Sexual Harassment - KG | Kaberi Gayen https://kaberigayen.com Fri, 11 Mar 2022 15:36:54 +0000 en-US hourly 1 https://wordpress.org/?v=6.5.2 https://kaberigayen.com/wp-content/uploads/2021/12/favicon_favicon-light.svg Sexual Harassment - KG | Kaberi Gayen https://kaberigayen.com 32 32 তনু-রিসা-আফসানা-খাদিজা আর সেই শিশুটি https://kaberigayen.com/%e0%a6%a4%e0%a6%a8%e0%a7%81-%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%b8%e0%a6%be-%e0%a6%86%e0%a6%ab%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a6%be-%e0%a6%96%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a6%bf%e0%a6%9c%e0%a6%be-%e0%a6%86%e0%a6%b0/ https://kaberigayen.com/%e0%a6%a4%e0%a6%a8%e0%a7%81-%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%b8%e0%a6%be-%e0%a6%86%e0%a6%ab%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a6%be-%e0%a6%96%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a6%bf%e0%a6%9c%e0%a6%be-%e0%a6%86%e0%a6%b0/#respond Wed, 09 Mar 2022 03:55:13 +0000 https://kaberigayen.com/?p=7951 জানা কথা যে এই হত্যাকাণ্ডের অন্তহীন তদন্ত শুরু হবে এবং এই নির্বিবাদী শিক্ষকের হত্যাকাণ্ডকে হয় ব্যক্তিগত কারণে বলে চালিয়ে দেওয়া হবে অথবা ধামাচাপা পড়বে। ফের রক্তাক্ত পড়ে থাকতে দেখব অন্য কোনো শিক্ষক, লেখক বা শিল্পীকে। অব্যাহত খুন দেখতে দেখতে এসব হত্যাকাণ্ড আমাদের আর আলোড়িত করে না।

The post তনু-রিসা-আফসানা-খাদিজা আর সেই শিশুটি first appeared on KG | Kaberi Gayen.

]]>

ণমাধ্যমে আলোচিত সাম্প্রতিকতম ঘটনা দিয়েই শুরু করছি। পাঁচ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ করেছেন পঁয়তাল্লিশোর্ধ্ব এক ব্যক্তি ও তাঁর সহযোগী। ঘটনাটি ঘটেছে দিনাজপুরের এক ছোট শহর পার্বতীপুরে। গত সপ্তাহে শিশুটিকে যখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করা হয়, তখন তাকে দেখে আঁতকে ওঠেন কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা। শিশুটির গাল, গলা, হাত, পায়ে ধারালো অস্ত্রের দাগ। ঊরুতে সিগারেটের ছ্যাঁকা। মাথায় ক্ষত। অচেতন শিশুটিকে ঠিক কীভাবে চিকিৎসা দেবেন, ভেবে উঠতে পারছিলেন না চিকিৎসকেরা। মেয়েটি অচেতন, তবু শুনেছি বেঁচে আছে। কী আশ্চর্য তার বেঁচে থাকার শক্তি!

বেঁচে উঠছেন মাত্র কয়েক দিন আগে জীবন-মৃত্যুর দোলাচলে অচেতন পড়ে থাকা খাদিজা আক্তার নার্গিস। পত্রিকার পাতাজুড়ে এসেছে সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী খাদিজাকে কোপানোর খবর। সংবাদপত্র লিখেছে, ‘প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে খাদিজাকে কুপিয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসম্পাদক বদরুল আলম। বদরুল ছাত্রলীগের নেতা বলে এই দুঃসাহস করেছেন, নাকি এটি কেবলই একজন প্রেম-প্রত্যাখ্যাত যুবকের প্রতিহিংসা চরিতার্থতা—এসব নিয়ে যখন গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক তোলপাড় চলছে, তখন মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করে জীবনে ফিরছেন তিনি।
মিরপুর সাইক পলিটেকনিকের শিক্ষার্থী ও ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী আফসানা ফেরদৌস অবশ্য বাঁচতে পারেননি। পত্রিকায় পড়েছিলাম, পুলিশ হাসপাতাল এলাকার সিসি টিভি ফুটেজ জব্দ করেছে। এই ফুটেজের সূত্র ধরেই নাকি মামলাটির ফয়সালা করা যাবে। অথচ অভিযোগ রয়েছে, সন্দেহভাজন হিসেবে তেজগাঁও কলেজের ছাত্রলীগের যে নেতার নাম বলা হচ্ছে, তার পরিবার থেকে কখনো টেলিফোনে সমঝোতার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে, কখনো–বা অজানা ফোন থেকে ‘বাড়াবাড়ি না করা’র হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তারপর কী হলো, সেই উত্তর পাওয়ার আশা ক্ষীণ।

ঢাকার উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিসাকে স্কুলের সামনের পদচারী-সেতুতে যে যুবক ছুরিকাঘাত করেছে, তার দোকান থেকে রিসা পোশাক বানিয়েছিল। ছুরিকাঘাত করার তিন দিন পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিসার মৃত্যু হয়। প্রাণবন্ত এক কিশোরীকে কেউ চাইলেই বিরক্ত করতে পারে, এবং প্রত্যাখ্যাত হলে খুনও করতে পারে! পত্রিকায় পড়েছি, সন্দেহভাজন ওবায়েদকে ধরিয়ে দিয়েছেন এক মাংসবিক্রেতা।
কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর মৃতদেহ সেনানিবাস এলাকায় পাওয়ার পরে দেশব্যাপী যে প্রতিবাদ উঠেছিল, তাতে আশাবাদী হয়েছিলাম, এবার হয়তো কিছু একটা হবে। কিন্তু না, ধর্ষিত হয়েছিল নাকি হয়নি, তনুর মৃতদেহ থেকে এই আলামত পরীক্ষার চেষ্টা ছাড়া তেমন কোনো ফলাফল আজও পাওয়া যায়নি। সেনাবাহিনী আমাদের নিরাপত্তার প্রতীক। সেনা এলাকায় ঘটে যাওয়া এমন ঘটনার বিচার হওয়াটা প্রতীকী অর্থেও ছিল অত্যন্ত কাঙ্ক্ষিত।

দুই.
গণমাধ্যমের তত্ত্ব বলে, কোনো ঘটনার পুনরাবৃত্তি সেই বিষয় সম্পর্কে মানুষের সংবেদনশীলতাকে ভোঁতা বানিয়ে ফেলে। যেমন টেলিভিশনে যুদ্ধের ছবি দেখতে দেখতে যুদ্ধ সম্পর্কে আমাদের সংবেদনশীলতা আর কাজ করে না। এসব নির্যাতন দূরের কোনো বিষয় নয়। ঘরে ঘরে তনু-রিসা-আফসানা-খাদিজা আর মেয়েশিশুরা রয়েছে। কাজেই অন্য যে কারণটি জোরালো বলে মনে হয় তা হলো, কোথাও সাহায্য নেই ধরে নিয়ে কেবল নিজের ঘরের মেয়েটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দিকেই সবার মনোযোগ নিবদ্ধ। রয়েছে শ্রেণি প্রশ্ন। এ ধরনের নির্যাতন প্রান্তিক নারী বা শিশুর ক্ষেত্রেই মূলত ঘটেছে এতকাল।

তনু-রিসা-আফসানা-খাদিজাদের মতো মধ্যবিত্ত শিক্ষিত পরিবারের মেয়েদের ওপর সরাসরি আঘাত অপেক্ষাকৃত নতুন। প্রতিবাদ কেমন হলে কার্যকর হবে, সেটিও বোঝা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে।

তিন.
বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল অন্তত দুই লাখ নারীর নির্যাতন অভিজ্ঞতার ওপর দাঁড়িয়ে। যে স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা হেঁটে চলে বেড়াই, নিশ্বাস নিই, কবিতা পড়ি, জাতীয় সংগীত গাই, সেই দেশের নির্মাণে এসব নারীর অংশীদারত্ব শুধু নয়, ভয়াবহ আত্মত্যাগ রয়েছে। পুরুষের যুদ্ধ শেষ হয়েছিল আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে। বাড়ি ফিরেছিলেন তাঁরা বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে। সম্মান পেয়েছেন, ক্ষমতা পেয়েছেন। সব মুক্তিযোদ্ধার প্রাপ্য সম্মান নিশ্চিত করা যায়নি সত্য, তবে তাঁদের নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত। কিন্তু যুদ্ধ শেষে নির্যাতনের শিকার নারীরা সম্মান পাননি। অনেকেই আত্মহত্যা করেছেন। হারিয়ে গেছেন। অনেকে ইতিহাসের আগুন বুকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হয়েছেন। অনেকের যুদ্ধ আজও শেষ হয়নি। আজ যখন সফলভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন হচ্ছে এবং রায় কার্যকর হচ্ছে, সেই যুদ্ধাপরাধীদের ভয়াবহ নির্যাতন ইতিহাসের মধ্যে বারবারই নারী নির্যাতনের কথাটি অনিবার্য সাক্ষ্য হিসেবে উঠে আসছে। এ দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস এবং নারীর আত্মত্যাগ আর নির্যাতনের ইতিহাসকে তাই আলাদাভাবে দেখার সুযোগ নেই। অথচ মুক্তিযুদ্ধের ভেতর থেকে বের হয়ে আসা দেশে নারীর জন্য মুক্ত পরিসর আজও নির্মিত হলো না।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের পোস্টারে মুদ্রিত হয়েছে, ‘বাংলার মায়েরা মেয়েরা সকলেই মুক্তিযোদ্ধা’। সেসব মুক্তিযোদ্ধা নারীর উত্তরসূরি মেয়েরা আজও নিরাপদ নয় স্কুলে যাওয়ার পথে, রাস্তায়, শিক্ষাঙ্গনে, পরিবারে, বর্ষবরণে টিএসসিতে, বইমেলায়, সিনেমা হলে, বাজারে, প্রেমিকের কাছে, সাইবার পরিসরে, সমতলে কিংবা পাহাড়ে। ধর্ষণ আর খুন যেন প্রতিকারহীন পরাভব হয়ে উঠছে যেকোনো নারীর জন্য, বিশেষভাবে মেয়েশিশুর জন্য।

প্রথম আলো, ২০১৬
চার.
প্রশ্ন হলো, সরকার কী করছে? রাজনৈতিক দলগুলো কী করছে? সরকারি কার্যক্রম কি কেবল কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সেই ঘটনার তদন্ত-আশ্বাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে, নাকি মেয়েশিশুদের নিরাপত্তার জন্য কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে? সব ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। কিন্তু এটিই একমাত্র চাওয়া নয়। জীবন ও সম্ভাবনার এহেন অপমৃত্যুর পাশে কোনো শাস্তিই যথেষ্ট নয়। শাস্তির পাশাপাশি মেয়েদের জন্য জীবনের সব স্তরে নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তোলার কার্যকর সক্রিয়তা কাম্য। গ্রামের কত মেয়ের শিক্ষাজীবন শেষ হয়ে যায় শুধু স্কুলপথের নিরাপত্তাহীনতার জন্য! কত হাজারো মেয়ের বাল্যবিবাহ হয় শুধু এই নিরাপত্তাহীনতার ভীতি থেকে!
ছেলেশিশু বড় হয় আর তার বিচরণ-পরিধি বাড়তে থাকে, মেয়েশিশু বড় হয় আর তার নিরাপত্তাহীনতা ভয়ের চাদর হয়ে ঘিরে থাকে তাকে। মেয়েশিশুদের এই নিরাপত্তাহীনতায় বাঁচতে বাধ্য হওয়া তাদের মৌলিক মানবাধিকারের পরিপন্থী। সরকার ও সব রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে মেয়েশিশুদের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য রাজনৈতিক কর্মসূচি এবং তার বাস্তবায়ন দেখতে চাই। মেয়েশিশুদের নিরাপত্তার বিষয়টি তাদের জীবন বিকাশের পূর্বশর্ত। তাদের অরক্ষিত রেখে কোনো উন্নয়ন সম্ভব বলে বিশ্বাস করি না। প্রয়োজনে জাতীয় কনভেনশন ডাকা হোক করণীয় নির্ধারণের জন্য। এই অবস্থার অবসান হতেই হবে।

তনু-রিসা-আফসানা-খাদিজা আর সেই পাঁচ বছরের মেয়েটির ঘটনা এই দেশের ভয়াবহ নারী নির্যাতনের কয়েকটি প্রকাশিত উদাহরণমাত্র। এমন অসংখ্য মেয়েশিশুর নির্যাতন-অভিজ্ঞতা অপ্রকাশিত। অত্যন্ত ভারী হয়ে ওঠা এসব নির্যাতন-অভিজ্ঞতার ওপর এখন এ দেশের সব মেয়েশিশুর নির্বিঘ্নে চলাফেরার পরিবেশ নিশ্চিত হোক। এ এক যুদ্ধ—এই যুদ্ধ প্রসঙ্গে দেশ কী ভাবছে, আদৌ ভাবছে কি না, সেই প্রশ্নে থমকে আছে আমাদের আগামী।

The post তনু-রিসা-আফসানা-খাদিজা আর সেই শিশুটি first appeared on KG | Kaberi Gayen.

]]>
https://kaberigayen.com/%e0%a6%a4%e0%a6%a8%e0%a7%81-%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%b8%e0%a6%be-%e0%a6%86%e0%a6%ab%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a6%be-%e0%a6%96%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a6%bf%e0%a6%9c%e0%a6%be-%e0%a6%86%e0%a6%b0/feed/ 0
ধর্ষণ কি অপ্রতিরোধ্য? https://kaberigayen.com/%e0%a6%a7%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%b7%e0%a6%a3-%e0%a6%95%e0%a6%bf-%e0%a6%85%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%b0%e0%a7%87%e0%a6%be%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af/ https://kaberigayen.com/%e0%a6%a7%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%b7%e0%a6%a3-%e0%a6%95%e0%a6%bf-%e0%a6%85%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%b0%e0%a7%87%e0%a6%be%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af/#respond Sun, 06 Mar 2022 07:43:18 +0000 https://kaberigayen.com/?p=7913 ধর্ষণ অপ্রতিরোধ্য নয়, অপ্রতিরোধ্য হলো অন্যায়ের বিরুদ্ধে মানুষের জাগরণ। এই জনপদে ধর্ষণ সব সময়েই ছিল, খবরে কম আসত। ধর্ষণের খবরগুলো প্রকাশিত হচ্ছে, এটি প্রথম প্রতিরোধ। ধর্ষিত নারী রুখে দাঁড়াচ্ছেন, এটি পরবর্তী প্রতিরোধ। নারী-পুরুষনির্বিশেষে সোচ্চার হচ্ছেন, এটিই চূড়ান্ত প্রতিরোধ। ভেঙে যাচ্ছে ধর্ষণের অপ্রতিরোধ্যতার মিথ।

The post ধর্ষণ কি অপ্রতিরোধ্য? first appeared on KG | Kaberi Gayen.

]]>

বাংলা বর্ষবরণে টিএসসিতে নারী নির্যাতন ও মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলের শিশু নির্যাতনের ঘটনা থেকে শুরু হয়ে মাস খানেক ধরে যেন ধর্ষণ-সংবাদের সুনামি চলছে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বাসে-মিনিবাসে-ট্রাকে-স্কুলে-মাঠে-পাহাড়ে ধর্ষণ-সংবাদ পাচ্ছি। গত কয়েক দিনের কিছু সংবাদ শিরোনাম: ঠাকুরগাঁওয়ে তরুণীকে ধর্ষণের পরে হত্যা, কিশোরগঞ্জে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী ধর্ষিত, পিরোজপুরে ছেলের বউকে ধর্ষণের অভিযোগে শ্বশুরের বিরুদ্ধে মামলা, মিরপুরে পাঁচ বছরের এক স্কুলশিশুকে ধর্ষণের দায়ে শিক্ষকের যাবজ্জীবন, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানির পরে ছাত্রীকে জুতাপেটা, মসজিদে আরবি পড়তে গিয়ে ইমাম কর্তৃক ধর্ষিত তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। আদিবাসী নারী, প্রতিবন্ধী নারী, চার বছর বয়সী শিশু থেকে শুরু করে ৫৫ বছরের নারী, এমনকি মৃত শিশুও। এসব ধর্ষণ-সংবাদ, ধর্ষকদের ব্যাপারে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারার ব্যর্থতা এবং নতুনতর ধর্ষণ-সংবাদের মধ্য দিয়ে সমাজে প্রচলিত ধর্ষণের অপ্রতিরোধ্যতার মিথটিই যেন শক্তিশালী হচ্ছে। আমি শুধু বুঝতে চেষ্টা করছি, ধর্ষণ কি সত্যিই অপ্রতিরোধ্য?

দুই.
ধর্ষণ বিষয়ে একাডেমিক পড়াশোনা করতে গিয়ে একটি বিষয় পরিষ্কার হয়েছে, ধর্ষণ জৈবিক নয়, বরং সাংস্কৃতিক প্রশ্রয়ে নারীর বিরুদ্ধে সংঘটিত পুরুষতান্ত্রিক সহিংস অপরাধ। ১৯৬৯ সালে ১৫৬টি সমাজে ধর্ষণপ্রবণতার ওপর গবেষণা করে নৃতাত্ত্বিক প্যাগি স্যান্ডি দেখান যে ধর্ষণ কোনো অবশ্যম্ভাবী বিষয় নয়, বরং তাঁর গবেষণাধীন ৪৭ শতাংশ সমাজে ধর্ষণ নেই। ধর্ষণমুক্ত মডেল সমাজ হিসেবে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার আশান্তি, মবুতি পিগমি সমাজের উদাহরণ টেনেছেন। ধর্ষণমুক্ত সমাজে নারী-পুরুষ মানুষ হিসেবে সমান মর্যাদাবান, অর্থনৈতিক সাম্য আছে, আছে সামাজিক স্থিরতা, যেখানে পুরুষের দৈহিক শক্তিকে অপরিহার্য মনে করার মিথ প্রচলিত নয়। আশান্তি সমাজে নারীরা প্রভাবশালী সদস্য, সামাজিক ও ধর্মীয় জীবনে নারী পুরুষের মতোই সমানভাবে অংশ নেন। মবুতি সমাজের কোনো সদস্যই কারও ওপর প্রভুত্ব করে না, এমনকি জঙ্গলের ওপরেও না। নারীর সন্তানধারণ ও লালন করার ক্ষমতাকে দেওয়া হয় সর্বোচ্চ সম্মান। মূলত মাতৃতান্ত্রিক সমাজে ধর্ষণের ধারণাই অনুপস্থিত, যেমন সাম্প্রতিক সময়ে গারো নারী ধর্ষণের প্রতিবাদ সমাবেশে সঞ্জীব দ্রং জানিয়েছেন, গারো ভাষায় ধর্ষণ শব্দটি নেই।

পাশাপাশি ধর্ষণপ্রবণ সমাজের বৈশিষ্ট্য হলো সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়া, শৈশব থেকেই পুরুষদের উগ্র, প্রতিযোগী হতে শেখানো, জনপরিসরে বা ধর্মীয় বিষয়ে নারীর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা না থাকা, নারীর বাস্তব-বুদ্ধি বিষয়ে পুরুষের প্রকাশ্য উপহাস, নারীর কাজকে অবমূল্যায়ন করা এবং এমনকি যৌন সম্পর্কে সম্মত না হলে জোর করাকেও পৌরুষ হিসেবে মহিমান্বিত করা। স্যান্ডি শেষ করেছেন এই বলে যে ধর্ষণ পুরুষ প্রকৃতির অনিবার্যতা নয়, তবে পুরুষ প্রকৃতির যে ইমেজ নির্মিত হয়েছে, তার ফলাফল। নারীর ওপর পুরুষের আধিপত্য করার এই ইমেজ প্রতিষ্ঠা করে সমাজ, সংস্কৃতি এবং ক্ষমতাকাঠামো।

 

তিন.
নারীর প্রতি সংঘটিত যেকোনো যৌন নির্যাতনের জন্য নারীকেই দায়ী করা আমাদের সংস্কৃতিতে প্রোথিত। বর্ষবরণে টিএসসির ঘটনায় নারীর সাজগোজ ও পোশাককেই দায়ী করেছেন শফী হুজুর। প্রিপারেটরি স্কুলে প্রথম শ্রেণির ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগের মুখে স্কুলের অন্যতম প্রভাবশালী কর্মকর্তা বলেছেন, ‘ফুল থাকলে মৌমাছি আসবে।’ আর সবশেষ উদাহরণ দেখা গেল হলিক্রস বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ধর্ম বিষয়ের প্রশ্নপত্রে। বৈশাখী মেলাসহ বিভিন্ন মেলায় ‘গেঞ্জি ও জিনসের প্যান্ট’ পরে যাওয়ার জন্যই যে মেয়েরা নানা ধরনের অসুবিধায় পড়ে এবং এ বছর বৈশাখী মেলায় ঘটে যাওয়া বিষয়গুলো এড়ানোর উপায় হিসেবে পোশাক পরিচ্ছদে শালীনতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়ার মাধ্যমে বৈশাখে সংঘটিত ঘটনার জন্য নারীর পোশাক পরিচ্ছদকেই দায়ী করা হলো।

আমাদের রোমান্টিকতার ধারণা তৈরি হয়েছে অনিচ্ছুক নারীর পেছনে পুরুষের জোরপূর্বক অনুসরণের দৃশ্যসহ ‘চুমকি চলেছে একা পথে, সঙ্গী হলে দোষ কী তাতে’–জাতীয় গানের মাধ্যমে। গ্রামের মাতবরসমাজ ধর্ষিতকেই দোররা মারার বিধান চালু রাখে বলে ১৪ বছরের ধর্ষিত হেনাকে গ্রাম্য সালিসের দোররায় মরে যেতে হয়। ধর্ষকের সঙ্গে ধর্ষিতাকে বিয়ে দেওয়াকে সামাজিক সমাধান মনে করা হয়। আর রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত বাহিনী শুধু যে যৌন নির্যাতন বন্ধে ব্যর্থ হয় এমন নয়, বরং তাদের নির্যাতকের ভূমিকায় দেখার অজস্র উদাহরণ রয়েছে। ইয়াসমিনকে পুলিশ ধর্ষণ ও হত্যা করে রাস্তায় ফেলে দিয়েছিল, জেলের নিরাপত্তাবেষ্টনীতে ধর্ষণ করে হত্যা করেছিল সীমাকে, এবারের টিএসসির ঘটনায় পুলিশের সব পর্যায়ের কর্তাব্যক্তিরা ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়া এবং গুরুত্ব লঘু করার সব উদ্যোগ নিয়েছেন। যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদের, বিশেষ করে ইসমত জাহানকে, নির্মমভাবে পিটিয়েছে এবং সবশেষে পুলিশের আইজি বর্ষবরণে টিএসসির যৌন নির্যাতনকে তিন-চারটি ছেলের ‘দুষ্টামি’ বলেছেন।

চার.
আমাদের রাজনীতি, সামাজিক ও আইনি ব্যবস্থা ধর্ষককে সুরক্ষা দেওয়ার সংস্কৃতি লালন করে চলেছে। অর্থনৈতিক বণ্টনসহ নারীর প্রতি নানা অবিচারের কাঠামো যে ব্যবস্থায় নিহিত, সেখানে ধর্ষণ অনিবার্য। এই সংস্কৃতিকে প্রত্যাখ্যান করে নতুন সংস্কৃতি নির্মাণ করা সম্ভব না হলে এক-আধটি বিচার নামের প্রহসন দিয়ে এই সর্বমাত্রিক যৌন সহিংসতাকে দমন করা যাবে না। ধর্ষণ কেউ সাক্ষী রেখে করে না, ফলে সামাজিক নিন্দার বাধা অতিক্রম করে কেউ ধর্ষণের বিচার চাইলেই বর্তমান বিচারকাঠামোতে ন্যায্য বিচার পাওয়া সম্ভব না–ও হতে পারে। প্রয়োজন সামাজিক প্রতিরোধ।

ছাত্রদের প্রতিরোধ জারি ছিল বলেই টিএসসির ঘটনাটিকে সম্পূর্ণভাবে চেপে যাওয়া সম্ভব হয়নি পুলিশের পক্ষে, সম্ভব হয়নি প্রিপারেটরি স্কুলের ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়া। প্রতিরোধ ছিল বলেই গারো নারীকে ধর্ষণকারীদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে রাষ্ট্র বাধ্য হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আদিবাসী ছাত্রীকে ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত ছাত্রদের বহিষ্কার করতে বাধ্য হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। প্রতিরোধের কারণেই হলি ক্রস স্কুল কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়েছে দুঃখ প্রকাশ করতে। গারো মেয়েটির ঘুরে দাঁড়ানোও একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। যে দুজনকে ধরা গেছে এবং নিজেরা অপরাধ স্বীকার করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
প্রতিরোধ চলুক ধর্ষণ আইনে যেসব ফাঁক রয়েছে, সেসব সংশোধনের জন্য। প্রতিরোধ হোক শিক্ষা কার্যক্রমের যেখানেই নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক ধারণা বহাল রয়েছে, সেসব পাল্টে দেওয়ার। সামাজিক সচেতনতা তৈরিতে গণমাধ্যম বড় ভূমিকা রাখতে পারে। ধর্ষণ বিষয়ে ‘নারীর সর্বস্ব হারানো’র পুরুষতান্ত্রিক মিথটিকে পাল্টে ‘ধর্ষকের রক্ষা নাই’ মর্মে বিকল্প মিথ নির্মাণের মধ্য দিয়েই ধর্ষণকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। এই প্রতিরোধে রাষ্ট্রের কোনো এজেন্সি বিরোধিতা করলে পাল্টা আঘাত সেখানেও হোক।

ধর্ষণ অপ্রতিরোধ্য নয়, অপ্রতিরোধ্য হলো অন্যায়ের বিরুদ্ধে মানুষের জাগরণ। এই জনপদে ধর্ষণ সব সময়েই ছিল, খবরে কম আসত। ধর্ষণের খবরগুলো প্রকাশিত হচ্ছে, এটি প্রথম প্রতিরোধ। ধর্ষিত নারী রুখে দাঁড়াচ্ছেন, এটি পরবর্তী প্রতিরোধ। নারী-পুরুষনির্বিশেষে সোচ্চার হচ্ছেন, এটিই চূড়ান্ত প্রতিরোধ। ভেঙে যাচ্ছে ধর্ষণের অপ্রতিরোধ্যতার মিথ।

 

ফিচার ছবিঃ কাউন্সেলিং টুডে ও ইকুয়ালিটি নাউ হতে তৈরি করা হয়েছে

The post ধর্ষণ কি অপ্রতিরোধ্য? first appeared on KG | Kaberi Gayen.

]]>
https://kaberigayen.com/%e0%a6%a7%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%b7%e0%a6%a3-%e0%a6%95%e0%a6%bf-%e0%a6%85%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%b0%e0%a7%87%e0%a6%be%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af/feed/ 0
অস্বীকারের রাজনীতি https://kaberigayen.com/%e0%a6%85%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a7%80%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a6%a8%e0%a7%80%e0%a6%a4%e0%a6%bf/ https://kaberigayen.com/%e0%a6%85%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a7%80%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a6%a8%e0%a7%80%e0%a6%a4%e0%a6%bf/#respond Sun, 06 Mar 2022 07:12:57 +0000 https://kaberigayen.com/?p=7906 শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রক্টর ঘটনাটিকে অস্বীকার করেছেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন যে লিটন নন্দী ছাড়া এই ঘটনার কোনো সাক্ষী নেই, কোনো নারী তো কোনো অভিযোগ দেননি, এমনকি তিনি পুলিশকে সোপর্দ করার বিষয়ে লিটন নন্দীর দাবিকেও অস্বীকার করার জন্য পুলিশকেই সাক্ষ্য মেনেছেন।

The post অস্বীকারের রাজনীতি first appeared on KG | Kaberi Gayen.

]]>

য়লা বৈশাখে টিএসসি চত্বরে যে সংঘবদ্ধ যৌনসন্ত্রাসের ঘটনাটি ঘটেছে, সে বিষয়ে পুলিশ প্রশাসন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের অস্বীকারের বিপরীতে দেশবাসী বিশ্বাস করেছে ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি লিটন নন্দীর নিজের ভাঙা হাতের সাক্ষ্যে দেওয়া বক্তব্যকে। তাই একজন-দুজন করে জড়ো হতে হতে হাজার হাজার শিক্ষার্থী-শিক্ষক-সাংস্কৃতিক কর্মীর মানববন্ধন ২০ এপ্রিল কলা ভবন থেকে রাজু ভাস্কর্য হয়ে দোয়েল চত্বর পেরিয়ে কার্জন হল পর্যন্ত উপচে পড়েছে। একটি ছাত্র সংগঠনের ডাকে হাজার হাজার মানুষের এই স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ, এসব আন্দোলনে দেওয়া বক্তব্য এবং সামাজিক মাধ্যমে নানা প্রজন্মের নারীদের ক্রমেই নিজেদের অভিজ্ঞতার উন্মোচন এক অভূতপূর্ব জাগরণের সূচনা করেছে। সারা দেশের সাংস্কৃতিক সংগঠন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এই বিষয়ে সংহতি জানিয়ে প্রতিবাদ ও মানববন্ধন অব্যাহত রেখেছে।

অথচ শুরুর দিন থেকেই পুলিশ প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ঘটনাটি অস্বীকার করা এবং লিটন নন্দীকে মিথ্যাবাদী প্রমাণ করতে চাওয়ার মরিয়া চেষ্টা দেখে মনে হয়েছে যেন লিটন নিজের হাতটি ভেঙে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করেছে। এসব অস্বীকারের বিপরীতে সারা দেশ লিটনকেই বিশ্বাস করেছে। প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার ধারাবাহিক চেষ্টা।
অস্বীকারপর্ব এক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এত বড় একটি আয়োজনে, যেখানে লাখ লাখ মানুষের সমাবেশ হওয়ার কথা, সেখানে আইনশৃঙ্খলা ÿরক্ষাকারী বাহিনীকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। এত মানুষের ভিড়ে এমন ঘটনা ঘটা দুঃখজনক ও নিন্দনীয় হলেও এমনটি ঘটে যেতে পারে, সেটিও বোধগম্য। পুলিশ প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে এমন ঘটনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। কারণ, চালু থাকা সিসি টিভিতে কন্ট্রোল রুমে বসেই কোথায় কী হচ্ছে দেখে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা। লিটন নন্দী বারবার বলেছেন যে তিনি ও তাঁর বন্ধু সুমন, অমিত, তুহিন, সাদ্দাম পুলিশের কাছে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজনকে সোপর্দ করা সত্ত্বেও পুলিশ তাদের ছেড়ে দিয়েছে।

শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রক্টর ঘটনাটিকে অস্বীকার করেছেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন যে লিটন নন্দী ছাড়া এই ঘটনার কোনো সাক্ষী নেই, কোনো নারী তো কোনো অভিযোগ দেননি, এমনকি তিনি পুলিশকে সোপর্দ করার বিষয়ে লিটন নন্দীর দাবিকেও অস্বীকার করার জন্য পুলিশকেই সাক্ষ্য মেনেছেন। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত তো ছিল যে লিটন নন্দী যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র, যেহেতু তাঁর ভাঙা হাত একটি অস্বাভাবিক ঘটনাকে সাক্ষ্য দেয়, প্রথমে তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে তিনি পুলিশ প্রশাসনের কাছে জবাবদিহি চাইবেন। এ ঘটনায় লিটন নন্দী তো একজন প্রত্যক্ষদর্শী। কেন তাঁর সাক্ষ্য একজন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য হিসেবে তিনি আমলে নিতে চাইলেন না, সেটিও বোধগম্য নয়।

অস্বীকারপর্ব দুই: পুলিশ প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে লিটন নন্দীর আনা অভিযোগকে প্রথমে উড়িয়ে দিতে চেয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে মাত্র কয়েক গজের মধ্যে পুলিশ বক্স, একই রাস্তার মাথায় শাহবাগ থানা এবং ১৯টি সিসি টিভি চালু থাকা সত্ত্বেও প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে টিএসসির মতো জায়গায় দিনের আলোতে এমন সংঘবদ্ধ ঘটনার দায় তারা এড়াতে পারে না। কাজেই ঢালাও অস্বীকার করা ছাড়া তাদের উপায় নেই।
ঘটনার অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী ও অংশগ্রহণকারী তুহিন দাস বারবার সুনির্দিষ্টভাবে দাবি করে গেছেন পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর আশরাফুল ইসলামের কাছে দুজনকে সোপর্দ করার কথা। প্রথম দিন পুলিশ অস্বীকার করেছে। ডিএমপির রমনা জোনের উপকমিশনার আবদুল বাতেন বলেছেন, এ ঘটনার কি কোনো ডকুমেন্ট আছে বা কোনো ছবি আছে? মাত্র একটি সিসি টিভির ফুটেজ প্রকাশিত হওয়ার পরই ঘটনাপ্রবাহ পাল্টে যেতে থাকে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ইব্রাহিম খান স্বীকার করেছেন যে ‘আশরাফের কাছে যে দুর্বৃত্তকে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, আশরাফ তাকে ছেড়ে দেন। কারণ, তাঁকে আরেক জায়গায় যেতে হয়েছিল তাঁর সুপারভাইজারের নির্দেশে।’ (দ্য ডেইলি স্টার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৫)

অস্বীকারপর্ব তিন: সিসি টিভির ফুটেজ প্রকাশের পরে পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাগুলোকে যখন আর অস্বীকার করতে পারলেন না, তখন যা দেখা গেছে ফুটেজে, সেসব ঘটনাকে ‘যৌন হয়রানি’ বলতে অস্বীকৃতি জানালেন। ভিডিও ফুটেজ দেখে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কমিশনার জাহাঙ্গীর আলম বললেন, ‘এ পর্যন্ত কোনো নারীর বস্ত্র হরণের চিত্র পাওয়া যায়নি’, ‘যা পাওয়া গেছে, তা সামান্য ধাক্কাধাক্কি, যৌন হয়রানি নয়’। (দ্য ডেইলি স্টার, ওই) এমনকি তিনি প্রশ্ন তুলেছেন যে লিটন কি একজন আদর্শ নাগরিকের কাজ করেছেন? টিএসসিতে যে পুলিশ ছিল, তাদের সাহায্য কি তিনি চেয়েছেন? ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বললেন, ‘নববর্ষে বিবস্ত্রের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’ (সমকাল, ১৯ এপ্রিল) এসব উদ্ধৃতি আর না বাড়াই।

স্বীকৃতিপর্ব: জয়তু ফুটেজ: ঘটনাটি ঘটার একদিন পর্যন্ত গণমাধ্যমে বিষয়টি সেভাবে আসেনি অনলাইন পত্রিকা ছাড়া, তোলপাড় হয়েছে সামাজিক মাধ্যম। তবে ১৬ এপ্রিল থেকে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো এ বিষয়ে টক শো এবং লিটন নন্দীর বক্তব্য প্রচার করতে থাকে। ১৭ এপ্রিল থেকে সিসি টিভি ফুটেজ পরীক্ষা শুরু হলে প্রায় সব গণমাধ্যমেই বিষয়টি প্রকাশিত হতে থাকে গুরুত্বের সঙ্গে নাগরিক মতামতসহ। হাইকোর্টের নির্দেশ এ ক্ষেত্রে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। দেরিতে হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ২০ এপ্রিল মানববন্ধন ও প্রতিবাদ করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডয়েচেভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘যৌন নিপীড়নের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা কেউ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়, তারা বহিরাগত।’ এমনকি আবদুল বাতেন পর্যন্ত ডয়েচেভেলেকে বলেছেন, ‘আমরা সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করেছি। তাতে পয়লা বৈশাখের দিনে টিএসসিতে নারী লাঞ্ছনার সঙ্গে জড়িত তিন থেকে চারজনকে চিহ্নিত করতে পেরেছি।’

কালের যাত্রার ধ্বনি শুনতে পাচ্ছি: প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকার-অস্বীকারের চাপান-উতোরের মধ্য দিয়ে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যে লিটন নন্দী যদি তাঁর বন্ধু-সহযোদ্ধাদের সঙ্গে সেদিনের ঘটনায় রুখে না দাঁড়াতেন, তবে চাপা দেওয়া হতো ঘটনাটি। তাঁদের আন্দোলনের কারণেই গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে সব প্রজন্মের নারীরা জানাচ্ছেন পয়লা বৈশাখে, একুশের বইমেলায়, বসন্ত উৎসবে, বাজারে, গানের কনসার্টে তাঁদের ওপর অহরহ ঘটা যৌন হয়রানির অভিজ্ঞতা, যার কোনো প্রতিকার হয়নি কখনো। এ বছরও টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে বৈশাখী মেলা দেখতে এসে পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে খবর বেরিয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে এ জাতীয় ঘটনা খুব বেশিই ঘটছে। প্রায়ই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ–জাতীয় ঘটনাগুলো চেপে রাখতে চেষ্টা করে মূলত দুটি কারণে। প্রথমত, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তির কথা চিন্তা করে; দ্বিতীয়ত, এসব অপকর্মের সঙ্গে প্রায়ই ক্ষমতাসীন দলের লোকজন জড়িত থাকেন, যার সবশেষ উদাহরণ জাহাঙ্গীরনগর ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এ বছরের ঘটনা। ২০০০ সালের শুরুর দিনে এই টিএসসিতেই বাঁধন লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটেছিল। তখনকার সরকারদলীয় এক সাংসদ ঘোষণা দিয়েছিলেন, যদি কোনো মেয়ে থার্টি ফার্স্ট রাতে বাইরে আসে, তবে তার পরিণতিও হবে বাঁধনের মতো। সেই সাংসদকে এই কদর্য বক্তব্যের জন্য আইনের আওতায় আনা হয়নি, আনা হয়নি আইনের আওতায় ১৯৮৯ সালে ডাকসু নির্বাচনোত্তর রোকেয়া ও শামসুন নাহার হল সংসদের বিজয়ী নেতাদের মিছিলে পরাজিত ছাত্রসংগঠনের নেতাদের হামলার। এই বিচারহীনতার সংস্কৃতির মধ্যেই প্রশ্রয় পায় এসব অপরাধ।

‘যৌন নির্যাতন’বিরোধী আন্দোলন হলো সেই দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলন, যেখানে দলমত-নির্বিশেষে সবার আন্তরিক অংশগ্রহণ প্রয়োজন। নববর্ষের মতো অসাম্প্রদায়িক উৎসবকে বিতর্কিত করার জন্য এবং জনপরিসরে নারীর অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করার জন্য ধর্মীয় উগ্রগোষ্ঠীর উসকানি ও প্রচারণা এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে জোরারোপিত হয়। যেমন শফী হুজুর ইতিমধ্যেই এই ঘটনার জন্য নারীর পোশাককে দায়ী করে শুধু নববর্ষে নারীর অংশগ্রহণ নয়, বরং স্কুল-কলেজে নারীর পড়াশোনাও বন্ধ করতে বলেছেন। তাই রাষ্ট্রও এমন ঘটনায় মুখ ফিরিয়ে রাখতে পারে না।

অতএব, দাবি পরিষ্কার। প্রথমত, এ ঘটনায় যারাই জড়িত হোক, প্রত্যেকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। দ্বিতীয়ত, ঘটনার দিন পুলিশ প্রশাসন ১৩১টি ক্যামেরায় কন্ট্রোল রুমে এসব ঘটনা পরিষ্কারভাবে দেখেও (প্রথম আলো, ২১ এপ্রিল ২০১৫) কেন ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে, সেই বিষয়টিও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্তে আসতে হবে, এটি কেবল শাহবাগ থানার এসআই আশরাফুল আলমকে প্রত্যাহার করার মাধ্যমে শেষ হতে পারে না।

উন্মোচিত হোক অস্বীকারের রাজনীতি। জয়যুক্ত হোক জনপরিসর নারীর জন্য বাধাহীন করার আন্দোলন।

ফিচার ছবিঃ ক্রিয়েটিভ কমন্স ও দ্য বিজনেস ইনসাইডার থেকে তৈরি করা।

The post অস্বীকারের রাজনীতি first appeared on KG | Kaberi Gayen.

]]>
https://kaberigayen.com/%e0%a6%85%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a7%80%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a6%a8%e0%a7%80%e0%a6%a4%e0%a6%bf/feed/ 0