অধিকারী হতে বাধাগ্রস্ত করেছে।

পারিবারিক বেতন-কাঠামো আজ হয়তো আর সেভাবে নেই। তথাকথিত নয়া-উদারনৈতিক কালে, যখন নিয়োজিত পুঁজির মুনাফা সর্বোচ্চকরণই উদ্দেশ্য তখন কেন কোন পুঁজির মালিক সস্তাশ্রমের জন্য নারীশ্রমিককে কাজে নেবেন যখন তিনি উন্নয়নশীল কোন দেশ থেকে সস্তা পুরুষশ্রমিককেই কাজে রাখতে পারেন? কেন তিনি অ-কাঠামোবদ্ধ (unstructured) নমনীয় খন্ডকালীন (Part-time) নারীশ্রমিককে কাজে নেবেন যখন তিনি সহজেই নমনীয় খন্ডকালীন পুরুষশ্রমিককেই কাজে নিতে পারেন? যখন বর্তমান পুঁজির বাজারে নমনীয় শ্রমের যোগানই বেশি প্রয়োজন, তখন নারী-পুরুষের বাছাই কীভাবে হবে? ক্রমবর্ধমান খন্ডকালীন কাজের জগতে নারীর অবস্থান কি সংকুচিত হতে চলেছে? পুরুষতান্ত্রিক এবং পুঁজিবাদী সম্পর্কের যে এক নতুন বোঝাপড়া চলছে সেখানে কি নারীরা এখনও দ্বিতীয় প্রধান হিসাবেই আবির্ভূত হবেন?

ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের একটি বড় অংশ কি এখনও একটি চাকরীচুক্তি বের করতে চায় যেখানে পুরুষ শ্রমিকই প্রাধান্য পাবেন, না কি ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনে নারীর ক্রমবর্ধমান অংশগ্রহণের কারণে নারীর পক্ষে ভালো সিদ্ধান্ত আসবে? পুঁজিপতিরা এখনও যেহেতু মূলত পুরুষ তাদের সাড়া দেবার ধরণ কী হবে? এসব প্রশ্নের উত্তরের মধ্যে নিহিত রয়েছে নারীদের ভবিষ্যত কাজের বাজার।

১৯৯৭ সালে রোমে অনুষ্ঠিত সোশ্যালিস্ট ইন্টারন্যাশনাল উইমেন-এর “উইমেন অ্যান্ড গ্লোবালাইজেশন অব দ্য ওয়র্ল্ড ইকোনোমি” শীর্ষক কনফারেন্সে এই উদ্বেগ দেখা গেছে। তাদের মতে, নয়া-উদারনীতির উদ্ভব এবং মুক্তবাজার দর্শন, যা দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় সমাজকেই দেখে মূলত একটি বাজার হিসাবে এবং যেখানে প্রতিটি ব্যক্তি একই সাথে উৎপাদক ও ভোক্তা, সমতা ও সামাজিক ন্যায়ের প্রতি একটি সরাসরি হুমকি। এই নয়া-উদারনীতি নারীর কষ্টে অর্জিত বহু অধিকারের প্রতি হুমকিস্বরূপ হয়ে উঠছে, বিশেষ করে শিক্ষার অধিকার, কষ্টার্জিত অর্থউপার্জনকারী কাজের অধিকার এবং স্বাস্থ্যসেবায় অধিকার। কেননা নয়া-উদারনীতিবাদ জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারকে সংকুচিত করে ফেলে, বিশেষ করে উত্তর উপনিবেশিক দেশগুলোতে, কেননা এসব রাষ্ট্রকে বিদেশি বিনিয়োগ আনার জন্য অনেক রাজনৈতিক ছাড় দিতে হয়।

আজকের দিনে মাত্র কয়েক শ’ বহুজাতিক কোম্পানি গ্লোবালাইজেশনকে পরিচালিত করছে, যেসব কোম্পানীর অনেকগুলোরই আবার অর্থনৈতিক সক্ষমতা অনেক দেশের সরকারের চেয়ে বেশি। ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে থাকা এসব বহুজাতিক কর্পোরেশন মানবিক এবং শ্রমিক অধিকারকে উপেক্ষা করে, কেননা তাদের একমাত্র লক্ষ্য সম্ভাব্য সর্বোচ্চ মুনাফা নিশ্চিত করা। এবং ক্রমশ এসব কোম্পানি ও কর্পোরেশনই বৈশ্বিক কাজের ধারা, অর্থায়ন, ভোগ, সংস্কৃতি- সবকিছুর অবয়ব নির্ধারণ করে দিচ্ছে। নারীরা কদাচিৎ এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ নিতে পারেন অথচ এসব সিদ্ধান্তের সবচেয়ে বেশি মাশুল নারীকেই গুনতে হয় কারণ ঐতিহাসিকভাবেই ব্যক্তি-মানব-পুঁজি (human capital) ও সামাজিক পুঁজির (social capital) দিক থেকে তারা অসুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। কয়েকটি উদাহরণ এ বিষয়টিকে খোলাসা করতে পারবে, ধারণা করি।

আফ্রিকায়, মোট খাদ্য উৎপাদনের প্রায় ৮০ ভাগ করেন নারী, অর্ধেকের বেশী ক্ষুদ্রচাষী নারী এবং খাদ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রায় তিন/চতুর্থাংশ শ্রম-শক্তি হলেন নারী। অথচ জমিতে নারীর অধিকার নেই। জমিতে মালিকানা না থাকায়, এসব নারী না পান তাদের কাজের স্বীকৃতি, না পান উৎপাদনে সাহায্য, না পান শ্রমেঘামে ফলানো সম্পদে অধিকার।

আলজেরিয়া এবং অন্যান্য দেশে যেখানে যুদ্ধ, সন্ত্রাস এবং নানা ধরণের চরমপন্থী অবস্থা বিরাজ করছে সেসব দেশে দুর্দশার প্রথম শিকার নারী। ভারী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা অগ্রহণযোগ্যমাত্রার দুর্দশা ও দারিদ্র বয়ে আনতে পারে। কিছু কিছু দেশে, যেমন আলজেরিয়াতে, আইএমএফ-এর চাপিয়ে দেয়া অবকাঠামোগত উপযোজন (structural adjustment) এক ধরণের সামাজিক বাজার অর্থনীতির জায়গায় দ্রুত অনিয়ন্ত্রিত বাজার অর্থনীতির বিস্তার নারীদের দুর্দশায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

এশিয়া এবং লাতিন আমেরিকায় নয়া-উদারনৈতিক নীতির আধিপত্যে এক ধরণের অনানুষ্ঠানিক নমনীয় শ্রম-ঘন্টার কাজের সেক্টর গজিয়ে উঠেছে, যেখানে কাজের বা স্বাস্থ্যের ব্যাপারে কোন সুরক্ষা নেই। অনেক উন্নয়নশীল দেশে, যেখানে অর্থকরী কাজের সুযোগ কম, মিলিয়ন সংখ্যক নারী মাইগ্রান্ট কাজকে বেছে নেয়, বিশেষত সেসব ক্ষেত্রে যেখানে তারা আবেগগত, মানসিক, শারীরীক এবং যৌন সন্ত্রাসের কাছে আরো বেশি অসহায়। এসব নারী যখন তাদের দেশের অর্থনীতিতে প্রকৃত অর্থেই অবদান রাখছেন, তখন একদিকে তারা শুধু মাইগ্রেশনের সামাজিক ক্ষয়ক্ষতির জন্যই যে শুধু অভিযুক্ত হচ্ছেন তাই নয়, বরং তারা থাকছেনও খুবই অরক্ষিত।

নিয়ন্ত্রণহীনতা এবং ব্যক্তিমালিকানাধীনকরণ হয়তো পণ্য ও সেবার উৎপাদনে দক্ষতা বাড়াতে পারে, কিন্তু একই সাথে দারিদ্র বৃদ্ধিরও কারণ হতে পারে। অনেক উন্নত দেশে, কাঠামোগত কর্মহীনতা নারীর জীবনকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে কারণ তারাই বেশীরভাগ স্বল্প-বেতনের অস্থায়ী এবং খন্ডকালীন কাজগুলো করে থাকেন অথবা থাকেন দীর্ঘ-মেয়াদী বেকার (গায়েন ও অন্যান্য, ২০১০)। যেসব দেশে পরিকল্পিত অর্থনীতি ছিলো, সেসব দেশের নারীদের উপর এই বাজার অর্থনীতির খুবই নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সামাজিক কল্যাণ ব্যবস্থার দেশগুলোতে যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ করে সেগুলো এই নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অধীনে আক্রমণের মুখে পড়েছে এবং নতুন বাজার মতাদর্শ এসব প্রতিষ্ঠানকে হটিয়ে দিয়েছে বা দিচ্ছে। সরকারী সাবসিডি কেটে ফেলা এবং সামাজিক কল্যাণমূলক ব্যবস্থাগুলো তুলে দেয়ার বিষয়টি সবচেয়ে আঘাত হেনেছে নারীদের, দারিদ্র থেকে উত্তরণ তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।

একদিকে যখন এই মুক্ত বাজার অর্থনীতি জাতীয় সরকারগুলোকে শিক্ষা, বাসস্থান, স্বাস্থ্য এবং শিশুকল্যাণ ক্ষেত্রে সাবসিডি কমিয়ে দেবার বা তুলে দেবার প্রস্তাব করছে যা নারীদের বোঝা অনেকটাই লাঘব করত, অন্যদিকে তারা তাদের নিয়োজিত পুঁজির সর্বোচ্চ মুনাফা করার জন্য নারীদের ব্যবহার করছে বিনোদন ও সৌন্দর্য ইন্ডাস্ট্রিতে।

নারীর দেহ সৌন্দর্যকে ঘিরে পৃথিবী জুড়ে বিশাল বাণিজ্য চলছে। বিলিয়ন ডলার ব্যবসা করছে ‘ওজন কমানো ইন্ডাস্ট্রি’ প্রতিবছর। এবং এই বাণিজ্য টিকেই আছে নারীর নিজের দেহের উপর ঘৃণা তৈরি করে। এসব সৌন্দর্য ইন্ডাস্ট্রি লাখো নারীকে বুঝ দিচ্ছে যে তাদের মুখের উপর কেমিক্যাল আবর্জনা, তোলা চিকণ ভ্রু যা কিনা আবার এঁকে ভরাট করতে হবে, এগুলোই হচ্ছে সৌন্দর্য। মডেলিং ইন্ডাস্ট্রি, যেমনটি বলেছেন স্পোর্টস সুইমসুট এডিশন, কসমো, কভার গার্ল-এর সাবেক কভার মডেল আন সিমনটন, আয়ত্তে আনা সম্ভব না এমন এক অলীক সৌন্দর্যের পক্ষে প্রচার চালায়। স্লীম হবার জন্য মেয়েরা না খেয়ে থাকে, বমি করে, স্টমাক স্টাপল করে রাখে, চোয়ালকে তার দিয়ে বেধে রাখে এবং মেদ বের করে ফেলে। নারীরা মোটা শুধু একথা বলেই ক্ষান্ত নয় সৌন্দর্য ইন্ডাস্ট্রি। নারীদের বলা হয় তাদের শরীরের সবকিছুরই উন্নয়ন দরকার। তাদের দাঁত যথেষ্ট সাদা নয়, সাদা নয় যথেষ্ট তাদের ত্বক, তাদের চোখ যথেষ্ট নীল নয়, চুল নয় যথেষ্ট উজ্জ্বল- তাদের শরীরের কিছুই ঠিক নয়। আমাদের সব দেশে ত্বক ফর্সাকারী উপাদানের প্রচার যখন তুঙ্গে, তখন পাশ্চাত্যে ত্বক তামাটে করার বাণিজ্য রমরমা। এবং এই তালিকা বেড়েই চলেছে।

আমেরিকান সোসাইটি ফর এসথেটিক প­াস্টিক সার্জন-এর হিসাব অনুযায়ী, ২০০১ সালে ৮.৫ মিলিয়ন কসমেটিক সার্জারী সম্পন্ন হয়েছে, ২০০০ সালের তুলনায়, মাত্র এক বছরে এর বৃদ্ধি ঘটেছে ৪৮% । তাদের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৫ সাল নাগাদ এই কসমেটিক সার্জারির সংখ্যা ৫৫ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে। এবং এই বৃদ্ধি যে শুধু আমেরিকায় হচ্ছে তা-ই নয়, এশিয়াতে এই বৃদ্ধি ঘটছে বছরে ২০%। ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব ­প্লাস্টিক সার্জনস-এর হিসাব (২০০০) অনুযায়ী, জার্মানীতে এই বৃদ্ধি বছরে ১৫% এবং বৃটেনে ৩০%।

এই ধারাকে বজায় রাখা এবং বাড়ানোর জন্য নারীর বিরুদ্ধে এক ধরণের মতাদর্শিক লড়াই সব সময়েই জারী রাখা হয় গণমাধ্যমের সাহায্যে। শুধু বিজ্ঞাপনেই নয়, নাটক, সোপ অপেরা, চলচ্চিত্র, ম্যাগাজিন বা টেলিভিশনের বাণিজ্যিক শোগুলোতে নারীর শরীরকে শুধু যে প্রসাধনী বা পোষাকের বিপনণে ব্যবহার করা হয় এমন নয় বরং সেইসব পণ্যেও হামেশাই ব্যবহার করা হয় যার সাথে নারী শরীরের কোন যোগ নেই। তবে এক্ষেত্রে যোগ না থাকলেও নারীকে একটি নির্দিষ্ট উপায়ে দেখানোর চাপ এবং নারীকে একটি নির্দিষ্ট ধারায় কাজ করতে বলার মধ্যে পরিস্কার যোগসূত্র রয়েছে। নারীর যেসব গুণাবলীকে সুন্দর, নমনীয় বিবেচনা করা হয়, সেগুলোকেই নারীর কাংখিত ব্যবহার হিসাবে উপস্থাপন করা হয়। গণমাধ্যমে উপস্থাপিত নারীর ইমেজ নারীর চিরায়ত লিঙ্গ ভূমিকাকেই পাকাপোক্ত করে। এখানে এসে পুঁজিবাদ, নারী প্রসঙ্গে, আরেকবার পুরুষতন্ত্রের সাথে সন্ধি করে।

এমনকি যেসব নারী এমন কাজে রয়েছেন যেখানে শারীরীক শক্তি ও ক্ষমতার প্রদর্শন অনিবার্য, সেই শক্তিকে এড়িয়ে যৌনতা ও সৌন্দর্য বাড়ানোর উপরই জোরারোপ করা হয়। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, দ্বিতীয়বার ইরাক যুদ্ধ শুরু হবার পরে, যুক্তরাজ্য ও কানাডার এক নম্বর সৌন্দর্য ম্যাগাজিন গ­্যামার একটি প্রবন্ধ ছাপায় যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নারী সৈনিকদের মেকওভার সম্পর্কে। বলা হয়, নারী সৈনিকেরা যখন যুদ্ধে যান তখন কীভাবে মরুঝড়ের মধ্যেও তাদের লিপস্টিক ঠিক রাখতে পারবেন, কিংবা কীভাবে ঘাম ধরে রাখা যাবে যাতে ঘাম তাদের মেকআপ নষ্ট করতে না পারে। অনেকে মনে করেন যে, অ-প্রাপনীয় সৌন্দর্যের দিকে নারীদের ব্যাপৃত রাখা হয় অর্থনীতি বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থেকে তাদের দূরে সরিয়ে রাখবার জন্য, যেমনটা করে থাকে অন্যান্য যুদ্ধ। এভাবেই তথাকথিত সৌন্দর্য-ইন্ডাস্ট্রির মাধ্যমে পুঁজিবাদ নারীর বিরুদ্ধে জারী রেখেছে এক ভিন্ন ধরণের প্রলোভনযুদ্ধ।

বাজার মৌলবাদ মোকাবেলায় নারী

যদিও নারীমুক্তি আন্দোলন ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট সোচ্চার, তথাকথিত বিশ্বায়ন এবং নয়া-উদারনৈতিক অর্থব্যবস্থার বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান এখনো পর্যন্ত খুব জোরালো নয়। তবে কোথাও যদি তেমন কোন আন্দোলন হয়েও থাকে, সেই আওয়াজ বেশি দূর ছড়াতে পারে না, মূলধারার গণমাধ্যমে স্থান পায় না বলেই হয়তো। মূলধারার গণমাধ্যমে স্থান না পাবার কারণ গণমাধ্যম ও নতুন ধারার প্রযুক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ এখনো খুবই কম। জেনকিনস (২০০৮)-এর তথ্য অনুযায়ী, যে নারী বিশ্ব জনসংখ্যার ৫২%-এর প্রতিনিধিত্ব করেন, ৩%-এরও কম রেডিও ও টেলিভিশন সেন্টারের মালিক তারা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের অবস্থানে, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটেই, নারীর অনুপাত মাত্র ৩%।

তবে একমাত্র যে আওয়াজটি এখনো পর্যন্ত এই নয়া-উদারনৈতিক ব্যবস্থায় নারীর অর্থনৈতিক অধঃস্থনতার বিরুদ্ধে সোচ্চার দেখা যায়, সেই আওয়াজটি Socialist International Women (SIW)– এর। ১৯৯৭ সালে Women and the Globalisation of the World Economy শীর্ষক প্রস্তাব থেকে তারা এই প্রচারটি চালিয়ে আসছেন। SIW অবিলম্বে পৃথিবীজোড়া সকল ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনকে একত্রিত হয়ে মাইগ্রেশন, অ-প্রাতিষ্ঠানিক, এবং নমনীয় শ্রমঘন্টার কর্মকাঠামোতে ক্ষতিগ্রস্ত বিশ্বের সকল শ্রমিকের পক্ষে দাঁড়ানোর উদাত্ত আহবান জানিয়েছেন। SIW জাতিসংঘের কাছে দাবী জানিয়েছে মাইগ্রান্ট নারী শ্রমিক এবং তাদের পরিবারে অধিকার বিষয়ে জাতিসংঘের কনভেনশনকে সংশোধন করার।

সেই সংশোধনী জাতিসংঘের সকল আন্তর্জাতিক দলিলে, যেমন, চতুর্থ নারী সম্মেলনের দলিল, সামাজিক উন্নয়নের বিশ্ব সম্মেলন দলিল, জনসংখ্যা ও উন্নয়ন বিষয়ক আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের দলিল, এবং মানবিক অধিকার বিষয়ক কনফারেন্সের দলিলে অন্তর্ভূক্ত করার দাবী জানিয়েছে। SIW আন্তর্জাতিক, জাতীয় এবং আঞ্চলিক সকল পর্যায়ে কাজের জগতে জেন্ডার সংবেদী নীতি ও পরিকল্পনা গ্রহণের ব্যাপারে চাপ তৈরিতে সমন্বিত রাজনৈতিক সক্রিয়তায় যাবার জন্য ডাক দিয়েছে। কিন্তু এই ডাকে যে খুব বেশি সাড়া পড়েছে এমন দাবি করা যাচ্ছে না, সারা পৃথিবীতেই সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের তো বটেই, শ্রমিক আন্দোলনেরই বড় দুর্দিন।

বিপরীত অথচ সমান্তরাল অন্য একটি ধারাও ক্ষীণভাবে দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। আফরেই (১৯৯৯) জানাচ্ছেন, সাম্প্রতিক সময়ে কিছু ইসলামিক অর্থায়ন, যা মূলত মধ্যপ্রাচ্যের ও সৌদি আরবের ধনী ব্যক্তিদের অনুদান এবং আন্তর্জাতিক ইসলামি এনজিও-র মাধ্যমে বিলি করা হচ্ছে, স্বল্প আয়ের নারীদের আকৃষ্ট করছে। বেশ কিছু তরুণও এই অর্থায়নের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছেন এক অলীক আশা থেকে যে এই অর্থনীতি হয়তো আইএমএফ বা অন্যান্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ক্ষমতাকাঠামো থেকে তাদের মুক্ত করবে এবং ব্যাপক হারে বেকারত্ব, ছদ্ম-বেকারত্ব থেকে তাদের মুক্তি দেবে। নারীবাদের নয়া পুরুষতান্ত্রিক মডেলের অন্তর্গত নারীরা ভাবছেন পরিবারের পুরুষ সদস্যদের অপেক্ষাকৃত ভালো শিক্ষার ব্যবস্থা করবে এই অর্থ যা ভালো চাকরির নিশ্চয়তা দেবে এবং এভাবেই পারিবারিক জীবনে এক ধরণের নিশ্চয়তা ফিরে আসবে, যার চুঁইয়ে পড়া প্রভাব তার জীবনেও আসবে।

পাশ্চাত্যের নারীবাদীরা গণমাধ্যমে নারীর অপ-রূপায়ন প্রসঙ্গে প্রচুর লিখেছেন। এসব লেখালেখির মাধ্যমে একধরণের সচেতনতা অবশ্যই তৈরি হচ্ছে, বিশেষ করে একাডেমিক এবং অ্যাক্টিভিস্টদের মধ্যে। এমনকি এসব লেখালেখির মাধ্যমে নানা ধরণের কোর্স চালু হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে, কিন্তু এসব লেখালেখি বাস্তব অবস্থার খুব পরিবর্তন আনতে পেরেছে সমাজে, নিদেনপক্ষে গণমাধ্যমগুলোতেও, এমনটা বলা মুশকিল। গণমাধ্যমে এবং সমাজে এই পরিবর্তনহীনতার কারণ বোঝা যায়। সম্পদ এবং গণমাধ্যমে নারীর অংশগ্রহণ এখনো খুবই সীমিত। গণমাধ্যমে নারীর বাণিজ্যিক অপরূপায়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ খুবই ইস্যু-ভিত্তিক, মোটেই কোন পূর্বাপর সমন্বিত পরিকল্পিত কোন কাঠামো নেই এসব প্রতিবাদের। এসব প্রতিবাদও আবার মূলধারার গণমাধ্যমে বা জনপরিসরে জায়গা পায় না।

এসব অপরিকল্পিত, বিচ্ছিন্ন প্রতিবাদকে সামান্যই আমলে নেয় তাই কর্পোরেট পুঁজি। কাজেই সৌন্দর্য ইন্ডাস্ট্রির ব্যবসা বেড়েই চলেছে। তবু কিছু কিছু প্রতিবাদ আন্দোলনের রুপ নিচ্ছে। যেমন, ফেমিনিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব আইসল্যান্ড দীর্ঘদিন যাবত গণমাধ্যমে নারীর নেতিবাচক ইমেজ উপস্থাপনের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে, রাজনীতিবিদদের সাথে আলাপে বসছে নির্বাচনের আগে, এবং অলটারনেটিভস অব বিউটি ধরণের প্রদর্শনীর আয়োজন করছে যেখানে বিভিন্ন বিষয়ে বিশ্বসেরা নারীদের কাজকে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এ’জাতীয় অসংখ্য ছোট ছোট গ্রুপ ছড়িয়ে আছে সারা পৃথিবীতে, মুশকিল হলো তাদের মধ্যে কোন নেটওয়ার্ক নেই।

অনেক তাত্তিক মনে করছেন, নারীদেহের অত্যধিক ব্যবহার ও প্রদর্শনীর প্রতি বিরাগ থেকেও পর্দা, হিজাব জনপ্রিয় হয়ে উঠছে তরুণ, শিক্ষিত, অবিবাহিত মুসলিম নারীদের মধ্যে। নারী শরীরের পণ্যায়ন, জনপ্রিয় নান্দনিকতার অবয়বে কিংবা স্থুলতার নির্লজ্জ প্রকাশে, যেভাবেই হোক না কেন, সেক্যুলার কিংবা ইসলামিক নারী- উভয়েই অপছন্দ করছেন। আর এই অবসরে ধর্মীয় মৌলবাদী তাত্তিকরা তাদের এজেন্ডা নিয়ে এগিয়ে আসছেন, ‘ধর্মীয় ড্রেসকোড’-ই, কেউবা আরো একটু এগিয়ে ‘ধর্মীয় জীবনব্যবস্থাই’ জনপরিসরে নারীর সামাজিক মর্যাদাকে নিশ্চিত করতে পারে– এমন দাবী নিয়ে আসছেন। কিন্তু সেখানেও থেমে নেই বাজার।

মৌলবাদের সাথে বাজার কীভাবে গাঁটছড়া বাধে তার এক অসাধারণ উদাহরণ দাখিল করেছেন মালয়েশীয় নারীবাদী তাত্ত্বিক ওথমান (২০০৬)। একটি বিজ্ঞাপনকে উলে­খ করেছেন যা মালয় আঞ্চলিক টেলিভিশনে প্রচারিত হয়েছে ২০০৩ সালে। এটি একটি শ্যাম্পুর বিজ্ঞাপন। বিজ্ঞাপনটিতে একজন সুন্দর মুসলিম মালয় নারীকে উপস্থাপন করা হয়েছে যে তার স্বামীকে খুশী করার জন্য’ তার চুলের যত্নে বিজ্ঞাপনের শ্যাম্পুটি ব্যবহার করেন। বিজ্ঞাপনটি ওই নারীর হিজাববিহীন মাথাটিকে কখনোই দেখায় না, কিন্তু দেখায় তার স্বামীর তৃপ্ত হাসিমুখ যে তার স্ত্রীর সদ্য শ্যাম্পু করা চুল দেখে মুগ্ধ। একই নারী শরীরে ধর্মীয় মৌলবাদ ও বাজারের যৌথ আক্রমণকে বোঝাতে এর চেয়ে আর ভাল উদাহরণ কী হতে পারে!

মুশকিল হলো, নারীমুক্তি আন্দোলনের ক্রমশ পৃথক হয়ে ওঠা দুই ধারাই, আফরেই (১৯৯৯) উত্থাপিত ‘দ্বি-নারীবাদের’ নারীবাদী ধারা এবং পুরুষতান্ত্রিক ধারা, বর্তমান বিশ্বে নারীর প্রতি সহিংসতার অর্থনৈতিক এবং বহুধর্মীয় মৌলবাদের জটিল পরিস্থিতিকে আমলে আনতে এবং মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হচ্ছে। ধর্মীয় মৌলবাদের উত্থানকে অনেকেই পুঁজিবাদী গণতান্ত্রিক মডেলের ব্যর্থতা হিসাবে দেখছেন। মারনিসি (১৯৮৯)-র মতে, সাম্প্রতিক দশকগুলোতে মৌলবাদের উত্থান ঘটেছে সেক্যুলার, উত্তর-উপনিবেশিক কর্তৃত্বপরায়ণ দেশগুলোয়, যারা আইএমএফ বা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির রীতি অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করে, তাদের ব্যর্থতার প্রতিক্রিয়া হিসাবে। নারীবাদ, নারীমুক্তি আন্দোলন আবার মৌলবাদকে প্রত্যাখ্যান করে, বাজারকে সেভাবে নয়। আবার মৌলবাদের কারণে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতার নামে যে সেক্যুলার রাজনীতির বিরোধী একটি ধারা গড়ে উঠছে সারা পৃথিবীতে, সেটিও নারীর মুক্তির পথ তো নয়-ই বরং এযাবতকালে নারীমুক্তি আন্দোলনের যা কিছু অর্জন তার পায়ে কুড়াল চালানো। যে কোন একপক্ষ নেয়া তাই খুব বিপজ্জনক। মানুষের মুক্তির যে রাজনীতি এই জটিল পরিস্থিতিকে মোকাবেলা করতে পারতো, সেই রাজনীতি যেমন অনুপস্থিত বিশ্ব-প্রেক্ষাপটে, তেমনি নারীবাদী আন্দোলন আজ ইস্যু-ভিত্তিক অ্যাক্টিভিজমের ঘেরাটোপে বন্দী।

নারীমুক্তি আন্দোলন জাতীয় গণতান্ত্রিক লড়াইয়ের সাথে যেমন বিযুক্ত হয়ে পড়েছে তেমনি হারিয়েছে এই লড়াইয়ের আন্তর্জাতিক চরিত্র। নারীমুক্তি আন্দোলন যে শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক আন্দোলন, যেমনটা বলেছিলেন রোজা লাক্সামবুর্গ, বোঝাপড়ার এই অবস্থানটি নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। আজকের নারীমুক্তি আন্দোলনের রাজনীতিটি জারি থাকা দরকার তিন-মাত্রিক স্তরে: বাজার মৌলবাদের বিপক্ষে, ধর্মীয় মৌলবাদের বিপক্ষে, এবং গণতান্ত্রিক লড়াইয়ের পক্ষে। সে লড়াইটি কেবল নারীর একার নয়, গণতান্ত্রিক শিবিরের সকল নারী-পুরুষের, এবং এই সত্য যত দ্রুত বোঝা যাবে ততই মঙ্গল। শুধু একটু পা চালিয়ে।

তথ্যসূত্র:

Afray, Janet. (1999), “Dossier 21: The War Against Feminism in the Name of the Almighty: Making Senses of Gender and Muslim Fundamentalism”, Women Living Under Muslim Law.

Folbre, Nancy and Hartmann, Heidi. (1989), “The persistence of patriarchal capitalism”, Rethinking Marxism, 2(4): 90-96.

Gayen, Kaberi, McQuaid, Ronald and Raeside, Robert. (2010). “Social Networks, Age Cohorts and Employment”, International Journal of Sociology and Social Policy30(5/6): 219-238.

Hartmann, Heidi. (1981), “The unhappy marriage of Marxism and Feminism: Towards a more progressive union”, in Lydia Sargent (Ed.), Women and revolution: A discussion of the unhappy marriage of Marxism and feminism. Boston: South End Press.

Jackson, Stevi (1992). “Towards a historical sociology of housework: A materialist feminist analysis”, Women’s Studies International Forum, 15: 153-172.

Jensen, Robert. (2006), “The Threats to Suatainabl Democracy: The Four Fundamentalisms”. Counterpunch, May 30.

Mernissi, Fatima. (1989). Doing Daily Battle: Interview with Moroccan Women, New Jersey
Othman, Norami. (2006), “Muslim women and the challenge of Islamic fundamentalism/extremism: An overview of Southeast Asian Muslim women’s

struggle for human rights and gender equality”, Women’s Studies International Forum 29: 339–353.

Pateman, Carole. (1988). The Sexual Contract. Oxford: Basil Blackwell.

Probert, Belinda. (1989). Working life. Melbourne: McPhee Gribble.

Reed, Betsy (ed.) (2002), Nothing Sacred: Women Respond to Rligious Fundamntalism and Trror, Nation Books.

Walby, Sylvia. (1990). Theorizing Patriarchy. Oxford: Basil Blackwell.

The post এবং বাজার মৌলবাদের বেনোজলে নারী first appeared on KG | Kaberi Gayen.

]]>
https://kaberigayen.com/%e0%a6%8f%e0%a6%ac%e0%a6%82-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%ae%e0%a7%8c%e0%a6%b2%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%ac%e0%a7%87%e0%a6%a8%e0%a7%8b%e0%a6%9c/feed/ 0