Bangladesh - KG | Kaberi Gayen https://kaberigayen.com Sat, 19 Mar 2022 15:59:55 +0000 en-US hourly 1 https://wordpress.org/?v=6.5.2 https://kaberigayen.com/wp-content/uploads/2021/12/favicon_favicon-light.svg Bangladesh - KG | Kaberi Gayen https://kaberigayen.com 32 32 নারীনীতি ২০১১: সরকার পিছু হটেছে https://kaberigayen.com/%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%80%e0%a6%a8%e0%a7%80%e0%a6%a4%e0%a6%bf-%e0%a7%a8%e0%a7%a6%e0%a7%a7%e0%a7%a7-%e0%a6%b8%e0%a6%b0%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%aa%e0%a6%bf%e0%a6%9b%e0%a7%81/ https://kaberigayen.com/%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%80%e0%a6%a8%e0%a7%80%e0%a6%a4%e0%a6%bf-%e0%a7%a8%e0%a7%a6%e0%a7%a7%e0%a7%a7-%e0%a6%b8%e0%a6%b0%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%aa%e0%a6%bf%e0%a6%9b%e0%a7%81/#respond Tue, 15 Mar 2022 08:02:07 +0000 https://kaberigayen.com/?p=8031 পাশ্চাত্যের নারীবাদীরা গণমাধ্যমে নারীর অপ-রূপায়ন প্রসঙ্গে প্রচুর লিখেছেন। এসব লেখালেখির মাধ্যমে একধরণের সচেতনতা অবশ্যই তৈরি হচ্ছে, বিশেষ করে একাডেমিক এবং অ্যাক্টিভিস্টদের মধ্যে। এমনকি এসব লেখালেখির মাধ্যমে নানা ধরণের কোর্স চালু হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে, কিন্তু এসব লেখালেখি বাস্তব অবস্থার খুব পরিবর্তন আনতে পেরেছে সমাজে, নিদেনপক্ষে গণমাধ্যমগুলোতেও, এমনটা বলা মুশকিল। গণমাধ্যমে এবং সমাজে এই পরিবর্তনহীনতার কারণ বোঝা যায়। সম্পদ এবং গণমাধ্যমে নারীর অংশগ্রহণ এখনো খুবই সীমিত। গণমাধ্যমে নারীর বাণিজ্যিক অপরূপায়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ খুবই ইস্যু-ভিত্তিক, মোটেই কোন পূর্বাপর সমন্বিত পরিকল্পিত কোন কাঠামো নেই এসব প্রতিবাদের। এসব প্রতিবাদও আবার মূলধারার গণমাধ্যমে বা জনপরিসরে জায়গা পায় না।

The post নারীনীতি ২০১১: সরকার পিছু হটেছে first appeared on KG | Kaberi Gayen.

]]>

এ’বছর ৮ মার্চ সরকার ‘জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১’ ঘোষণা করেছে। নতুন নীতিমালার খসড়া মন্ত্রীসভা অনুমোদন করেছে। অতীতে ঘোষিত অন্য তিনটি নারীনীতির মতোই এটি ঘোষণা পর্যায়েই রয়েছে, এখনো আইন হিসেবে পাশ হয়নি। নারীনীতি ঘোষণার দিন থেকেই ধর্মভিত্তিক দলগুলো সম্পত্তির উত্তরাধিকারে নারী-পুরুষের সমান অধিকার দেয়া হয়েছে এমন দাবী করে নারীনীতি ২০১১ প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে। জামায়াতে ইসলামসহ অন্য ধর্মভিত্তিক দলগুলো ইতিমধ্যে এ নীতিকে কোরানবিরোধী আখ্যা দিয়ে এমনকি সরকার পতনের হুমকি দিয়েছে। ৮ মার্চ ২০১১ তারিখের বিকালে, নারীনীতি ঘোষণার দিনই, রাজধানীর মুক্তাঙ্গনে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটি আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে কমিটির আমির ও ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের চেয়ারম্যান মুফতি আমিনী ৪ এপ্রিল হরতালের ডাক দেন। সে হরতাল বুকে কোরান বেধে মিছিলকারী ও পুলিশের মধ্যকার সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। সরকারবিরোধী ধর্মভিত্তিক দলগুলোর পাশাপাশি সরকার সমর্থক ধর্মভিত্তিক দলগুলোও এই নারীনীতির বিরোধিতা করেছে। মহাজোটের শরিক দাবিদার মিসবাহুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্ত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোটও এই নীতির বিরোধী।


এসব হুমকির প্রতিক্রিয়া সুখকর হয়নি দীর্ঘদিন ধরে সম্পত্তিতে সমঅধিকারের দাবী জানিয়ে আসা নারী আন্দোলনের জন্য এবং সাধারণভাবে নারীদের জন্য। নারীনীতি ঘোষণার পরপরই আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম হানিফ বলেন, “সরকার মুসলিম সম্পত্তি বন্টন আইনে কোন পরিবর্তন আনেনি। ইসলাম যেভাবে নারী-পুরুষের সম্পত্তির উত্তরাধিকার দিয়েছে, সরকার শুধু তা নিশ্চিত করতে সম্পত্তিতে নারীর অধিকারের কথা বলেছে।”(সমকাল, ৯ মার্চ ২০১১)। এর পরই প্রথমে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী কোরআনবিরোধী কোন আইন করা হবে না মর্মে আশ্বস্ত করেছেন। সবশেষে, গত ২০ এপ্রিল, প্রধানমন্ত্রী আওয়ামীপন্থী মাদ্রাসা শিক্ষকদের সমাবেশে আবারো এই মর্মে আশ্বস্ত করেন, শুধু যে কোরাণ ও সুন্নাবিরোধী কোন আইন প্রণয়ন করা হবে না তাই নয়, বরং তারা নারীনীতির মধ্যে ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক যেসব আইন আছে ইতিমধ্যে তা তুলে নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই পুনরাবৃত্ত আশ্বস্তিবার্তা সত্ত্বেও ইসলামিক আইন বাস্তবায়ন কমিটির ব্যানারে ফজলুল হক আমিনীর পার্টি মে মাসের ৬, ৭, ১১, ১২, ১৬ এবং ২২ তারিখ বিভাগীয় শহরগুলোতে এবং ২৭ মে ঢাকায় নারী ও শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। জামাতে ইসলামও ৭ মে দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচী দিয়েছে নারীনীতির কিছু ধারা বাতিলের দাবীতে।

যে ধারাটি নিয়ে এতো হৈ চৈ, বিক্ষোভ-সমাবেশ, ধর্মীয় গোষ্ঠীর কাছে সরকারের নতজানু অবস্থান, কী আছে সেই ধারায়?

বিতর্কিত সেই ধারাটি
সরকার পরিস্কার পিছু হটেছে
৯ মার্চ, নারীনীতি ঘোষণার পরদিন, প্রায় সবক’টি জাতীয় দৈনিকে ভুল তথ্যে ভরা যে শিরোনামটি ফলাও করে ছাপনো হয় তা হলো সম্পত্তির উত্তরাধিকারে নারী-পুরুষের সমানাধিকার দিয়ে নারী উন্নয়ন নীতিমালা ২০১১ ঘোষিত। এই শিরোনামগুলো এতোই যুতসইভাবে, এতো গুরুত্ব দিয়ে ছাপানো হয় যে খবরটির সত্যতা নিয়ে প্রায় কারোরই কোন সন্দেহ থাকে না। বিশেষ করে বর্তমান মহাজোট সরকারের প্রধান শরীক দল আওয়ামীলীগ তাদের ২০০৮-এর নির্বাচনী ইশতেহারে ১৯৯৭ সালের নারীনীতিকে পূর্ণ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছিলো বলে এই খবরে তেমন সন্দেহের অবকাশও ছিলো না। সম্পত্তির সমঅধিকার প্রশ্নে ১৯৯৭ সালের নারীনীতিতে কী বলা হয়েছিলো? আসলেই কি ২০১১ সালের নারীনীতিতে দেয়া হয়েছে উত্তরাধিকার-সম্পত্তিতে নারী-পুরুষের সমঅধিকার? বাকী দুটো নীতিতেই বা এই ধারাটি কেমন ছিলো? এসব প্রশ্নের ফয়সালা হওয়া জরুরী। তাই এক নজরে দেখে নেয়া যাক চারটি নারীনীতিতে সম্পত্তিতে সমঅধিকারের প্রশ্নটি কীভাবে আবর্তিত, বিবর্তিত এবং পুনরাবৃত্ত হয়ে বর্তমান অবয়ব নিয়েছে।

চারটি নারীনীতিতে উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নারী-পুরুষের সমানাধিকার প্রসঙ্গ

চারটি নারীনীতিতে উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নারী-পুরুষের সমানাধিকার প্রসঙ্গ
১৯৯৭ সালে যেখানে উত্তরাধিকার এবং ভূমির উপর নারীর সমান সুযোগ এবং নিয়ন্ত্রণের অধিকার দেয়া এবং সেই লক্ষ্যে নতুন আইন প্রণয়ন করার কথা বলা হয়েছে, ২০০৪-এর নারীনীতিতে উত্তরাধিকার এবং ভূমির উপর নারীর অধিকারের বিষয়টি লোপাট করা হয়েছে, ২০০৮-এর নারীনীতিতেও উত্তরাধিকারের বিষয়টি তুলে দিয়ে ‘বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অর্জিত স্থাবর/অস্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে নারীর সমান সুযোগ এবং নিংন্ত্রণের অধিকার দেয়া এবং সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নতুন আইন প্রণয়ন করা’র কথা বলা হয়েছে। এবং এবারের নারীনীতিতে ‘উপার্জন, উত্তরাধিকার, ঋণ, ভূমি ও বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অর্জিত সম্পদের ক্ষেত্রে নারীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রদান করা’র কথা বলার মধ্য দিয়ে তুলে নেয়া হয়েছে উত্তরাধিকারে সমান অধিকারের প্রসঙ্গটি এবং বাদ দেয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় নতুন আইন করার বিষয়টি। ঠিকই আছে, উত্তরাধিকারে সমান অধিকার দেবার বিষয়টি বিবেচনায় থাকলেই কেবল নতুন আইন প্রনয়ণের প্রয়োজন হত। সেই বিষয়টিই যখন বিলোপ করা হয়েছে তখন নতুন আইনের তো কোন প্রয়োজন নেই। প্রধানমন্ত্রী সত্যভাষণ করেছেন মাদ্রাসা শিক্ষকদের সমাবেশে গত ২০এপ্রিল, “আমরা কোরান নিরীক্ষণ করে, বিশেষ করে সুরা আন-নিসা, কোরানের সাথে সাংঘর্ষিক নীতিগুলো বাদ দিয়েছি।” এভাবে ১৯৯৭ সালের নারীনীতি থেকে সম্পত্তির সমঅধিকার প্রশ্নে আওয়ামী লীগ পরিস্কার পশ্চাদপসারণ করেছে, পিছু হটেছে ২০০৮ সালের নির্বাচনী ওয়াদা থেকেও।

নারীনীতি ২০১১ অনুযায়ী, প্রচলিত নীতি এবং ধর্মীয় বিধানে নারী যে সম্পত্তির অধিকারী সেই সম্পদে কেবল নারী পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের অধিকার পাবার কথা বলা হয়েছে, যা সম্পত্তিতে সমঅধিকারের সাথে কোনভাবেই সম্পর্কিত নয়। যেহেতু ধরে নেয়া যায় যে এই নীতি বাংলাদেশের সকল নারীর জন্যই ঘোষণা করা হয়েছে, সেক্ষেত্রে এই নীতির সমস্যা হলো, মুসলিম নারীরা তাদের পুরুষের তুলনায় অর্ধেক প্রাপ্যতার বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন না, আর হিন্দু-বৌদ্ধ এবং কোন কোন আদিবাসী জনগোষ্ঠী যারা মূলত হিন্দু পারিবারিক আইন দ্বারা পরিচালিত তাদের নারীরা বের হতে পারবেন না উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে কোন ধরণের অধিকার না থাকার বিধান থেকে। যে নারীর উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে কোন অধিকারই নেই, তিনি কোন সম্পদের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের অধিকারী হলেন এবারের এই নীতি অনুযায়ী?

এখন প্রশ্ন, কেনো এতো হৈ চৈ তাহলে?

 

পক্ষ দুটি নয়, তিনটি
আমরা এই নীতি বিষয়ে তিনটি অভিমত দেখতে পাচ্ছি। প্রথমত, সরকার বলছে এই নীতিটি নারীর অধিকারকে অগ্রগামী করার এক বিশেষ যুগান্তকারী পদক্ষেপ, তবে কোরাণের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। দ্বিতীয়ত, ধর্মীয় গোষ্ঠী এই নীতিকে প্রত্যাখ্যান করছে কোরান-বিরোধী দাবি করে এবং সে’লক্ষ্যে আন্দোলন-সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছে। শোরগোলটা মূলত সেদিক থেকেই শোনা যাচ্ছে। রয়েছে তৃতীয় আরেকটি শক্তি, নারী-প্রশ্নে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনকারী নারী-পুরুষের মিলিত শক্তি এবং কিছু বাম সংগঠনের নারী নেতারা। সম্পত্তির সমান অধিকারের বিষয়ে সরকারের পিছু হটে আসা, বিবাহ, বিবাহ-বিচ্ছেদ এবং সন্তানের অভিভাবকত্ব বিষয়ে অতীতের সকল নারীনীতির মতই এই নারীনীতিতেও নারী সমাজের দাবীকে পাশ কাটিয়ে যাওয়াকে সমালোচনা করে এই তৃতীয় শক্তি ‘সমঅধিকার আমাদের ন্যূনতম দাবি’ নামের মোর্চা গঠন করে নারীনীতি ২০১১-কে প্রত্যাখান করছে এবং নতুন নারীনীতি তৈরীর দাবি করেছে। গত ৬ মে ঢাকার রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে তারা আগামী ২৪ মে ঢাকায় একটি কনভেনশন করার ঘোষণা দিয়েছে এবং উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নারীর সমঅধিকার, বিয়ে, সন্তানের অভিভাবকত্ত্বসহ পারিবারিক আইনের অধীনে যেসব আইন নারীকে বঞ্চিত রেখেছে সেসব বিষয়ে সংশোধনের দাবিতে একমত সকল নারী-পুরুষকে সেই কনভেনশনে যোগদানের আহ্বান জানিয়েছে।

 

হৈ চৈ আসলে সম্পত্তিতে সমঅধিকার প্রশ্নে
নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের প্রসঙ্গে

উত্তরাধিকার, সম্পদ ও ভূমির উপর নারীর অধিকারের প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে বিএনপি-জামাত জোটের নারীনীতি ২০০৪ ঘোষিত হলে সংগত কারণেই ধর্মীয় গোষ্ঠী মাঠে সরব হয়নি। বাকী তিনটি নারীনীতির যে কোন ইস্যুতেই যেমন সিডও সনদ বাস্তবায়ন, বিদ্যমান বৈষম্যমূলক আইন বিলোপ, পিতামাতা উভয়ের পরিচয়ে সন্তানের পরিচয়, বাল্যবিয়ে- মেয়েশিশু ধর্ষণ-পতিতাবৃত্তির বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ, রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ, নারীশিক্ষা, ফতোয়া প্রসঙ্গে ধমীয় গোষ্ঠীর বক্তব্য একই। আর তা হলো, নারী-পুরুষের অধিকার ও মর্যাদার তারতম্য স্বাভাবিক; নারী-পুরুষের কার কী অধিকার তা কোরআন-সুন্নাতেই বলে দেয়া আছে। জাতীয় জীবনে নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়, নারীকে দেয়া হবে ‘ন্যায্য অধিকার’। নারী-পুরুষের তারতম্য, আইনগত ফারাক বিলোপের প্রস্তাব কোরান-সুন্না বিরোধী, এসব দূর করা মানুষের কাজ নয়, আল্লাহতালার মহাআজ্ঞাপ্রসূত এবং নারীর জন্য কল্যাণকর। এসব বিষয়ে এ’হেন সুস্পষ্ট অবস্থান ধর্মীয় গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে আমরা বরাবরই দেখি, তবে তাদের মরিয়া হয়ে উঠতে দেখা যায় যখনই প্রসঙ্গটি নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গে হয়। এটা তারা কোন অবস্থাতেই মেনে নিতে পারে না। ২০০৮ এবং ২০১১ সালের নারীনীতিতে উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নারীর সমঅধিকারের বিষয়টি উল্লেখ না করা হলেও তারা মাঠ গরম করেছেন। তাদের এই অবস্থান তাদের ঘোষিত রাজনৈতিক দর্শনের সাথে, নারী প্রসঙ্গে তাদের নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। যা কিছু নারীর জীবন যাপনের অগ্রগামিতার সাথে সম্পর্কিত, তার বিরুদ্ধেই তাদের সুস্পষ্ট অবস্থান।

তবে আপাতদৃষ্টে মনে হয় সম্পত্তিতে সমানাধিকারের বিরোধিতাকারী বুঝি কেবল এই ধর্মীয় গোষ্ঠী। কিন্তু একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে আমাদের পুরুষতান্ত্রিক রাজনীতির আপাদমস্তক সম্পত্তিতে সমানাধিকারের বিরোধী। আমরা ধর্মীয় দলগুলোকে কেবল দৃশ্যপটে দেখতে পাই বলে তাদের কাঁধে বন্দুক রেখে অন্যরা নিস্তার পেয়ে যান। এই ধর্মীয় গোষ্ঠী রাস্তায় না থাকলে কি অবস্থার বিশেষ হেরফের হতো? নারীসমাজের দীর্ঘদিনের দাবির মুখে ১৯৯৭ সালের নীতিমালায় সম্পত্তিতে নারীর অধিকার এবং উত্তরাধিকারের বিষয়টি অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছিলো। তখনকার আওয়ামী লীগ সরকারের হাতে যথেষ্ট সময় থাকা সত্ত্বেও (১৯৯৭ থেকে ২০০১) এবং এখনকার মতো ধর্মীয় গোষ্ঠীর দৃশ্যমান কোন আস্ফালন না থাকা সত্ত্বেও নীতিমালা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কোন আইন প্রনয়ণ বা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বিএনপি এবং জামাত জোটের ২০০৪ সালের নীতিমালায় উত্তরাধিকার সম্পত্তি ও ভূমিতে অধিকারের পুরো বিষয়টিই লোপাট করে দেয়া হয় ফলে ধর্মীয় গোষ্ঠী মাঠে নামেনি। তাই বলে কেনো প্রগতিশীল ধারাগুলো লোপাট করা হলো সে’মর্মে অওয়ামীলীগ বা অন্য কোন সংগঠনই কোন প্রশ্ন তোলেনি। ২০০৮ সালের নারীনীতিতে ৯.১৩ ধারায় উত্তরাধিকার এবং ভূমির উপর অধিকারের বিষয়টি বাদ দিয়ে কেবল বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অর্জিত স্থাবর/অস্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে নারীর সমান সুযোগ ও নিয়ন্ত্রণের কথা বলায় ধর্মীয় দলগুলোর বিক্ষোভের মুখে প্রথমে ধর্মীয় আলেমদের সমন্বয়ে নীতিটি নীরিক্ষণের কমিটি গঠিত হয়, তারা কাগজে-কলমে তাদের বিধান দেন এবং রাস্তায় সক্রিয় থাকেন। ক্রমশ এটি বাস্তবায়নের বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। এবার চতুর্থবারের মতো যে নীতিটি ঘোষণা করা হয়েছে সেখানে উত্তরাধিকারে সমানাধিকার প্রস্তাব থেকে সরে আসার পরও স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বলছেন ধর্মীয় আইনের পরিপন্থী কোন আইন করা হবে না। প্রধান বিরোধীদল বিএনপি’র কোন অফিসিয়াল অবস্থান আমরা এ’পর্যন্ত পাইনি। পাইনি জাতীয় পার্টি বা বাম সংগঠনগুলোর অফিসিয়াল অবস্থান। পরিস্কার নয় সরকারের অবস্থানও। শুধু ধর্মীয় দলগুলোর ক্ষেত্রে আমরা তাদের অবস্থানটি পরিস্কার দেখতে পাই মাঠে। কিন্তু যে দলগুলো ধর্মীয় দল নয় সরাসরি তাদের কোন বক্তব্য না পাবার কারণে তাদের অবস্থানটি এ’পর্যন্ত বোঝা সম্ভব হয়নি। কারণ কোন রাজনৈতিক দলকে নারী প্রসঙ্গে এই গোষ্ঠীর মুখোমুখি দাঁড়াতে আমরা দেখি না। ফলে আস্ফালনকারী ধর্মীয় গোষ্ঠীর মুখোমুখি জেগে থাকতে দেখি শুধু সম্পত্তিতে সমঅধিকারের প্রশ্নে এক নীরবতার রাজনীতিকে। প্রখ্যাত সমাজতাত্ত্বিক স্টুয়ার্ট হল-এর রেপ্রিজেন্টেশন তত্ত্ব আমাদের জানায়, খালি চোখে যা আমরা দেখি, সেটি যেমন অর্থ তৈরী করে, তার সমান বা বেশী অর্থ বহন করতে পারে যা দেখা যায় না সেই অনুপস্থিতির রাজনীতি। তা’হলে কি ধরে নেবো কোন রাজনৈতিক দলই আসলে সম্পত্তিতে সমঅধিকারের বিষয়টি ফয়সালা করতে চায় না? চারটি নারীনীতির প্রত্যেকটিতেই অনেক ধারাই রয়েছে যা ধর্মীয়নীতির সাথে আক্ষরিকভাবে মিলিয়ে দেখতে চাইলে পার্থক্যমূলকই নয় শুধু, সাংঘর্ষিকও বটে। কিন্তু ধর্মীয় গোষ্ঠী সব সময় সবচেয়ে সোচ্চার যে ধারার বিরুদ্ধে সেটি হলো উত্তরাধিকারে নারীর সমঅধিকারের প্রশ্নটিতে। এভাবে নারীনীতি ঘোষণাকারী সরকার, নীরব রাজনৈতিক দল এবং উন্মত্ততা সৃষ্টিকারী ধর্মীয় গোষ্ঠী মিলে ক্রমশই শক্তিশালী করে তুলছে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের মূল উৎসের প্রতি নেতিবাচক এক রাজনীতিকে। সত্যিই তো, নারীকে সম্পত্তিতে সমঅধিকার কেনো পুরুষতন্ত্র দিতে চাইবে যদি ধর্মের নামে বা আইনের নামে বা যে কোন কিছুর নামে হাজার বছর ধরে চলে আসা বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা দিয়ে সম্পদের উপর অধিকার নিরঙ্কুশ করা যায়?

 

‘ধর্মবিরোধী আইন’ বনাম ‘ধর্মবিরোধী আইন প্রনয়ণ করা হবে না’ ডিসকোর্স
যারা এই আইনকে ধর্মবিরোধী আখ্যা দিচ্ছেন বা যারা বলছেন ধর্মবিরোধী কোন আইন তারা করেননি বা ভবিষ্যতেও করছেন না, বিনীতভাবে তাদের উদ্দেশ্যে বলার সময় এসেছে, কথিত ধর্মীয় বিধানের অনেক কিছুই কিন্তু পরিবর্তিত হয়েছে যুগের দাবিতে। নারী রাষ্ট্র প্রশাসকের বিধান ধর্মে স্বীকৃত না হলেও গত দুইযুগ ধরে জনগণের ভোটে নির্বাচিত আমদের প্রধানমন্ত্রীরা নারী। নারী নেতৃত্বাধীন দলের সাথে জোট বেধে ক্ষমতায় যাচ্ছে ধর্মীয় দলগুলো। নারী রাষ্ট্র প্রশাসকের অধীনে মন্ত্রী হচ্ছেন প্রধান ধর্ম-ভিত্তিক রাজনৈতিক দলের নেতারা। ব্রিটিশ-ভারতে ১৯৩৭ সালে প্রণীত ‘মুসলিম ব্যক্তিগত (শরিয়ত প্রয়োগ) আইন দ্বারা মুসলিমদের বিবাহ, তালাক, দেনমোহর, উত্তরাধিকার ক্ষেত্রে ধর্মীয় আইনের প্রয়োগের কথা বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী কোন নাবালক তার দাদা বা নানার সম্পত্তি পাবে না যদি তার দাদা/নানার পূর্বেই তার বাবা/মা মারা যায়। কিন্তু ১৯৬১ সালে প্রণীত মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ৪ নং ধারা অনুযায়ী নাবালক সন্তান তার দাদা/নানার সম্পত্তির ততটুকু পাবে যতটুকু তার বাবা/মা পেত। ধর্মীয় বিধি অনুযায়ী একজন মুসলিম পুরুষ সর্বোচ্চ চারজন নারীকে বিয়ে করতে পারলেও ১৯৬১ সালের আইনের ৬নং ধারা অনুযায়ী সালিশ পরিষদের সম্মতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করলে জেল-জরিমানার বিধান রয়েছে। ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী মৌখিকভাবে তালাক দেবার সুযোগ থাকলেও এই আইনের ৮ নং ধারায় স্বামীর মত স্ত্রীকেও তালাক দেবার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। মুসলিম রীতি অনুযায়ী হিল্লা বিয়েকে বাতিল না করলেও এই আইনের ৭(৬) নং ধারায় কমপক্ষে তিনবার অনুরুপ পরিস্থিতি সৃষ্টি না হলে হিল্লা বিয়েকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রেশনের কোন বিধান মুসলিম শরিয়া আইনে না থাকলেও ‘মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রেশন) আইন ১৯৭৪’ অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, বিধি লংঘনে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। স্বামী দীর্ঘদিন নিখোঁজ থাকলে ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী নারী স্বামীকে তালাক দিয়ে পুনরায় বিয়ে করতে না পারলেও ১৯৩৯ সালের ‘মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইন’-এর ২নং ধারা অনুযায়ী কোন ব্যক্তি চার বছর নিখোঁজ থাকলে স্ত্রী স্বামীকে আদালতের মাধ্যমে তালাক দিতে পারে।

জমিজমা সংক্রান্ত দানের ক্ষেত্রেও ধর্মীয় মতে রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক না হলেও ২০০৪ সালে বিএনপি-জামাত জোট সরকার রেজিস্ট্রেশন আইনে সংশোধনী এনে সম্পত্তিদানের রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করেছে। মৃতব্যক্তির উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সম্পত্তি বন্টননামা রেজিস্ট্রেশনের বিধান ধর্মে ছিলো না কিন্তু বিগত জোট সরকারের আমলে রেজিস্ট্রেশনই শুধু বাধ্যতামূলক করা হয়নি, দাতা ও গ্রহীতার ছবি সংযুক্ত করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে যেখানে ছবি তোলা ধর্মীয় দৃষ্টিতে হারাম। মুসলিম আইনের অগ্র ক্রয়াধিকার বা শুফা আইনেরও পরিবর্তন করা হয়েছে ১৯৫০ সালের ‘স্টেট এ্যাকুইজিশন ও টেনান্সি এ্যাক্টে’এর মাধ্যমে। এছাড়া ফৌজদারী আইনের বিভিন্ন ধারায় এমন সব বিধান আমরা মেনে চলি যার সাথে ধর্মীয় আইনের দূরতম কোন সম্পর্ক নেই। চুরি করলে হাত কেটে দেয়া বা একজন পুরুষ সাক্ষীর সমকক্ষ হিসাবে দুজন নারীর সাক্ষ্য নেয়া হয়না আমাদের ফৌজদারি আইনে। এভাবে অসংখ্য উদাহরণ দিয়ে দেখানো যাবে যে ধর্মীয় আইনের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ এমনকি সাংঘর্ষিক অনেক আইন প্রচলিত আছে বা নতুন করে প্রনয়ণ করা হয়েছে। এমনকি আইনের পরিবর্তনের ফলে আজ ধর্ম পালন করতে হলেও ধর্মের বিধান লংঘন করতে হচ্ছে। যেমন, ছবি তোলাকে হারাম ও কুফরি ফতোয়া দিচ্ছেন যে ওলামা-মাশায়েখরা তারাই হজ্ব করতে যাবার সময় পাসপোর্ট আইনের বিধান মেনে হজ্ব করতে যাচ্ছেন। এসব কাজ ‘ধর্মবিরোধী’ হলেও এই ধর্মীয় গোষ্ঠী এসব প্রশ্নে, কিংবা সুদ খাওয়া হারাম প্রশ্নে জান কোরবার করতে মাঠে নামেন না। যত দোষ, যত বজ্রনির্ঘোষ নারীর সম্পত্তিতে অধিকারের প্রশ্ন এলেই। যেখানে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে দুই দশকেরও বেশী সময় ধরে শ্লোগান দেয়া হচ্ছে, ‘ছেলে হোক মেয়ে হোক দুটি সন্তানই যথেষ্ট’, এমনকি ইদানিং একটি সন্তানের ব্যাপারেও জনগনকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে এবং জাতীয় পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের অংশ হিসাবে শুক্রবার মসজিদে মসজিদে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে জনমত গড়ে তোলার জন্য ইমামদের সবেতনে নিয়োগ করা হয়েছে দীর্ঘকাল থেকে, সেখানে সম্পত্তির উত্তরাধিকারে ছেলে ও মেয়ে সন্তানের মধ্যে বৈষম্য বিলোপ না করার কী কারণ থাকতে পারে? মুসলিমপ্রধান দেশ তুরস্ক, সেনেগাল, তিউনিশিয়াসহ কয়েকটি দেশে সম্পত্তির উত্তরাধিকারে নারী-পুরুষের সম-অধিকার রয়েছে।

আরেকটি বিষয়ে না বললেই নয়। আমাদের দেশে যখন এসব আইন পরিবর্তন বা প্রনয়ণের প্রসঙ্গ ওঠে তখন কেবল মুসলিম জনগোষ্ঠীকেই মাথায় রাখা হয় যা একটি গণতান্ত্রিক দেশের ক্ষেত্রে কাম্য নয়। যদিও খৃস্টান উত্তরাধিকার আইনে সম্পত্তিতে নারী-পুরুষের অধিকার প্রায় সমান, হিন্দু উত্তরাধিকার আইনে নারীর অবস্থান সবচেয়ে শোচনীয়। এখানে নারীর নিজস্ব অর্জিত সম্পত্তি বা উপহার সামগ্রী ছাড়া অর্থাৎ স্ত্রীধন ব্যতীত আর কোন সম্পত্তির পূর্ণ স্বত্ত্ব পায় না। অথচ হিন্দুপ্রধান দেশ ভারতে এবং হিন্দু রাষ্ট্র নেপালে এখন ধর্মীয় আইন সংস্কারের মাধ্যমে সম্পত্তিতে নারী-পুরুষের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

 

এবং বাংলাদেশ এখনো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ
যে উদ্দেশ্যে আওয়ামীলীগ ১৯৯৭-এর নারীনীতি থেকে পশ্চাদপসারণ করেছে, সেই লাভের গুড় আওয়ামী লীগ ঘরে তুলতে পারবে সে ভরসা কম। আমিনীর দল বা যারা ফতোয়াকে অবৈধ ঘোষণার হাই কোর্টের রায়কে দশ বছর ধরে সুপ্রিম কোর্টে ঝুলিয়ে রেখেছে, সেইসব শক্তি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে ভোট দিয়ে এমন ভাবনায় খুব বিচক্ষণতার পরিচয় মেলে না। তার হাতে নাতে প্রমাণ হলো, প্রধানমন্ত্রীর আশ্বস্তি সত্ত্বেও এই ধর্মীয় গোষ্ঠীর অন্দোলন- বিক্ষোভ-মহাসমাবেশের ডাক।

বাংলাদেশ কোন ধর্মীয় রাষ্ট্র নয় বলেই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের আইনের মূল ভিত্তি এখনো গণতান্ত্রিক নীতিমালার উপরেই প্রতিষ্ঠিত। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কাজে লাগে এমন নিরানব্বই ভাগ আইন-ই ধর্মনিরপেক্ষ এবং সার্বজনীন। আমাদের সংবিধানের ১০, ১৯ (১, ২), ২৭, ২৮ (১,২,৩,৪), ২৯(১,২,৩-ক) ধারায় নারী-পুরুষের সবক্ষেত্রে সমাধিকারের বিষয়ে রাষ্ট্র অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। দেওয়ানী ও ফৌজদারী আইনের ক্ষেত্রে যেমন ধর্মীয় কোন পার্থক্য নেই তেমনি বিবাহ, বিবাহ বিচ্ছেদ, সন্তানের অভিভাবকত্বসহ পারিবারিক আইনগুলোকেও দেওয়ানী আইন ও আদালতের আওতায় এনে ইউনিফর্ম সিভিল কোড প্রবর্তন করে পারিবারিক আইনের পার্থক্য দূর করা সম্ভব। সরকার যদি নারীপ্রশ্নে সত্যিই আন্তরিক হয় তবে সিডও সনদ, সংবিধান ও নারী সমাজের দীর্ঘদিনের আকাংখার প্রতি সৎ থেকে সম্পত্তির উত্তরাধিকারের প্রশ্নে ১৯৯৭ সালের নারীনীতিকেই আইনে পরিণত করতে উদ্যোগী হবেন, যেটি তাদের নির্বাচনী ওয়াদাও ছিলো। আর আমরা যারা নারীর সম্পত্তির প্রশ্নে সত্যিই আন্তরিক বলে দাবী করি তাদেরও উচিত দৃশ্যমান হওয়া। অদৃশ্যমানতার রাজনীতি আসলে সৎসুবিধাবাদ, যার সম্পর্কে লেনিন বার বার হুঁশিয়ার করেছেন। ১৯৯৭ থেকে ২০১১, মোট ১৪ বছর সময় কেটেছে, মানুষকে প্রস্তুত করেনি আমাদের রাজনীতি আর তাই যে নীতির কথা বলা হয়েছিলো ১৪ বছর আগে, সেখান থেকে বার বার পিছু হটতে হয়েছে সরকারকে। এগিয়ে যাবার কালে এগিয়েই যেতে হয়। গুটিকয়েক ধর্মীয় মৌলবাদী সংগঠনের দাবীর দোহাই দিয়ে (যেহেতু তাদের ঘাড়েই বন্দুক রাখা হয়) সরকারগুলো বারবার পিছু হটে আসবে না কি মানুষের অধিকারের প্রশ্নে সংবিধানকেই সমুন্নত রাখবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবার উৎকৃষ্ট সময় এই বয়ে যায়। নারীর সমানাধিকারের প্রসঙ্গ মানুষের সমানাধিকার প্রশ্নেরই নিরাভরণ রুপ।

এমন গুরুত্ত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হলে সরকারকে জনগণের কাছে যেতে হয় যা আমাদের কোন সরকারই যায়নি। সরকার জনগণের সচেতনতা তৈরির জন্য গণমাধ্যমকে ব্যবহার করতে পারে এবং বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে ব্যাপকহারে গণর‌্যালী ও সভা-সমাবেশের আয়োজন করতে পারে। এসব জনসংযোগ ও প্রচারের আওতায় সাধারণ মানুষকে নিয়ে আসার পাশাপশি রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক সংগঠনগুলোকে অন্তর্ভূক্ত করা যেতে পারে। জনপ্রিয় এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের নারী এবং কন্যাশিশুর পক্ষে আওয়াজ তোলার ব্যাপারে, নতুন রীতি প্রতিষ্ঠা করার কাজে লাগানো যেতে পারে। স্কুল শিক্ষক এবং স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের স্থানীয় জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার কাজে শিক্ষিত করে তোলা সম্ভব। জনপ্রিয় লোকমাধ্যম যেমন যাত্রা, পুতুল নাচ, কবিগানের মাধ্যমে এসব বার্তা ছড়িয়ে দেয়া যেতে পারে প্রত্যন্ত গ্রামে, ওয়াজে ওয়াজে নারীনীতির বিরুদ্ধে বিষোদগারের পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে। তবে এ’সবই করতে হবে রাজনৈতিক অঙ্গীকারের বৃহত্তর ফ্রেমওয়ার্কে। আওয়ামীলীগের ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি নীতি’ নারী আন্দোলনের জন্য তো বটেই আওয়ামী লীগকেও বাধাগ্রস্তই করবে। দাতা দেশগুলোর চাপে নারী উন্নয়ন নীতি প্রনয়ণ এবং দেশে ভোটব্যাংক ঠিক রাখার জন্য ধর্মীয় শক্তির কাছে নতজানু হবার এই অপচেষ্টা শেষ পর্যন্ত নারী-বিরোধী শক্তিকেই মজবুত করবে সন্দেহ নেই। মাছ ধরতে গেলে পানি না ছোঁয়ার নীতি বর্জন করতেই হবে। আজ সম্পত্তিতে নারীর সমঅধিকারের বিরুদ্ধে যারা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে কাল যে তারা নারী-নেতৃত্ব হারাম এবং পরশু মেয়েদের জনপরিসরে নিষিদ্ধ করার প্রবলতর বাসনা নিয়ে লড়াই শুরু করবে না সে নিশ্চয়তা কে দেবে?

এটি একটি রাজনৈতিক লড়াই, এবং বারে বারে সম্পত্তিতে সমঅধিকারের কাল্পনিক ঘোষণাকে ঘিরে মিথ্যা হৈচৈয়ের কুণ্ডলিতে পরার বিলাসিতা করার সময় সত্যিই আর নেই। বরং নারীর সমঅধিকার দাবিতে আন্দোলনরত সচেতন নারী-পুরুষের সাথে ন্যূনতম সমমনা সকল রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির দৃঢ় নেটওয়ার্ক গড়ে উঠুক। উত্তরাধিকারে নারীর সমঅধিকারসহ বিয়ে, বিয়ে বিচ্ছেদ এবং সন্তানের অভিভাবকত্বসহ পারিবারিক আইনের যেসব ধারায় নারীকে বঞ্চনা করা হয়েছে সেসব আইন বাতিল করে নতুন নীতিমালা ও নতুন আইন প্রনয়ণের লক্ষ্যে সেই মানবিক নেটওয়ার্ক কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলুক সেটিই প্রত্যাশা। মানুষ সমান। জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ, বর্ণ নির্বিশেষে। মানুষের সমতার পৃথিবী প্রতিষ্ঠাই হলো সকল শুভ উদ্যোগের প্রথম প্রেরণা। ইতিহাস বারে বারে মানবিকতার পক্ষেই তার পরিবর্তনগুলো ঘটানোর সাক্ষ্য দিয়ে চলেছে।

The post নারীনীতি ২০১১: সরকার পিছু হটেছে first appeared on KG | Kaberi Gayen.

]]>
https://kaberigayen.com/%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%80%e0%a6%a8%e0%a7%80%e0%a6%a4%e0%a6%bf-%e0%a7%a8%e0%a7%a6%e0%a7%a7%e0%a7%a7-%e0%a6%b8%e0%a6%b0%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%aa%e0%a6%bf%e0%a6%9b%e0%a7%81/feed/ 0
গ্রামের মহিলাদের কোন বন্ধু নেই https://kaberigayen.com/%e0%a6%97%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%ae%e0%a6%b9%e0%a6%bf%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%95%e0%a7%8b%e0%a6%a8-%e0%a6%ac%e0%a6%a8%e0%a7%8d/ https://kaberigayen.com/%e0%a6%97%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%ae%e0%a6%b9%e0%a6%bf%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%95%e0%a7%8b%e0%a6%a8-%e0%a6%ac%e0%a6%a8%e0%a7%8d/#respond Fri, 04 Mar 2022 10:42:49 +0000 https://kaberigayen.com/?p=7826 কোন সই নাই কা। বাড়ির বউ-ছেল্যার আবার সই থাকবে ক্যানরে ব্যাটা ? আমরা ওই রকম মাইয়্যা-ছেল্যা না। আমরা স্বামীর সাথে কথা ব্যুলি, তার বাদে শাউড়ি আছে, জাল আছে। কাম কুর‌্যাই দিশা নাই আবার প্যাটের কথা, না না বেটি আমরা তেমুন মাইয়্যা-ছেল্যা না। আমাগের ইজ্জত আছে।

The post গ্রামের মহিলাদের কোন বন্ধু নেই first appeared on KG | Kaberi Gayen.

]]>

 

The interests of rulers require that their subjects should be poor in spirit, and that should be no strong bond of friendship or society among them, which love, above all other motives, is likely to inspire, as our Athenian tyrants learned by experience; for the love of Aristogeiton and the consistency of Harmodius had a strength which undid their power.

 

-Plato, Symposium

মেমেয়েতে-মেয়েতে নিখাদ বন্ধুত্বের বর্ণনা বাংলা সাহিত্যে ঠিক কী পরিমাণে আছে, মনে করতে পারি না। অগত্যা ঘুরে-ফিরে আবারও সেই রবীন্দ্রনাথে এসে থামে আমার মধ্যবিত্ত নাগরিক মন-“ওলো সই, আমারও ইচ্ছে করে তোদের মতো মনের কথা কই।” ছড়িয়ে দিয়ে পা দু’খানি এই সইরা কোণে বসে কানাকানি করেছিলেন বা কভু হেসে কভু কেঁদে মনের কথা বলেছিলেন যদিবা জানা যায় রবীন্দ্রনাথের জবানিতে কিন্তু তারা কি সই ছিলেন, না কি নেহাতই আত্মীয়-বান্ধব ছিলেন সেই তথ্য উদ্ধার আজ বুঝি আর সম্ভব না। আর সম্ভব হলেই বা কী, সে তো জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির কথা। নজরুলের গানে ভালো করে বিনোদ বেণী বেঁধে দেবার আকুতি আছে সই-এর কাছে যেন প্রেমিক তার বিনুনীর ফাঁদে বাঁধা থাকে। এর বাইরে কিছু সই সম্পর্ক আমরা পাই বই কি, যেমন ‘চোখের বালি’, ‘গঙ্গা জল’, কিন্তু একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে এই সম্পর্ক শুরু হয়েছে বিয়ে সূত্রে পাওয়া নতুন পরিচয়কে কেন্দ্র করেই। আর সম্পর্কের নামকরণগুলোও সার্থক বটে, বলিহারি বাংলা ভাষার রস, সইয়ে সইয়ে সম্পর্ক হলো ‘চোখের বালি’ আর জায়া ও পতি হলো ‘দম্পতি’, দ্বন্দ্ব সমাস।

বাংলার রূপকথায় বেকার রাজপুত্র-মন্ত্রীপুত্র-কোটালপুত্রের অক্ষয় বন্ধুত্ব, তাঁরা বনে যান, রাজকন্যা আর অর্ধেক রাজত্ব শিকার করে চারদিক উজল করতে করতে ঘরে ফেরেন, জয় তাঁদের বন্ধুত্বের জয়। রাজকন্যাদের কোন বন্ধু নেই কেন দাসী ছাড়া ? আশ্চর্য, রাজকন্যা বা মহারানী¾কারোর কোন সই নেই, তাঁরা সদাই সচেষ্ট রাজপুত্র-মহারাজের মন জোগাতে আর বেচারী রাক্ষসী তো রাজপুত্রদের সাথে যুদ্ধে যুদ্ধেই নিঃস্ব, ক্লান্ত কিংবা মৃত। সই পাতানোর সময় কোথায় তাদের ? গল্প-উপন্যাসেও পুরুষে-পুরুষে বন্ধুত্ব বিস্তর, শ্রীকান্ত-ইন্দ্রনাথ, মহিম-সুরেশ, মহেন্দ্র-বিহারীলাল, নিখিলেশ-সন্দ্বীপ, যোগেন্দ্র-রমেশ, গোরা-বিনয়, শচীন-শ্রীবিলাস…কিন্তু সেই অর্থে মেয়েদের মধ্যকার বন্ধুত্ব নিয়ে তেমন কালোত্তীর্ণ কাহিনী কি আছে আসলে? এক বঙ্কিমের Rajmohon’s Wife-এর রাজমোহনের স্ত্রী তথা মাতঙ্গিনীর সাথে কুলিন মেয়ে কনকের বন্ধুত্বকে বাদ দিলে সংশপ্তক-এ রাবেয়া আর রানুর মধ্যে বন্ধুত্বের উল্লেখ পাওয়া যায় কিন্তু গোটা উপন্যাসে ক’বারই বা দেখা হয়েছে তাদের ? তাও তো সে যোগাযোগের মধ্যস্থতাকারী বালক মালু। এরকম বিচ্ছিন্ন এবং আরোপিত এক-আধটা কাহিনী বাদ দিলে মেয়েদের সত্যিকারের বন্ধুত্ব নিয়ে সাহিত্য কোথায় ? তাহলে কি মেয়েতে মেয়েতে বন্ধুত্ব কখনো ছিলোই না, না কি মেয়েরা বিয়ে সূত্রে পাওয়া সম্পর্ক কাঠামোতে এতই নিয়তি-নির্দিষ্টভাবে আবদ্ধ যে বন্ধুত্বের মতো অকেজো সম্পর্কের ভারে তাদের আর পীড়িত করতে চাননি কেউ। যে বয়সে দক্ষিণারঞ্জন মিত্রমজুমদারের রাখাল আর রাজপুত্র পরস্পরের বন্ধুত্বটানে বটবৃক্ষের তলে সমবেত হন, রাখালপুত্র বাঁশি বাজান আর রাজপুত্র শোনেন সে বয়সে রাখালকন্যা হয়তো কয়েক সন্তানের মা হয়ে শাকচুন্নি-গেছোপেত্নির রূপ ধরে প্রায় শাশুড়ি হবার পথে, আর রাজকন্যা শত্র“পূরীতে ঘুমে অচেতন রাজপুত্রের দাক্ষিণ্যে উদ্ধার হবার আকাক্সক্ষায় অথবা রাজমহিষী হয়ে দুয়োরানী, ন’রানী, কনে রানীর সাথে সন্তান কামনায় সন্ন্যাসীর দেয়া শেকড় বাঁটছেন। শেকড় বাঁটা ভাগে পেলে ফুটফুটে রাজপুত্রের (রাজকন্যার নয়) মা হচ্ছেন, আর ভাগে না পেলে শিল-নোড়া ধোয়া জল খেয়ে বানর বা পেঁচা জন্ম দিয়ে রাজপ্রহরীর গলা ধাক্কায় ছিটকে পড়ছেন ছাইগাদার ওপারে। এইসব দিন পালটেছে নিশ্চয়ই। অন্তত শহরে। মেয়েরা এখন পড়ছেন, চাকরি করছেন, বন্ধুত্ব তাদের শুধু মেয়েদের সাথেই নয়, ধারণা করি ছেলেদের সাথেও। সেসব বন্ধুত্ব বিয়ের আগ পর্যন্তই বুঝি, খুব কম মেয়েই হয়তো সে সম্পর্ক বিয়ে পরবর্তী জীবনেও টেনে নিতে পারেন। ‘হয়তো’ বলছি সতর্কতা থেকে, যেহেতু কোন গবেষণা এ’বিষয়ে এখনো চোখে পড়েনি। তবুও জীবনের একটি পর্যায়ে তারা বন্ধুত্ব তো পাচ্ছেন ! কিন্তু এই পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে কি আমাদের গ্রামেও ? কত ‘উন্নয়ন কর্মকাণ্ড’ গ্রামকে ঘিরে, কতশত উন্নয়ন সংস্থার বিস্তার, নারীর ক্ষমতায়ন আর ক্ষুদ্রঋণ, দশক ওয়ারী উন্নয়ন সূচক…পরিবর্তন হয়েছে কিছুটা নিশ্চয়ই গ্রামের মহিলাদের, অন্তত ভাবতে ইচ্ছে করে। এই পরিবর্তনের পটভূমিতে কেমন সম্পর্ক কাঠামোতে বাঁধা আমাদের গ্রামের মেয়েরা ? কিংবা গ্রামে কি কোন মহিলা বাস করেন মা, ছেলের বউ, ননদ, জা, শাশুড়ি এসব সম্পর্কের বাইরে ? আছে কি কোন বিয়ে-নিরপেক্ষ সম্পর্ক ? বালিকার খোলস ছাড়তে না ছাড়তেই তো বিয়ে আর ভিনগাঁয়ে পারাপার, তারপর কেমন তাদের সম্পর্ক কাঠামো, তারই খানিকটা আভাস পাওয়ার একটি প্রয়াস হিসেবে দেখা যেতে পারে এই কাজটিকে। বলে নেয়া ভালো কেবল এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই গবেষণাটি করা হয়নি বরং Modelling the Influence of Communications on Fertility Behaviour of Women in Rural Bangladesh শীর্ষক আমার পিএইচডি গবেষণার তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে গ্রামের মহিলাদের সম্পর্ক কাঠামোর মুখোমুখি হই, উন্মোচিত হয় এক ‘জানা’ জগতের ‘অজানা’ কাহিনী, গ্রামের মহিলাদের কোন বন্ধু নেই।

 

গবেষণা পদ্ধতি

বাংলাদেশের ছয়টি বিভাগ থেকে ছয়টি গ্রাম বেছে নেয়া হয়েছে। গ্রামগুলো হলোঃ চৈতন্যপুর (রাজশাহী বিভাগ), বলাইনগর (ঢাকা বিভাগ), ব্রাহ্মণশাসন (সিলেট বিভাগ), জোবরা (চট্টগ্রাম বিভাগ), রায়ের কাঠি (বরিশাল বিভাগ), এবং পয়গ্রাম (খুলনা বিভাগ)। একটি গ্রাম বাড়তি নেয়া হয়েছে, যে গ্রামের বেশীর ভাগ মানুষ হিন্দু ধর্মাবলম্বী, ধর্মভিত্তিক সাংস্কৃতিক পার্থক্য কিছু আছে কী না দেখার জন্য। গ্রামটি হলো দিনাজপুর জেলার মহুগাঁও। এছাড়াও বন্ধু ও সহকর্মী শাতিল সিরাজ (সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়) জয়পুর হাট জেলার আক্কেলপুর মিউনিসিপ্যালিটির পুরাতন বাজার মহল্লা থেকে পাইলট সার্ভে করে দিয়েছিলেন ৩০ জন মহিলার সাক্ষাতকার নিয়ে।

গ্রামের মহিলা (মেয়েরা যে কত বয়সে মহিলা হন আসলে !), যাঁদের বয়স ১৪ থেকে ৪৯ বছরের মধ্যে, এইসব মহিলাদের মুখোমুখি সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে। গ্রামের প্রতিটি বাড়ি থেকে অন্তত একজন মহিলার সাথে কথা বলা হয়েছে। ফলে যোগাযোগ নেটওয়ার্কের ম্যাট্রিক্স যখন তৈরী করা হয়েছে, তখন প্রতিটি বাড়ির প্রতিনিধিত্বকারী অন্তত একজন সেখানে রয়েছেন।

যদিও মূল গবেষণায় রীতিমতো ছকে বাধা প্রশ্নপত্র ধরে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, তবে এই লেখায় গ্রামে থেকে গ্রামের মহিলাদের সাথে আলাপ, পর্যবেক্ষণ এবং মাঠ জার্ণালের টোকাও তথ্যসূত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, বিশেষ করে পাওয়া তথ্যের অর্থ নিরূপণের ক্ষেত্রে এবং ফলাফল ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে আলাপ এবং টোকার বিস্তর সাহায্য নেয়া হয়েছে গুণগত ব্যাখ্যার জন্য।

আগস্ট ২০০২ থেকে জানুয়ারী ২০০৩ পর্যন্ত মাঠে কাজ করে মোট ৭২৪ জন মহিলার আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ নেটওয়ার্কের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। মূল গবেষণার প্রয়োজনে যদিও বিবাহিত মহিলাদেরই সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে নির্দিষ্টভাবে, তবে তথ্য সংগ্রহের শুরুতেই প্রথম গ্রাম অর্থাৎ রাজশাহী বিভাগের চাঁপাই নববাগঞ্জ জেলার ধাইনগর ইউনিয়নের চৈতন্যপুর গ্রামে কাজ করতে গিয়ে কয়েক বাড়ির তথ্য সংগ্রহ করতেই কৌতূহলী হয়ে পড়ি অবিবাহিত মেয়েদের অবস্থাটাও যাচাই করতে। শুরু হয় ডায়েরীতে নোট নেওয়ার পালা। ১৪ থেকে ৪৯ বৎসর বয়সী অবিবাহিত মেয়ের সংখ্যা খুব বেশী নেই। সাত গ্রাম মিলিয়ে সাকুল্যে ৩৭ জনকে জিজ্ঞেস করা সম্ভব হয়েছে।

এই কাজে আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্কের বাইরে যে-কোন সামাজিক গবেষণার মতই কিছু ব্যক্তিগত প্রাথমিক তথ্য এবং আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও দৈনন্দিন খবরাখবর আদান-প্রদানের তথ্যও বিশ্লেষণ করা হয়েছে এসব মহিলার যোগাযোগ আবহ সম্পর্কে খানিকটা ধারণা নেয়ার জন্য।

তথ্য সংগ্রহের কাজে আমাকে সাহায্য করেছেন বিভিন্ন পেশার মোট ৪৩ জন, ৬ থেকে ৭ জন প্রতি এলাকায়। রাজশাহী বিভাগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ বিভাগের শিক্ষক শাতিল সিরাজ শুভ আর ৬ জন ছাত্র তথ্য সংগ্রহকারী দলে কাজ করেছেন। পরে চৈতন্যপুর গ্রামের পরিবার পরিকল্পনার মাঠকর্মী আনোয়ারা বেগম এবং গ্রাম্য দাই রাহেলা বেগম যুক্ত হয়ে পড়েন এই দলে। এছাড়াও টীমের সদস্য গণযোগোযোগ বিভাগের ছাত্র বেনাউল ইসলামের বাড়িতে থেকে এই গ্রামে কাজ করা হয়েছে ফলে বেনাউলের বোন, স্থানীয় কলেজছাত্রী নুরুন্নাহার কেয়া জুটে যান এই দলে। সিলেট বিভাগে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্ব বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা তথ্য সংগ্রহ করেছেন। চট্টগ্রাম বিভাগের টীমে ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা। বরিশাল বিভাগে কাজ করেছেন পিরোজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসারের নেতৃত্বে পিরোজপুর সরকারী কলেজের দুজ’ন ছাত্রী, একজন শিক্ষক এবং ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক, স্থানীয় এনজিও সকলের জন্য করি’র কয়েকেজন কর্মকর্তা, সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচীর একজন সদস্য, একজন গৃহবধূ, এবং প্রাক্তন জমিদার ও বর্তমানে সমাজকর্মী গৌরাঙ্গ রায় চৌধুরী। খুলনা বিভাগের দলে ছিলেন মূলত পয়গ্রামের বাসিন্দারা¾ফুলতলা কলেজের বাংলার প্রভাষক, পত্রিকা হকার, প্রাক্তন ভধি, ফুলতলা কলেজের দু’জন ছাত্র, সরকারী বি.এল. কলেজের অনার্স ছাত্রী। ঢাকা বিভাগের টীমে কাজ করেছেন একেবারেই ভিন্ন ধরনের পেশার মানুষেরা¾নাগরপুর ইউনিয়ন পরিষদের একজন সদস্য, নাগরপুর আলিয়া মাদ্রাসার একজন শিক্ষক, দু’জন গৃহবধূ এবং একজন মৌমাছি পালক। মহুগ্রামে তথ্য সংগ্রহ করেছেন সৌমেন দাস আর রওনক ফেরদৌস স্থানীয় মানুষের সাহায্য নিয়ে, তাঁরা ইতিমধ্যেই হাত পাকিয়েছেন চৈতন্যপুরে কাজ করে।

প্রথমত যেহেতু প্রত্যন্ত গ্রামে থাকার ভালো কোন ব্যবস্থা নেই এবং দ্বিতীয়ত যে গ্রামে কাজ করা হবে সেই গ্রামের কোন প্রতিপত্তিশালী বা সম্মানিত কারো বাড়িতে থেকে তাঁদের মাধ্যমে পরিচিত না হলে গ্রামে ঢুকে গ্রামের মহিলাদের সাথে কথা বলা যাবে না, এই দুই বিবেচনা থেকে যে-সব এলাকায় পরিচিতজন আছেন তাঁদের আতিথেয়তার উপর নির্ভর করতে হয়েছে এবং বাংলাদেশে এখনো ‘অতিথি নারায়ণ সেবা’ চলে বলেই কোন অসুবিধা কোথাও হয়নি। রাজশাহীর চাঁপাই নবাবগঞ্জে বেনাউলদের বাড়ি অর্থৎ মেম্বার বাড়ি, বরিশালে পিরোজপুরের জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কুলদানন্দ রায়ের সরকারি বাসভবন, চট্টগ্রামে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বন্ধু আতিকুর রহমানের ফ্ল্যাট, সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক অবন্তী হারুনের মেসভবন, খুলনায় বন্ধু আনন্দময়ী মজুমদারের আত্মীয় বাগেরহাট পি.সি. কলেজের দুই অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মুক্তি মজুমদার ও মোহাম্মদ কায়কোবাদ-এর পয়গ্রামের বাড়ি আরণ্যক, আর ঢাকায় টাঙ্গাইল জেলার গয়াহাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন চেয়ারম্যানবাড়ি ছিলো আমার থাকার আর কাজ চালানোর অফিস। এঁরা শুধু আমার থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাই করেননি বরং পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন স্থানীয় মহিলাদের সাথে, জুটিয়ে দিয়েছেন তথ্য সংগ্রহকারী দলের সদস্যদের। কাজেই যাঁরা তথ্য সংগ্রহ করেছেন আর যাঁরা সবকিছুর বন্দোবস্ত করে দিয়েছেন, তাঁদের কাছে আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। বরং বলে নেয়া ভালো এটি একটি যৌথ কাজ এবং এঁরা প্রত্যেকেই আমার সহলেখক।

 

কিছু প্রাথমিক তথ্য [যোগাযোগ আবহ]

 

মূল গবেষণায় যে মহিলাদের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে তাঁদের গড় বয়স ২৮ বছরের একটু বেশী। গড় বিয়ের বয়স সাড়ে পনের বছর, প্রথম বাচ্চার জন্ম দিয়েছেন গড়ে সাড়ে সতের বছর বয়সে আর তাঁদের স্বামীরা গড়ে তাদের চেয়ে প্রায় দশ বছরের বড়, সাড়ে ৩৭ বছর। এসব মহিলারা এইসব গ্রামে বসবাস করছেন প্রায় সাড়ে বারো বছর ধরে। একেবারে পাকা হিসেব, সাড়ে পনের বছরে বিয়ে + সাড়ে বারো বছর ধরে স্বামীর গ্রামে বসবাস, কাজেই গড় বয়স ২৮ বৎসরের একটু বেশী। এসব মহিলাদের ৪২ শতাংশ কখনো স্কুলে যাননি, যাঁরা গিয়েছেন তাঁদের ১৫.৮ শতাংশ প্রাইমারী পার করেছেন, ২.৪ শতাংশ কলেজে গেছেন আর মাত্র ১.৪ শতাংশ ডিগ্রি পর্যায়ে পৌঁছুতে পেরেছেন। যদিও ৫৮ শতাংশ মহিলা স্কুলে গিয়েছেন জীবনের কোন একটা সময়ে কিন্তু শতকরা ৪৯ জন বাংলায় লেখা কোন চিঠি পড়তে বা লিখতে পারেন না। তাঁদের স্বামীদের বিদ্যা-বুদ্ধির দৌড়ও তেমন চমকপ্রদ নয়। গড়ে ৩২.২ জন কখনোই কোন স্কুলে যাননি অর্থাৎ স্কুলে যাওয়ার ক্ষেত্রে স্বামীরা স্ত্রীদের চেয়ে মাত্র ৯.৪ শতাংশ বেশী। এক দুর্মুখ তথ্য সংগ্রহকারী ফোড়ন কাটলেন যে মেয়েরা স্কুলে গেলে গম পায় সেজন্যই নাকি প্রাইমারিতে ছেলে-মেয়ের ব্যবধান তত বেশী নয়। কথাটা হয়তো সত্যি, প্রাইমারীর পরে মেয়েদের আর দেখা পাওয়া যায় না, বাড়তে থাকে ছেলে-মেয়ের স্কুল উপস্থিতির বৈষম্য। ৯২.৭ শতাংশ মহিলা নিজেদেরকে গৃহবধূ বলে দাবি করেছেন, ২.৮ শতাংশ কুটির শিল্প বা কারখানায় কাজ করেন। ২.৩ শতাংশ চাকুরী করছেন, ০.৭ শতাংশ কৃষিকাজে নিয়োজিত আর ১.৫ জন নিয়োজিত কাঁথা সেলাই, মাদুর তৈরী, তালপাতার হাতপাখা বানানো, ধনী লোকের বাড়িতে ঝি-গিরি, বা রাস্তা নির্মাণ কাজে দিনমজুরিতে। এঁদের স্বামীদের পেশা মূলত কৃষিকাজ, ৩৩.৮ শতাংশ, বেশীরভাগই অন্যের জমিতে দিনমজুরি করেন বা বর্গা খাটেন। এছাড়াও শতকরা ২৪.৪ জন ছোটখাটো ব্যবসা, ১৩ জন ড্রাইভিং, ১০.২ জন চাকুরী আর ১০.১ জন দিনমজুরের কাজ করেন। শতকরা ৪০ জন মহিলা এনজিও-র ক্ষুদ্র ঝণ প্রকল্পে জড়িত। যদিও এসব মহিলারা নানাধরনের কাজের মধ্য দিয়ে পরিবারের আয় বাড়াচ্ছেন কিন্তু তাঁরা নিজেরা মনে করেন না যে বাড়ির আয়ে তাঁদের কোন অংশভাগ আছে। এই মহিলাদের দৈনন্দিন খবরাখবর জানার মাধ্যম হলো প্রথমত তাঁদের স্বামীরা যাঁরা হাটে-বাজারে, অফিসে-মাঠে যান, তারপর “মাইনষের মুহে মুহে”। ৬৪ শতাংশ মহিলা জানিয়েছেন তাঁদের একাকী চলাচলের স্বাধীনতা নেই, যদিও মহুগাঁও-এর (হিন্দু গ্রাম) অবস্থা একটু ভিন্ন। শতকরা ৮৬.৪ জন মহিলা দাবী করেছেন যে তাঁরা নিজেরাই চলাচল করতে পারেন। শতকরা ৫৩ জন মহিলা জানিয়েছেন এমনকি ঘর-গেরস্থলির কাজ বা কী রান্না করবেন বা ছেলেমেয়েকে ভালোমন্দ কিছু কিনে দেবেন কী দেবেন না এ-জাতীয় কোন বিষয়েই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তাঁদের নেই। সবধরনের সিদ্ধান্ত নেন প্রথমত তাঁদের স্বামীরা, তারপর শাশুড়ি, শ্বশুর বা শ্বশুর বাড়ির অন্যান্য আত্মীয়স্বজন। গড়ে প্রত্যেকের বাচ্চা রয়েছে ২.৬৪ জন এবং প্রত্যেকেরই রয়েছে আরো ছেলের আকাক্সক্ষা, মেয়ের তুলনায় ছেলের আকাক্সক্ষা প্রায় তিনগুণ বেশি। এই আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিবেশে, কিংবা বলা ভালো এই যোগাযোগ আবহে মহিলাদের আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ কাঠামোর সুলুক-সন্ধান করা হয়েছে।

প্রশ্ন: পাঁচজন বন্ধুর নাম বলুন

প্রত্যেক মহিলাকে বলা হয়েছিল পাঁচজন মানুষের নাম বলতে যাঁদের সাথে তাঁরা নিয়মিত সুখ-দুঃখের কথা (পেটের কথা) বলেন, যাঁদের মতামত তাঁদের কাছে গুরুত্বপুর্ণ এবং সবচেয়ে বড় কথা যাঁদেরকে তাঁরা বন্ধু/সই মনে করেন। তাঁরা পুরুষ বা মহিলা যে কেউ-ই হতে পারেন।

প্রত্যেক বন্ধুর জন্য আরো যে সহযোগী প্রশ্নগুলো করা হয়েছিলো সেগুলো হচ্ছেঃ

১. সম্পর্কের ধরণঃ বন্ধু □ সহকর্মী □ আত্মীয় □ মুরুব্বি □ অন্যান্য
২. কতদিন ধরে চেনেনঃ ৩ মাসের কম □ ৬ মাস -১ বছর □ ১-২ বছর □ ৩-৫ বছর □ ৫ বছরের বেশী □ অন্যান্য □
৩. কত ঘন ঘন দেখা হয়ঃ প্রত্যেকদিন □ সপ্তাহে অন্তত একবার □ মাসে অন্তত একবার □ অন্যান্য □
৪. যোগাযোগের মাধ্যমঃ মুখোমুখি □ চিঠি □ টেলিফোন □ অন্যান্য □
৫. কোথায় থাকেন এই বন্ধুঃ একই বাড়ি □ একই পাড়া □ একই গ্রাম □ একই শহর □ নিকটবর্তী গ্রাম/শহর □
অন্যান্য □
৬. দেখা করার জায়গাঃ কাজের স্থান □ একে অপরের বাড়ি যাই □ কোন সামাজিক বা সাংস্কৃতিক সংগঠন □
বাড়ি □ অন্য কোন জায়গা □
৭. আপনার দৈনন্দিন সমস্যায় তথ্য পরামর্শের জন্য কি এর কাছে যান ?
কখনোই না □ মাঝেমধ্যে □ প্রায়ই □ সবসময় □
৮. বিভিন্ন ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে কি এই ব্যক্তির কোন প্রভাব থাকে ?
কখনোই না □ মাঝেমধ্যে □ প্রায়ই □ সবসময় □

চৈতন্যপুরঃ ‘কোন সই নাই কা’

চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার ধাইনগর ইউনিয়নের চৈতন্যপুর গ্রাম। কৃষিই মুল জীবিকা। দুই ধরনের মানুষের বসবাস এই গ্রামে। এক যাঁরা প্রচুর জমির মালিক, টাকা খাটান আম আর আখের চাষে। এঁদের সংখ্যা কম। বাকীরা হলেন যাঁরা কামলা খাটেন এইসব আম আর আখের ক্ষেতে। রয়েছেন কিছু স্কুল শিক্ষক, ছোট দোকানদার, চাকুরে। মাদ্রাসা আর মসজিদ রয়েছে বেশ জোরেসোরে। কিছু এনজিও কাজকর্মও রয়েছে। মহানন্দা নদীর যে-পাড়ে চাঁপাই নবাবগঞ্জ শহর, তার ঠিক অন্য পাড়ে এই গ্রাম। ছোট লঞ্চ বা বড় নৌকায় চাঁপাই নবাবগঞ্জের সাথে এই গ্রামের যোগাযোগ।
চৈতন্যপুরে প্রথম যে বাড়িটায় আমরা ঢুকেছি সেই বাড়ির গৃহকত্রী (৩৮) জানালেন সাফ কথা,

কোন সই নাই কা। বাড়ির বউ-ছেল্যার আবার সই থাকবে ক্যানরে ব্যাটা ? আমরা ওই রকম মাইয়্যা-ছেল্যা না। আমরা স্বামীর সাথে কথা ব্যুলি, তার বাদে শাউড়ি আছে, জাল আছে। কাম কুর‌্যাই দিশা নাই আবার প্যাটের কথা, না না বেটি আমরা তেমুন মাইয়্যা-ছেল্যা না। আমাগের ইজ্জত আছে।

ঠিকই, সবারই ইজ্জত আছে এই গ্রামে। মহানন্দা নদীর পাড়ে এই অপূর্ব সুন্দর গ্রাম, কেউ এমনকি নদীতে জল আনতে যাওয়ার কথাও স্বীকার করতে চান না। আল্লায় চাহে তো আমাদের বাড়ির পারাই টিপ কল আছে। নদীত যাত্যে হবে ক্যান্ ? আমাদের বিটি ছ্যালারা ঘোরাঘুরি কেহই ক্যরে না। স্বামী পছন্দ করে না ব্যাট্যা। এই গ্রামেই হিন্দুপাড়া হলো কামারপাড়া-অবশ্য বর্ধিষ্ণু কাজিবাড়ির লোকেরা দাবি করছেন পাড়ার নাম কাজিপাড়া, বেশ চাপা কলহও আছে এই নিয়ে। বেনাউলের বোন কেয়া কাজি বাড়িতে বসে জোর দিয়ে বললেন এটা কামারপাড়া আর কাজিবাড়ির বউ জোর দিয়ে জানালেন এটা কাজিপাড়া, নতুন সাইনবোর্ডও টাঙানো হয়ে গেছে। কামারপাড়ার অবিবাহিত মেয়ে, কলেজ ছাত্রী রমা (১৭) [প্রকৃত নাম নয়] জানালেন কোন সই নাই তার। কলেজে যান মাটির দিকে মুখ করে আবার ফিরে আসেন নতমুখে।

মা রে, মায়েট্যো যতক্ষণ বাহিরে থাকে কাটা হয়্যা থাকি রে মা। একটা বিয়া-থা দিতে পারত্যুক যুদি ! ঘরের বাহির হত্যে দেই না কো মা… রমার মা’র কুন্ঠিত উত্তর।

কলেজেও যায় রমা সপ্তাহে একবারের বেশী না। কেয়া-রও প্রায় একই অবস্থা। সবাই বিয়ের প্রহর গুনছে। কলেজের বাইরে রমা কাজ করে মা-কাকী-ঠাকুরমা’র সাথে, বাবা-কাকাকে জোগালও দেয়।

কাজি বাড়ির তিন বউই জানালেন তাদের কোন ‘সই নাই ক্যা’। তাহলে কি এই গ্রামের বউরা-মেয়েরা কোন কথাই বলেন না কারো সাথে ? অবশ্যই বলে। স্বামীর সাথে বলেন, শাশুড়ির সাথে বলেন, বলেন জা-ননদের সাথে। এক-এক বাড়ি-ভিত্তিক এক-এক পাড়া। আত্মীয়-স্বজনরাই আছেন চারপাশে। যাঁরা বিবাহিত বছরে এক-আধবার যান বাপের বাড়ি, ‘ব্যুনের সাথেই দেখা হয় না’, ছেলেবেলার সই-এর সাথে দেখা হওয়া তো অনেক দূরের কথা। ‘সইয়ের মুখ মনে নাই’ জানান আতোয়ারা বেগম। এই গ্রামের ৮৪ জন মহিলা যাদের কথা বলেছেন পেটের কথা বলার লোক হিসেবে তাদের ৭৮% জন হলেন জা, ১১% জন শাশুড়ি বা শাশুড়ি পদবাচ্য, বাকিরা ননদ বা বাড়ির উপর থাকা অন্য বউ-ঝি, কোন-না-কোন আত্মীয়। এঁদের সাথে দেখা হয় প্রতিদিন, বাড়িতেই দেখা হয়, মুখোমুখি দেখা হয়, প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে কথা হয়, বিভিন্ন বিপদে-আপদে পরামর্শও চান কিন্তু এক শাশুড়ি ছাড়া এইসব জা-দের খুব প্রভাব আছে কোন বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে তেমন দাবি কেউই করেন না। সবার উপরে স্বামী।

মহানন্দা নদীর এক পাড়ে এই শ্বশুর বাড়ি, বাপের বাড়িতে যেতে হলে নদী পার হতে হয় প্রায় সবাইকেই। তবুও তাঁরা সকাল-সন্ধ্যায় ছোট লঞ্চের পারাপার দেখেন, এই পারাপার দেখার জন্য তাঁদের এমনকি নদী পর্যন্ত যেতে হয় না, বাড়ি থেকেই দেখা যায়। তাঁদের স্বামীরা ঘরে ফেরেন মাগরেবের আজানের পর, মাছ নিয়ে, ফল নিয়ে, শাকসব্জি নিয়ে, চিপ্সের প্যাকেট আর কোকাকোলার বোতল নিয়ে, আরেকপারের খবর নিয়ে। আর তাঁরা ব্যস্ত হয়ে পড়েনঃ

“আপা, আইজ আর কথা বুলব না, সাইনঝ্যা হয়্যা গিলচে, কারুর সাথে কথা ব্যুলা পছন্দ করে না …”
“কে? কে আইস্যাছে ঘরে?” স্বামীদের জোরালো আওয়াজ, আমাদের অগত্যা ফিরে আসতেই হয়।

আর তাই শুক্রবার কোন ভালো দিন নয় এসব মহিলাদের সাথে কথা বলার জন্য, পুরুষরা সব বাড়িতে থাকেন জুম্মার নামাজের পর। তবুও এই গ্রামেরই পরিবার পরিকল্পনা মাঠকর্মী আকতারা খাতুন, শরীরে-মাথায় সৌদি চাদর জড়ানো আকতারা খাতুন, জানান তার বন্ধু আছে স্বামীর বাইরেও। তিনি তিনজন পুরুষ মানুষের কথা বলেন, এরা সবাই চাকুরি করেন তার সাথে। জানালেন তাঁর স্বামীর মন-মানসিকতা খুবই উঁচু দরের, সে কিছু মনে করে না। পাড়া-পড়শির খোঁটাকে আমলে আনেন না তিনি। জানালেন পাঁচ-দশ বছর আগেও গ্রামে পর্দার এত ‘কড়াক্কড়’ ছিলো না, ‘বউ-বিটিরা বাহির হত্যে পারত্যুক’, এই পরিবর্তন কেনো হচ্ছে তিনি নিজেও ঠিক জানেন না। এনজিও কার্যক্রম আছে গ্রামে কিন্তু ক্ষুদ্রঝণ বাড়ি বাড়ি এসে দিয়ে যাওয়া হয়, নিয়েও যাওয়া হয় বাড়ি থেকে কাজেই বউ-ঝিদের ‘ইজ্জত’ নষ্ট হয় না অন্য পাড়ায় গিয়ে।

রায়ের কাঠী: ‘মুই তো মুরুব্বি, মোরডে কেউ হাস-তামসাও করে না’

পিরোজপুর জেলা সদর থেকে ৮ কিলোমিটারের মতো দূরে রায়ের কাঠি গ্রাম। গ্রামের আয় মূলত কৃষি। তবে কিছু পারিবারিক ব্যবসার চলও রয়েছে, যেমন কুমারের কাজ, তাঁতের কাজ আর মাছ-ধরা কিংবা জাল-বোনা। গ্রামটা সমৃদ্ধশালীই বলা চলে, বিশাল জমিদার বাড়ি, ফসলের মাঠ, স্কুল, আবার গ্রামের অবস্থানও শহরের কান ঘেঁষে। তবে এই গ্রামের দুটো পরিষ্কার অংশ, একদিকে পুরানো গ্রাম লাল ইটের প্রাক্তন জমিদার বাড়ি, মাঠ, মন্দির আর এই স্থাপনা ঘিরে গরীব হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বসবাস, অন্যদিকে নতুন বসতি, মসজিদ, মাদ্রাসা, হলুদ-নীলের নক্সাকাটা নতুন দালান-বাড়ি, সম্পদশালী মুসলমান জনগোষ্ঠীর বসবাস। তবে মাঝামাঝি জায়গায় কিছু নতুন ছোটখাটো আয়ের মানুষের ছোটছোট নতুন ঘরও দেখা যায়।

হিন্দু অংশে কুমার পাড়ার মহিলারা বড় ব্যস্ত। তাঁতি পাড়ায় তেমন একটা কাজ নেই, অভাব। জেলে পাড়ায় মাছ ধরার কাজ ততটা নেই, স্বামীরা দাওয়ায় ঝিমুচ্ছেন কিন্তু মহিলাদের হাত থামে না, জাল বুনে চলেছেন, ওটাই আয়ের পথ।

মারে, তের বচ্ছইরগ্যা বিয়া হইছে মোর, হেই থেইক্যা জালই বুনি। বাড়ির বাহির বা হমু কহন আর সই-বা পাতামু কহন। সব জালেরা মিলাই তো কাম করি। মোরা মাগো পাড়ার বাহির হই না। মোগো জালেরা (জা) আছে, হাউড়ি আছে, মোগো সই পাতাইনার সোমায়ও নাই।

আরতি রানীর জাল-বোনা চলতেই থাকে। তবে বড় পূজায় (দুর্গা পূজায়) একবার বাপের বাড়ি প্রায় সবাই-ই যান, নিদেন পক্ষে জমিদার বাড়ি। জমিদার গিন্নি ভালো মানুষ, বিপদে-আপদে সাহায্য করেন, পরামর্শ দেন কিন্তু না, জিহ্বায় কামড় দেন কুমার পাড়ার সবিতা রানী, “উনি গুরুজন, উনার লগে পেডের কথা বলি না।”

মুসলমান অংশে ঢুকতে সাহায্য করলেন এক মেয়ে, মর্জিনা বেগম, বড়-বাড়ির বোন, বেচারির মনে শান্তি নেই, স্বামী তার নতুন বিয়ে করেছেন অথচ কোলে তার ফুটফুটে ছেলে। ভাইদের বাড়িতে থাকেন, ছেলে কোলে নিয়ে তার মাঠে-ঘাটে চলতে বাধা নেই। তবুও তার কোন সই নেই। এই বাড়ির বউরা বেশ পর্দানশীন। কেউ বাড়ির বাইরে যান না। বাড়ির বড়-বউ বি.এ. পাশ কিন্তু তার কোথাও যাওয়ার ‘হুকুম নাই’। বেশ কাতর গলায় জানালেনঃ

হ, আবার সই ! পুষ্করিণীতেই যাইতে পারি না, গোসলখানায় পানি দিয়া যায়, হেই পানিতে গোসল সারি। ফ্যামিলি প্ল্যানিং-এর মাইয়ারাও এই বাড়িতে ডোকতে পারে না। … লণ্ডন কি খুব সুন্দার ? … আর বউরা তো ছোড, মুই তো মুরুব্বি, মোরডে কেউ হাস-তামসাও করে না। … মোর ছবি তো তোলতে পারবেন না, মোর মাইয়্যার এউক্ক্যা ফডো তোলেন। দোয়া করবেন আপা য্যেন মোর মাইয়াউগ্য একদিন আমনের মতো অইতে পারে, দ্যাশ-বিদ্যাশ যাইতে পারে।

এরই মধ্যে শাশুড়ি ঢোকেন, ছবি তোলার আয়োজন দেখে নিজেও বসে যান ফটো সেশনে যদিও দিব্যি দিয়ে দেন ছবি যেনো কেউ না দেখে। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জিজ্ঞেস করেন বিত্তান্ত, কোথায় কোথায় যাওয়া হয়েছে আরো। জমিদার বাড়ির কথা শুনে মুখটা কালো হয়ে যায়। বড় বউ চোখ টিপে দেন যেনো আমার পরিচয় ফাঁস হয়ে না যায়, উঠে পড়ি, শাশুড়ি একটা ঠোঙায় কিছু আমলকি দিয়ে দেন।

সুলেখা বেগম [প্রকৃত নাম নয়] ট্রেনিংপ্রাপ্ত গ্রাম্য দাই। বয়স ৩৭। বিয়ে করেছেন ৬০ বছরের অবস্থাপন্ন এক লোককে। ঘরে সতীন আছে। সতীনের ছেলের বউরা তার বয়সী। তবে জমিজমা যেহেতু এখনো ভাগ হয়নি আর স্বামী যেহেতু তার ‘অঞ্চলে বান্ধা’ তিনি কারো তোয়াক্কা করেন না এবং হিন্দু-মুসলিম দুই পাড়াতেই তার যাতায়াত কিন্তু ঠিক নিশ্চিত নন তাঁর কোন সই আছে কি না যার সাথে তিনি মনের কথা বলেন।

প্রাক্তন জমিদার (যাঁরা ২৭ প্রজন্ম এই গ্রামে জমিদারি করেছেন এবং যাঁদের নামে এই গ্রামের নাম রায়ের কাঠি) গৌরাঙ্গ রায়ের স্ত্রী জানালেন তাঁর ‘বান্ধবী’ আছে, একই স্কুলে চাকরী করেন কিন্তু মনের কথা বলার কেউ নেই, এক স্বামী ছাড়া। ভাসুরপুত্রের বউ আছে বাড়িতে কিন্তু সে অনেক ছোট, কর্তব্যকর্মের বাইরে কোন আলাপ নেই।

এই গ্রামের ৯৮ জন মহিলার সম্পর্ক সূত্রের মধ্যে ৭৬% জা, ১২% শাশুড়ি-শাশুড়ি সম্পর্কিত, ৭.৬% বিধবা ননদ বা সতীন, ৩.২ % গ্রাম্য মুরুব্বি আর এক-আধজন বন্ধু-বান্ধব। ছেলে সন্তানের জন্য স্বামী যেনো অন্য বাড়িতে বিয়ে করে পর না হয়ে যায় শুধু সে-কারণেই এই গ্রামের দুই বোন এখন সতীন। আমেনা বেগম আপন ছোট বোন আরিফা বেগমকে বিয়ে দিয়েছেন স্বামীর সাথে। সুখ-দুঃখের কথা তারা বলেন বই কি !

পয়গ্রাম: ‘মহিলাগে সই থাকে নিকি, মেয়েগে থাকতি পারে’

খুলনা জেলার ফুলতলা ইউনিয়নের পয়গ্রাম। আর পাঁচটা গ্রামের মত হতে গিয়েও হতে পারেনি কয়েকজন মানুষের ওই গ্রামে অবস্থানের জন্য। গ্রামে ঢুকতেই প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের পৈতৃক বাড়ি, তাঁর ভাই সমাজকর্মী ইমদাদুল হক আনু থাকেন সে বাড়িতে। তারপরেই রয়েছে পি.সি. কলেজের সাবেক দুই অধ্যাপক মুক্তি মজুমদার আর মোহাম্মদ কায়কোবাদ দম্পতির বাড়ি আরণ্যক। শুরুতে এটি ছিলো দীনেশচন্দ্র সেন মহাশয়ের ছোট একটা ঘরসহ গাছ-লতায় ঘেরা এক বাগান। অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক বলে পরিচয় দিয়ে আসলে খুব অল্পই বোঝানো যায়। এই বাড়িতে মুক্তি মজুমদার গড়ে তুলেছেন এক নীরব সাংস্কৃতিক আন্দোলন। গ্রামের ছেলেমেয়েরা প্রতিদিন গান শেখে এখানে মুক্তি মজুমদারের কাছে, মহড়া নেয় কঠিন কঠিন সব রবীন্দ্র নাটকের। রীতিমত খাইয়ে-দাইয়ে, কখনোবা সন্দেশের প্রলোভন দিয়ে এ-সব ছেলেমেয়েকে দিয়ে অনুষ্ঠান করাচ্ছেন মুক্তি মজুমদার। যেসব ছেলেমেয়েরা ফুলতলার আঞ্চলিক টান ছাড়া কথা বলতে পারে না, পড়াশুনা শিখে উঠতে পারেনি এখনো তারাই দিব্যি ফাল্গুনী, তাসের দেশ, হ-য-ব-র-ল করছে। এখানে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েরা যেমন আছেন তেমনি আছেন পড়াশুনা তেমন-না-জানা মেয়েরাও। কিন্তু তারপরও এসব মেয়েরা কতটুকু বন্ধু আসলে পরস্পরের ? তানিয়া বি.এল. কলেজের ডিগ্রির ছাত্রী বা মুমু সমাজবিজ্ঞানে অনার্স পরীক্ষা দিচ্ছেন তখন। তারা গান-বাজনা করছেন ঠিকই কিন্তু ঠিক নিশ্চিত নন তাদের সেই অর্থে কেউ বন্ধু আছে কী না। কারণ কোন কাজ ছাড়া নাকি তারা ঘর থেকে বের হন না। গানের মহড়াটুকু দিয়েই বাড়ি ফিরে যান। কাজ ছাড়া সময় কাটানোর উপলক্ষ্য তাঁরা পান না।

বংলাদেশের অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই পাড়ায় পাড়ায় বিভক্ত এই গ্রামঃ পাল পাড়া, ঋষি পাড়া, কুমার পাড়া, নিকেরী পাড়া, বরজীবী পাড়া, শালবন পাড়া, গাজী পাড়া, কাজী পাড়া। কাজী পাড়ায় যে কাজীরা থাকেন তারা সবাই একই পরিবারভুক্ত, খানা যদিও আলাদা। এই পাড়ার সব বউরাই পরস্পরের আত্মীয়, অবশ্যই বৈবাহিক সূত্রে। প্রতিদিন সকালে চোখ খুললেই পরস্পরের দেখা হয়, কাজের কথাও হয়, কিন্তু এরা পরস্পরের জা-ননদ-শাশুড়ি, কেমন যেনো এক চাপা টেনশন, ঠিক বন্ধু নয়। একই গল্প পাড়ায় পাড়ায়। পাল পাড়ার শোভা রানী পাল, যিনি তথ্য সংগ্রহকারী দলেরও একজন, একদিন বলে উঠলেন,

ওদ্দি, এই প্রশ্নডা বাদ দিলি ভালো হতো না ? মহিলাগে সই থাহে নিকি, মেয়েগে থাকতি পারে।

বিয়ে হয়ে গেলেই মেয়েরা মহিলা হয়ে যান, সই থাকাটা আর তখন ভালো কোন কাজ না। বি.এ.বি.টি.-পাশ এক ভদ্রমহিলা আসমা খাতুন, স্কুলে পড়ান, আমাদের কাজে খুবই সাহায্য করেছেন, বললেন,

বিয়ার পর নিজির বুনগির সাথেই ভালো যোগাযোগ নাই তো সই !

এই গ্রামে মোট ১৯৭ জন মহিলার সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে। তাঁরা যাদের সাথে নিয়মিত কথা বলেন, দেখা হয় বলে জানিয়েছেন তারা হলেন মূলত জা (৮১%)। এছাড়াও শাশুড়ি-ননদ-বিধবা ননদ-সতীন। এক শাশুড়ির কথার প্রভাব খানিকটা আছে তাদের জীবনে বাকি সবার প্রভাব বলতে গেলে নেই। স্বামীই সব। তবুও ধান শুকাতে দিয়ে, কাঁথা নাড়তে গিয়ে, বাচ্চার পেট খারাপ হলে এদের সাথেই দেখা হয়, কথা হয়।

 

জোবরা: ‘আঁরা বারের মাইয়াফোয়ার লগে খঁতা না খই।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে বিখ্যাত গ্রাম জোবরা। গ্রামীণ ব্যাংক-খ্যাত জোবরা। বন্ধু আতিকুর রহমান যখন তথ্য সংগ্রহকারী দলের সাথে অর্থাৎ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে জানালেন যে জোবরা গ্রামকে বাছা হয়েছে কাজ করার জন্য, মনটা একটু দমেই গিয়েছিলো। ধরে নিয়েছিলাম এটা হবে একটা সাজানো গ্রাম, মহিলারা হবেন অনেক চৌকস, বন্ধু থাকবে তাদের অনেক যা হয়তো ঠিক বাংলাদেশের গ্রামকে প্রতিনিধিত্ব করবে না। কিন্তু টীমের সদস্য মের্শেদুল ইসলাম (এখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক) আশ্বস্ত করেছিলেন, মিডিয়ায় যা দেখেন আর বাস্তবের মধ্যে অনেক ফারাক, হতাশ হবেন না ম্যাডাম, আর পাঁচটা গ্রামের সাথে এই গ্রামের খুব বেশী পার্থক্য নেই। এই গ্রামের দুই অংশ। বড় এক মাঠ মাঝে থেকে ভাগ করে দিয়েছে এই দুই অংশকে। একপাশে বৌদ্ধ পাড়া, আরেকদিকে মুসলিম বসতি। আমরা কাজ করেছি মুসলিম অংশে। অন্যান্য গ্রামের সাথে এই গ্রামের প্রথম যে পার্থক্য চোখে পড়ে তা হলো বাড়িগুলো বেশ দূরে দুরে। কোন মহিলার কোন ছবি তোলা যায়নি এবং স্বামীর অনুমতি ছাড়া কথা বলতে কোন মহিলাই রাজী হননি। কাজেই আমাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে যেনো তাঁরা স্বামীদের অনুমতি নিয়ে রাখতে পারেন। পাঁচ বাড়ির মহিলাদের সাক্ষাৎকার শেষ পর্যন্ত নেয়া সম্ভব হয়নি কারণ তাঁদের স্বামীরা বিদেশে থাকেন এবং সপ্তাহে মাত্র একদিন তারা ফোন করেন কাজেই কোন কারণে মনে না থাকলে অনুমতি নেয়া আর হয়ে ওঠেনি। আরো একটি বিষয়, বলা বেশ ঝুঁকিপূর্ণই, মোট ৯৮টি বাড়ির মহিলাদের সাথে আমরা কথা বলেছি কিন্তু তাঁদের একজনও দাবি করেননি যে তাঁরা গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্য। তিনজন মহিলা ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পের সাথে জড়িত কিন্তু সেগুলো স্থানীয় ইসলামিক এনজিও।
শুরুতে বন্ধু আছে কী না, প্রশ্নটাকে একধরনের অপমান হিসেবেই দেখেছেন মহিলারা। পরে টীমের সদস্য একই গ্রামের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী রুনু বুঝিয়ে বলেছেন সই মানে যে বাইরে থেকে থাকতে হবে এমন কোন কথা নেই, বাড়ির ভেতর যাদের সাথে তারা বেশী ‘মাতে’, ‘তারার’ নাম বললেই হবে। বাড়ির পর বাড়ি গিয়ে মনে হয়েছে বুঝি কেউ আগে থেকে শিখিয়ে দিয়েছেন সবাইকে একটা উত্তর আর পরীক্ষায় সেটি কমন পড়ে গেছেঃ

আঁরা বারের মাইয়াফোয়ার লগে খঁতা না খই…

অনেক বাড়ির স্বামীরাই যেহেতু বিদেশে চাকরী করেন কাজেই অর্থনৈতিক দিক থেকে এই মহিলারা বেশ সচ্ছল, ফলে অন্যান্য গ্রামের মত ভাসুর-দেবরদের পরিবারগুলোর সাথে সবসময় একসাথে থাকতে হয় না একই পাড়ায়। জা-দের সাথেও সম্পর্ক তাই নিত্যদিনকার নয়। তারপরও মুশকিল হলো যে-মহিলার স্বামী বিদেশ থাকেন তাকে আবার তক্কে তক্কে রাখেন অন্যান্য জা-রা। মহিলাকেও সমঝে চলতে হয়, নাহলে টেলিফোনে কোন বেফাঁস তথ্য দিয়ে দিলে তো আর রক্ষা নেই। এ-কারণেও মহিলারা একে অপরের কাছে মুখ খুলতে ভয় পান। শ্বাসরুদ্ধকর এই জীবনে খুব কম মহিলাই দুইজনের বেশী ‘পেটের-কথা-বলা’ মানুষের নাম করেছেন। তবুও যে ক’জনের নাম করা হয়েছে তারা সবাই-ই হয় জা, নয়তো শ্বশুরবাড়ির আত্মীয় সম্পর্কের কেউ। অবিবাহিত মেয়েদের সমস্যা আরো প্রকট। আসমা, জমিলা, নূরজাহান তিন জনের মা-ই জানিয়েছেন তাঁদের মেয়েদের স্বভাব-চরিত্র ভালো, কারো সাথে সই-য়ের সম্পর্ক নেই। বাড়ির বাইরে যেমন তারা যায় না তেমনি অন্য বাড়ির মেয়ের সাথে কথা বলে তার মেয়ে এমন অপবাদ নাকি যে দেবে তাদের জিহ্বা খসে যাবে। মেয়েদের বিয়ে দিতে পারলেই তারা মুক্তি পান। বলা দরকার আমরা এই অবিবাহিত মেয়েদের সাথে কথা বলার অনুমতি পাইনি।

ব্রাহ্মণ শাসন: ‘প্যাটর কী কতা কইতাম কার সাতে?’

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিক পিছনেই ব্রাহ্মণশাসন গ্রাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক কর্মচারী এই গ্রামে থাকেন। অর্থনৈতিক অবস্থার বিচারে গ্রামটির দুটো পরিষ্কার ভাগ রয়েছে। গ্রামের প্রকৃত বাসিন্দাদের অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ ভালো। তাদের কারো রয়েছে আবাদী জমি, কেউ বা চাকরি করেন। কিন্তু কিছু গরীব মানুষ প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে এসে উঠেছেন সেই এরশাদের গুচ্ছগ্রামে। এই অংশের পুরুষরা রিকশা চালান কিংবা দিন-মজুরের কাজ করেন আর মহিলারা বাসাবড়িতে কাজ করেন নয়তো রাস্তা নির্মাণ কাজে বা ইটের ভাটায় দিনমজুর হিসেবে কাজ করছেন। সচ্ছল অংশের মহিলাদের সম্পর্ক অন্যান্য গ্রামের মহিলাদের মতই তাদের জা-শাশুড়ি-ননদদের সাথে কিন্তু গুচ্ছগ্রামের মহিলাদের সেই সুযোগও নেই। লাগোয়া ঘরের এইসব মহিলারা সবাই সবাইকে সন্দেহ করেন। পেটের কোন কথা তাদের নেই কারো কাছে বলার মত। স্বামী মারলে সবাই দেখে। স্বামী আরেক জায়গায় বিয়ে করলে হয় গুচ্ছগ্রাম ছেড়ে চলে যায় নয়তো সেই বউ নিয়ে ঘরে উঠলে মহিলাকে রাস্তায় নামতে হয়। জীবনের কোন বিষয়েই কোন গোপনীয়তা নেই কারো। গুচ্ছগ্রামের জুলেখা ইয়াসমিন সুন্দর ব্যাখ্যা দিলেন যে পেটের কথা সবাই দেখে, বলার কিছু নেই কারো সাথে।

সম্পর্ক-কাঠামোর একই গল্প পুনরাবৃত্ত হতে থাকে গ্রাম থেকে গ্রামে- টাঙ্গাইল জেলার গয়াহাটা ইউনিয়নের বলাই নগর কিংবা দিনাজপুরের বীরগঞ্জের মহুগাঁও কিংবা ছোট শহরের মহল্লা আক্কেলপুর-এ। বলাই নগর গ্রামের অনেক মহিলাই এনজিও হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর সাথে জড়িত আর একাকী চলতে পারার দাবীদার সবচেয়ে বেশী মহুগাঁও-এ। আর আক্কেলপুরের মহিলারা তো বলতে গেলে শহরেরই মহিলা। তাঁদের নাম ভিন্ন, ধর্ম ভিন্ন, ভাষা ভিন্ন কিন্তু সম্পর্ক কাঠামো একই। বিয়ের পরে মেয়েদের জীবনে সই-এর উপযোগিতা থাকতে পারে, এই ধারণাও যেনো অনুপস্থিত। আর বিয়ের আগে মেয়েরা একটু বড় হতেই বাইরে যাওয়া নিষেধ, কথা বলা নিষেধ বাড়ির বাইরের কারো সাথে, কাজের বাইরে।

 

লক্ষণের গণ্ডি আসলে কতবড়?

দণ্ডকারণ্যে সীতাকে গণ্ডি এঁকে দিয়েছিলেন লক্ষণ। রামায়ণ অনুযায়ী সীতা সেই গণ্ডির বাইরে যাওয়ায় কী অনর্থই না ঘটেছিলো! রবীন্দ্রনাথ মেয়েদের জন্য বাইরেটা কী ভয়ানক বোঝাতে মস্ত এক উপন্যাসই লিখে ফেলেছেন, ঘরে-বাইরে। মেয়েদেরকে বলেছেন তিনি সীমা স্বর্গের ইন্দ্রানী। প্রশ্ন হলো, এই সীমা স্বর্গের সীমা কতদূর ? লক্ষণের গণ্ডিই বা কত বড় ?

আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক কাঠামো উপস্থাপনের সফটওয়্যার প্রোগ্রাম ব্যবহার করে পয়গ্রামের যে প্যাটার্ণ (যাদের সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ) পাওয়া গেছে সেটি লক্ষ করলেই বোঝা যাবে মহিলাদের সম্পর্ক কাঠামো কেমন। প্রত্যেকটি বৃত্ত যেমন একেকজন মহিলাকে নির্দেশ করছে তেমনি নির্দেশ করছে কত নম্বর বাড়ির মহিলা তিনি। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে কেবল পাশাপাশি/কাছাকাছি বাড়ির মহিলারাই্ সম্পর্কে আবদ্ধ। এই পাশাপাশি বাড়িগুলো হচ্ছে তাঁদের ভাসুর-দেবরদের বাড়ি, যেখানে থাকেন তাঁদের জা-শাশুড়ি-ননদ।

যদি অঙ্কের হিসেবে বলি তবে সবগুলো গ্রামে মহিলাদের গড় সম্পর্ক ৩.১১ জনের সাথে। এবং এই সম্পর্কসূত্রের ৭৮.২৭% তাদের জা।

এই সীমাবদ্ধ জীবন আর সীমিত সম্পর্কের কারণগুলো একই সাথে জটিল, বহুমাত্রিক এবং আন্তঃসম্পর্কিত। সম্পর্ক কাঠামো গড়ে ওঠার আখ্যানভাগ নির্মোহভাবে বিশ্লেষণ করা না গেলে আমরা কতগুলো উপরিভাসা কারণের বন্দিশেই ঘোরাফেরা করবো। তাই মাঠের কাজের ফলাফলে উঠে আসা দৃশ্যমান সহজ কারণগুলো বিশ্লেষণ করা যেমন জরুরী, তেমনি বা আরো বেশী জরুরী এসব কারণের অর্ন্তনিহিত মতাদর্শিক এবং মনো-সামাজিক-আর্থনীতিক ভিত্তির দিকে ফিরে তাকানো। সামাজিক সংগঠন হিসেবে পরিবার এবং এই পরিবারের লৈঙ্গিক-সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ জরুরী, জরুরী বিশ্লেষণ করা ‘ঘর’ আর ‘বাইরে’র বর্তমান রুপকাঠামো, এর ঐতিহাসিক নির্মাণের সাপেক্ষে।

 

পয়গ্রামের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের দাবিদার মহিলাদের ক্লিক কাঠামো

 

নারীর ‘অপরায়ন’-এর ইতিবৃত্ত

‘জমিন’, পরিবার আর ব্যক্তিগত সম্পত্তির সরল-জটিল কোলাহল খালি চোখে যে কারণগুলো আমরা দেখি এই গবেষণায় সে-সবের মধ্যে অনিবার্য যে কারণ ছাপিয়ে উঠেছে আর সব কারণকে, সেটি হলো তাদের যোগাযোগ আবহ সীমিত, জমিন নির্দিষ্ট। নির্দিষ্ট তাদের বিচরণ ক্ষেত্র, কাজ কিংবা অবসরের। এই নির্দিষ্ট সীমিত জমিনের কারণগুলো আবার প্রায় মুখস্থ বলে দেয়া সম্ভব, অল্প বয়সে বিয়ে এবং বিয়ের পরে শ্বশুরবাড়ির গৃহস্থালির কাজে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ, যে ‘কাজ’ আবার ‘কাজ’ হিসেবে স্বীকৃত নয় অর্থনৈতিক মানদণ্ডে অথচ সকাল থেকে রাত অবধি গৃহস্থালির কাজেই তাদের নিয়োজিত থাকতে হয়। গার্হস্থ্য পুনরাবৃত্ত শ্রমের নিগড়ে আবদ্ধ খুব কম মহিলারই সুযোগ থাকে সই জাতীয় ‘অপ্রয়োজনীয়’ মানবিক সম্পর্ক নিয়ে মাথা ঘামানোর কিংবা সময় দেয়ার যেমনটা বলেছেন রায়ের কাঠির অবিরত জাল বুনতে থাকা সবিতা রানী, “বাড়ির বাহির বা হমু কহন আর সই বা পাতামু কহন”। বাড়ির বাইরের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যোগ না থাকার কারণে মহিলাদের বাড়ির বাইরে যাওয়ার ‘প্রয়োজন হয় না’ কিংবা নিন্দুকেরা হয়তো বলবেন ‘হুকুম’ হয় না। বাড়ির বাইরের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যোগ না থাকার কারণকে আবার প্রায়শই তাদের ‘অ-শিক্ষার’ সাথে সম্পর্কিত করে দেখা হয়। কিন্তু আমরা দেখেছি এসব মহিলাদের স্বামীদের শিক্ষাগত যোগ্যতাও তেমন আহামরি ভিন্ন কিছু নয়। যেহেতু স্বামীদের কর্মজগত ‘ইতিহাস নির্দিষ্টভাবে’ বাইরের পৃথিবী তাই তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কোন প্রতিবন্ধক নয় বাইরের পৃথিবীর আলো-হাওয়ায় সঞ্চরণের জন্য। মেয়েদের শিক্ষাগত যোগ্যতার ঘাটতি আবার অনেক ক্ষেত্রেই দারিদ্র্যের পাশাপাশি ‘বিয়ের বয়স’ এবং ‘সম্ভাব্য উপযুক্ত বিয়ে’-এর সাথে সম্পর্কিত। একই আর্থ-সামাজিক অবস্থানের মেয়েদের প্রাথমিক স্কুলে নিবন্ধীকরণ ছেলেদের সমান বা ক্ষেত্র বিশেষে বেশী হলেও মাধ্যমিকে যাওয়ার আগেই তারা ঝরে যায়। স্কুল দূরে হলে বেশ মোক্ষম একটা যুক্তি আপসেই দাঁড়িয়ে যায় যেমন আমরা দেখেছি চৈতন্যপুরে। গড় বিয়ের বয়স সাড়ে পনেরো হওয়ার আগেই তাই বিচ্ছেদ ঘটে স্কুলের সাথে, বাইরের পৃথিবীর সাথে, সই-দের সাথে। এই সময়টা হচ্ছে তাদের বিয়ের জন্য প্রস্তুতির সময়। এই প্রস্তুতিকালীন সময় আবার নিবিড়ভাবে যুক্ত ‘সতীত্ব নিশ্চিতকরণ’ প্রক্রিয়া এবং ‘নিরাপত্তা’র ধারণার সাথে, দু’টোই সামাজিক-মনস্তাত্ত্বিক নির্মাণ। আত্মীয় সম্পর্কের বাইরে এসব মেয়েদের অন্য কোন সম্পর্ক গড়ে ওঠার প্রক্রিয়াটি বাধাগ্রস্থ হয়ে পড়ে শুরুতেই, এমনকি কাউকে জানান না দিয়েই। বিবাহিত মহিলাদের ক্ষেত্রে বাইরের পৃথিবীর সাথে যোগাযোগের সূত্র হয়ে উঠতে পারতো গ্রামে গ্রামে পত্তন নেয়া বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার কার্যক্রম। কিন্তু মাঠ অভিজ্ঞতায় দেখা যাচ্ছে এমনকি ক্ষুদ্রঋণ বা অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো বাড়িতে এসে ঋণ বা সাহায্য দিয়ে যায় অনেকক্ষেত্রেই। নারী থাকবে লোক চোখের আড়ালে¾‘দেশজ সংস্কৃতির’ এই প্রত্যাশার মতাদর্শ পরিষ্কারভাবে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানেও পরিব্যপ্ত এবং স্বীকৃত হয়েছে, যেমনটা দেখেছেন ওয়ালেস ও অন্যান্য ১৯৮৭ (সূত্রঃ হোয়াইট ১৯৯২)। তাঁদের মতে “গ্রামীণ নারীকে বন্ধন-মুক্ত করার পক্ষে যুক্তি দেয়া আমাদের উদ্দেশ্য নয়¾সেটা ‘দার্শনিক আর সমাজ-সংস্কারকদের কাজ’।” ‘নারীর কাজ গৃহকেন্দ্রিক’ এই আধিপত্যশীল মতাদর্শকে ঘিরেই আবর্তিত বেশীরভাগ প্রকল্প কিংবা আবর্তিত ‘গৃহের আয় বৃদ্ধি’র সাথে নারীর সংযুক্তি জাতীয় উদ্যোগে যেমন হাঁস-মুরগি পালন, হস্তশিল্প। ফলে যারা ক্ষুদ্রঋণ বা অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে জড়িত, ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাদের কিছু ‘সাহায্য’ হলেও সামষ্টিকভাবে তাদের সীমাবদ্ধ জল আর সীমিত সবুজময় আঙ্গিনার বিস্তৃতি ঘটে না নতুন মানুষের সাথে মেশার কিংবা ভাব বিনিময়ের। বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠার যে অবকাশ আর জমিন প্রয়োজন দুই-ই অনুপস্থিত, তাই বন্ধুত্ব তৈরী হয় না। তবে গ্রামীণ নারীর এই জমিন-এর নির্মাণ কোন আপাত নিরীহ সিদ্ধান্তের বিষয় নয় বরং বিয়ে, পরিবার এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো জটিল বিষয়গুলোর ঐতিহাসিক বিকাশ এবং বর্তমান প্রেক্ষিতের সাথে গভীরভাবে সংযুক্ত। নারী সত্ত্বার নির্মাণকে ঘিরে যে ‘অপরতা’র বলয়, তার বিচিত্র বিচ্ছুরণকে লক্ষ করতে হবে দর্শন ও ইতিহাসের প্রতিবেদনে।

গার্হস্থ্য শ্রমের সাথে নারীর যুক্ততা কীভাবে অনিবার্য হয়ে উঠেছে কিংবা নারীর অবস্থা, পরিস্থিতিগুলো কেন ‘অপর’ হয়ে উঠেছে এবং কীভাবেই বা এই ‘অপরায়ন’ ঐতিহাসিকভাবে স্থায়ীত্ব পেয়েছে¾এই প্রশ্নগুলো নারীবাদী পাঠের কেন্দ্রীয় বিষয়। নানা মত, নানা পাঠের ভেতর থেকে দু’টি প্রবল ধারা মোটা দাগে বের করে আনা সম্ভব [বলা বাহুল্য, নারী তার দৈহিক কারণেই গার্হস্থ্যধর্ম পালন করে, এই সনাতন সরল জৈবিক ব্যাখ্যাকে এখানে মোটেই আমলে নেয়া হচ্ছে না]। একটি ধারার মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে, “সব সময়ে, সর্বত্র বা সব পর্যায়েই নারী সামাজিকভাবে পুরুষের অধঃস্তন নয়।” এই ধারার প্রধান প্রবক্তা এঙ্গেলস (১৮৮৪-১৯৪২) তাঁর বইতে যুক্তি দেন যে, গোষ্ঠীভিত্তিক সমাজ যখন সভ্যতার দিকে অগ্রসর হতে থাকে তখন পিতৃতন্ত্রের উদ্ভব ঘটে যা নারীর অধস্তনতার মূল কারণ এবং সমাজতন্ত্রের আগমনের সাথে সাথে পিতৃতন্ত্র পরাভূত হয়। পিতৃতান্ত্রিক সমাজের সাধারণ সামাজিক নিয়ম হচ্ছে নারী পুরুষের সম্পত্তির মত কাজ করে, সন্তান উৎপাদন ও তার সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পিতৃতান্ত্রিক নিয়মকানুন বজায় রাখে। এই প্রক্রিয়ার মূল দুটি প্রপঞ্চ ‘ব্যক্তি মালিকানার উদ্ভব’ ও ‘শ্রেণীভিত্তিক অসমতার সাথে নারীর ঐতিহাসিক অধস্তনতার সম্পর্ককে ব্যাখ্যা করা হয়েছে এভাবে, যেখানে পারিবারিক কাজের সাথে বাইরের বা সামাজিক কাজের কোন পার্থক্য নেই সেখানে নারী-পুরুষের মধ্যে একধরনের সমতার সম্পর্ক বিদ্যমান, এমনকি নারী পুরুষের চেয়ে অধিক ক্ষমতাবান ক্ষেত্র বিশেষে। এঙ্গেলস দেখান, এ ধরনের পরিস্থিতিতে উৎপাদনের উপায় ও উৎপাদনের উপর সমাজের সকলের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ বিদ্যমান, গার্হস্থ্য জীবন ও সামাজিক জীবনের কেন্দ্রে রয়েছে যৌথ গৃহস্থালি। তাই যে সমাজে বিনিময়ের জন্য উৎপাদনের প্রবণতা কম এবং যেখানে ব্যক্তিমালিকানা ও শ্রেণী অসমতার সৃষ্টি হয়নি সেখানে লিঙ্গীয় ভূমিকার পার্থক্য থাকলেও লিঙ্গীয় অসমতা কম এবং ক্ষমতা, কর্তৃত্ব ও তুলনামূলক যৌন অধিকার নারী-পুরুষ উভয়ের মাঝে বিন্যস্ত। কিন্তু উদ্বৃত্ত বৃদ্ধির সাথে সাথে ব্যক্তিমালিকানার উদ্ভব হয় এবং নারী সম্পদ, উৎপাদিত দ্রব্য ও তার নিজের উপর কর্তৃত্ব হারায়। যৌথ গৃহস্থালিগুলো ব্যক্তিগত এককে পরিণত হয়, প্রতিটি পরিবারে একেকজন পুরুষ প্রতিনিধি কর্তৃত্ব করেন। পরিবার হয়ে ওঠে নারীর শ্রমের ক্ষেত্র যা পর্যায়ক্রমে একটি বৃহৎ সামাজিক বা বাইরের জগতের নিয়ন্ত্রণাধীন হয়। এই বহির্বিশ্বের জগত আবার রাষ্ট্র দ্বারা পরিচালিত¾আর এই সমাজ, রাষ্ট্র সব কিছুই হচ্ছে পুরুষের। সোজা কথায়, ব্যক্তিগত সম্পত্তির বিকাশে পিতৃতন্ত্রের সৃষ্টি হলো, উন্নত যন্ত্রের উদ্ভাবনের জন্য সামাজিক উৎপাদনে নারীর শ্রমের প্রয়োজনীয়তা কমে গেলো। সামাজিক জীবনে উৎপাদনের অংশ হিসেবে বিচ্যুত হয়ে সে নিযুক্ত হলো গৃহস্থালির একঘেয়ে বাঁদীগিরিত্বে।

এঙ্গেলসের অর্থনৈতিক নিমিত্তবাদী ব্যাখ্যার বিপরীতে সক্রিয় সমালোচনাত্মক ধারাটির অন্যতম প্রতিনিধিত্বকারী হলেন ব্যুভোয়া (১৯৪৯-১৯৬৮)। তাঁর মতে, নারীজীবনের স্বর্ণযুগ কল্পনামাত্র, তা কখনোই ছিলোনা। সমগ্র ইতিহাসকে যাযাবর যুগ, কৃষির প্রথম যুগ, পিতৃতান্ত্রিক যুগ ও প্রাচীনকাল, খৃষ্টধর্ম ও মধ্যযুগ এবং ফরাসী বিপ্লবের পর থেকে বর্তমান যুগ পর্যন্ত পাঁচটি বর্গে ভাগ করে তিনি দেখান চিরকালই পুরুষ প্রভু, মাঝে কিছুদিন [কৃষির প্রথম যুগ যা প্রায়শই মাতৃতান্ত্রিক যুগ হিসেবে চিহ্নিত] শুদ্ধ জন্ম রহস্যের প্রভাবে সে নারীকে খানিকটা সুবিধা দিয়েছে, বসিয়েছে মাতা বা দেবীর আসনে, এই যুগেও নারীর অবস্থান মূলত গৃহকেন্দ্রিক বলেই মনে করেন ব্যুভোয়া। নারী ও শ্রমিককে এক পর্যায়ে ফেলা এবং সামাজিক উৎপাদনে অর্থনৈতিক মর্যাদা পেলে উভয়েরই অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে, এঙ্গেলসের এই মূল থিসিসের বিপরীতে তিনি বলেন শ্রমিক এক বিশেষ সমাজ ব্যবস্থার ফল কিন্তু সমাজের প্রথম যুগ থেকেই নারী ও পুরুষের সম্পর্ক নির্যাতিত ও নির্যাতনকারীর। বিষয়টি আরো ভালোভাবে বোঝা যায় যখন তিনি বলেন শ্রমিকের মধ্যে শ্রৈণী-বৈষম্য নিশ্চয়ই নেই কিন্তু নারীর মধ্যে শ্রেণীবিভাগ রয়েছে। আবার সামন্ততান্ত্রিক ইউরোপের ভূমিদাসদের মত প্রতিটি পরিবারের নারীর একদিকে যেমন সম্পত্তি রয়েছে (বিয়ের পরে স্বামীসূত্রে পাওয়া), অন্যদিকে সে নিজেও পুরুষের সম্পত্তি হিসেবে বিবেচিত। এইসব প্রশ্ন পরবর্তী নারীবাদী তত্ত্বেরও কেন্দ্রীয় ফোকাসে পরিণত হয় (দেখুন, কেলি ১৯৮৬)। তবে ব্যুভোয়া এঙ্গেলসের মতই মনে করেন যে ব্যক্তিগত সম্পত্তি নারীর অপরায়নকে দৃঢ়তর করেছে। উভয়ের থিসিসেই [বলা ভালো উভয় ধারায়] একটি মূলগত ঐক্যের দিক হলো দুজনেই মনে করেন ব্যক্তিগত সম্পত্তি বিয়ের বন্ধনকে দৃঢ় করেছে কারণ পুরুষ তখন চেয়েছে নিজের ঘর, সম্পত্তি ও তার ‘বৈধ’ উত্তরাধিকার। আগের যুগে বিয়ে বহির্ভূত যৌন অপরাধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা ছিলো না কিন্তু এই যুগে নিয়ম হলো সতীত্ব নিয়মলঙ্ঘনকারীকে তার স্বামী হত্যা করতে পারবে এবং তার জন্য কোন শাস্তি হবে না। পিতৃতন্ত্রের উদ্ভব থেকে আজ পর্যন্ত সকল সমাজে, কিছু ব্যতিক্রমসহ, এই ব্যবস্থাই কমবেশী বিদ্যমান। এক্ষেত্রে কেলি (১৯৮৬)-র বক্তব্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণঃ “যেখানে ঘর আর বাইরের মধ্যে সুস্পষ্ট বিভাজন বিদ্যমান সেখানে লিঙ্গীয় অসমতার প্রাবল্য লক্ষ্য করা যায়, একই সাথে নারীর সতীত্ব এবং পতিতালয় চাওয়া হয়।” ভারতীয় যৌন বাস্তবতার অধ্যয়ন এ-ধরণের আলোচনায় পুরোপুরি নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। যেমন বাৎসায়নের কামসূত্র পড়লে স্পষ্ট বোঝা যায়, দাম্পত্য জীবনে নারী কখনো সমান মর্যাদা ভোগ করত না। বিবাহিত নারীরা অশিক্ষিত হওয়াতে স্বামীকে কখনো বুদ্ধিতে, সংবেদনায় সঙ্গী হিসেবে পেতো না। রাষ্ট্র চৌষট্টিকলায় নিপুণ বারাঙ্গনা বা জনপদবধূদের উৎসাহ যোগাত যাতে পুরুষেরা তাদের সাহচর্যে বৌদ্ধিক তৃষ্ণা মেটাতে পারে। এই সমাজে, প্রাক-আধুনিক যুগে, অন্তত দুই সহস্রাব্দ ধরে, যৌনতা-দাম্পত্য, স্ত্রী-পুরুষের সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয়ে একই মনোভঙ্গি বজায় ছিলো। বিয়ে বহির্ভূত যৌনতা বিশেষভাবে স্ত্রীর সামাজিক মর্যাদার পক্ষে হানিকর বলে বিবেচিত হলো না শুধু, যৌন নৈতিকতার ধারণাও এই ভাবনাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হলো, তৈরী হলো বিভিন্ন নীতিশাস্ত্র।

মহাভারতের শুরুতে আমরা দেখি কুন্তির ক্ষেত্রজ পুত্রদের অথচ কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অর্থাৎ মহাভারতের শেষ পর্যায়ে গীতায় পরিষ্কার বলা হয়েছে, ‘স্ত্রীষু দুষ্টাষু বার্ষ্ণেয় জায়তে বর্ণসঙ্করঃ’। অর্থ, স্ত্রীদের অনৈতিক যৌন স্বেচ্ছাচারের ফলে বর্ণাশ্রম প্রথার দ্বারা অননুমোদিত সন্তানেরা জন্ম নেয়। অর্থাৎ সতীত্ব সংস্কারের শেকল পরানো শুরু হচ্ছে মাত্র আর তার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। অধিপতি ব্রাহ্মণ্য সমাজে ‘বিশুদ্ধ’ আর্য উত্তরপুরুষের পরম্পরা রক্ষা সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব পেয়েছে বলে সাহিত্য-সংস্কৃতি-স্মৃতি-পুরাণ জুড়ে নারীর অশুচিতা, অবিশ্বাস্যতা, অপূর্ণতা কীর্তিত হয়েছে। কঠোর হয়েছে সতীত্ব নিশ্চিতকরণের উপায়সমূহ। নারীর জমিন ক্রম সঙ্কুচিত হয়েছে।

উনিশ শতকের শেষভাগ এবং বিশ শতকের প্রথম ভাগ বাঙ্গালী মুসলমান মধ্যবিত্তের উন্মেষকাল এবং এই শ্রেণী গঠনের সাথে শুরু হয় পরিবার, বিয়ে ব্যবস্থা, এবং নারী-পুরুষ সম্পর্কের আমূল পরিবর্তনের প্রক্রিয়া। এর আগে বাঙ্গালী মুসলমানদের মধ্যে পুরুষের একাধিক বিয়ে সব শ্রেণীতেই স্বাভাবিক ধরে নেয়া হতো। এই মধ্যবিত্ত শ্রেণী গঠনের পর খুব দ্রুতই এক পতি পত্নি বিয়ে নৈতিকতা, সমতা আর প্রগতিশীলতার স্মারক হিসেবে মূর্ত হয়ে ওঠে এবং অচিরেই, আধা শতাব্দীরও কম সময়ে, সেটি হয়ে ওঠে সামাজিক রীতি। আপাত প্রগতিশীল এই বিয়ে কাঠামোতেও ‘নারী ঘরণী, তার ভূমিকা নৈতিক এবং আদর্শিক, নারী চৈতন্যের বিশাল জায়গা জুড়ে রয়েছে যৌন শুচিতা’, যেমনটা দেখেছেন চৌধুরী এবং আহমেদ (২০০০ঃ ১৫৫)। তাঁরা যথার্থই দেখেছেন, ‘‘পুরুষের পরিচিতি এই পরিকাঠামোতে আর্থিক, তার কাজের জায়গা বহির্জাগতিক (রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক) ; তার শুচিতার ব্যাপার নারীর মত সংকটের নয়। ঘর-বাহির পুনর্গঠনের মধ্যে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কাছে সম্মানবোধ আর চরিত্র ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। সেই চরিত্র চর্চার কেন্দ্রীয় জায়গা হলো নারী। নারীর শুচিতার নতুন নতুন উপাদান তৈরী হয় এই সময়। … পুরুষের আর্থিক ভূমিকা এক স্বামী-স্ত্রী বিয়ের ক্ষেত্রে এত প্রকট, যা বিশ শতকের মজুরী অর্থনীতিতে বাঙ্গালী মুসলমানের অংশগ্রহণের আগে ছিলো না, যে চাকরী পাওয়ার সাথে ‘বউ পালতে’ পারার সামর্থ্য জড়িত হয়ে পড়ল। পৌরুষের ধারণার ভিত্তিই হচ্ছে স্বাধীন রোজগার, নির্ভরশীল বউ-বাচ্চার লালন-পালন।” বাঙ্গালী মুসলমান মধ্যবিত্তের এই এক পতি পত্নি বিয়ে এবং ‘নারী’ ও ‘পুরুষ’ নির্মাণ ক্রমশ সঞ্চারিত হয়েছে সমাজের অন্য স্তরেও। সঞ্চারিত হয়েছে এর আনুসঙ্গিক ‘ঘর/বাহির’, ‘বিয়ে-করা/ বিয়ে-বসা’, ‘সংসার চালানো/সংসার-করা’র ধারণাগুলোও। অর্থাৎ নারীকে গার্হস্থ্য জমিনের সাথে একাকার করে দেখার বিষয়টি পরিবর্তিত তো হয়ই নি বরং সাহিত্যে, গণমাধ্যমে, নাটকে, চলচ্চিত্রে, চর্চায়, আইনে সর্বত্র মোহময় রোমাণ্টিকতার প্রলেপসহ উপস্থাপন করা হয়েছে বা হচ্ছে এবং নারীর শিক্ষা, চাকরি, উপার্জন, সম্পর্ক সবই নির্ধারিত হয়েছে এই জমিনের প্রয়োজনে এবং এর সাথে সমন্বয় করে।

কাজেই ব্যক্তিগত মালিকানার উদ্ভবের সাথে নারীর গার্হস্থ্য শ্রম, বিয়ে এবং বৈধ উত্তরাধিকারের প্রয়োজনে নারীর সতীত্ব শৃঙ্খলার উপরে জোরারোপ সংস্কৃতিভেদে কিছু তারতম্যসহ নারীর বর্তমান সীমিত গার্হস্থ্য জমিনের প্রেক্ষাপট রচনা করেছে এবং স্থায়ীত্ব দিয়েছে, যা আমরা দেখেছি বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে।

পুতুল তোমার জনম কিরূপ কে জানে
আলোক লতায় বাইন্ধা সুতা সে টানে

আসলে প্রশ্ন করার আর তেমন কিছু নেই মনে হয়। হাজার বছরের চাপিয়ে দেয়া সতীত্ব সংস্কারের শেকল এতো গভীরে প্রোথিত যে, সব মহিলাই নিজেকে সেই সংস্কারের মানদণ্ডে মহীয়সী দেখতে আর দেখাতে চান। সীতার অগ্নি পরীক্ষায় উত্তরণের গল্প ধর্ম নির্বিশেষে আজও সতীত্ব গৌরবের পরম নিদর্শন। সেই নারী বিয়ের জন্য ভালো যে অসূর্যস্পর্শা। জানা কথাই যে বিয়ের আগ পর্যন্ত পিতামাতা আগলে রাখেন, আটকে রাখেন মেয়েকে এই সার্টিফিকেটের আশায় যে তার মেয়ের শরীরে কোন ‘দোষ’ লাগেনি। পুরুষসঙ্গ তো দূরের কথা, বাড়ির আত্মীয়-স্বজনের বাইরে কোন মেয়ের সাথেও তাদের মেয়ের কোন সম্পর্ক নেই। বেগম রোকেয়ার ‘অবরোধবাসিনী’ আর কতইবা পুরনো হয়েছে ! মেয়ে তো বিয়ে দেয়ার জন্যই কেবল পালাপোষা করা। সময় খারাপ। নিরাপত্তা নিয়েও চিন্তা আছে। আর সেই মেয়ের যখন বিয়েই হয়ে গেলো সে তো তখন স্বামী আর শ্বশুরবাড়ির যত বাধ্য, ততই ভালো ‘মহিলা’। বাড়ির আত্মীয় সম্পর্কের বাইরে কারো সাথে মেলামেশা মানে তো সেই একনিষ্ঠ আনুগত্যে অন্য বাতাস লাগা। কে না জানে ‘এরা যত বেশী জানে, তত কম মানে’। স্বামী চান না, শাশুড়ি চান না, সমাজ চায় না এই মেলামেশার মধ্য দিয়ে ওই নির্দিষ্ট বাড়ির নির্দিষ্ট মান্যতাসংস্কৃতির শান্ত পুকুরে এমনকি পলকা ঢেউও উঠুক। হাজার বছরের পাখিপড়া শিক্ষায় মেয়েরা এত পোক্তভাবে আয়ত্ত করেছেন এই শিক্ষা যে শিক্ষককে আর পাহারাও দিতে হয় না, তারা নিজেরাই বলেন সই থাকার মত খারাপ কাজের ধার তারা ধারেন না, ‘পাখির শিক্ষা এখন পুরা হইয়াছে’।

যারা ঘরের বাইরের কোন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত না (৯২.৭%) তাদের পক্ষে তো বাড়ি আর পাড়ার বাইরে যাওয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না। এমনকি গ্রামের যে মহিলারা চাকরি করছেন তাদেরও বান্ধবী নেই, বা থাকলেও ওই মহিলারাই সেই স্বীকৃতি দেন না জনসমক্ষে। কারণ গ্রামের মেয়েদের চাকরীতে যাওয়ার লড়াইটা এখনো সমাজ-সংসারকে এই বুঝ দেবার পর্যায়ে আছে যে সে নেহাত বাধ্য হয়ে, পরিবারের প্রয়োজনে ‘বাড়তি’ টাকা উপার্জনে বের হচ্ছে, কাজের বাইরে আর কোন সম্পর্ক তার নেই পৃথিবীর সাথে, তাই বান্ধবী যদি থেকেও থাকে সেই থাকাকে প্রকাশ করার সামর্থ্য সে অর্জন করেনি এখনো। এখনো সে নিজেকে এবং পারিপার্শ্বিক সবাইকে আশ্বস্তই করতে চায় যে সমাজ নির্দিষ্ট বিবাহিত সম্পর্কসমূহের বাইরে তার অন্য কোন জগত নেই। স্বামী-সংসারেরও এই আশ্বস্তিটুকু প্রয়োজন। মহিলাদের যে নিরঙ্কুশ আনুগত্যের উপরে পরিবার নামক প্রতিষ্ঠানটি টিকে আছে, সেই আনুগত্যের লেশমাত্রও যে অন্য কোথাও ব্যয়িত হচ্ছে না সে-বিষয়ে আশ্বস্তির প্রয়োজন আছে বৈকি। তবু ধন্ধ আমার কিছুতেই দূর হচ্ছিলো না কেন এভাবে। শুরুতেই দেয়া ঝুসঢ়ড়ংরঁস-এ প্লেটোর উদ্ধৃতি যেন এক হঠাৎ আলোর ঝলকানি হিসেবে কাজ করেছে। এখানে বলা হয়েছে মালিকের স্বার্থে দাসদের মধ্যে যেন কোন বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠতে না পারে সে বিষয়টি নিশ্চিত করা দরকার। কারণ যে-কোন বন্ধুত্বের সম্পর্কে অন্যান্য উদ্দেশ্যের সাথে ভালোবাসারও উৎসারণ ঘটাতে পারে যা মালিক পক্ষের শক্তিকে ক্ষয় করে। সংসার সম্পর্ক কাঠামোর মালিক যখন স্বামী, আর স্ত্রী যখন দাস, এবং এটাই যখন নিয়ম, এবং এই নিয়মটাকে বহাল রাখাই যখন উদ্দেশ্য, তখন কেন যে মেয়েদের বন্ধুত্বকে সাহিত্যে বা জীবনে স্বীকার করা হয় না বা স্বীকৃতি দেয়া হয়না সেটা খানিকটা খোলসা হয় বৈকি!

 

তথ্যসূত্রঃ


Beauvoir, S. de. (1949/1968). The Second Sex, translated in English by Pardhlay, H. M. Bantam Books, NY.

Engels, F. (1884/1942/1972). The Origin of Family, Private Property and State, translated in English by West, A. (1942), Pathfinder Press, NY.

Kelly, J. (1986) “The Social Relation of the Sexes: Methodological Implications of Women’s History”, in Women, History and Theory. The Essays of Joan Kelly, The University of Chicago Press, Chicago & London.

Plato. (360 B.C./1997) The Symposium, translated in English by Neham, A. and Woodruff, P. From Plato: Complete Works, Cooper, J. M. (ed.), 1997. pp. 457-506.

White, S. C. (1992). “Research on Women in Bangladesh”, Arguing with the Crocodile, Gender and Class in Bangladesh, University Press Limited, Dhaka.

চৌধুরী, মানস এবং আহমেদ, রেহনুমা। ২০০০। লিঙ্গ, শ্রেণী এবং অনুবাদের ক্ষমতাঃ বাঙ্গালী মুসলমান মধ্যবিত্ত পরিবার ও বিয়ে, কর্তার সংসার, গুলরুখ, সায়দিয়া এবং চৌধুরী, মানস (সম্পাদিত)। পৃষ্ঠা ১৩৯-১৬৪। রুপান্তর প্রকাশন, ঢাকা।

 

The post গ্রামের মহিলাদের কোন বন্ধু নেই first appeared on KG | Kaberi Gayen.

]]>
https://kaberigayen.com/%e0%a6%97%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%ae%e0%a6%b9%e0%a6%bf%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%95%e0%a7%8b%e0%a6%a8-%e0%a6%ac%e0%a6%a8%e0%a7%8d/feed/ 0
(Uncertain) Future of Journalism in Bangladesh https://kaberigayen.com/uncertain-future-of-journalism-in-bangladesh/ https://kaberigayen.com/uncertain-future-of-journalism-in-bangladesh/#respond Wed, 02 Mar 2022 09:42:34 +0000 https://kaberigayen.com/?p=7743 The news industry does not need to be a mammoth one, but in the absence of independent, professional reporting providing accurate information, analysis, and interpretation, the public will increasingly search for quality news. Only equipped and ethical journalism can fulfil that demand.

The post (Uncertain) Future of Journalism in Bangladesh first appeared on KG | Kaberi Gayen.

]]>

When we talk about changes in the media eco-system, we do not only talk about the medium but also the content, business models, and ethical practice of journalism. Media organisations that used to control both content and channels now only produce content; companies like Google and Facebook are the gatekeepers to audiences. Thus, business models that fund news are challenged, weakening “professional” journalism and leaving news media more vulnerable to commercial and political pressures.”.

 

In Scanning the Shape of Journalism: Emerging Trends and Changing Culture published in 2018, Juho Ruotsalainen talks about the rise of dialogical journalism—“instrumental” journalism that serves specific audience needs, quality over quantity, use of artificial intelligence, and a discontinuation in the shape of journalism, “moving away from an insulated field towards more open culture and practice”. The predicted trends are certainly dependent on cultural, economic, political, and social contexts.

 

For all latest news, follow The Daily Star’s Google News channel. It is hard to predict the future of journalism in Bangladesh, mainly because of a lack of research. Whatever I write here is not informed research—I am simply positing a scenario. The rise of digital journalism is a concern for mainstream journalism in Bangladesh too, but not at the same scale the western part of the world is experiencing. The press in India, Sri Lanka, and to some extent in Pakistan and Bangladesh are still the Mecca of print journalism. In fact, most of the national dailies publish online versions corresponding to their print versions. Prothom Alo has switched to a paid online version for their e-paper. We may assume it will be the trend for other newspapers in the near future. Noticeable, here, is that these online versions are built upon the credibility of the original print version—with the exception of the first online newspaper bdnews24.com. Besides online versions, almost all the newspapers employ Facebook, Twitter, and YouTube accounts.

 

We do not know exact numbers, but there have recently been employee cuts in established newspaper houses. Online and social media content are attracting increasingly more ads, but that is not the only obstacle the newspaper industry faces. Newspapers of Bangladesh, in fact from the days of Hickey’s Gazette, have suffered political pressure which has often ended in economic control and in extreme cases, complete closure.

 

Television journalism in Bangladesh could never show much promise. Only the first private channel Ekushey TV acquired any esteem for its independent journalism, but it came to a closure apparently for some technical reasons (although the misconception is that it closed down for political reasons).

 

Private television channels have often been criticised for their lack of professionalism—there is no guideline for television channel owners, and not all of them have professional expertise or even minimum education in this field. The popular perception is that businessmen get licenses to operate TV stations, through political considerations. The channels are known to do he said, she said journalism —no investigative or follow-up report. Rarely do they go outside of Dhaka unless accompanied by celebrity political leaders or people in power. Talk-shows were popular in the post 1/11 era, but they too have lost their glam. Business elites, political party members, and channel owners without any knowledge and passion for journalism control the TV channels.

(Uncertain) future of journalism, Piqsels CC

Another severe problem in the journalism industry is the ever-increasing number of media outlets and shrinking market size ratio. Journalists are compromising their professionalism. Journalist associations are divided. They can confront neither the power nor the business conglomerates. The obvious outcome is to surrender to both power and business. It is at this point that journalism dies. The most frustrating thing is that an increasing portion of the limited ad spending is going to social media content which are not necessarily journalistic in nature. A big portion of telco funding, for example, is being invested in waaz contents in social media. Waaz was never covered as news in the mainstream media, but because they attract viewers, companies give them advertisements.

 

Moreover, as mainstream journalism suffers from lack of funding and lack of professionalism, they fail to confront the mis-and-dis-information on social media. Sometimes, the nature of invested capital also restrains them from fighting against it. Rather than confronting fake news, some journalists try to compete with them with sensational news. The discipline of journalism originated as the voice of the people against the vices of power hegemony. It seems that journalism in Bangladesh, like in many parts of the world, has forgotten its genetic promise and thus lost its path. Self-censorship is one its dominant vices.

 

Bangladesh will soon lose its first generation journalists who fought against the West Pakistani military rule and shaped the aspirations of a new country. After them, who will take the responsibility? How many from the next set are reliable and capable?

 

Digital journalism is unavoidable, as is a change in business models. Journalists in Bangladesh will soon be equipped with the necessary skills for journalism in a digital era. But simply acquiring those skills will perhaps not be enough. Many qualified young journalists are either quitting their jobs or being sacked. In the last couple of years, some of my ex-students who proved to be very good journalists—in fact investigative journalists—resigned. We recently observed mass firings in several television channels. The trust in journalism as a prestigious career is shaken and bringing back that trust is essential.

 

From this disarray, one positive signal I would like to reiterate—people are willing to pay for digital news content. It is the growing trend among youth, and there is a rise in subscription news. Even 10-15 years ago, online journalism would not deal with the serious long-form. But the generation today will read any length of journalistic piece online, on their smartphone—The Australian, The New York Times, The Guardian are some successful examples of independent journalism using different business models. This shows people are willing to pay for news outlets whom they trust. Quality matters. And there lies the hope.

(Uncertain) future of journalism, Piqsels CC

 

The news industry does not need to be a mammoth one, but in the absence of independent, professional reporting providing accurate information, analysis, and interpretation, the public will increasingly search for quality news. Only equipped and ethical journalism can fulfil that demand. Restoring it is an uncertain journey, but I wish that the industry of Bangladesh takes on that challenge!

The post (Uncertain) Future of Journalism in Bangladesh first appeared on KG | Kaberi Gayen.

]]>
https://kaberigayen.com/uncertain-future-of-journalism-in-bangladesh/feed/ 0
অভিন্ন পারিবারিক আইন: বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ https://kaberigayen.com/%e0%a6%85%e0%a6%ad%e0%a6%bf%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a8-%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%86%e0%a6%87%e0%a6%a8-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82/ https://kaberigayen.com/%e0%a6%85%e0%a6%ad%e0%a6%bf%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a8-%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%86%e0%a6%87%e0%a6%a8-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82/#respond Sat, 19 Mar 2022 15:44:03 +0000 https://kaberigayen.com/?p=8081 অভিন্ন পারিবারিক আইন: বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ বিবিসি বাংলার লাইভ  অভিন্ন পারিবারিক আইন বিষয়ে মহিলা পরিষদ আয়োজিত মতবিনিময় সভায় ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম, সুলতানা কামাল, শাহদীন মালিক, দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, ব্যারিস্টার ফস্টিনা প্রেইরা, মফিদুল হক, অজয় দাশগুপ্ত, ফওজিয়া মোসলেম, ও কাবেরী গায়েন  

The post অভিন্ন পারিবারিক আইন: বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ first appeared on KG | Kaberi Gayen.

]]>
অভিন্ন পারিবারিক আইন: বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ

বিবিসি বাংলার লাইভ  অভিন্ন পারিবারিক আইন বিষয়ে মহিলা পরিষদ আয়োজিত মতবিনিময় সভায় ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম, সুলতানা কামাল, শাহদীন মালিক, দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, ব্যারিস্টার ফস্টিনা প্রেইরা, মফিদুল হক, অজয় দাশগুপ্ত, ফওজিয়া মোসলেম, ও কাবেরী গায়েন

 

The post অভিন্ন পারিবারিক আইন: বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ first appeared on KG | Kaberi Gayen.

]]>
https://kaberigayen.com/%e0%a6%85%e0%a6%ad%e0%a6%bf%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a8-%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%86%e0%a6%87%e0%a6%a8-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82/feed/ 0
বাংলাদেশে সাংবাদিকতার ক্ষেত্র: বিবিসি বাংলার লাইভ https://kaberigayen.com/%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6%e0%a7%87-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%95%e0%a7%8d/ https://kaberigayen.com/%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6%e0%a7%87-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%95%e0%a7%8d/#respond Sat, 19 Mar 2022 14:24:16 +0000 https://kaberigayen.com/?p=8073 বাংলাদেশে সাংবাদিকতার ক্ষেত্র: বিবিসি বাংলার লাইভ বিবিসি বাংলার লাইভ  বাংলাদেশের দৈনিক পত্রিকা প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে ১৯২৩ সালের অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা করা পর আজ তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশে সাংবাদিকতার ক্ষেত্র আরো সংকুচিত হয়ে আসবে বলে অনেক মনে করেন।  

The post বাংলাদেশে সাংবাদিকতার ক্ষেত্র: বিবিসি বাংলার লাইভ first appeared on KG | Kaberi Gayen.

]]>
বাংলাদেশে সাংবাদিকতার ক্ষেত্র: বিবিসি বাংলার লাইভ

বিবিসি বাংলার লাইভ  বাংলাদেশের দৈনিক পত্রিকা প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে ১৯২৩ সালের অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা করা পর আজ তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশে সাংবাদিকতার ক্ষেত্র আরো সংকুচিত হয়ে আসবে বলে অনেক মনে করেন।

 

The post বাংলাদেশে সাংবাদিকতার ক্ষেত্র: বিবিসি বাংলার লাইভ first appeared on KG | Kaberi Gayen.

]]>
https://kaberigayen.com/%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6%e0%a7%87-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%95%e0%a7%8d/feed/ 0
‘Equal Property Right’: Much Ado about Nothing https://kaberigayen.com/equal-property-right-much-ado-about-nothing/ https://kaberigayen.com/equal-property-right-much-ado-about-nothing/#respond Sat, 26 Feb 2022 10:56:29 +0000 https://kaberigayen.com/?p=7564 Apparently it seems that the only opposition force to the equal rights to property for women are religious groups. However, if we look carefully, we will see that our patriarchal politics vehemently oppose this demand.

The post ‘Equal Property Right’: Much Ado about Nothing first appeared on KG | Kaberi Gayen.

]]>

The present government declared the draft ‘Jatiyo Naree Unnoyon Neeti 2011’ (National Women Development Policy 20011) on March 8, 2011. The alleged aim is ‘to improve the socio-economic condition of women in Bangladesh’. The cabinet has approved this new draft policy. From the very day of the declaration, religion-based political parties not only boycotted the policy but also declared resistance against it, claiming that it had given men and women equal inheritance rights. All the religion-based groups and parties, including Jamaat-e-Islami, termed the policy ‘anti-Quran’ and proclaimed that the government would fall if the policy is enacted. In the gathering organised by the Islami Ain Bastabayan Committee on March 8, the day of the declaration, Mufti Amini, leader of a faction of the Islami Oikya Jote, called for a strike against the policy on April 4. Besides the anti-government Islamic groups and parties, pro-government religious groups and parties also opposed the policy. The Islami Oikyo Jote, lead by Misbahur Rahman, which is part of the Grand Alliance government, opposed this policy. In an interview with the national daily, Samakal, on March 8, he said, “The Grand Alliance made a clear commitment not to develop any law that goes against Quran and Sunnah before the election. Now if they develop a women’s policy that goes against the Quran, the why should we accept it?”.

The reaction to this threatening activity was neither positive for women activists who have forever demanded equal property rights, nor for the women of this country in general. The government was unsteady about its decision from the first hour. Right after the declaration of the women’s policy, Mahbub Alam Hanif, the Joint Secretary of Awami League, said in an interview, “The government has not brought any change to the Muslim property distribution law. The Government has simply stated women’s right to property through inheritance that Islam has given to both men and women.” Afterwards, Dr Shirin Sharmin Chowdhury, the honourable state minister to the Ministry of Women and Children Affairs, and the honourable Prime Minister Sheikh Hasina herself, assured that no law going against the Quran would be enacted. The latest update is that while addressing about 150 leaders of the Bangladesh Jamiatul Modarasin, a pro-Awami League platform of Madrasa teachers, on April 20, the Prime Minister re-assured that her government has already removed all contradictions regarding religion from the National Women Development Policy to make it confusion free. In her own words, “After examining the Quran, especially Surah An-Nisa, we have removed existing contradictions from the policy” (The Daily Star, April 21, 2011). However, despite reiterated assurances from the Prime Minister that nothing would be done against the scriptures, Amini’s party, under the banner of Islamic Law Implementation Committee, has announced country-wide protests on May 6, 7, 11, 12, 16 and 22 at divisional headquarters and in the capital on May 27, against the implementation of the Women and Education Policy. Jamaat-e-Islami will also hold a country-wide demonstration on May 7 demanding scrapping of certain provisions of the policy.

The clause in dispute

On March 9, the day after the declaration, a very misleading headline was published in many of the national dailies, that the National Women Policy 2011 has been declared with the provision of equal property inheritance rights for men and women. The headlines were so convincing that many, even conscious citizens and women activists of the country, thought these headlines were genuine. It took a while to understand that the policy did not provide equal property rights, at least till the policy reached our hands. So which is the clause that has been questioned?

In clause 25(2), the section that deals with the economic development aspect of the 2011 policy, it is stated that women would be given full control over the wealth that they have obtained so far through earnings, inheritance, loan, land and market management. Awami League, the main party of the present Grand Alliance Government (Mohajote Sarkar), made the commitment in their election manifesto of 2008 to fully implement the Women Development Policy 1997. In section 7.2 of the 1997 policy, it was stated that “Women would be given full and equal rights, and control over earnings, inheritance, wealth, loan, land and wealth earned through technology and market management, and new laws would be enacted to achieve this goal.” Thus the Women Development Policy 2011 is clearly a step backwards from the Women Development Policy of 1997, at least in terms of the right to inherited property. According to the newly proposed policy, if enacted and implemented properly, women would get the control over their property, only if it is already allowed by religious laws. This is far from the equal property right of 1997.

Awami League thus did not keep its promise from the election manifesto for women of this country. The question that arises then is why there is so much frenzy around the issue?

We get three different views about the policy. The Government says that the policy is a progressive move to ensure women’s rights but not conflicting with the Quran; the religious groups and parties which claim that it is anti-Islamic and should be scrapped; and there exists a third force compiled of women activists and the female wings of some leftist parties who refuse this policy on the grounds that it has not given equal property rights to women, which in turn betrays the commitment that Awami League made in its election manifesto. The third force even thinks that with the amendments to the 1997 policy in relation to the inheritance law and the comments repeatedly made by the Prime Minister, there is very little difference, if any, between the position of the government and that of Amini’s.

It’s all about the property rights

Apparently it seems that the only opposition force to the equal rights to property for women are religious groups. However, if we look carefully, we will see that our patriarchal politics vehemently oppose this demand. We saw just the religious groups on the streets. Sometimes I wonder what difference it would have made if these religious groups had not come to the streets. Clause 7.2 that included equal property inheritance rights for women in the 1997 policy was an outcome of the long-lived demands of Bangladeshi women. Although the then Awami League government had enough time (1997-2001) to implement the policy and there was no manifested agitation by any religious groups, they did not take any measure to pass a law nor implement a policy. Then out came the second draft Women Development Policy in 2004. The BNP-Jamaat alliance government had only dropped the section on equal property inheritance rights and the right to land. We got the third draft Women Development Policy in 2008. In the 9.13 clause of this draft policy, right to equal property through inheritance and the right to land were dropped and a new phrase was adopted that would give women equal opportunity and control over wealth earned through the ‘management of market’. What was interesting was that the religious groups came out on the streets and the then caretaker government appointed a committee comprised of Alems (Islamic scholars) to scrutinise the policy. They gave their verdict on pen-and-paper and had a showdown on the streets; the policy eventually went up in smoke. This is the fourth time we are getting a draft policy and this too has dropped the provision of equal property rights, with the Prime Minister repeatedly announcing that her party will never enact any law or adopt a policy which conflicts with the Quran and Sunnah. BNP has not yet expressed its position on the policy, nor has any other party, officially. It is interesting that we never learned about the position of any political parties on the consecutive four draft women policies. When the BNP-Jamaat alliance government dropped the whole thing about the inheritance of property act, Awami League was not on the streets, neither was the Jatiya Party. At the time of the caretaker government, no party expressed their official position about the policy. So, what we find is a spiral of silence from all the political parties regarding women’s equal right to property. According to the theory of representation by Stuart Hall, absence tells a lot, sometimes it may even tell a lot more than what is seen through bare eyes. Should we read this silence as not a single party wanting to resolve this fiasco of equal property rights? Throughout the policy there are lots of clauses which are clearly conflicting to religious doctrine, but all the time we see the agitated religious mob on the streets demanding the ban of only one clause, the one dealing with equal property rights. Thus the declarers of women’s policies, the oh so silent political groups and the ones making a frenzy out of it all are simply strengthening the tide of no women’s right to equal property. In fact, why should patriarchy bother at all for equal property rights for women if they can enjoy the benefit of the discriminatory law in the name of religion or anything else?

Amended religious laws and the discourse of ‘no’ to equal property rights

Those of the opinion that this policy is anti-religious or those who are assuring that there is nothing anti-religious in the policy will not endorse any law against religion; it is necessary for both parties to realise that many religious doctrines have changed over the course of time. Although the provision of a woman state-head is not allowed in religion, we are proud to have had female prime ministers. The religion-based parties are also making alliances with women-led political parties. Even the leaders from the biggest Islamic party of Bangladesh had taken their oaths in the cabinet led by a woman. According to the 1937 Muslim Personal Law (Shariah Law), acted out in British-India, no minor would get the property of their maternal or paternal grandfathers if their parents died before the grandparents. But according to the clause number 4 of the Islamic Family Law of 1961, the children get the property from their grandparents even if their parents are alive. According to the religious law, any Muslim male can have four wives at a time, but according to clause 6 of the Muslim Family Law 1961, if anybody marries for the second time without the permission of the Salish Parishad, they may be imprisoned or fined or both. Hilla marriage has not been banned but it has been made difficult in clause number 7(6) of the 1961 law. According to the ‘Muslim Divorce Law 1939’, women are now allowed to divorce their husband if they are absent for more than four years, which was not the provision in the religious law. The Shufa Law of the Islamic provision has been replaced by the State Acquisition Law 1950. Besides, we are obeying many civil laws in our everyday personal and state matters, which do not have even a distant relationship with the religious laws. There is no law upholding the action of cutting one’s hand if she/he steals; neither is there any provision of taking two women’s evidence for one man’s evidence in our civil court. Thus it is possible to present numerous examples of existing laws that are not only incompatible but also conflicting with religious laws. Many Olama-Mashayekhs (religious leaders) give the fatwa that taking photos is haram and kufri, but they themselves have to be photographed obeying the passport laws when they wish to go on Hajj (Islamic pilgrimage). A slogan has been popularised for the last two decades, “Two children are enough, either boys or girls”. Attempts are even being made to persuade parents to be happy with one child. In this context, what might be the cause of not abolishing discrepancy in the distribution of property through inheritance? It is unfortunate that we see frenzies amongst religious zealots when the matter of a positive move for the betterment of women’s lives is brought up, which reaches the climax if there is a matter of property involved.

The Hindu community is also quite silent about this policy. Though Christian women get equal property rights, Hindu women do not get any access to inheritance in Bangladesh. Thus Hindu women of this country really do not gain anything with the proposed policy. If they do not have any access to inherited property, what is the benefit of having the full control on that property? But the equal property right has been established for Hindu women in India and the Hindu state of Nepal after amending the religious laws. Equal property right has been adopted even in Muslim countries like Egypt, Tunisia and Senegal.

Image by Palash Khan, The Daily Star

Bangladesh is still the People’s Republic of Bangladesh

Bangladesh is not a country based on religious premises only. Rather, as the People’s Republic of Bangladesh, most of the laws are laid on democratic, secular principles. More than 90% of laws that we deal with in our everyday life, are secular and uniform. Equal rights for all men and women in every sphere of life has been guaranteed in clauses 10, 19 (1,2), 27, 28 (1,2,3,4), 29 (1, 2, 3-A) of our Constitution. There is no religious difference in the civil and criminal laws, and the same could also be done to the family laws. Family laws could be brought under the Uniform Civil Code to wipe out the differences.

If the government is really honest about women’s issues, it would revive the Women Development Policy of 1997, particularly clause 7.2. And, we, the people, who claim to be women-friendly, need to be effectual in the field. Fourteen years have passed since the policy of 1997, but our politics has been unable to prepare the people to accept this change. So, we had to retreat repeatedly from the position declared so long ago. It is the prime time for the government to rethink whether they should surrender to the demands of the religious fundamentalist forces or take initiatives to prepare people’s mentalities and join the people themselves in the fight for our rights as has been promised by the Constitution. Some of those initiatives may include communicating the message through mass media for awareness building and arranging for widespread rallies and meetings at divisional and district headquarters. These rallies and meetings should include the general public as well as members of political parties and civil societies to change the norms and establish new ones. Popular media personalities and celebrities may help spread this message through mass media. School teachers and opinion leaders, those at grass-root level, should be targeted to spread the message throughout the rural communities. Also popular folk media like jatra, putul naach (puppet show), kobi gaan may be utilised in villages.

It is a political struggle and it is not a choice anymore to create much ado about nothing.

Feature Image: The Daily Star

The post ‘Equal Property Right’: Much Ado about Nothing first appeared on KG | Kaberi Gayen.

]]>
https://kaberigayen.com/equal-property-right-much-ado-about-nothing/feed/ 0
Sustaining a Regime of Low Fertility https://kaberigayen.com/sustaining-a-regime-of-low-fertility/ https://kaberigayen.com/sustaining-a-regime-of-low-fertility/#respond Sat, 26 Feb 2022 10:21:15 +0000 https://kaberigayen.com/?p=7562 This paper offers a supplementary explanation that mass media facilitated the diffusion of contraceptive knowledge, leading to an ideological shift to value small families, and social networks especially reciprocal encouragement about contraception practice among network members has helped to sustain this shift.

The post Sustaining a Regime of Low Fertility first appeared on KG | Kaberi Gayen.

]]>
In several developing countries, notably Bangladesh, fertility rates fell dramatically in the later part of the twentieth century and have sustained at low levels. Traditional socioeconomic models do not fully explain the profile of fertility fall especially for rural areas where well-being has not sufficiently improved. This paper offers a supplementary explanation that mass media facilitated the diffusion of contraceptive knowledge, leading to an ideological shift to value small families, and social networks especially reciprocal encouragement about contraception practice among network members has helped to sustain this shift. To investigate the role of encouragement of immediate network members in their family planning behavior, data was gathered using an interview-based survey of 694 women of fertile ages in seven rural Bangladeshi villages. Findings give support to the importance of social networks in maintaining achieved low fertility levels. When there is strong reciprocal encouragement of network members about practicing contraception then using contraception is more likely. This we propose may offer an explanation to why a low fertility regime has endured in Bangladesh. From this study policy recommendations are made to sustain low fertility.

The post Sustaining a Regime of Low Fertility first appeared on KG | Kaberi Gayen.

]]>
https://kaberigayen.com/sustaining-a-regime-of-low-fertility/feed/ 0
Modelling the influence of communication on fertility behaviour of women in rural Bangladesh https://kaberigayen.com/modelling-the-influence-of-communication-on-fertility-behaviour-of-women-in-rural-bangladesh/ https://kaberigayen.com/modelling-the-influence-of-communication-on-fertility-behaviour-of-women-in-rural-bangladesh/#respond Sat, 26 Feb 2022 10:04:16 +0000 https://kaberigayen.com/?p=7556 In this thesis it is postulated that current fertility behaviour is a manifestation of ideational change, which has occurred through mass media and interpersonal communication channels.

The post Modelling the influence of communication on fertility behaviour of women in rural Bangladesh first appeared on KG | Kaberi Gayen.

]]>
The total fertility rate in Bangladesh declined from 6.3 children per women in 1975 to 3.3 in 1997-1999. This decline of 48 per cent over a 25-year period occurred without a substantial improvement in socio-economic status, health conditions and other factors thought to be essential for fertility decline. In this thesis it is postulated that current fertility behaviour is a manifestation of ideational change, which has occurred through mass media and interpersonal communication channels. To investigate the influence of communication on fertility behaviour and to control for demographic and socioeconomic and cultural variables, 724 married women of reptoductive age were interviewed from six rural villages of the six administrative divisions of Bangladesh. Another village was surveyed to compare the influence of religion. Data were collected in a full network basis in that one currently married woman with at least one child from each household of the entire village was interviewed. Sociometric data along with socio-economic-cultural and family planning practice data were collected using a structured questionnaire. The data have been analysed using statistical methods to construct models of factors, which influence the total number of children a woman has and those that determine the likelihood that a woman practices family planning. The main influencing variables to explain the total number of children were found to be wife’s age, age at first child bom, number of family members, demand for male children, demand for female children, death of male children, place of giving birth, housing score, religion, equipment score, land property, FWA and information score. Whereas the influencing variables to explain the family planning practice were demand for male children, death of male children and variables connected with communication such as degree of interpersonal communication, mass media exposure, husband, Family Welfare Assistants (FWAs) and frequency of discussion with FWAs. Communication variables, especially interpersonal communication, were found to be most important in explaining family planning practice. More particularly, the dominant source of general information is relatives and friends. FWAs followed by friends and relatives are the main source of family planning information that along with husband influence fertility decisions. Hence, there was a need to ftu-ther understand the web of interactions among individuals, peer groups and opinion leaders using social network analysis. The web of communication links in which an individual exists and takes fertility decision was then modeled with the collected sociometric data. To do this, three matrices were constructed to reflect any communication link, the strength of these links and approval of family planning. Various centrality measures (in-degree, out-degree, betweenness and power), clique patterns and actors positions in the network were produced and analysed using Ucinet-6. This revealed that the actors who were not strongly connected or exist in the periphery of this web tended not to practice family planning. Also it was found that actors who overlap more than one clique are more likely to practice family planning. Variables created from the centrality measures were then added to the regression models for the total number of children and the use of family planning. In both the cases sociometric variables were found significant which ftirther enhanced the explanation of fertility behaviour of the women in rural Bangladesh. Using Structural Equation Models the direct and indirect effects of these variables were determined. Demographic, socio-economic-cultural variables were more directly associated in explaining total number of children while communication variables were directly associated in explaining family planning use, and family planning practice has a direct influence on the number of children born. Thus, as communication directly influences family planning practice it has an indirect influence on the Total Fertility Rate. From this work it is recommended that the service that was provided by the FWAs be reestablished and strengthened, husbands should be targeted in family planning motivation programmes and male contraceptive methods should be promoted. Also more motivational programmes should be incorporated in family planning programmes to create a positive image of female children and the extent of the social interaction among village women should be increased.

The post Modelling the influence of communication on fertility behaviour of women in rural Bangladesh first appeared on KG | Kaberi Gayen.

]]>
https://kaberigayen.com/modelling-the-influence-of-communication-on-fertility-behaviour-of-women-in-rural-bangladesh/feed/ 0
Cohesive subgroups and drug user networks in Dhaka City, Bangladesh https://kaberigayen.com/women-war-and-cinema-construction-of-women-in-the-liberation-war-films-of-bangladesh/ https://kaberigayen.com/women-war-and-cinema-construction-of-women-in-the-liberation-war-films-of-bangladesh/#respond Sat, 26 Feb 2022 09:49:22 +0000 https://kaberigayen.com/?p=7550 The purpose of this paper was to explore group drug taking behaviour in a slum area of Dhaka, Bangladesh. We set out to examine the relationships between those who met, at least weekly, to take illegal drugs together, and how these relationships might shape their drug behaviour.

The post Cohesive subgroups and drug user networks in Dhaka City, Bangladesh first appeared on KG | Kaberi Gayen.

]]>
The purpose of this paper was to explore group drug taking behaviour in a slum area of Dhaka, Bangladesh. We set out to examine the relationships between those who met, at least weekly, to take illegal drugs together, and how these relationships might shape their drug behaviour. Sociometric and behavioural data were collected using questionnaires via semi-structured interviews. We found that the likelihood of injecting drugs and sharing needles increased with age, duration of group membership and length of drug use. Drug users were classified into two clusters: one was more cohesive and comprised longer-term users, who were more likely to inject drugs and had poorer physical and mental health. The other cluster comprised younger, better educated members who were more transient, less cohesive, less likely to inject drugs and had better health. Qualitative data suggested that members of the first cluster were less accepting of outsiders and confirmed more to group norms. We conclude that emotionally bonded cohesive subgroups acquire norms, which reinforce problematic drug-using behaviour. Thus, health initiatives need to consider group relationships and norms and those initiatives which work with networks may be more effective and more appropriate for low-income countries.

The post Cohesive subgroups and drug user networks in Dhaka City, Bangladesh first appeared on KG | Kaberi Gayen.

]]>
https://kaberigayen.com/women-war-and-cinema-construction-of-women-in-the-liberation-war-films-of-bangladesh/feed/ 0
Communication and contraception in rural Bangladesh https://kaberigayen.com/communication-and-contraception-in-rural-bangladesh/ https://kaberigayen.com/communication-and-contraception-in-rural-bangladesh/#respond Sat, 26 Feb 2022 09:43:11 +0000 https://kaberigayen.com/?p=7548 This paper examines the association of communication in explaining the decision of women in rural Bangladesh to use or not to use contraception.

The post Communication and contraception in rural Bangladesh first appeared on KG | Kaberi Gayen.

]]>
This paper examines the association of communication in explaining the decision of women in rural Bangladesh to use or not to use contraception. Using survey data from villages in Bangladesh, we found that communication is an important influence on the ideational change for a smaller family norm and the practice of contraception. This is evident even when socioeconomic and cultural variables are controlled for. We recommend that to foster the use of contraception, communication factors should be given greater emphasis, especially to target husbands in the family planning program and to improve the image of female children.

The post Communication and contraception in rural Bangladesh first appeared on KG | Kaberi Gayen.

]]>
https://kaberigayen.com/communication-and-contraception-in-rural-bangladesh/feed/ 0