Free Speech - KG | Kaberi Gayen https://kaberigayen.com Wed, 09 Mar 2022 06:33:08 +0000 en-US hourly 1 https://wordpress.org/?v=6.5.3 https://kaberigayen.com/wp-content/uploads/2021/12/favicon_favicon-light.svg Free Speech - KG | Kaberi Gayen https://kaberigayen.com 32 32 আপনারা চুপ করে থাকবেন না, কিছু বলুন https://kaberigayen.com/%e0%a6%86%e0%a6%aa%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%be-%e0%a6%9a%e0%a7%81%e0%a6%aa-%e0%a6%95%e0%a6%b0%e0%a7%87-%e0%a6%a5%e0%a6%be%e0%a6%95%e0%a6%ac%e0%a7%87%e0%a6%a8-%e0%a6%a8%e0%a6%be-%e0%a6%95/ https://kaberigayen.com/%e0%a6%86%e0%a6%aa%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%be-%e0%a6%9a%e0%a7%81%e0%a6%aa-%e0%a6%95%e0%a6%b0%e0%a7%87-%e0%a6%a5%e0%a6%be%e0%a6%95%e0%a6%ac%e0%a7%87%e0%a6%a8-%e0%a6%a8%e0%a6%be-%e0%a6%95/#respond Wed, 09 Mar 2022 06:32:21 +0000 https://kaberigayen.com/?p=7967 জানা কথা যে এই হত্যাকাণ্ডের অন্তহীন তদন্ত শুরু হবে এবং এই নির্বিবাদী শিক্ষকের হত্যাকাণ্ডকে হয় ব্যক্তিগত কারণে বলে চালিয়ে দেওয়া হবে অথবা ধামাচাপা পড়বে। ফের রক্তাক্ত পড়ে থাকতে দেখব অন্য কোনো শিক্ষক, লেখক বা শিল্পীকে। অব্যাহত খুন দেখতে দেখতে এসব হত্যাকাণ্ড আমাদের আর আলোড়িত করে না।

The post আপনারা চুপ করে থাকবেন না, কিছু বলুন first appeared on KG | Kaberi Gayen.

]]>

জও ফেব্রুয়ারি। আজও রয়েছে ঊর্ধ্বমুখী কৃষ্ণচূড়ার বিস্তার। বইমেলার মাস এখনো শেষ হয়নি। এবং স্থানটি এ দেশের অহংকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই চত্বর। অল্প শীতের রাতে যুক্তিবাদী লেখক অভিজিৎ রায় প্রিয়তম সহযোদ্ধা ব্লগার বন্যাকে সঙ্গে নিয়ে মাত্র কয়েক দিনে শেষতম বইয়ের কাটতি দেখে বড় খুশিমন নিয়ে ফিরছিলেন ঘরে। বইমেলা উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছেন দেশে মাত্র সেই দিন, ১৫ ফেব্রুয়ারি।

এবার প্রথম নয়। ফেব্রুয়ারি এলেই ঘাতকদের গাত্রদাহ শুরু হয়। কারণ, ফেব্রুয়ারি হলো সেই মাস, যে মাসে ১৯৪৮ সালে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত গণপরিষদে ইংরেজি আর উর্দুর সঙ্গে বাংলাকেও গণপরিষদের ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার দাবি উত্থাপন করেছিলেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান, পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন, গণপরিষদের সহসভাপতি মৌলানা তমিজুদ্দিন খানসহ সবাই তীব্র বিরোধিতা করে তাঁকে দেখে নেবেন বলে শাসিয়েছিলেন। ভাষা আন্দোলনের প্রথম পর্বের সূত্রপাত হয়েছিল তখনই, আসলে পাকিস্তান নামের ধারণায় প্রচণ্ড আঘাত লেগেছিল। সেই অপরাধে তাঁকে ছেলেসহ মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিল ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ। সালাম-বরকত-রফিক-জব্বার-শফিকউদ্দিনকে ভাষার দাবিতে প্রাণ দিতে হয়েছিল ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারিতে, ভাষা আন্দোলনে।

আর স্বাধীন বাংলাদেশে, এই ফেব্রুয়ারি মাসেই মুক্তবুদ্ধি চর্চাকারী, সাহসী বুদ্ধিজীবী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকে আক্রমণ করা হয়েছিল চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে, ২০০৪ সালে, পরে তিনি জার্মানিতে মারা যান। তিনিও বইমেলা থেকে বেরিয়ে বাসায় ফিরছিলেন। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসেই হত্যা করা হয়েছে ব্লগার রাজীব হায়দারকে। আর ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি আরেক মুক্তবুদ্ধি চর্চাকারী অভিজিৎ রায়কে হত্যা করা হলো বইমেলার মাত্র কয়েক গজ দূরে। এবারও কুপিয়ে, হুমায়ুন আজাদের মতো এবং ব্লগার রাজীবের মতো। একদিক থেকে এসব হত্যাকাণ্ড আসলে ভাষা আন্দোলনে যাঁদের হত্যা করা হয়েছে, সেসব হত্যাকাণ্ডের চেয়েও অনেক বেশি নির্মম। অনেক বেশি লক্ষ্যাভিসারী, অনেক বেশি ভোঁতা অস্ত্রের ব্যবহারে। এসব অস্ত্র কি কিছু সাক্ষ্য দেয়? হত্যার ধরন কি কোনো প্রবণতাকে চিহ্নিত করে?

প্রশ্ন হলো, বারবার এমন ঘটতে পারছে কীভাবে? এই ফেব্রুয়ারিতেই? দেশ স্বাধীন হয়েছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নয় মাস যুদ্ধ করে, কিন্তু পাকিস্তান-মনস্তত্ত্ব থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি একটা বড় অংশের মানুষ। আর সেই মনস্তত্ত্বের বিপরীতে যাঁরা নিজেদের প্রগতিশীল বলেন, তাঁরাও ক্রমেই এই মৃত্যু-উপত্যকাকে মেনে নিচ্ছেন। প্রশ্ন হলো, এই দেশ কি কেবল কিছু উগ্র ধর্মান্ধের, নাকি মুক্তবুদ্ধি চর্চাকারীদেরও? এই দেশে কবিতা লেখার জন্য দেশান্তরি হতে হয়েছে কবি দাউদ হায়দার আর সত্য লেখার জন্য দেশান্তরি হতে হয়েছে তসলিমা নাসরিনকে। কিছু ব্লগ লেখার জন্য বুকে-পিঠে ছুরির আঘাত নিয়ে দেশান্তরি হতে হয়েছে ব্লগার অ্যাকটিভিস্ট আসিফ মহিউদ্দিনকে। ব্লগ লেখার জন্য ২০১৩ সালে জেলে যেতে হয়েছে সুব্রত শুভ, রাসেল পারভেজ আর মশিউর রহমানকে। ঘাতকের আক্রমণের শিকার হয়েছেন শামসুর রাহমান, সনৎ কুমার সাহা, আঘাত এসেছে এ দেশের শ্রেষ্ঠ কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের ওপর। ঘাতক হত্যা করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইউনুস আর অধ্যাপক তাহেরকে। হত্যা করেছে সর্বশেষ বাউলসাধক অধ্যাপক শফিউল আলমকে। মাঝেমধ্যে ভাবি, বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের নেতা কাজী মোতাহার হোসেন, আবদুল ওদুদ, কিংবা আহমদ শরীফ, বেগম রোকেয়া আজ বেঁচে থাকলে তাঁদেরও কি একই পরিণতি হতো? পাকিস্তান-মনস্তত্ত্ব থেকে কতটা এগোল দেশ তবে?

সমালোচনা করি রাষ্ট্রের একচোখা নীতির। আইসিটি অ্যাক্টের আওতায় মুক্তবুদ্ধির লেখক-ব্লগারদের লেখার জন্য তাঁদের ধরে নেওয়া হয়, জেলবন্দী করা হয় অথবা দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। অথচ যখন ঘাতকদের ব্লগে লেখা হয়, ‘অভিজিৎ রায় আমেরিকা থাকে। তাই তাকে এখন হত্যা করা সম্ভব না। তবে সে যখন দেশে আসবে, তখন তাকে হত্যা করা হবে।’ তখন কিন্তু সেসব পোস্ট রাষ্ট্রের চোখে পড়ে না। দেশটি কি তবে কেবলই উগ্রবাদীদের?

বিবিসি নিউজ বাংলা, ২০২১
দুই.
‘বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়’
জ্ঞান স্থির থাকে না। জ্ঞানের উৎকর্ষের জন্য, প্রবহমানতার জন্য বরং বহু মত, বহু তর্কের কথাই বলেছেন সব মনীষী, সব দেশের সংস্কৃতিও বিকশিত হয় বহুত্বের চর্চার মধ্যে। বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রটি জন্ম নিয়েছিল ‘একটি ফুলকে বাঁচানো’র শপথ নিয়ে। সেখানে ক্রমাগত বেড়েছে বিরুদ্ধ মতের বিপরীতে প্রবল সহিংসতা। আর প্রগতির দাবিদার যে রাজনৈতিক শক্তি এই অন্ধকার শক্তির বিপরীতে শক্ত অবস্থান নিতে পিছপা হয়, সেই শক্তি জানে না বা জানলেও মানতে রাজি নয় যে এই অন্ধকার শক্তি কোনো দিন তাদের সমর্থন করবে না।

হাসান আজিজুল হকের ওপর যখন ফতোয়া নেমে এসেছিল, তখন আমি এডিনবরায় পড়াশোনা করছি। অভিজিৎ রায় তখন প্রায়ই যোগাযোগ করতেন কী করা যায় স্যারের জন্য, সে বিষয়ে। যোগাযোগ শুরু করলেন বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের সঙ্গে। আসিফ মহিউদ্দিনকে যখন দ্বিতীয়বার কোপানো হলো, তিনি লিখলেন। পাঠালেন যে দৈনিকে, সেখানে ছাপা হলো না। তিনি আমাকে ফোন করেছিলেন যেন আমি অনুরোধ করি। অনুরোধ করা সত্ত্বেও সে পত্রিকা লেখাটি ছাপানোর সাহস না করলে তিনি একটি জনপ্রিয় অনলাইন পোর্টালে লেখাটি দেন। আমি অন্যের বিপদে তাঁর দাঁড়ানো খুব কাছ থেকে দেখেছি বলেই জানি, তিনি লেখায় আর কাজে একই রকম সৎ ছিলেন। তাঁর সব বক্তব্য কিংবা বলা ভালো, তাঁর সব প্রকাশভঙ্গির সঙ্গে সব সময় একমত না হলেও যুক্তির প্রতি তাঁর অটল অভিনিবেশ, বিজ্ঞানমনস্কতা আর নিজের প্রতিশ্রুতির প্রতি সততা দেখে শ্রদ্ধা না করে পারিনি। তাঁর এই হত্যাকাণ্ড কিছুতেই মানতে পারছি না। বরং তাঁর এই হত্যাকাণ্ডের ভেতর দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী বাংলাদেশের পরাভবকে দেখছি।

আর ক্রমাগত পরাভব দেখছি মনুষ্যত্বের। যখন তাঁকে ও তাঁর স্ত্রীকে কোপানো হচ্ছিল, তখনো টিএসসিতে অনেক মানুষের ভিড়, আশপাশেই পুলিশি প্রহরা থাকার কথা। কারণ, বইমেলায় অনেক নিরাপত্তাকর্মী কাজ করেছেন। এবং ছবিতে দেখেছি, যখন তাঁর স্ত্রী সারা শরীরে রক্ত নিয়ে সাহায্য চাইছেন, তখনো মানুষ জটলা করে দেখছে। জল্লাদের উল্লাসমঞ্চ আর জনগণের নির্বিকার তাকিয়ে থাকার দেশটাই যে আজ আমার দেশ, সে বিষয়ে কে আর সন্দেহ করবে? রাষ্ট্র যখন ক্রমাগত হত্যাকাণ্ডের ভেতর থেকে যেতে থাকে, তার নাগরিকেরাও যে তখন সেসব হত্যাকাণ্ডে গা-সওয়া হয়ে যায়, সেটাই স্বাভাবিক। কারণ, তখন ‘বোধনষ্টি’ ঘটে। কিন্তু তখন কি আর দেশটা দেশই থাকে?

তিন.
বিচার চাইতে এসেছি। লেখার উত্তর লেখা দিয়েই দিতে হবে, চাপাতির কোপে নয়। রাষ্ট্রকেই এই নিরাপত্তা দিতে হবে। অভিজিৎ রায়ের হত্যার কথা যখন ব্রেকিং নিউজে দেখছিলাম, তখন এতটাই হতভম্ব হয়ে যাই যে মনে হচ্ছিল, এই কোপ আমার প্রজন্মের সব মুক্তবুদ্ধির মানুষের ওপর নেমে এসেছে। হত্যাকারী যেই-ই হোক, তার-তাদের-তাদের খুনি মতাদর্শের বিচার চাই। মেনে নিতে নিতে মৃত্যু যে সবার কাঁধের ওপর নিঃশ্বাস ফেলছে, সেই সত্যকে জাতি হিসেবে আমরা মেনে নিয়ে নির্বিকার থাকছি, থেকেছি অনেক বছর। পাকিস্তান-মনস্তত্ত্বে নাড়া দিয়েছিল যে একুশে ফেব্রুয়ারি, সেই একুশের প্রথম কবিতার কাছে আবার আশ্রয় নিয়ে সরকারের কাছে, সব বিবেকবান মানুষের কাছে বলছি, অভিজিতের মৃত্যু কেবল কাঁদানোর জন্য নয় এবং আমি কাঁদতেও আসিনি। কেবল বিচার চাইতে এসেছি, সুনির্দিষ্ট বিচার। অভিজিৎ এই লেখা দেখবেন না, আমি এখনো ভাবতে পারছি না।

যাঁরা এই ঘটনায় ব্যথিত হয়েছেন, তাঁরা চুপ করে থাকবেন না, কিছু বলুন। মাসটি আজও ফেব্রুয়ারি এবং বিচারটি করতে হবে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।

ফিচার ছবিঃ চ্যানেল আই অনলাইন থেকে তৈরি করা।

The post আপনারা চুপ করে থাকবেন না, কিছু বলুন first appeared on KG | Kaberi Gayen.

]]>
https://kaberigayen.com/%e0%a6%86%e0%a6%aa%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%be-%e0%a6%9a%e0%a7%81%e0%a6%aa-%e0%a6%95%e0%a6%b0%e0%a7%87-%e0%a6%a5%e0%a6%be%e0%a6%95%e0%a6%ac%e0%a7%87%e0%a6%a8-%e0%a6%a8%e0%a6%be-%e0%a6%95/feed/ 0
আসুন, আমরা বরং চুপ করেই থাকি https://kaberigayen.com/%e0%a6%86%e0%a6%b8%e0%a7%81%e0%a6%a8-%e0%a6%86%e0%a6%ae%e0%a6%b0%e0%a6%be-%e0%a6%ac%e0%a6%b0%e0%a6%82-%e0%a6%9a%e0%a7%81%e0%a6%aa-%e0%a6%95%e0%a6%b0%e0%a7%87%e0%a6%87-%e0%a6%a5%e0%a6%be%e0%a6%95/ https://kaberigayen.com/%e0%a6%86%e0%a6%b8%e0%a7%81%e0%a6%a8-%e0%a6%86%e0%a6%ae%e0%a6%b0%e0%a6%be-%e0%a6%ac%e0%a6%b0%e0%a6%82-%e0%a6%9a%e0%a7%81%e0%a6%aa-%e0%a6%95%e0%a6%b0%e0%a7%87%e0%a6%87-%e0%a6%a5%e0%a6%be%e0%a6%95/#respond Wed, 09 Mar 2022 05:42:09 +0000 https://kaberigayen.com/?p=7961 জানা কথা যে এই হত্যাকাণ্ডের অন্তহীন তদন্ত শুরু হবে এবং এই নির্বিবাদী শিক্ষকের হত্যাকাণ্ডকে হয় ব্যক্তিগত কারণে বলে চালিয়ে দেওয়া হবে অথবা ধামাচাপা পড়বে। ফের রক্তাক্ত পড়ে থাকতে দেখব অন্য কোনো শিক্ষক, লেখক বা শিল্পীকে। অব্যাহত খুন দেখতে দেখতে এসব হত্যাকাণ্ড আমাদের আর আলোড়িত করে না।

The post আসুন, আমরা বরং চুপ করেই থাকি first appeared on KG | Kaberi Gayen.

]]>

ত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে, মার্কিন প্রবাসী বিজ্ঞান-লেখক অভিজিৎ রায়কে বইমেলার প্রবেশপথে হত্যা করার রাতে প্রচণ্ড আকুতি নিয়ে লিখেছিলাম, ‘আপনারা চুপ করে থাকবেন না, কিছু বলুন।’ (প্রথম আলো, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫)। মানুষ প্রথম কিছুদিন রাস্তায় নেমেছিল, প্রতিবাদ জানিয়েছিল। খুব আশান্বিত হয়েছিলাম ‘নাস্তিক’ নামের সঙ্গে যে ট্যাবু যোগ করা আছে, সেই অচলায়তনে বুঝি ফাটল ধরেছে। মানুষ বুঝি দুঃখ পেয়েছে মানুষের মৃত্যুতে।

অভিজিৎ রায় নিজের কাজে বিখ্যাত ছিলেন, বিখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা পিতা অধ্যাপক অজয় রায়ের পুত্র, ছিলেন মার্কিন নাগরিক। কিছুদিন বেশ তদন্ত-তদন্ত রব পড়ে গেল। এফবিআই উড়ে এল। কিন্তু ছয়IJ মাস হতে চলল, তদন্তের কোনো ফল আমরা পাইনি। শুধু অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী বিজ্ঞান-লেখক বন্যা আহমেদ, যিনি নিজেও সেই ভয়াল আক্রমণের শিকার, মাথায় কোপ, কাটা আঙুল আর প্রিয় মানুষের রক্তাক্ত দেহের স্মৃতি নিয়ে রয়টার্স-বিবিসি-ভলতেয়ার লেকচার—সব জায়গায় ক্রমাগত বলে যাচ্ছেন অন্ধ অসির বিরুদ্ধে মসির যৌক্তিক লড়াইয়ের কথা। আশা জানাচ্ছেন, একদিন যুক্তির জয় হবে। অভিজিৎ রায়ের পিতা অধ্যাপক অজয় রায় বড় আশা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ছাত্রীসম সম্বোধন করে পুত্রহত্যার বিচার চেয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে তাঁকে ফোনে সমবেদনা জানালেও সে খবর গণমাধ্যমে আসেনি। কেন আসেনি, সে উত্তরও আমরা পেয়েছি রয়টার্সকে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর পুত্র এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের বক্তব্যে। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এতই নাজুক যে প্রকাশ্যে কিছু বলা তাঁর জন্য কঠিন।

অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ড নিয়ে ফেসবুকে বেশ সরব ছিলেন ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু। অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের এক মাসের মাথায়, ৩০ মার্চ, নিজের বাসার সামনেই তাঁকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। যে তিনজন হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত করেছে, তাদের মধ্যে দুজনকে এলাকার মানুষ, মূলত দুজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ, হাতেনাতে ধরে ফেলেছেন রক্তমাখা চাপাতিসহ ঘটনাস্থল থেকে। এরা দুজন হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্র জিকরুল্লাহ এবং মিরপুরের দারুল উলুম মাদ্রাসার ছাত্র আরিফুল ইসলাম। অপরজন আবু তাহের পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। জিকরুল্লাহ ও আরিফুল ইসলামের স্বীকারোক্তি প্রকাশিত হয়েছিল সব গণমাধ্যমে। তাদের সাক্ষ্য অনুযায়ীই ‘বড় ভাই’ নির্দেশনাদানকারী ‘মাসুম ভাই’য়ের নামেও মামলা করা হয়েছিল। আশা ছিল, ঘটনাস্থল থেকে সরাসরি রক্তাক্ত চাপাতি হাতে যেহেতু ধরা গেছে জিকরুল্লাহ আর আরিফুল ইসলামকে এবং যেহেতু তারা হত্যার দায় স্বীকার করেছে ‘ইমানি’ দায়িত্ব পালনের কথা বলে, এবার নিশ্চয়ই কিছু একটা ব্যবস্থা হবে। পাঁচ মাস হলো। তদন্ত এখন কোন পর্যায়ে আছে, ‘নির্দেশনাদানকারী হুজুর’ আসলে কে, এসব খুনির নেটওয়ার্ক কী—কিছুই আমরা জানি না।

ওয়াশিকুর রহমানকে হত্যার ১ মাস ১২ দিন পরে, ১২ মে, একইভাবে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হলো বিজ্ঞান-লেখক ও মুক্তমনার ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশকে, সিলেট শহরের সুবিদবাজারের নূরানি আবাসিক এলাকার চৌরাস্তার মোড়ে। অনন্ত বিজয় দাশের বড় ভাই রত্নেশ্বর দাশ অজ্ঞাতনামা চারজনকে আসামি করে মামলা করেছিলেন, তিন সপ্তাহ পরে মামলাটি সিআইডিতে স্থানান্তর করা হয়। সিআইডি ইদ্রিস আলী নামের এক স্থানীয় ফটোসাংবাদিককে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়েছিল, তারপর কোনো অগ্রগতি হয়েছে কি না, দেশবাসী জানে না।

আর ৭ আগস্ট, অনন্ত বিজয় হত্যার তিন মাসেরও কম সময়ে, দিনদুপুরে ঘরে ঢুকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হলো ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয়কে। সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে লিখতেন তিনি ইস্টিশন ব্লগে, নিলয় নীল নামে। শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চে সক্রিয় ছিলেন। বেশ কিছুদিন থেকেই তিনি হুমকি পেয়ে আসছিলেন। অনন্ত বিজয় দাশ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দিয়ে ঘরে ফেরার পথে কয়েকজন তাঁকে অনুসরণ করছে বুঝতে পারেন। তিনি নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়ে আড়াই মাস আগে থানায় থানায় ঘুরেছেন জিডি করার জন্য, কিন্তু পুলিশ জিডি নেয়নি বরং দেশ ছাড়তে পরামর্শ দিয়েছে—এই কথা তিনি ফেসবুকে লিখে জানিয়েছেন ১৫ মে।

হত্যাকাণ্ডের চার ঘণ্টা পরে আল-কায়েদা ভারতীয় উপমহাদেশের (একিউআইএস) বাংলাদেশ শাখা, আনসার আল ইসলাম নামে গণমাধ্যমগুলোতে ই-মেইল পাঠিয়ে দায় স্বীকার করেছে। এই একই গ্রুপ অভিজিৎ হত্যার দায় স্বীকার করেছিল হত্যাকাণ্ডের দুই মাস পরে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সার্চ ফর ইন্টারন্যাশনাল টেররিস্ট এনটিটিজ নামের একটি ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ এই বিষয়ের সত্যতা নিশ্চিত করে। অনন্ত বিজয় দাশ হত্যাকাণ্ডের পরে দায় স্বীকার করে বার্তা এসেছিল আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ৮ নামের এক টুইটার থেকে, সেখানেই বলা ছিল আল-কায়েদা ভারতীয় উপমহাদেশ শাখার কাজ এটি। বার্তাটি ছিল, আলহামদুলিল্লাহ! আমরা আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে আল-কায়েদা উপমহাদেশ শাখার ভাইয়েরা আরও এক ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক ব্লগারকে জাহান্নামে পাঠিয়েছে। ওয়াশিকুরের হত্যাকারীরা স্বীকার করেছে, তারা ব্লগ কী জানে না, ‘বড় ভাই’য়ের নির্দেশে ইসলামের দুশমনদের হত্যা করে ইমানি দায়িত্ব পালন করেছে মাত্র। বোঝা যায়, আল-কায়েদা পরিচয়টি ওজনদার, এই নাম থাকলে বিচারকাজ আগায় না।

প্রথম আলো, ২০১৫
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, জাতিসংঘসহ অনেকেই নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পরে বাংলাদেশ সরকারকে এসব হত্যাকাণ্ড শক্ত হাতে দমনের দাবি জানিয়েছে। এসব দাবি কিছুদিন চলবে। বেশ কিছু মানববন্ধন, কলাম লেখা এবং টক শো হবে। তারপর আমরা ভুলে যাব সব, পরের হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার আগে পর্যন্ত। অবস্থা এমন হয়েছে যে বাংলাদেশে এখন ‘ব্লগার’ শব্দকে সমার্থক করা হয়েছে ‘নাস্তিকতা’র সঙ্গে আর কাউকে ‘নাস্তিক’ আখ্যা দিতে পারলে তাকে হত্যা করা বৈধ হয়ে যায়। পাকিস্তান আমলে যেমন কাউকে ‘কমিউনিস্ট’ কিংবা ‘ভারতের চর’ বা ‘হিন্দু’ আখ্যা দিতে পারলে তার ওপর যেকোনো অত্যাচার জায়েজ ছিল।

আমরা ভুলে যাই, ব্লগারদের সঙ্গে নাস্তিকতার ট্যাগটি দেওয়া হয়েছিল শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য, যার প্রথম বলি হয়েছিলেন রাজীব হায়দার। রাজীবকে নাস্তিক-ব্লগার প্রমাণ করার মধ্য দিয়ে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন ম্রিয়মাণ করে দেওয়া সম্ভব হয়েছিল। আমরা এও ভুলে যাই, নাস্তিক-ব্লগার নাম দিয়ে যে আন্দোলনকে ম্রিয়মাণ করার চেষ্টা হয়েছে, সেই আন্দোলনের মূলে রয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি। ধারাবাহিক ব্লগার হত্যার মুখ্য অন্তর্নিহিত রাজনীতি নিঃসন্দেহে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নস্যাৎ করা, বিচারের দাবিতে সোচ্চার যাঁরা তাঁদের এক এক করে হত্যা করা এবং সমান্তরালে অবশ্যই রয়েছে মুক্তবুদ্ধির মানুষদের কাউকে বাঁচতে না দেওয়া।

ব্লগার হত্যাকাণ্ডের বিচারে সরকারের অপারগতা, নীরবতা অ্যাবসার্ড নাটকের মতো মনে হয়। রাজনীতিতে ধর্মের কার্ড আজ এতটাই অপ্রতিরোধ্য হয়ে গেছে যে মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপকের পুত্রশোকে প্রধানমন্ত্রীর টেলিফোনে সান্ত্বনা দেওয়ার কথাটিও গণমাধ্যমে চেপে যেতে হয়। বড় আজব সময় পার করছি আমরা। আনসারুল্লাহ বাহিনী তাদের ঘোষিত লক্ষ্য প্রতি মাসে একজনকে হত্যা করার পরিকল্পনা নির্বিঘ্নে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে আর সরকার, সব রাজনৈতিক দল এবং তথাকথিত প্রগতিশীল শক্তি সবাই চুপ করে দেখে যাচ্ছে। মিডিয়ার তত্ত্ব বলে, বীভৎস দৃশ্য দেখতে দেখতে মানুষের গা-সওয়া হয়ে যায়, স্বাভাবিক মনে হয়। নানাভাবে নারী নির্যাতন, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর ক্রমাগত নির্যাতন, পোশাকশ্রমিকদের পুড়ে মরা, পায়ের নিচে পিষ্ট হয়ে মরা, পেট্রলবোমা ছুড়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা, বীভৎস কায়দায় শিশু হত্যা—এসবই আমাদের সহ্যসীমার আওতায় এসে গেছে।

মাথায় আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের দেওয়া মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে আমাদের অনেকের জীবনই তো চলে যাচ্ছে। সমস্যা আসলে তেমন কিছু ছিলও না। শুধু এক পরাবাস্তব কাহিনির মতো মাঝে মাঝে কিছু দৃশ্য অসার করে ফেলে। যখন অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকে চাপাতি দিয়ে কোপানো হয়েছিল কিংবা কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হককে হুমকি দেওয়া হয়েছিল অথবা দ্বিতীয়বার কাঁধে আঘাত করা হয়েছিল আসিফ মহিউদ্দিনকে, তখন অন্য অনেকের সঙ্গে অভিজিৎ রায়ও লিখেছেন, নানা মানবাধিকার সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন। অভিজিৎ রায়কে হত্যা করা হলে লিখেছেন ওয়াশিকুর রহমান, অনন্ত বিজয় দাশ। ওয়াশিকুরকে হত্যা করা হলে লিখেছেন অনন্ত বিজয়। অনন্ত বিজয় দাশের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সরব ছিলেন নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়, ফেরার পথে তিনি বুঝতে পেরেছেন আততায়ীর অনুসরণ। ৭ আগস্ট তাঁকেও খুন করা হলো। ঘাতকের অভয়ারণ্যে ফের যদি ভিন্নমতের কোনো মানুষকে ঘোষণামাফিক মেরে ফেলা হয় আগামী মাসে, শোক কিংবা প্রতিবাদ সমাবেশে যাওয়ার, নিদেনপক্ষে ফেসবুকে ঘটনার নিন্দা করার মতো মানুষও তো আর থাকছে না বিশেষ। তবু চলুন, আমরা বরং সব দেখেশুনে চুপ করেই থাকি।

The post আসুন, আমরা বরং চুপ করেই থাকি first appeared on KG | Kaberi Gayen.

]]>
https://kaberigayen.com/%e0%a6%86%e0%a6%b8%e0%a7%81%e0%a6%a8-%e0%a6%86%e0%a6%ae%e0%a6%b0%e0%a6%be-%e0%a6%ac%e0%a6%b0%e0%a6%82-%e0%a6%9a%e0%a7%81%e0%a6%aa-%e0%a6%95%e0%a6%b0%e0%a7%87%e0%a6%87-%e0%a6%a5%e0%a6%be%e0%a6%95/feed/ 0