15 mins read
ধর্মীয় অতিরিক্তপনার যুগে নারী এবং তার মুক্তি আন্দোলন
তা
সমসাময়িক মৌলবাদী আন্দোলনে নারীর শরীরের (তার যৌনতা এবং প্রজনন সক্ষমতা) উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপকে ইতিহাসের সকল কর্তৃত্ত্বপরায়ণ শাসনামল এবং রাজনৈতি আন্দোলনের সাথে যুক্ত করে দেখা সম্ভব। আঠারো শতকের ইউরোপীয় রেনেসাঁ, যা নাগরিকের স্বাধীনতা, ব্যক্তির অধিকার এবং গণতন্ত্রের উপর জোরারোপ করেছিলো, নারীর অধস্তনতার উপর প্রথম বড় ধরণের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়। গোটা বিশের দশকে, ফেল্ডমান ও ক্লার্ক-এর মতে(১৯৯৬), সামাজিক পরিবর্তন এবং ‘আধুনিকায়ন’ চিরায়ত লিঙ্গীয় ভূমিকা এবং জেন্ডার সম্পর্কে বিশেষ প্রভাব রাখে এবং পুরুষের নিরস্কুশ আধিপত্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে শুরু করে। শিল্পায়ন ও পুঁজিবাদের সম্প্রসারণ নারীদের জন্য নানা ধরণের সুযোগ সামনে নিয়ে আসে। ফলে পরিবার ও সমাজ জীবনে নারীর উপর পুরুষের নিরস্কুশ অধিকার দুর্বল হতে শুরু করে। ১৯৩০-এর দশকের ইউরোপে, অর্থনৈতিক মহামন্দা এবং ক্রমহ্রাসমান জন্মহারকে নৈতিক ও সামাজিক মানের অবক্ষয় হিসাবে দেখে নারীর উপর পারিবারিক ও যৌনতার রীতি চাপিয়ে দেয়া হয়, যার সর্বোচ্চ প্রকাশ দেখা যায় নাজি জার্মানীতে। তবে সন্তান জন্মদানের চাপ প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন, এমনকি বৃটেন এবং ফ্রান্সেও দেখা গেছে। সমান্তরাল উদাহরণ টানা যেতে পারে হালের নানা জাতীয়তাবাদী আন্দোলন থেকে, যেখানে ধর্মীয় মৌলবাদের সাথে সংযোগ অত্যন্ত পরিস্কার। কাজোসেভিক-এর লেখা থেকে (১৯৯৫) দেখা যায় যে সার্বিয়ান অর্থডক্স চার্চ এবং ক্রোয়েশিয়ান চার্চ – উভয়েই নারীদেরকে অধিক সন্তান জন্ম দিয়ে দেশকে সেবা করার পরামর্শ দিয়েছে। ক্রোয়েশীয় প্রেসিডেন্ট ফ্রাঞ্জো তুজমান ক্রোয়েশীয়দের দুর্দশার জন্য নারী, পর্ণোগ্রাফি এবং গর্ভপাতকে দায়ী করেন। ।
যদিও যুক্তরাজ্য বা যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে ধর্মীয় মৌলবাদি শক্তি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় নেই, তা সত্ত্বেও তারা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে তাদের প্রয়োজনে কাজে লাগাতে পারছে। প্রটেস্টান্ট এবং ক্যাথলিক মৌলবাদীরা যুক্তরাষ্ট্রের সেক্যুলার প্রতিষ্ঠান এবং কোর্টকে ব্যবহার করে গর্ভপাত-বিরোধী ক্রুসেড শুরু করেছে, এ’ছাড়াও জন্মনিরোধক-ব্যবহার ও অন্যান্য প্রজনন সংক্রান্ত অধিকার খর্ব করার চেষ্টা করছে, অনেক ক্ষেত্রেই সফল হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে তারা নারীর গর্ভপাতের অধিকারকে দুর্বল করার জন্য ক্লিনিকগুলোতে হামলা চালাচ্ছে এবং সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করছে ফান্ড কমিয়ে দেবার জন্য। বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর চাপে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের যৌনতা বিষয়ক শিক্ষা মারাত্মক বিঘ্নিত হচ্ছে। যৌনতা বিষয়ে মুক্ত ও স্বচ্ছ আলোচনার অভাবে সেখানকার স্কুলের মেয়েরা গর্ভপাত সম্পর্কে কুড়ি বছর আগের তুলনায় এখন অনেক কম জানে। যুক্তরাজ্যেও খৃস্টান মৌলবাদী শক্তি সেক্যুলার প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে গর্ভপাতে নারীর অধিকার এবং স্কুলের সিলেবাসে যৌনতা বিষয়ক শিক্ষাকে সংকুচিত করে ফেলেছে এবং তা সংসদে আইনের মাধ্যমে পাশ করিয়েই।
নাওয়িকা (১৯৯৬) জানাচ্ছেন, পোল্যান্ডে কমিউনিস্ট সরকারের পতনের পরে, পোলিশ চার্চের গর্ভপাত-জন্মনিরোধক-সেক্স এডুকেশন বিরোধী প্রচারণায় ক্যাথলিক নারী দলের অংশগ্রহণ দেখা যায় যেখানে জেন্ডার বৈষম্যকে এগিয়ে নেবার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ১৯৯৪ সালে, কায়রোতে অনুষ্ঠিত পপুলেশন ও ডেভেলপমেন্টের আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে ক্যাথলিক চার্চের সরকারী প্রতিনিধি হিসেবে দ্য হলি সী অন্যান্য মৌলবাদী শক্তির সাথে যুক্ত হয়ে বিশ্বের সকল নারীর প্রজনন অধিকারের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করে। এই কনফারেন্সের অফিসিয়াল খসড়ায় গর্ভপাত, সমকামিতা এবং জন্মনিয়ন্ত্রণের উপর জোরারোপ করা আছে অভিযোগ তুলে দ্য হলি সী ইসলামিক রাষ্ট্র ইরান ও লিবিয়ার সাথে জোট বাধে। ১৯৯৫ সালে বেইজিং-এ অনুষ্ঠিত চতুর্থ বিশ্ব নারী সম্মেলনে দ্য হলি সী নারী ও স্বাস্থ্য বিষয়ক পুরো অধ্যায়ের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে ভিন্নমত প্রদান করে।
ভারতে, হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি ধর্মীয় চিত্রকল্প ব্যবহার করে, কল্পিত রামরাজত্বের ছবি এঁকে নারীকে মূলত পুরুষতন্ত্রের অধীনে দেখতে চায়। দক্ষিণপন্থী হিন্দুত্ববাদী দলগুলো নারীকে পুনঃনির্মাণ করতে চায় হিন্দু রাজত্ত্বের কল্পনার সাথে মিলিয়ে, এবং হিন্দু রাষ্ট্রকে দেখতে চায় নির্মিত হিন্দু নারীর আদলে। এই আদর্শ হিন্দু রাজত্বে হিন্দু নারীর নির্মাণ কীভাবে ভারতীয় নারীর সম-অধিকারের পরিপন্থী তা বোঝা যায় বিজেপি’র মহিলা মোর্চার প্রাক্তন প্রধান মৃদুলা সিনহার একটি সাক্ষাৎকার থেকে। ১৯৯৩ সালে দেয়া এই সাক্ষাৎকারে মৃদুলা সিনহা বলেন (উদ্ধৃত, প্রকাশ, ২০০০: ৮৮):
ক) কোন নারী বাড়ির বাইরে উপার্জনের জন্য যাবে না যদি না তার পরিবার অর্থনৈতিকভাবে খুব দুর্বল হয়;
খ) যৌতুক নেয়া এবং দেয়ার প্রয়োজন আছে;
গ) আমরা নারী-স্বাধীনতাকে অপছন্দ করি, কারণ নারী-স্বাধীনতা আসলে শিথিল নৈতিকতার সমার্থক;
ঘ) আমরা নারী-পুরুষের জন্য সমাধিকারের বিরোধিতা করি;
ঙ) নারীর প্রতি গার্হস্থ্য-সহিংসতায় কোন অসুবিধা দেখি না, কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নারীরই অপরাধ, তাদের উচিত সংসারে মানিয়ে চলার ব্যাপারে মনোযোগী হওয়া;
চ) নারী-স্বাধীনতার মানে হচ্ছে সংসারের দৈনন্দিনতা থেকে মুক্তি, কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না যে নারীর মূল দায়িত্ব স্ত্রী ও মা হিসাবে।
আরেকজন প্রাক্তন সভাপতি বিজয় রাজে সিন্ধিয়া একদল নারী নিয়ে মিছিল করেছিলেন সতীদাহ প্রথার পুনঃপ্রবর্তনের দাবীতে যে, “সতী হিসাবে মরতে পারা হিন্দু নারীর মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে, কেননা তা আমাদের অতীত গৌরব ও সংস্কৃতির অঙ্গ।”
ইসরাইলে, সেক্যুলার ও উগ্রপন্থী ধার্মিকদের মধ্যে ব্যবধান বেড়েই চলেছে, এবং ধর্মীয় অবস্থান ও রাষ্ট্রীয় অবস্থান পরষ্পর বিরোধী হয়ে উঠছে । ও’লাফলিনের (২০০৮)-এর প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, জেরুজালেমে নারীদের সেক্যুলার জীবন-ব্যবস্থার বিপরীতে হারেডি নামের একটি উগ্র ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠী অত্যন্ত তৎপর হয়ে উঠেছে। নৈতিক অভিভাবক হিসাবে স্বআরোপিত দায়িত্ত্ব নিয়ে, ইসরাইলের আধুনিক সেক্যুলার গণমাধ্যম যাদের নামকরণ করেছে ‘মডেস্টি পুলিশ’ , জেরুজালেমের উগ্র-ধর্মীয় এলাকাগুলোতে টহল দিয়ে বেড়াচ্ছে এবং ক্রমাগত ইহুদি ধর্মযাজক রাব্বি প্রবর্তিত আইনকে কার্যকর করার ব্যাপারে চাপ প্রয়োগ করে চলেছে। ফলাফল হলো, হারেডি জনবসতিতে লিঙ্গীয় বৈষম্য ক্রমশই প্রকট হয়ে উঠছে। সামাজিক অনুষ্ঠানসমূহে স্বামী-স্ত্রী পৃথকভাবে অংশ নিচ্ছেন এবং ছুটির দিনগুলোতে নারী-পুরুষ রাস্তার বিপরীত পথে চলাচল করছেন। হারেডি জনসংখ্যা বেশী হওয়ার ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সরকারকে দিয়ে নানা আইন পাশ করিয়ে নেয়া হচ্ছে। পরিবহণ মন্ত্রণালয় ‘কোশের’ বা ‘শুদ্ধ’ পথ চালু করতে বাধ্য করেছে যেখানে নারীরা বাসের পেছনের সীটে বসবেন এবং বাসে উঠতে পারবেন না যদি না ‘যথাযথ’ পোষাক পরিহিত হন। স্কার্টের ঝুল হয়ে উঠছে ধার্মিকতার পরীক্ষা। গ্লিকম্যানের (২০০৮) প্রতিবেদনেও দেখা যাচ্ছে সতীত্ব পরীক্ষক, ড্রেসকোড, পৃথক বাস, নারী-পুরুষের জন্য ভিন্ন ব্যবস্থা ক্রমশই বেড়ে চলেছে। অর্থডক্স ইহুদিবাদ দাবী করে যে, নারীর অবস্থান পুরুষের তুলনায় অধঃস্তন নয়, তবে পৃথক। নারীর মূল কাজ সংসার রক্ষণাবেক্ষণ ও শিশুপালনে। কিন্তু যেহেতু আদর্শ ইহুদি পুরুষের কাজ হলো ধর্মীয় পন্ডিত হওয়া এবং দিনমান ইয়েশিবা পাঠ, ইহুদি নারীকে বলা হয় ‘সুপার উইমেন’ হতে – স্ত্রী, মা, অর্থ-উপার্জনকারী কিন্তু এ’সকল কাজই দ্বিতীয় শ্রেণীর, কারণ পুরুষ ‘তোরাহ’ পাঠ করে যে ‘তোরাহ পাঠ’ মেসিহকে [ইহুদি নবী] এই পৃথিবীতে নিয়ে আসবে। বিশিষ্ট নারীবাদী তাত্ত্কি য়ুভাল ডেভিস (২০০৪) তার গবেষণায় দেখেন যে অনেক নারীই এই অর্থডক্স জীবন-ব্যবস্থাকে নিরাপত্তা ও ক্ষমতায়ন হিসাবে মেনে নিচ্ছে।
১৯৬০ এবং ৭০-এর দশকে গোটা মুসলিম জগত জুড়ে রাজনৈতিক ইসলামের বিস্তার নানা ধরণের ইসলামি আন্দোলন ও সক্রিয়তার জন্ম দিয়েছে। ‘মিলিট্যান্ট ইসলাম’, ‘জিহাদিক ইসলাম’ থেকে শুরু করে শান্তিপূর্ণ অথচ রাজনৈতিক মিশনারীমূলক ‘দাকওয়া বা ‘দা’ওয়া’ হয়ে সম্পূর্ণ সমাজব্যবস্থা পরিবর্তনের মাধ্যমে ‘ইসলামিক রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠা এইসব আন্দোলনের মধ্যে রয়েছে। মালয়েশীয় নারীবাদী তাত্ত্বিক ওথমান (২০০৬)-এর মতে, ইসলামকে রাজনৈতিক আদর্শ হিসাবে এবং একইসাথে আইন ও পাবলিক পলিসির উৎস হিসাবে ব্যবহারের ফলাফল নারীদের জন্য বঞ্চনামূলক হয়েছে। ওথমানের মতে, ধর্মীয় মৌলবাদ কেবল ইসলামে নয় বরং সকল ধর্মেই রয়েছে কিন্তু ইসলামের ক্ষেত্রে যেটা অনন্য তা হলো ইসলামি আইন ও শরীয়া আইন সকল মুসলিম দেশে আংশিক বা পূর্ণভাবে বিদ্যমান রয়েছে এবং জীবনের সবক্ষেত্রে শরীয়া আইনের প্রয়োগের ব্যাপারে চাপ ক্রমাগত জোরালো হচ্ছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে নারীর জন্য শরীয়া আইনের বিধান এসব দেশে সমস্যাজনক এ’কারণে যে প্রায়শই তা নারী-পুরুষের সমানাধিকারের পরিপন্থী। ১৯৭০ এবং ৮০-র দশক জুড়ে মুসলিম জাহানে যে ইসলামী পুনুরুত্থান ঘটেছে তার ফলে কোন মুসলিম-প্রধান রাষ্ট্র যদি আধুনিক বা সেক্যুলার-ঘেঁষাও হয়, তবুও তাদের মুসলিম মৌলবাদের চাপের কাছে ক্রমাগত নতিস্বীকার করতে হচ্ছে। পাকিস্তানে ‘অনার কিলিং’, আফগানিস্তানে ফতোয়া কিংবা ঘরের বাইরে চলাচলে বাধা, পর্দা কিংবা অন্যান্য সহিংসতা কমবেশি আমাদের জানা। কিন্তু এই সহিংসতার স্বরুপটি পূর্ণমাত্রায় বোঝার জন্য ওথমান (২০০৬) একটি গবেষণা করেন যে এইসব ইসলামিক মৌলবাদী রাজনীতির উত্থান মুসলিম নারীর শরীর, অধিকার, পরিচয় এবং স্ট্যাটাসে কী ধরণের প্রভাব ফেলেছে? তার গবেষণায় বেরিয়ে আসে যে এসব ইসলামিক আন্দোলনের স্থানিক ও রাজনৈতিক পার্থক্য সত্ত্বেও এই সকল আন্দোলন নারীর জন্য বেশি করে প্রথাগত জীবনে ফিরে যাবার বিধান দিয়েছে, নারীর কাজকে নির্দিষ্ট করেছে প্রজনন ভূমিকায়, যথাযথ হিজাবের ব্যবহারে, এবং পিতৃতান্ত্রিক মূল্যবোধে সমর্পিত হতে।
এ’বিষয়ক প্রথম অনাসৃষ্টিটি আমরা দেখতে পাই ইরানে, ১৯৭৯ সালে ইসলামিক রিপাবলিকান পার্টির নেতৃত্বে তথাকথিত ‘ইসলামিক বিপ্লবের’ পরে। আজ পর্যন্ত সেখানে সরকারী বিধান করে হিজাব পরা শুধু বাধ্যতামূলক নয়, যথাযথ হিজাব ব্যবহার না করলে শাস্তি, জরিমানা, এমনকি জেলে পোরার বিধান কার্যকর রয়েছে। কিয়ান (১৯৯৫) এবং আফরাই (১৯৯৯)-এর গবেষণা থেকে দেখা যাচ্ছে, ইরানী নারীদের স্কুলে, বাসে, বীচে আলাদা থাকতে হয় এবং তাদের কাজ, ক্যারিয়ার, শিক্ষা বিষয়ে তাদের পছন্দের অধিকার খুবই সীমিত। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় শহুরে মধ্যবিত্ত পুরুষদের মধ্যে বহুগামিতাও বেড়েছে। ।
সুদান, আফগানিস্তান, মিশর, আলজেরিয়া, জর্ডান এবং লেবাননে মৌলবাদী দলগুলো হয় ক্ষমতায় অথবা ক্ষমতায় যাবার অপেক্ষায়। ন্যাশনাল ইসলামিক ফ্রন্ট ক্ষমতায় আসার পর সুদানে আইনি, মেডিক্যাল এবং অন্যান্য সিভিল সার্ভিস থেকে বিপুল সংখ্যক নারীকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এবং কোন নারী ‘যথাযথ’ হিজাব ব্যবহার না করলে তাকে শুধু যে শাস্তি দেয়া হয় তাই নয়, যেমনটা জানাচ্ছেন আফরাই (১৯৯৯), রাষ্ট্রীয় বেতারে তাদের নাম ঘোষণা করা হয় অপদস্থ করার জন্য।
আলজেরিয়ায়, ১৯৯১ সালে ইসলামিক স্যালভেশন ফ্রন্ট সাধারণ নির্বাচনে জযী হয় কিন্তু ১৯৯২ সালে তৎকালীন সরকার কর্তৃক দলটি নিষিদ্ধ ঘোষিত হলে ক্ষমতায় আসতে পারে না। ফলে দলটি সন্ত্রাসের প্রকাশ্য ঘোষনা দিয়ে ৫০ হাজার মানুষকে খুন করে এবং ১৯৯৬ সালের মধ্যে কয়েকশ’ নারীকে হত্যা করে মাথায় স্কার্ফ না পরার জন্য, পাশ্চাত্যের পোষাক পরার জন্য, পুরুষের পাশাপাশি কাজ করার জন্য কিংবা কোন পুরুষ অভিভাবক ছাড়াই কোন অ্যাপার্টমেন্টে একাকী বাস করার জন্য।
মালয়েশিয়ায় বিয়ে, বিয়ে-বিচ্ছেদ, শিশুর আইনী অধিকার এসব বিষয়ে অধিকতর উদারনৈতিক মালয় আইন ক্রমান্বয়ে ইসলামিক শাফি আইন দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে, যা পরিবার পরিকল্পনার বিরোধিতা করে এবং ‘কোন নারী ইচ্ছা করে স্বামীর অবাধ্য হলে’ শাস্তির বিধান রাখে। ড. মাহাথির মোহাম্মদের শাসনামলেই (১৯৮১-২০০৩) ‘ইসলামিকরণ এজেন্ডা’ বাস্তবায়িত হয়। কারণ তার পার্টি United Malays National Organization যে মোর্চার হয়ে (Barisan Nasional Front) ক্ষমতাসীন হয়েছিলেন সেটির বিপরীত মোর্চার প্রধান দল Party Islam seMalayesia ইসলামীকরণের যে এজেন্ডা ঘোষণা করেছিলো তার সাথে প্রতিযোগিতা যত বেড়েছে ইসলামী রাষ্ট্র ঘোষণা, হুদুদ আইনের প্রয়োগ, নারীর প্রতি বৈষম্য, ধর্ম থেকে মুক্তি আহরণের বিষয়গুলো তত বেশি জনপরিসরে এসেছে।
বাংলাদেশে, যে দেশটি ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সমাজতন্ত্রকে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি করে তার যাত্রাপথ শুরু করেছিলো, সেই দেশে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম কায়েম হয়েছে। নির্বাচনী ইশতেহারে ১৯৯৭ সালের নারীনীতি বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেও এখন পর্যন্ত সেটি বিল আকারে সংসদে তুলতে সক্ষম হয়নি ইসলামিক কিংবা ডানপন্থী দলসমূহের ভয়ে। ফতোয়া বিরোধী হাইকোর্টের রায় দশ বছরের বেশি সময় ধরে সুপ্রিমকোর্টে ঝুলে আছে এবং সাম্প্রতিক সময়ে যখন ফতোয়ার দোররায় হেনা’র মৃত্যু ঘটলো, সেই সময়েই আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলতে শুনলাম যে শিক্ষিত আলেমরাই যেনো কেবল ফতোয়া দেন, অর্থাৎ তার আমলে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের তিনি বিরোধিতা করলেন!
অন্যান্য ধর্মের মৌলবাদী আন্দোলনের সাথে দু’টি ক্ষেত্রে ইসলামি মৌলবাদী আন্দোলনের পার্থক্য রয়েছে (মারনিসি, ১৯৮৯; ওথমান ২০০৬)। এক, শরীয়া আইন এবং দুই, আন্তর্জাতিকতা। ইসলামি মৌলবাদী আন্দোলন এখন যেহেতু আন্তর্জাতিক রূপ পরিগ্রহ করেছে, কেউ নিজ দেশ ত্যাগ করে অন্য সেক্যুলার আইনের দেশে গিয়েও পরিত্রাণ পান না কারণ ফতোয়া তার পেছনে ধায়। সালমান রুশদী, তাসলিমা নাসরিন, নাওয়াল এল-সাদাওই’র উদাহরণগুলোই এক্ষেত্রে যথেষ্ট। হেলি লুকাস (২০০৫) ফ্রান্সের উদাহরণ দিয়েছেন এক্ষেত্রে। মুসলিম মৌলবাদিরা ফ্রান্সে সরকারী স্কুলগুলোতে সহশিক্ষা বাতিল, মেয়েদের জন্য ভিন্ন সিলেবাস যেখানে খেলাধুলা, গান, গ্রাফিক আর্টস, জীববিদ্যা নিষিদ্ধ থাকবে এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক নারীর জন্যও বোরখার ব্যবস্থা করার বিধান করতে সরকারকে চাপ প্রয়োগ করছে।
নারীর অনিশ্চিত যুদ্ধযাত্রা এবং দ্বি-নারীবাদ
একটি বিষয় বিশেষভাবে খেয়াল করার রয়েছে যে, ধর্মীয় মৌলবাদ প্রায় সবক্ষেত্রেই দক্ষিণপন্থী রাজনীতি দ্বারা সমর্থিত। শুধু পুরুষই নন, বেশ বড় সংখ্যক নারীও এসব মৌলবাদী দলের সাথে যুক্ত এবং তারা তাদের দলের জেন্ডার এজেন্ডাকে বহন করেন। এভাবেই আমরা একটি নতুন ধারণার সাথে পরিচিত হই- ‘দ্বি-নারীবাদ’ (Two Feminisms)। পরিচিত করান আফরেই (১৯৯৯)। এযাবতকালে যে ধারার নারীবাদই হোক না কেন, ‘নারীবাদ’ শব্দটি পুরুষতন্ত্রের বিরোধী একটি শব্দ। কিন্তু এই নতুন নারীবাদ জেন্ডার সম্পর্কের পুরুষতান্ত্রিক মডেলের প্রতিনিধিত্ব করে। ব্যবহারিক দিক থেকে, গোট্টিলেব (২০০২: ৩১)-এর মতে, “দক্ষিণপন্থী এসব নারী প্রতিনিয়ত একইসাথে পুরুষতন্ত্রের ‘শিকার’ এবং ‘ষড়যন্ত্রকারী’র ভূমিকায় অভিনয় করেন।” ধর্মীয় মৌলবাদীরা প্রায়শই তাদের কার্যকলাপকে ‘উপনিবেশবাদ’ ও ‘সাম্রাজ্যবাদ’ -এর বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম বলে অভিহিত করেন। প্রশ্ন হচ্ছে, বর্তমান বিশ্বের নারীমুক্তি আন্দোলন এই জটিল পরিস্থিতিকে মোকাবেলা করতে কতটুকু সমর্থ? কোন ইতিবাচক পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে তাদের আন্দোলন কতটুকু ভূমিকা রাখতে পেরেছে? জনপরিসরে তাদের আওয়াজ কতটা জোরালো?
সাধারণভাবে নারীবাদী স্কলারশীপ স্বীকার করে যে, দক্ষিণ-পন্থী আন্দোলন একটি মতাদর্শিক হাতিয়ার নির্মাণে সক্ষম হয়েছে যা সাংস্কৃতিক পুনরুত্থান ও ধর্মীয় মৌলবাদ ইত্যাদি নামে বেশ খানিকটা প্রভাব রাখতে সক্ষম হয়েছে। নারীবাদী স্কলারশীপ এও স্বীকার করে যে, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় পুনরুজ্জীবনের নামে এসব আন্দোলন গৃহে নারীর যে মাতৃমূর্তি এবং নারীর নিরাপত্তার যে চিত্রকল্প তৈরি করতে পেরেছে তা নারীমুক্তি আন্দোলনের জন্য একটি হুমকিস্বরূপ। এই মূল বোঝাপড়াকে মাথায় রেখে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নারীমুক্তি আন্দোলন নানাভাবে ধর্মীয় মৌলবাদকে মোকাবেলার চেষ্টা করছে। কিসলিং ও সিপেপল (২০০২)-এর মতে, পৃথিবীর ধর্মীয় ইতিহাসের মধ্যেই একধরণের নারীমুক্তির উপাদান রয়েছে। ধর্মবেত্ত্বা এবং বেশ কিছু পন্ডিত ধর্মীয় টেক্সটের মধ্যে লুকানো নারীমুক্তির সূত্রগুলো খোঁজার চেষ্টা করছেন। ক্যাথলিক নারীবাদী ধর্মতাত্ত্বিক এলিজাবেথ স্যুসলার ফিওরেনজা সার্চিং দ্য স্ক্রিপচারস নামে দুইখন্ডে প্রকাশিত বাইবেলের নারীবাদী বয়ানগুলো বের করেছেন। এরকম আরেকটি উদ্যোগ হলো আফটার প্যাটিয়ার্কি: ফেমিনিস্ট ট্রান্সফরমেশনস অব দ্য ওয়ার্ল্ড রিলিজিয়ন যেখানে খৃস্টান, হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, ইহুদী, আমেরিকান আদিবাসী নারীবাদী ধর্মতাত্ত্বিকগণ ধর্মগ্রন্থের মূল টেক্সটে নারীর সমতার জায়গাগুলো খুঁজে বের করছেন। মালয়েশিয়ায় সিস্টারস ইন ইসলাম নামের একটি গ্রুপ কোরানে আল্লাহর মূল বাণী থেকে নারীমুক্তির সূত্রগুলো খুঁজছেন।
মুসলিম দেশগুলোর নারীমুক্তি আন্দোলন এবং অন্যান্য দেশের নারীমুক্তি আন্দোলনের মধ্যে একটি মূলগত পার্থক্য দেখা যায়। মুসলিম বিশ্বের নারীরা বেশ কিছু কৌশল অবলম্বন করেন নিজ নিজ দেশের সরকারের সাথে দেনদরবার করার সময়। বিশেষ করে তারা সমস্যায় পড়ে যান যখন কোন বৈষম্যমূলক আইন পরিবর্তন বা কোন অধিকারের বিষয় নিয়ে কথা বলতে হয়। কোন পরিবর্তনের কথা তুলতে হলে ইসলামিক জ্ঞানকাঠামোতে এ’বিষয়ে কোন স্পেস পাওয়া যায় কি না, সেটির সাপেক্ষে তাদের দাবী উত্থাপন করতে হয়।
ইরানে শিয়াইট ইসলামে একটি নতুন এবং গণতান্ত্রিক ডিসকোর্স ধীরে ধীরে জায়গা করে নিচ্ছে। এই ডিসকোর্সের কেন্দ্রে রয়েছে মুসলিম জুরিসপ্রুডেন্সের সহিষ্ণু ব্যাখ্যা। ইরানে নারীদের জর্নাল যানান শিয়াইট ইসলামের যেসব আইন রয়েছে তার নতুন নারীবান্ধব ব্যাখ্যা হাজির করছেন এবং এ’কাজে তাদের সাহায্য করছেন গ্রগতিশীল শিক্ষাবিদ, আইনবিদ, ধর্মবিষয়ক পন্ডিত নারী ও পুরুষ।
ভারতে নারীমুক্তি আন্দোলনের প্রগতিশীল ধারাকে মৌলবাদী শক্তির সাথে লড়াই করার জন্য ধর্মীয় টেক্সটের পুনঃব্যাখ্যা হাজির করতে হয় না যদিও, মৌলবাদের সাথে তাদের লড়াইযের মূল জায়গাটি হলো সেক্যুলার আইনের যথাযথ প্রয়োগ সংক্রান্ত। ধর্মীয় মৌলবাদের সাথে তাদের লড়াইয়ের মূল জায়গাটি তাদের গণতান্ত্রিক লড়াই সংগ্রামের অংশ – সিভিল আইন বাস্তবায়নের দাবী, আন্তঃধর্মীয় রায়টের বিরুদ্ধে লড়াই, বর্ণপ্রথা, যৌতুক, দারিদ্র, প্রজনন, স্বাস্থ্য, পাচার, এবং নানা ধরণের সামাজিক প্রথার বিরুদ্ধে লড়াই যেসব প্রথা নারীর অধিকার এবং নারীর অবস্থানকে হীন করে তোলে।
ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ক্রমশ জোরালো হচ্ছে সন্দেহ নেই। বেইজিং বিশ্ব নারী সম্মেলনে মৌলবাদকে রোখার ক্ষেত্রে বেশ কিছু কর্মসূচি গৃহীত হয়েছিলো যা কমবেশি সব দেশের সরকার খানিকটা পালন করছেন আবার করছেন না। এছাড়াও WAF জর্নাল, Reproductive Health Matters জর্নাল, জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত বই Religious Fundamentalisms and the Human Rights of Women – এ’জাতীয় প্রকাশনা বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছে।
২০০০ সালে, জাতিসংঘের ২৩তম বিশেষ অধিবেশনে “Further Actions and Initiatives to Implement the Beijing Declaration and the Platform for Action’’ দলিল গৃহীত হয়। এই অধিবেশনে ধর্মীয় মৌলবাদীদের যথেষ্ট চাপ সত্ত্বেও প্রথমবারের মত তথাকথিত অনার ক্রাইম এবং জোরপূর্বক বিয়ের বিপক্ষে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। চূড়ান্ত দলিলে জাতীয় পর্যায়ে সরকার কী পদক্ষেপ নেবেন এবং কীভাবে আইনে পরিণত করবেন সে বিষয়ে বিস্তারিত বলা আছে। এসব পদক্ষেপের পাশাপাশি পৃথিবী জুড়ে দুটি আন্দোলন চলছে মৌলবাদী আন্দোলনকে আক্রমন করে। প্রথমত: সী চেঞ্জ আন্দোলন যা জাতিসংঘে হলি সী-এর সদস্যপদ বাতিল করতে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। দ্বিতীয়ত: স্টপ এজেন্ডা আপাথাইড যা আফগানিস্থানে নারী ও শিশুর অধিকার অবদমনের বিপক্ষে প্রচার চালিয়ে আসছে। এছাড়াও, পৃথিবীর সকল দেশেই নিজস্ব নারীমুক্তি আন্দোলন ও নারীবাদী আন্দোলন জারী রয়েছে।
এসব আন্দোলনের মধ্য দিয়ে একটি বিষয় ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে এশীয় নারীমুক্তি আন্দোলনের সাথে পাশ্চাত্যের নারীমুক্তি আন্দোলনের একটি স্পষ্ট বিচ্ছেদ ঘটছে। ধর্মীয় মৌলবাদের এহেন উত্থানকে অনেকেই পুঁজিবাদী গণতান্ত্রিক মডেলের ব্যর্থতা হিসাবে দেখছেন। মরোক্কোর নারীবাদী তাত্ত্বিক মারনিসি (১৯৮৯)-র মতে, সাম্প্রতিক দশকগুলোতে মৌলবাদের উত্থান ঘটেছে সেক্যুলার, উত্তর-উপনিবেশিক কর্তৃত্বপরায়ণ দেশগুলোয়, যারা আইএমএফ বা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির রীতি অনুযায়ী দেশ পরিচালিত করে, তাদের ব্যর্থতার প্রতিক্রিয়া হিসাবে। কাজেই নারীমুক্তি আন্দোলনের একক শত্রু হিসাবে কেবল ধর্মীয় মৌলবাদের উপর দোষারোপের দিন বোধহয় শেষ হয়ে যাচ্ছে। বরং ধর্মীয় জীবনব্যবস্থায় ফিরে যাওয়াকেও কেউ কেউ নিরাপত্তার সাথে সম্পর্কিত করে দেখছেন। বিকল্প ডিসকোর্স হিসাবে দায়ভারটি আরো একটি প্রবল শক্তির দিকে আঙ্গুল তুলছে – সেটি বাজার মৌলবাদ। কিন্তু সে আলোচনা আজকের এই লেখায় নয়।
তথ্যসূত্র
Afray, Janet. (1999), “Dossier 21: The War Against Feminism in the Name of the Almighty: Making Senses of Gender and Muslim Fundamentalism”, Women Living Under Muslim Law.
Ali, Tariq. (2002), The Clash of Fundamentalisms: Crusade, Jihads and Modernity, Verso Publishers.
Feldman, Rayah and Clark, Kate. (1996), “Women, religious fundamentalism and reproductive rights”, Reproductive Health Matters, 4 (8): 12-20.
Gottlieb, J. V. (2002), “Female “Fanatics”: Women’s Sphere in the British Union of Fascists”, in P. Bacchetta & M. Power (Eds.), Right-Wing Women: From Conservatives to Extremists Around the World. New York: Routledge.
Kian, Azadeh (1995), “Gendered Occupation and Women’s Status in Post-Revolutionary Iran”, Middle East Studies, 31(3): 407-21.
Kissling, Frances and Sippel, Serra. (2002), “Women Under Oppressive Regimes: Women and Religious Fundamentalisms”, Consencience, Winter 2001-2002.
Mernissi, Fatima. (1989). Doing Daily Battle: Interview with Moroccan Women, New Jersey: Rutgers University Press.
O’Loughlin, Toni. (2008), “An aggressive campaign against the secular lifestyles of women in Jerusalem”, The Observer, September 21.
Othman, Norami. (2006), “Muslim women and the challenge of Islamic fundamentalism/extremism: An overview of Southeast Asian Muslim women’s
struggle for human rights and gender equality”, Women’s Studies International Forum 29: 339–353.
Prakash, Louis. (2000), The Emerging Hindutva Force: The Ascent of Hindu Nationalism, New Delhi, ISI.
Reed, Betsy (ed.) (2002), Nothing Sacred: Women Respond to Rligious Fundamntalism and Trror, Nation Books.
Women Against Fundamentalism, (1990), WAF manifesto. Newsletter. 1:1.
Yuval-Davis, Nira. (2008), “Cross-regional aspects of Jewish fundamentalisms: Challenging Fundamentalisms” interview with Nira Yuval-Davis. www.awid.org/…/Cross-regional-aspects-of-Jewish-fundamentalisms-Interview-with-Nira-Yuval
Your Opinion